কৈশোরের খেলাধুলা

শৈশব (সেপ্টেম্বর ২০১৩)

মোঃ জামান হোসেন N/A
  • 0
  • ১৩৯
আমাদের দেশীয় ঐতিহ্যেগুলোর মধ্যে কৈশোরের খেলাধুলা হচ্ছে অন্যতম। যা একজন বাংলাদেশী হিসেবে আমাদের স্বকীয়তা প্রকাশ করে। কৈশোরের খেলাধুলার মধ্যে আমরা খুঁজে পায় বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতি। ছোটবেলায় আমরা অনেক কিছুই করতে ভালবাসতাম। নির্দিধায় বলা যায় খেলাধুলা করাটাও সবারই প্রিয় ছিল। অনেক ধরনের খেলাই আমরা খেলেছি যেমন ওপেন্টি বায়স্কোপ, এক্কাদোক্কা, ইচিং বিচিং, কানামাছি, দড়ি খেলা, মার্বেল, হা-ডু-ডু, চাকা খেলা, ডাঙগুলি, বউচি, ঘুড়ি উড়ানোসহ হরেক রকমের খেলা। কৈশোরের এসব খেলা খেলতে গিয়ে অনেক স্মৃতিময় ঘটনা ঘটেছিল। কখনো বন্ধুদের সাথে ঝগড়া-ঝাটি বা একে অপরের সহিত মারামারি পর্যন্তও হয়েছিল। বর্তমান সময়ের ক্রিকেট, ফুটবল ও টেনিস খেলা জনপ্রিয় হওয়ার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের এসব গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলো। অথচ গত এক যুগ পূর্বেও এসব খেলার জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বি। কিন্তু আজ কৈশোরের সেই খেলাগুলো বা দেশীয় খেলাগুলো দিন দিন কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে। আজ সেই জায়গায় স্থান করে নিয়েছে বিভিন্ন ধাঁচের পাশ্চাত্য খেলা যেমন ক্রিকেট, ফুটবল টেনিস ইত্যাদি। আজকালকার ছেলে-মেয়েরা এসব খেলা খেলতে পারাতো দুরের কথা এসব খেলার নাম পর্যন্তও অনেকে জানে না। আজ তারা ব্যস্ত কম্পিউটার গেমস, মোবাইল গেমস এসব নিয়ে। আজ তাদের সামনে এসব খেলার নাম বললেও তারা নাক সিঁটকায়। আজ তাদের কাছে এসব খেলা রুপকথার গল্পের মত। তাই এখনকার ছেলেমেয়ের মাঝে সেই দুরন্তপনা ও চাঞ্চল্যতা লক্ষ্য করা যায় না। তারা দিন দিন নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে প্রযুক্তিগত খেলাধুলা ও বিনোদনের উপর। সখ্যতা গড়ে উঠছে প্রযুক্তির সঙ্গে। আর সে কারণেই তার বঞ্চিত হচ্ছে প্রাকৃতিক বিনোদন ও প্রকৃতির নির্মল ছোঁয়া থেকে।

আসুন নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দিই আমাদের কৈশোরের কিছু খেলাধুলার সঙ্গে –

@ওপেন্টি বায়স্কোপ@

ওপেন্টি বায়স্কোপ হচ্ছে মেয়েদের খেলা। ছোট ছোট মেয়েদের অনেক পছন্দের একটি খেলা। বিশেষকরে এই খেলাটি গান গেয়ে খেলতে হয়। গানটি এরূপ - "ওপেন্টি বায়স্কোপ, টেন টেন টেইস্কোপ। সুলতানা বিবিয়ানা, সাহেব বিবির বৈঠকখানা। রাজবাড়িতে জাইতে, পান সুপারি খাইতে। পানের বাটা মরিচ আটা , ইস্কুলেরি চাবি আটা। বেলি ফুলের চিরুনি। আমার নাম বেনুমালা, গলায় দিবো মুড়কির মালা........"

@এক্কাদোক্কা@

বিশেষত, এটাও মেয়েদের খেলা। ছোট ছোট মেয়েদের অন্যতম খেলা। এই খেলা খেলতে সমতল জায়গায় আয়তকার দাগ টানতে হয়। এরপর এই দাগের ভেতরে বর্গাকৃতি ছোট ছোট ঘর তৈরি করতে হয়। এরপর একটি ছোট পোড়া মাটির টুকরো বা খোলাকে একপায়ের ওপর ভর করে তা এক ঘর থেকে আরেক ঘরে পাঠাতে হয়। এ সময় গানের সুরে কিতকিত বা কুতকুত এক নিঃশ্বাসে বলতে হয়। নিঃশ্বাস ছুটে গেলা ও দাগে পা পড়লে সে খেলা থেকে বাদ হয়ে যায়।

@ইচিং বিচিং@

ইচিং বিচিং এটাও মূলত ছোট ছোট মেয়েদের খেলা। অত্যান্ত মজাদার একটা খেলা। এই খেলাটি খেলতে হাত ও পায়ের মাধ্যমে প্রচীর তৈরি করতে হয়। এর পর "ইচিং বিচিং ছিচিং ছা, প্রজাপতি উড়ে যা..........." এই গানটি গেয়ে ঐ প্রাচীরের উপর দিয়ে লাফ দিতে হয়। লাফ দেওয়ার সময় প্রাচীর স্পর্শ করলে সে মরে যায় বা বাদ হয়ে যায়।

@কাবাডি@

কাবাডি খেলা ছোট বড় সবার অনেক প্রিয় খেলা। এই খেলাটির অন্য নাম হচ্ছে হা-ডু-ডু। কাবাডি বা হা-ডু-ডু হচ্ছে আমাদের জাতীয় খেলা। এই খেলা খেলতে দুই দলে বিভক্ত হয়ে খেলতে হয়। দু দলে কমপক্ষে ১০ জন খেলোয়াড় থাকে। গানের সুরে কাবাডি কাবাডি বলে দৌড় শুরু করে প্রতিপক্ষের এলাকায় প্রবেশ করে এবং এক নিঃশ্বাসে তা বলে তাদেরকে ছুঁয়ে আসতে হয়। অধিক সংখ্যককে ছুঁতে পারলে সে দল জয়ী হয়। প্রতিপক্ষ তাকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে এবং জাপটে ধরে। ঐ মূহুর্তে দম ছেড়ে দিলে সে খেলা থেকে বাদ হয়ে যায়।

@কানামাছি@

কানামাছি খেলাটি ছেলে মেয়ে উভয়েরই প্রিয় খেলা। এই খেলায় একজনকে কাপড় বা গামছা দিয়ে তার চোখ বেঁধে দিতে হয়। এরপর তাকে মৌমাছির মত ঘিরে ধরে অনেক কজনে এবং তার গা ছুঁয়ে দিতে হয়। চোখ বাঁধা অবস্থায় কোন একজনকে ধরতে পারলে সে চোর বনে যায় এবং তার চোখ বেঁধে দিতে হয়। এভাবেই খেলা চলতে থাকে।

@দড়ি খেলা@

দড়ি খেলা ছোট ছেলে মেয়েদের খেলা প্রিয় সব খেলার মধ্যে অন্যতম। দেখে সহজ মনে হলেও এই খেলাটি খুব একটা সহজ নয়। এই খেলাটি খেলতে একটি নির্দৃষ্ট সাইজের দড়ির প্রয়োজন হয়। যা পায়ের নিচ দিয়ে অতিক্রম করাতে হয়। এই খেলাতে যে অধিক সময় ধরে দড়িটিকে পায়ের নিচ দিয়ে অতিক্রম করাতে পারে সে জয়ী হয়।

@চাকা খেলা@

চাকা খেলা ছোটবেলার অন্যতম খেলা। সাইকেল বা রিক্সা অথবা মোটর সাইকেলের টায়ার নিয়ে দৌড় খেলা । সারাদেশের শিশুদের এই চাকা নিয়ে সারাক্ষণ দৌড়ানো ছিল প্রতিদিনের বিনোদন ও শরীরচর্চার একটা অংশ। একটি ছোট লাঠি দিয়ে এই চাকাতে আঘাত করলে তা চলতে শুরু করে। সাথে সাথে দৌড়ও দিতে হয়।

@ডাঙগুলি@

ডাঙগুলি খেলা গ্রাম্য খেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই খেলাটা অনেকেরই প্রিয়। আমাদের দেশের কোন কোন জায়গায় এই খেলা ডানবাদি বা গুটবাদি হিসেবেও অনেকের কাছে পরিচিত। আবার কেউ কেউ এই খেলাকে ডান্ডাগুলি খেলাও বলে থাকে। ডাঙগুলি বা ডান্ডাগুলি খেলা খেলতে গিয়ে অনেক স্মৃতিময় ঘটনা ঘটেছিল। এই খেলাটা খেলতে ২টি কাঠ বা বাঁশের লাঠি লাগে। একটি বড় লাঠি যা ডান্ডা ও ছোট লাঠি গুলি নামে পরিচিত। সাধারণত এই খেলা খেলতে ৩ জন বা তার অধিক সংখ্যক সদস্য লাগে। একজনকে একপাশ থেকে ডান্ডা দিয়ে গুলিকে সজোরে আঘাত করতে হয় এবং অন্যান্য সদস্যরা তা ধরতে চেষ্টা করে।

@ঘুড়ি উড়ানো@

ছোট বড় থেকে শুরু করে সকল বয়সেরই বিনোদনের প্রিয় মাধ্যম হচ্ছে ঘুড়ি উড়ানো। বিভিন্ন রঙের ও বিভিন্ন রকমের ঘুড়ি দেখা যায়। সাধারণত বসন্তকাল এবং গ্রীষ্মকালে ঘুড়ি উড়ানো হয়। গ্রামের ছেলেরা স্কুল মাঠে অথবা ফাঁকা ফসলের মাঠে ঘড়ি উড়ায়। প্রতিযোগিতা হয় কে কত উচ্চতায় ওঠাতে পারে। বিকেল হলেই ছেলেরা নাটায় হাতে ছুটে যায় মাঠে। অনেকেই নিজে নিজে ঘুড়ি বানাতে পারে। শহরাঞ্চলের অনেকেই বাড়ির ছাদে ঘুড়ি উড়ায়। কিন্তু আজ দিন দিন তা হারিয়ে যাচ্চে।

@মার্বেল খেলা@

ছেলেদের সবচেয়ে প্রিয় খেলা হচ্ছে মার্বেল খেলা। মার্বেল খেলাটি মূলত ছেলেদের খেলা। অনেক ধরনের মার্বেল খেলা আছে। এই খেলা খেলতে অনেক গুলো কাঁচের মার্বেল দরকার হয়। কমপক্ষে ২ জন ও তার সংখ্যক খেলোয়াড় প্রয়োজন হয়।

শেষকথা, কালের অতলে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলো। দিনে দিনে নতুন প্রজন্মের কাছে তা অধরাই রয়ে যাচ্ছে। আসুন আমরা সবাই মিলে কৈশোরের খেলাধুলাসহ আমাদের দেশীয় গ্রামীন ঐতিহ্যগুলো তুলে ধরি নতুন প্রজন্মের কাছে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিলন বনিক অনেক অনেক ধন্যবাদ জামান ভাইকে....সেই শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত খেলাগুলোকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য...খুব ভালো লাগছে....
ভালো লাগেনি ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাই! ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো! ইচ্ছে করে আবার যদি ফিরে যেতে পারতাম সেই আমন্দময় শৈশবে!
ভালো লাগেনি ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
আলী হোসাইন কিছু জানা কথা আবার জানলাম
ভালো লাগেনি ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাই! ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো!
ভালো লাগেনি ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
মোঃ সাইফুল্লাহ খুবই সুন্দর। আমার মা গলব্লাডারে ক্যান্সারে আক্রান্ত। আল্লাহর কাছে আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন ও আমার মায়ের শাররিক অসুস্থতার বিষটি মানবিক দিক দিয়ে বিচার করে যে যতটুকু পারেন আর্থিক সাহায্য করবেন । সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা : মোঃ সায়ফুল্লাহ ,সঞ্চয়ী হিসাব নং -১০১৭৪০৪, সোনালী ব্যাংক,মাগুরা শাখা মাগুরা। যোগাযোগের ঠিকানা এবং বিকাশ নং :০১৯১১-৬৬০৫২২।
ভালো লাগেনি ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাই! ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো!
ভালো লাগেনি ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
আবু বাকার সিদ্দিক দারুণ লিখেছেন।
ভালো লাগেনি ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাই! ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো!
ভালো লাগেনি ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
এশরার লতিফ আমাদের ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার উপর সুন্দর প্রবন্ধ। ভালো লাগলো।
ভালো লাগেনি ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাই! ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো!
ভালো লাগেনি ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

২২ এপ্রিল - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৩১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪