রাত্রির যাত্রী

মা (মে ২০১১)

মাহমুদ শাহীন
  • ১৭
  • 0
  • ৮২৪
কোনো এক গুরুত্বপূর্ণ কাজে রাজশাহী যাচ্ছি।
পদ্মা এক্সপ্রেস।
শীত আসি আসি করেও যেন আসছে না। শুধু হিম হিম ঠাণ্ডা বাতাস। আর ঢাকার আবহাওয়ায় তো কখন শীত আর কখন গরম বোঝার জো নেই।
তবে সবার পোশাক-আশকের পরিবর্তন দেখে মনে হয় শীত বেচারা হয়তবা এসেই পরল বলে।যতটা না শীত থেকে বাঁচার চেষ্টা, তার চেয়ে যেন ঢের বেশী সবার ফ্যাশন সচেতনতা!
মধ্য রাত্রির ট্রেন।
ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে আধাঘণ্টা বসে থাকার পর ট্রেন এল। টিকিট আগেই কাটা ছিল।নম্বর অনুযায়ী যথাস্থানে বসে পরলাম।সিটগুলো পাশাপাশি জোড়া লাগানো। ডানে-বাঁয়ে দু’দিকেই ফাঁকা। কোনো উপন্যাস হলে হয়ত পরের কোনো স্টেশন থেকে একটা সুন্দরী মেয়ে এসে পাশের কোনো এক সিটে বসে পড়ত। আমার বেলায় অবশ্য সচরাচর এমনটা ঘটে না।
হুইসিল বাজার সাথে সাথে ট্রেন চলতে শুরু করল।
আমার সাথে অবশ্য এই ট্রেনের সম্পর্ক বহুদিনের। স্মৃতির টানে কিংবা যদি বলি - নিজেকে ফিরে পাবার আশায় প্রায়ই আমাকে এতে চরে রাজশাহী যেতে হয়।
ঝম ঝম শব্দ করতে করতে ট্রেনটা ছুটে চলেছে আর শহরের আলোগুলো ক্রমশ: দূরে সরে যাচ্ছে। কামরায় যে যার আসন ঠিক করে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।
শীতের কাপড়টা ভাল ভাবে গায়ে জড়িয়ে নিলাম। ঢাকায় শীত না থাকলে কি হবে, উত্তর আর পশ্চিমে যে এখন ভয়াবহ ঠাণ্ডা! ট্রেন ছুটে চলার সাথে সাথে যেন সে ঠাণ্ডা আরও গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। আকাশে অর্ধেক চাঁদ, কিন্তু গাড় কুয়াশায় তা যেন আরও অস্পষ্ট!
ব্যাগ থেকে ম্যাগাজিন বের করে আবছা আলোয় চোখ বুলাতে বুলাতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল নেই। ঘুম ভেঙ্গে দেখি রাত ৩টা বেজে গেছে। কন কনে ঠাণ্ডায় শরীর হিম হবার জোগাড়! প্রচণ্ড কুয়াশার কারণে ট্রেন আস্তে চলছে।
গায়ের চাদরটা ভাল ভাবে জড়িয়ে নিতে যাচ্ছিলাম, এমন সময় একটা গোঙ্গানির শব্দ! এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলাম সবাই অঘোরে ঘুমাচ্ছে। ভুল শুনেছি মনে করে সিটে হেলান দিতেই আবার সেই শব্দ! তবে এবার আরও একটু স্পষ্ট! কেমন যেন বাচ্চার কান্নার আওয়াজের মত!

শরীরটা কেমন যেন শিহরিত হয়ে উঠলো! মাঠের পর মাঠ পেরিয়ে ট্রেনটা ছুটে চলেছে। যাত্রীরাও সবাই ঘুমন্ত। এর মধ্যে এমন একটা আওয়াজে গায়ের লোম খাড়া হওয়াটাই স্বাভাবিক! আবার ভাবলাম পাশের কামরায় হয়তবা কোনো বাচ্চার কান্নার শব্দ হবে। কিন্তু শব্দটা যে আসছে স্পষ্টত: দরজার দিক থেকে একথা খেয়াল হতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো!

একটানা কেঁদেই চলেছে বাচ্চাটা। কিন্তু কেউ মনে হয় শুনছে না।
সাহস করে দাঁড়িয়ে গেলাম। এক পা দু’পা করে দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম ঘটনা কি দেখার জন্য। দরজার প্রবেশ পথে পা ফেলতেই আবছা অন্ধকারে যা দেখা গেল তাতে রীতিমত স্তম্ভিত হয়ে গেলাম!
থমকে দাঁড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। ঘটনার আকস্মিকতায় কিছুই মুখ দিয়ে বের হচ্ছিল না।
এক গর্ভধারিণী মা তার শিশু সন্তানকে নিজের একখণ্ড ছেঁড়া আঁচলে জড়িয়ে বুকের মধ্যে নিয়ে কান্না থামানোর বৃথা চেষ্টা করছেন, আর শিশুটি শীত সহ্য করতে না পেরে একটানা চিৎকার করেই চলেছে!
মাথার ভেতরে ঝিম ঝিম করে উঠলো আমার। আমি পুনর্বার মহিলার দিকে তাকাতে পারলাম না। এক অসহায় জননী নিজের সম্ভ্রমকে উপেক্ষা করে তার বুকের মানিকের শীত নিবারণে ব্যস্ত আর আমরা কিনা পরম সুখে চেয়ারে শুয়ে অঘোরে ঘুমচ্ছি!
অবচেতন মন ধিক্কার দিয়ে উঠল নিজেকে! টিকিট কাটেনি বলে যে মা খালি থাকতেও একটা চেয়ারে বসার সাহস পায়নি আমরা সেই মায়ের সন্তান হয়ে কিনা অনায়াসে কত চেয়ার দখল করে দিব্যি আরামে শুয়ে আছি! কেমন সন্তান তাহলে আমরা!
ত্রস্ত পায়ে সিটে ফিরে গিয়ে চাদরটা নিয়ে এলাম। চাদরটা সামনে বাড়াতেই তিনি নিজেকে আরও গুটিয়ে নিলেন। হায়রে বাঙ্গালী মায়ের আত্মসম্মানবোধ! আর তার সন্তান হয়ে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি করেও আমাদের আত্মসম্মানে একটুও মরিচা ধরে না!
বাচ্চাটাকে চাদরে জড়িয়ে কোলে তুলে নিয়ে সিটে ফিরে গেলাম। উৎকণ্ঠিত মা ধীর পায়ে আমার পিছু পিছু এসে অনিচ্ছা স্বত্বেও আমার পাশের সিটে বসে সন্তানকে বুকে জড়িয়ে নিলেন, আর ছল ছল নয়নে তাকালেন আমার দিকে। দেখলাম তার চোখের কোণে একরাশ অশ্রুর বন্যা আর সেই সাথে কৃতজ্ঞতা বোধ!
আমার চোখের কোণেও অশ্রু এসেছিল কিনা খেয়াল করিনি, তবে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এসেছিল ভেতর থেকে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
sakil ভালো লেগেছে
শিশির সিক্ত পল্লব এক অসহায় জননী নিজের সম্ভ্রমকে উপেক্ষা করে তার বুকের মানিকের শীত নিবারণে ব্যস্ত আর আমরা কিনা পরম সুখে চেয়ারে শুয়ে অঘোরে ঘুমচ্ছি!.....সত্যি ভাই লেখাটার শেষ দিক ২ বার করে পড়লাম.....তবে আবারও পড়ব...শুধু ভাল না অসাধারণই লগলো
Rabbi azmal খুব ভালো লিখেছেন গল্পটা
মামুন ম. আজিজ টুকরো ঘটনা বেশ হৃদয়নাড়া দেযাজনক
সূর্য গল্পটা পড়তে পড়তে গায়ের লোমগুলো যেন দাড়িয়ে গেল। আসলেই আমরা সব পারি................. শেষটা খুব ভাল হয়েছে। আরো ভালো করার কথা বলা বৃথা তুমি এমনিতেই আরো ভাল লিখতে পারবে।
স্য়েদা তাবাসসুম আহমেদ apni besh prangol vasai ekti nirmom sotto ke sundorvabe uposthapon korte perecen tai golpoti choto holeo sundor ...bhalo legeche
বিন আরফান. প্রথমেই ধন্যবাদ দিচ্ছি apnake , keno ta prokash korlam na. golpe bastob chitro foote uthechhe. aro monjog diye likhle beshi valo lagto. chaliye jan. shoov kamona roil.

১৮ এপ্রিল - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪