না-লিঙ্গের নববর্ষ

বিশ্বকাপ ক্রিকেট / নববর্ষ (এপ্রিল ২০১১)

নাজমুল হাসান নিরো
  • ৬২
  • 0
  • ৭০
আয়নাটা মুখের সামনে নিয়ে সাজতে বসে রুবি। বাসায় এখনও কেউ ফেরেনি। সবাই যার যার কাজে বাইরে। এই ফাঁকে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখটা ধুয়ে সাজার জিনিসপত্র নিয়ে সাজতে বসেছে ও।
দেখতে একদম খারাপ না রুবি। গোলগাল মুখ আর ফর্সা ত্বকের জন্য সহজেই সবার নজর কাড়তে পারে। আর তাছাড়া অন্যদের মত খোঁচা খোঁচা দাড়িও নেই ওর। এককথায় ওকে মোটামুটি সুন্দরই বলা যায়।
তা হলে কী হবে; কাল নববর্ষ, এই প্রথম ছেলেবন্ধুর সাথে ও নববর্ষ উদযাপন করতে যাচ্ছে। সারাটা দিন হাতে হাত রেখে টইটই করে ঘুরবে। ও যখন সেজেগুজে বের হবে তখন ওকে দেখতে কেমন লাগবে তা আগেই একবার দেখতে খুব ইচ্ছা করছে রুবির। আর সে জন্যই তো কেউ নেই দেখে ফাঁক বুঝে সাজতে বসা।
কপালে একটা লাল টিপ পড়ল ও। আয়নাতে দেখে ঠিকঠাক করে নিল। লাল টিপ রতনের খুব পছন্দ। সেজন্যই বোধহয় হুট করে মনটা কেমন জানি পিছনে চলে গেল। মনে পড়ল রতনের সাথে প্রথম যেদিন দেখা হয় সেদিনের কথা। প্রথম যেদিন দেখা হয় রতনের সাথে - সেদিনও রুবি লাল টিপ পড়েছিল। রতন একদৃষ্টিতে চেয়ে ছিল রুবির লাল টিপের দিকে। আর একটু পরপর ওর গোটা মুখমণ্ডলে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিল। রুবিও তাকিয়েছিল রতনের দিকে - তবে অমন ভেড়ার মত নয়। ওভাবে ভেড়ার মত চেয়ে থাকলে লজ্জা লাগে না!
রুবি যখন প্রথম তাকিয়েছিল রতনের দিকে তখনই ওর কি যেন কী একটা হয়ে গিয়েছিল। একটা ঝড় হৃদয়ে, একটা ভাল লাগার শিরশিরানি অনুভূতি। রতনের ওই সুন্দর, মায়াবী মুখ ওকে প্রচণ্ড ভাল লাগার আবেশে আচ্ছন্ন করে দিয়েছিল। তখনই বুঝতে পেরেছিল রুবি একেই বোধহয় বলে ভাল লাগা - যা ধীরে ধীরে পরিণত হয় ভালবাসায়। খুব ইচ্ছা করছিল রতনের চোখের দিকে অনন্তকাল তাকিয়ে থাকে, হারিয়ে যায় ওর চোখের অন্তহীন গভীরতায়। কিন্তু রতন হ্যাবলার মত ওর দিকে এমনভাবে হা করে তাকিয়েছিল যে লজ্জায় ও আর রতনের দিকে তাকাতেই পারছিল না। শুধু আড়চোখে দেখে নিচ্ছিল মাঝে মাঝে।
ও হাঁ যা রতনের ব্যাপারে তো বলাই হল না যে রতন কে। রতন? রতন হল রুবির জানের জান। ওর প্রাণের প্রাণ। ওর একমাত্র ভালবাসা। এক জীবনের সমস্ত ভালবাসা ও নিংড়ে দিয়েছে রতনের জন্য। রতনকে যেন অন্তর দিয়ে অনুভব করতে পারে ও। রতনকে ও প্রচণ্ড ভালবাসে। আর সেজন্যেই তো সপ্তাহান্তরে ওর সঞ্চয়ের সবটুকু ও তুলে দিয়ে আসে ও রতনের হাতে। যেন ওর ভালবাসার মানুষটা একটু হলেও ভাল থাকে। একটু হলেও ভাল ভাবে চলতে পারে।
সেদিন কাকলীর উপর প্রচণ্ড চটে গিয়েছিল রুবি। ওর ভালবাসার মানুষটা সম্পর্কে যা-তা বলতে শুরু করেছিল কাকলী। বলেছিল রতন নাকি ঠগ, প্রতারক। সুবিধা আদায়ের জন্য রুবির সাথে ভালবাসার অভিনয় করে।
আসলে সুবিধা উসুল হয়ে গেলেই সরে পড়বে। রুবিকে আরো বলেছিল তুই রতনকে ভুলে যা। এসব ভালবাসা তোর আমার জন্য না। আমাদের ভাল লাগতে নেই ভালবাসতে নেই।
কিন্তু রুবির কখনোই মনে হয় না রতন অমন একটা ছেলে। রতন ওরকম হতেই পারে না। ওর বিশ্বাস রতনও ওকে ভালবাসে মন-প্রাণ দিয়ে। যেমন ও ভালবাসে রতনকে। কারণ রতনের চোখে ও দেখেছে ভালবাসা। ভাল লাগার গভীর আবেগ। এ কখনো মিথ্যা হতে পারে না। চোখ যে মনের কথা বলে।
ওর বিশ্বাস রতন কখনোই ওকে ফেলে যাবে না। ওকে আঁকড়ে ধরে রাখবে সারা জীবন।
এই মুহূর্তে কত প্ল্যান যে আসছে মনে! ওর ভালবাসার মানুষের সাথে জীবনের প্রথম নববর্ষ যে কীভাবে পার করবে তা কিছুতেই ঠিক করে উঠতে পারছে না। একবার মনে হচ্ছে টি.এস.সিতে যাবে, একবার মনে হচ্ছে রমনায়। আবার মনে হচ্ছে সারাদিন রিক্সায় গোটা ঢাকা শহর ঘুরে বেড়াবে।
নাহ্, সেটা রতনই ঠিক করবে। ওর ভালবাসার মানুষটা যা ইচ্ছা করবে দুজনে তা-ই করবে। সেটাতেই আনন্দ খুঁজে নেবে ও।
ভাবনায় ছেদ পড়ে গেল বাইরে কাকলীদের গলা শুনে। ওরা এসে ওকে এভাবে সাজুগুজু করতে দেখলে খুব হাসাহাসি করবে। ঝটপট সাজার জিনিসগুলো ড্রয়ারে ঢুকিয়ে দিয়ে বাথরুমে চোখমুখ ঠিকমত ধুয়ে বসে পড়ল রাত বারোটার অপেক্ষায়। কারণ বারোটা বাজলে রতন উইশ করার আগেই ওকে উইশ করতেই হবে 'শুভ নববর্ষ'।
এগারোটার পর থেকে ও অধীর আগ্রহে বসে থাকে কখন বারোটা বাজবে। আর কখন ও রতনকে উইশ করবে। বার বার মোবাইল ফোনে টাইম দেখে। অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হয় না।
স্ক্রিনে বারোটা বাজা মাত্র ও ফোন দিল রতনকে। নিঃশ্বাস চেপে রইল - রতন হ্যালো বলা মাত্রই ওকে উইশ করবে 'শুভ নববর্ষ'। কিন্তু ওপাশ থেকে রতনের কণ্ঠের পরিবর্তে একটা নারীকন্ঠ ভেসে এলো,"দুঃখিত, কাঙ্ক্ষিত নাম্বারটিতে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।"
মনটাই খারাপ হয়ে গেল। আর মন খারাপ করেই বা কী হবে। বেচারা সারাদিন যা পরিশ্রম করে! হয়তো ক্লান্ত হয়ে মোবাইল ফোন অফ করে ঘুমিয়ে পড়েছে। অগত্যা রুবিও ঘুমিয়ে পড়ে একসময় ফোনে ট্রাই করতে করতে।
সকালবেলা উঠে না খেয়েই রুবি সাজতে বসে যায়। না জানি কখন রতনের ফোন আসে আর ও বলে ঝটপট বের হও। একসময় ওর সাজা শেষ হয়ে যায় কিন্তু রতনের ফোন আসে না। সেও ট্রাই করে কয়েকবার রতনের ফোনে, কিন্তু প্রত্যেকবার বন্ধ পায়। মন ভীষণ খারাপ হয়ে যায় রুবির। ঘুরতে বেরুনোর কথা বাদই থাক। রতনের কোন বিপদ হল না তো? ধীরে ধীরে সকাল পেরিয়ে দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে আসে রতনের কোন খবর আসে না। অস্থির হয়ে ওঠে রুবি। জানালার ধারে বসে থেকে একে একে সব সাজ তুলতে শুরু করে। বেরুতে না পারার কারণে খারাপ লাগছে কিন্তু সেটার চেয়েও এখন ওর বড় চিন্তা রতন না জানি কোন বিপদের মধ্যে আছে। ওকে একটু জানাতেও পারছে না। হঠাৎ সেলফোনে মেসেজ টোন বেজে ওঠে। প্রচুর আগ্রহে চিলের মত ছোঁ মেরে ও উঠিয়ে নেয় ফোনটা। রতন একটা এস.এম.এস দিয়েছে। প্রচণ্ড ভাললাগার অনুভূতি নিয়ে এস.এম.এস খোলে রুবি। রতন ওকে লিখেছে,"Good Bye Fool. Aj theke ami tomake delete kore fellam karon tomar cheye besi taka debe emon ekjonke peyesi ami. Jodi lozza thake tahole amake r kokhono birokto korba na.”
চোখের পানি আটকে রাখতে পারে না রুবি। ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে। মুহূর্তের মধ্যে ওর গোটা সাজানো ভুবনটা ভেঙ্গে পড়েছে। বিশ্বাস করতেও কষ্ট হয় যে রতন এমন হতে পারে! ওর ভালবাসার মানুষটা তাহলে শুধু টাকার জন্য ওর সাথে অভিনয় করত। কষ্টে বুক ভেঙ্গে যায়। বারবার শুধু কাকলীর কথাই মনে পড়ে - আমাদের ভাল লাগতে নেই, ভালবাসতে নেই। কারণ, কারণ আমরা মেয়ে মানুষও না ছেলে মানুষও না; আমরা মানুষ না আমরা হিজড়া।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
বিন আরফান. আমার দেখা সেরা ৫ এর ১ টি , মতামত ৫৬ ভোট ১৩. আপনি প্রচার কেন আরো কিছু বন্ধ করলেও আমাদের হিংসা দূর হবে না. কেননা আমরা অনেকেই লেখা শিখতে নয় বিজয়ী হতে এসেছি.
এস, এম, ফজলুল হাসান অনেক ভালো লেখেছেন , ধন্যবাদ আপনাকে
নাজমুল হাসান নিরো ধন্যবাদ সুমি আপু।
সুমননাহার (সুমি ) সত্তি সুন্দর লিখেছেন আপনি কিন্তু আরেকটু বড় হলে ভালো হত.
নাজমুল হাসান নিরো ধন্যবাদ আযহা সুলতান। আপনাদের দোয়া পেলে আরও ভাল হবে তো অবশ্যই।
Azaha Sultan ...দারুণ হয়েছে! আরও ভাল হোক...
নাজমুল হাসান নিরো ধন্যবাদ মাহমুদা rahman
মাহমুদা rahman খুভ ভালো হয়েছে
নাজমুল হাসান নিরো ধন্যবাদ শুক্লা। আপনারা চাইলে অবশ্যই লিখব।

২৪ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪