গর্বিত আগামি প্রজন্ম!

গর্ব (অক্টোবর ২০১১)

অবিবেচক দেবনাথ
  • ৫২
যুগ বদলেছে........
চারিদিকে আজ পালাবদলের হাওয়া। প্রকৃতির আনাচে-কানাচে পালাবদলের ঢেঁউ। সুন্দর বদল, কত সৃষ্টি-সৈকতের আগমণী বার্তা, বৈচিত্রের রঙ্গে-ঢঙ্গে বর্নিল।
সত্যি কি তাই! এই বদল শৃঙ্খলিত? এই পালাবদলের সুর কি বৈচিত্র্যের আহ্বানে চির-সুন্দর?
ঠিক আছে, আসুন আমরা একটা পালাবদলের চিত্রফট দেখী।

কি???? শালার বাচ্চা শালা, ইয়া...........
রাগে মুখ দিয়ে ফোঁস-ফোঁস আ্ওয়াজ করতে করতে রাস্তায় ফেলে সমবয়েসি আরোকজনকে মারছে ছেলেটি। রাস্তায় পড়ে যা্ওয়া ছেলেটিও নিজেকে বাঁচানোর
প্রানান্তচেষ্টা করছে বিধায় উপরেরজন তেমন সুবিধা করতে পারছেনা। সে উল্টা-পাল্টা হাত চালাচ্ছে আর বলছে-শুয়রের বাচ্চা, আজ তোকে কিছুতেই ছাড়মুনা।
আট-দশজনের একদল বন্ধুর দু'জনের মারামারি চলছে আর বাকীরা উল্লাসচিত্তে তা দেখছে আবার কেউ-কেউ একটু অভয়ের সুর মিশিয়ে মারামারিটাকে আরো
একটু শক্ত পাকাপোক্ত করছে। আহা! দু`জন বন্ধু মারামারি করছে, এযেন দেখার মাঝেও একধরনের উল্লাস বিদ্যমান! মারামারি যেভাবে হচ্ছে তাতে মনে হয়
নাক-মুখ-মাথা ফেটে রক্তারক্তি কিছু হবে। আরে হোক না, তার জন্যইতো দর্শকরা নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এত সুন্দর একটা মারামারি হচ্ছে অথচ
রক্তারক্তি কিছু হবেনা অথবা আহত হয়ে কারো মুখ থেকে কান্নার সুর বের হবেনা এ মানা যায়? তাছাড়া আপনারা সিনেমায় দেখেন নি, রক্তারক্তি না হলে
কিন্তু আমাদের দেশের নায়কের শক্তি আসে না। এখানেও সবাই হয়তো নায়ক-ভিলেন সনাক্ত করার অপেক্ষায় আছে। শুধু যে বন্ধুরদল তামাশা দেখছে তা নয়,
আশেপাশে দু'‌চারজন মুরুব্বিও তামাশা দেখছেন, তাদের তামাশা দেখার ভাব দেখে আমার ভীষন ভালো লাগছে। তাই মনে-মনে বললাম-আহা দেখুন, দেখুন।
দেখতে তো ভালোই লাগছে। এরা আমাদের আগামি প্রজন্ম, লড়াকু ভাব নিয়ে এরা গড়ে উঠতে পারলে আমাদের ভবিষ্যত উজ্জ্বলতায় চকচক করবে। আমরা
গ্রাফাইট দিয়ে কেন পেন্সিল বানাবো? আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সুন্দর! আমরা হীরকখন্ডে ঘর সাজাবো। হ্যাঁ; এভাবেই আমাদের এক-একটা হীরকখন্ড তৈরী
হবে।

আমি বাসায় ফিরছিলাম। কেন জানি বালক দু'টির মারামারি থেকে নায়ক-ভিলেন সনাক্ত করতে পারলাম না, তাই বীরদর্পে নিজেই নায়করূপে
ঝাঁপিয়ে পড়লাম। একজনকে ধরে হাতের কোঠরে নিলাম আর অন্যজনকে পাশে সরিয়ে দিলাম। হায়, হায় এই আমি কি করেছি? উৎসবের জোয়ারে
ভেসে যা্ওয়া মুখগুলোতে আমি ভাঁটা পেলে দিলাম? সকলে বোধহয় কষ্ট পেয়েছে। যা হোক; কষ্ট পেলেও আমার কিছু করার নেই, আমার কিছুই
ভাবার নেই। যাকে আমি হাতের কোঠরে ধরে রেখেছি সে রাগে ফোঁস-ফোঁস করছে আর প্রাণান্তচেষ্টা করছে যুদ্ধের শেষ মূহুর্ততার অবতরণ করতে।
তাকে ধরে রাখতে গিয়ে বুঝতে পারলাম, ছেড়ে দিলে এই ছেলেটি হতো দৃশ্যপটের নায়ক!

ছেলেটিকে এভাবে ধরে রাখাতে একজন মুরুব্বি আমাকে প্রশ্ন ছুড়ল, সে আমার ভাই অথবা ভাতিজা নাকি? আমি কোন জবাব না দিয়ে ওকে পাশের
একটা চা-দোকানের বেঞ্চে বসালাম। অন্যজনকে ঠেলে সরিয়ে দিতেই সে তার বাকী বন্ধুদের সাথে হেঁটে চলে যেতে লাগল। ধরে রাখা ছেলেটির গাঁয়ে
হাত দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ভাইয়া কি হয়েছে বলতো? কেন মারামারি করছ?

-ছেলেটি কিছুই বলল না। সে শুধু রাগে ক্ষিপ্ত গোখরার ন্যায় ফোঁস-ফোঁস করে চলছে। তার ভাব দেখে আমার মনে হল, সে ভাবছে আমার ক্ষমতা
বেশী থাকার সত্ত্বেও আমি আমার অবস্থান বুঝিয়ে দিতে পারলাম না।সত্যি বিষয়টা তার জন্য কষ্টের! ওর বন্ধুরা কিছুদূর এগিয়ে গেল, কিন্তু আমি ওকে
ছাড়লাম না, কারণ ও এখনো স্থির হতে পারছেনা। আমি ওকে ধরে রেখেই বললাম, তুমি যেতে ছাইলেও আমি তোমাকে ছাড়ছি না। আগে তুমি যার সাথে
মারো-মারি করছিলে সে বাসায় পৌঁছুক তারপর তোমাকে আমি ছেড়ে দেব। চা দোকানের দিকে তাকালাম, দেখলাম সেখানে খাবার মতো ভালো কিছু নেই।
তবুও ছেলেটিকে জিজ্ঞাসা করলাম, ভাইয়া কিছু খাবে? ক্ষিপ্তস্বরে জবাব এল- না। এভাবে আরো কিছুবার জিজ্ঞাসা করলাম, কিন্তু ছেলেটার মুখ থেকে সম্মতি
পেলাম না। বন্ধুরা সবাই দৃষ্টির আড়াল হয়ে যেতেই ছেলেটি যাবার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠল। আমি ওকে বললাম কি হয়েছিল তোমাদের মাঝে তা আগে
আমাকে বল। আর যার সাথে মারা-মারি করেছে সে বাসায় না পৌঁছা পর্যন্ত তোমাকে আমি ছাড়ছি না। আরো কিছুক্ষন অতিবাহিত হল, ছেলেটি আমাকে
তাদের মারামারির কারণ কিছুই বলল না, সে এখনো ছুটে যেতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

আমি ওকে বললাম তুমি জোর করছ কেন? তুমি চাইলেও আমার হাত থেকে ছুটে যেতে পার না, তাই না? ছেলেটার মুখ থেকে কোন উত্তর পেলাম না।
কিছুক্ষন পর, ছেলেটি বলল, ওরা এখন বাসায় পৌঁছে গেছে, আমি যাব। আমি বললাম ঠিক আছে , আমি তোমায় ছেড়ে দিতে পারি যদি তুমি আমাকে
কথা দাও, তুমি ওর সাথে আর মারামারি করবে না। আর যা হোক, সেতো তোমার বন্ধু, তাহলে মারামারি কেন? আর রাস্তার উপরে এভাবে মারামারি
করাটা কি ভীষণ খারাপ দেখায় না? এতক্ষন পর ছেলেটি আমার প্রশ্নের জবাব দিয়ে বলল- জ্বি আমি আর মারামারি করব না। আমি ওকে পুনরায় জিজ্ঞাসা
করলাম- তুমি ঠিক বলছ তো? ছেলেটি জবাব দিল-জ্বি। ছেলেটির জ্বি জবাব পেয়েও আমি ঠিক বুঝতে পারছি না আসলে সে ঠিক বলছে কিনা। আমার এই
সন্দেহের কারণ হল- ছেলেটি এখনো নিজেকে স্থির রাখতে পারছে না। তারপরও ওকে এভাবে ধরে রাখতে নিজের কাছেই খারাপ লাগছে, তাই ওকে ছেড়ে
দিয়ে বললাম ঠিক আছে, তবে ধীরস্থিরভাবে বাসায় যাও। আমি ওকে ছেড়ে দিতেই ও বন্ধিদশা থেকে মুক্তি পেলে কোন বিহঙ্গ যেমন ছুটতে শুরু করে, ঠিক
সেভাবে দৌঁড়াতে লাগল। আমি আমার দৃষ্টির আড়াল হওয়া পর্যন্ত ছেলেটির দিকে তাকিয়ে থাকলাম। ওকে এভাবে ছুটতে দেখে আমি ওর শেষ স্বীকারোক্তির
উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে পারলাম না। কিন্তু এবার আমি অসহায়। পরবর্তী ঘটনাগুলোর জন্য শুধু বর্তমান ছেলেপুলেদের হীনজ্ঞান এবং সমাজের হীনবস্থার
স্বরূপ ভেবেই ক্ষান্ত হলাম। আর মনে-মনে ভাবতে লাগলাম আমরা কোন আগামির পথে চলছি? এরা আমাদের গর্বিত আগামী প্রজন্ম!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
অবিবেচক দেবনাথ মন্তব্যের জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আর সালেহ মাহমুদ ভাইকে কৃতজ্ঞতা জানাই। সবাই সতত মঙ্গলময় জীবন-যাপন করূন সেই কামনা রইল।
সালেহ মাহমুদ অবিবেচকের কাছে আরো ভালো কিছু চাই। বানানগুলো শুধরে দিলাম, দেখে নিবেন। ঢেঁউ = ঢেউ; চিত্রফট দেখী = চিত্রপট দেখি; আরোকজনকে = আরেকজনকে; ভাঁটা পেলে দিলাম = ভাটা ফেলে দিলাম; ছেলেটির গাঁয়ে = ছেলেটির গায়ে; ছাইলেও = চাইলেও।........... ধন্যবাদ
খন্দকার নাহিদ হোসেন গল্প লেখার হাতে খড়ি হিসেবে বলতে হয় বেশ লাগলো আপনার লেখা। সামনে যে আপনি আরো ভালো লিখবেন তা এখনই বলে দেওয়া যাচ্ছে।
মনির খলজি যে যা বলুক, ভাইয়া তোমার গল্পটা আমার বেশ ভালো লেগেছে !....কে বলে তুমি লিখায় কাচা ! ....বর্ণনা শৈলী ভীষণ সুন্দর !.....আর এ-লিখায়অনেক কটাক্ষ আছে সমাজের প্রতি ......আমরা বাঙ্গালীরা অন্যের সর্বনাশ দেখতেই পছন্দ করি যা কোনো না কোনো ভাবে আবার তা নিজের প্রতি প্রক্ষেপিত হয় ....শেষে পরবর্তী প্রজন্ম নিয়ে যে প্রশ্ন ছুড়ে দিলে ....তা বড়ই কঠিন !....শুভকামনা রইল ...
শেখ একেএম জাকারিয়া ভাল লাগল ভাই গল্পটি পড়ে।
M.A.HALIM গল্প সুন্দর হয়েছে বন্ধু শুভ কামনা রইলো।
অবিবেচক দেবনাথ পড়ার জন্য সকলের প্রতি অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা রইল।
খোরশেদুল আলম আমাদের সমাজের এই হাল, লেখক যাদের কে আগামী প্রজন্মের গর্ব হিসাবে দেখছেন আমরা তাদেরকে অংকুরেই ধ্বংশ করে দিচ্ছি, আমাদের শিক্ষা পাওয়া উচিৎ। ধন্যবাদ লেখক কে আমাদেরকে সচেতন করার জন্য।
Azaha Sultan অবিবেচক, ঘটনাটা নিত্যদিনের একটি ঘটনা......সেই আবহমানকাল থেকে ঘটে আসছে এমন ঘটনা.....গল্পে রূপ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ.....
মনির মুকুল গল্পের প্লটটা খুবই সুন্দর। আমার বাকী কথাটুকু সূর্য ভাই বলে দিয়েছেন।

১৭ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪