মুক্তির ক্ষুধা

ক্ষুধা (সেপ্টেম্বর ২০১১)

অবিবেচক দেবনাথ
  • ৮০
  • 0
  • ২৯
সে অনেকদিন আগেকার কথা, এক বনে ছিল এক দুষ্ট বাঘ, তার হিংস্রতায় ছিল বনজীবন ও জনজীবন অতিষ্ট। একদিন এক দুষ্ট শিকারীর ফাঁদে ধরা পড়ে খাঁচায় বন্দি হয় বাঘটি। ফলে বনজীবন ও জনজীবনে নেমে আসে সুখের বারতা।

এভাবে কিছুদিন কেটে যায়, দিনের পর দিন খাবারের অভাবে বাঘটি ক্ষুধার্ত ও ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং পথিমধ্যের লোকজনকে আকুতি-মিনতি করে তাকে ছেড়ে দেবার জন্য। কিন্তু দুষ্টবাঘের ব্যাপারে সবাই জানত বলে কেউ তাকে ছেড়ে দিতে রাজি হয়না। শেষে এক সহজ-সরল লোক বাঘের মায়াকান্নার মোহজালে ধরা পড়ে বাঘটিকে ছেড়ে দেয়। অবাক ব্যাপার হল বাঘটি বেরিয়ে এসে লোকটির উপর কৃতজ্ঞতা স্বীকার না করে ক্ষুধার তোপে তাকে খেতে ছুটে যায়। অনেক অনুনয়-বিনয় করেও লোকটি বাঘটির হাত থেকে বাঁচার উপায় খুঁজে পায় না। পরিশেষে ধূর্ত শিয়াল পন্ডিতের বুদ্ধিতে লোকটি প্রানে রক্ষা পায়।

উপরোক্ত গল্পটি লেখার জন্য এবং সমাজের দিকে বারংবার আঙ্গুলি তুলে সত্যতাকে আমাদের বোধগম্যতায় পৌঁছে দেবার জন্য গল্পকারকে অসংখ্য ধন্যবাদ। গল্পকার এই গল্পের মধ্যে জনজীবন ও বনজীবনকে একত্রিভূত করে সমাজের চোখে আঙ্গুলি তুলে সমাজকে কতটুকু দৃষ্টিপাত করাতে সক্ষম হয়েছেন তা আমার বোধগম্যতার বাহিরে, আমার বিশ্বাস গল্পকার এখানে হিংস্রবাঘের আড়ালে হিংস্র মানুষকে বুঝিয়েছেন। কারণ মানুষ আর হিংস্রবাঘটির মধ্যে পার্থক্য শুধু মনুষ্যত্ববোধের, যা হারালে মানুষ আর পশুর মধ্যে কোন পার্থক্য থাকে না।

বাংলাদেশ একটি নামভুক্ত গণতান্ত্রীক রাষ্ট্র। যেখানে সরকার গঠন করে দু’দল হিংস্রজানোয়ার। এদের একদল যখন ক্ষমতায় অসিন থাকে অন্যদল তখন খাঁচায়। ক্ষুধায় তখন খাঁচার জানোয়ারগুলো ছটফট করতে থাকে, লাফালাফি আর ছুটাছুটি করতে-করতে দূর্বল হয়ে তারা জন-সাধারণের কাছে করজোড়ে অনুনয়-বিনয় করতে থাকে। আর মুক্ত জানোয়ারের দল ধরপাকড়া দিতে থাকে রক্ত আর মাংসের স্বাদে। করতে থাকে হত্যা, রাহাজানি, লুটপাট, অরাজকতা, ধর্ষনসহ নানা অপকর্ম। আর আমরা যারা অতিসাধারণ, যাদের ইচ্ছে সুখে একবেলা একমুঠি খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করে বেঁচে থাকার, তাদের জীবন হয়ে পড়ে অতিষ্ঠ, আতঙ্কিত। তাদের কাছে আমাদের বেঁচে থাকাটাই যেন বোঝা ঠেকে, যেন অভিশাপে অভিশপ্ত হয়েছি তাদের মুক্ত করাতে। অনেক অনুনয়-বিনয় করেও আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞতার বদ্যৌলতে আমাদের জীবন-সংসার রক্ষার্থে ব্যর্থ হই। তারা ভুলে যায় এই আমাদের জন্যই তাদের মুক্তি, তাদের স্বস্তির নিঃশ্বাস।

-আমরা কোথায় যাব? কোথায় পাব আমরা সেই ধূর্ত শিয়াল পন্ডিতকে যে আমাদের রক্ষা করবে?
-ওহ! দুঃখিত। আমাদের একদল শিয়াল পন্ডিতও আছে, যারা সমাজের বিবেক। যাদের মতাদর্শে আমরা নিজেদের গড়ে তুলব। তারা কি আমাদের রক্ষা করবে?
-আহা, কিযে বলেন, কিভাবে তা করবে তাঁরা? তাঁরা আজ নিজেরাই তো স্তব্ধ, আতঙ্কিত। তাঁদের বুদ্ধিশিখা নিভে গেছে তেলের অভাবে। তাঁদের কলম নীরব হয়ে গেছে কালির অভাবে। তাঁরা নিজেরাই আজ শস্যফুল দেখতে পান চোখে। ভীত-তত্রস্থতায় তাঁরা বীরের পোশাক ছেড়ে চোরের বেশে রাতের অন্ধকারে চলাতেই এখন বেশী স্বাচ্ছন্দবোধ করেন ও নিরাপদ ভাবেন। তাই এখন পথে-পথে উপচে পড়ছে তাদের উপদেশ বাণী, শান্তনার ধ্বনি।
-হায়রে, এই আমার সমাজ! এই আমার দেশ! এই আমার বিবেক! শুধু রূদ্ধনিঃশ্বাস ছাড়া ফেলার মতো আমাদের কাছে কি আর কোন অবশিষ্ট আছে?
-এই দেশ, এই মমতা, এই স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করতে এ জাতি এতটা রক্ত ঢেলে দিয়েছি?

অবাক লাগে! সত্যি, অবাক লাগে। কি প্রয়োজন ছিল এমন স্বাধীনতার? কিসের আশায় আমাদের মা-বাবা, ভাই-বোন আর আত্মীয়-স্বজনরা অগ্নির দহনে পতঙ্গের ন্যায় নিজেদের সমাহিত করেছেন?
আজ কান্নার বাঁধ মানেনা, এই কলংক আমরা কোথায় ঘুচাব? সত্যি যদি চিরজীবন সত্যিই হয়ে থাকে, তবে কোন অধঃগতির প্রত্যাশায় আমরা বসে আছি অথবা কোথায় হতে মিটবে আমাদের মুক্তির ক্ষুধা?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
অবিবেচক দেবনাথ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ নীলাঞ্জনা আপু।
ভালো লাগেনি ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১১
নিলাঞ্জনা নীল আমাদের দেশের বর্তমান সামাজিক রাজনৈতিক চিত্র সফলভাবে তুলে ধরেছেন......... ভাল লেগেছে.......
ভালো লাগেনি ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১১
অবিবেচক দেবনাথ শক্তিশালি নেত্রীত্ববিহীন সংঘবদ্ধ হওয়া সম্ভব নয়, তাই আগে সত্যিকারের নেতা চাই, ধন্যবাদ ও শুভকামনা পড়ার জন্য।>>>সৌরভ ইসলাম।
ভালো লাগেনি ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১১
অবিবেচক দেবনাথ পড়ার জন্য ও সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আযহা ভাই।
ভালো লাগেনি ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১১
Sourav Islam মগজ বিপ্লব পেরিয়ে, সন্মূখের রাজপথে নামার অপেক্ষায়। আমরা পরিবর্তন চাই, কিন্তু আদৌ সংঘবদ্ধ নই। আসুন তবে হাতে রাখি হাত, সবে মিলে এক হই।অপেক্ষায়। আমরা পরিবর্তন চাই, কিন্তু আদৌ সংঘবদ্ধ নই। আসুন তবে হাতে রাখি হাত, সবে মিলে এক হই।
ভালো লাগেনি ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১১
Azaha Sultan অবিবেচক ভাই, যখন তুমি বিবেচকের কথা বল তখন কিন্তু অবিবেচক সম্বোধনে লজ্জাবোধ হয়......ধন্যবাদ বার্তাটি পৌঁছে দেওয়ার জন্য....
ভালো লাগেনি ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১১
অবিবেচক দেবনাথ সত্যি মিথ্যা জানী না, আমি শুধু জানি মানুষ হয়ে জন্মনিয়ে নিজের চিন্তায় আর সকলের সাথে টিকে উঠতে ব্যর্থ হচ্ছি, তাই অবিবেচক নামটাই আমার জন্য ঠিক। আর আমার মতো করে সবাই চিন্তা করলে রাজনীতিবিদদের হয়তো গায়ের চামড়াও থাকবেনা। আপনাকে ধন্যবাদ পড়ার জন্য ও সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
ভালো লাগেনি ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১১
অবিবেচক দেবনাথ আপনাদের ভালো লাগছে বলে ভালো লাগল হালিম ভাই, আপনার জন্য ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইল।
ভালো লাগেনি ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১১
জোড় হস্ত আপনি সত্যিই অবিবেচক !!!!আমাদের রাজনীতিবিদ (ধূর্তবিদ) রাও যদি এমন অবিবেচক হত।
ভালো লাগেনি ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১১
M.A.HALIM বন্ধু অতি সত্যি কথার গল্প। খুব ভালো লাগলো। শুভ কামনা রইলো।
ভালো লাগেনি ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১১

১৭ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "পদত্যাগ”
কবিতার বিষয় "পদত্যাগ”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ জুন,২০২৫