সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল, বাড়ি পৌছাতে এখনো প্রায় আট কিলোমিটার পথ বাকি। পুরোটাই হয়তোবা হেটে যেতে হবে, অবশ্য এখান থেকে তিন কিলো হাটলে রাধানগর বাজার, ওখানে ভ্যান পাওয়া যেতে পারে। না পাওয়া গেলেও তেমন সমস্যা হবেনা, কারন অভ্যাস আছে। আজ সবমিলিয়ে ত্রিশ কিলোর মত হাটা হয়েছে। অন্যান্য দিনের তুলোনায় একটু বেশি হলেও আজ দুপুরে ভাত জুটেছিলো। সিজানের মামা বাড়ি যে এইদিকে, জানা ছিলোনা। জানা থাকলেও ঐদিকে যেত না বাপ্পি, দুপুরের খাওয়াটাও হতনা। একটা ঘুঘুর পিছপিছ ওই বাড়িতে যাওয়া পড়লো! ঘুঘুটাকে অবস্য একটা তালগাছের পাতায় বসা অবস্থায় শ্যুট করেছিলো। কিন্তু ঐটা গাছের নিচে না পড়ে ডানা ঝাপটাটে ঝাপটাটে যেয়ে পাশের বাড়ি গিয়ে পড়লো বলে মনে হতেই ইমরান ঐদিকে দৌড় দিলো। ঘুঘুটাও পড়লো ঐবাড়ির উঠানে। বাড়ির লোকজনতো অবাক, কোথাথেকে একটা পাখি এসে উঠানে ডানা ঝাপটিয়ে পড়লো! যখন ইমরান দৌড়ে এসে ঘুঘুটাকে ধরলো, তখন তারা বুঝলো যে এরা শিকারি। ইমরান আবার একটু বাকপটু টাইপের, তাই সে কিভাবে যেনো আবিষ্কার করলো এইটা সিজানের মামা বাড়ি। আর যায় কোথায়, বাড়ির লোকজন বায়না ধরে বসলো- পাখি খাওয়াতে হবে। তখন ঐটা ধরে নয়টা ঘুঘু ! আবার সুবিধা হলোকি, বাজেও বেলা বারটা- ওদেরকেও দুপুরের দাওয়াত দেওয়া হল। সিজান ছিলনা অবস্য, বাপ্পি আর ইমরান। বাপ্পির অবস্য দাওয়াত গ্রহনে লজ্জা লাগছিল, কিন্তু ইমরানের ঠেলায় পড়ে ...
তারপর ওরা ঐ গ্রামেই ঘন্টাতিনেক ঘুরাঘুরি করে আরো চারটা ঘুঘু মারল । তারপর সিজানের মামা বাড়ি এসে খাওয়া সেরে পুনোরায় শুরু করল। এখন ফেরার পথে ইমরান বেশ কাহিল, সে অবস্য অল্পতেই কাহিল হয়ে যায় আর এইজন্যই বাপ্পি সাধারনত ইমরানকে আনতে চায়না। এর অবস্য অনেক কারন আছে, ও কখোনোই ইয়ারগানটা বইবেনা, কিছুক্ষন পরপরই বলবে- মামা ক্ষুধা লেগেছে, মামা আর হাটছে পারছিনা, মামা এইদিকে ভ্যান সাইকেলের দারুন অভাব... ইত্যাদি ইত্যাদি। তারপরও আজ ভোরবেলা ইমরানের পীড়াপীড়ীতেই বাপ্পি বেরিয়েছে। এখন ফেরার পথে ইমরান আবার ঘ্যান ঘ্যান শুরু করেছে- মামা, বাড়িতো অনেকদুর...ভ্যান কি পাবোনা...?
বাড়ি ফিরতে ফিরতে ওদের রাত হয়ে গেলো।
শিকারের নেশা বাপ্পির ছোটবেলা থেকেই। অস্ত্র চালাতে পারার আগথেকেই সে শিকারে যাওয়া শুরু করেছে। বাড়িতে বাবার নামে দাদার একটা বন্দুক থাকার কল্যানে বাবা-চাচারা সবাই শিকারে বেরতেন। আর বাপ্পি প্রত্যেক শিকারের সাথে। তারপর যখন ছোট চাচার মাধ্যমে বন্দুক চালানো শিখল, তারপর থেকেই শুরু হল। প্রথম প্রথম লুকিয়ে বেরতো, তারপর যেই দক্ষতা প্রকাশপেলো, আর লুকিয়ে বেরোনোর দরকার হলোনা। আর এস, এস, সি পরীক্ষার আগে বিভিন্নজনকে সালাম করে যে টাকা পেলো, ঐটা গুছিয়ে রেখে পরীক্ষার পরপরই একটা এয়ারগান কিনে ফেললো।
তারপর অনেক পাখি মেরেছে বাপ্পি। পাখি মারাটা যদিও আইনত অপরাধ, কিন্তু গ্রামে বাড়ি হবার জন্য তেমন কোনো আইনি ঝামেলায় কখোনোই পড়তে হয়নি। চড়ুই, ঘুঘু, কবুতর (বুনো হোক, আর পোষাই হোক ), বক, হাসপাখি ইত্যাদি বহুত প্রকারের পাখি। কোনোটাই বাদ পড়েনি। অবস্য মা-বাবার বকাও অনেকবার শোনা লেগেছে, কিন্তু তাতে আগ্রহ কমেনি। শিকারে কষ্টও আছে, অনেক কষ্টও সয়েছে বাপ্পি। প্রায়ই ভোরবেলা বেরিয়ে, সারাদিন না খেয়ে, মাইলের পর মাইল বন্দুক কিংবা এয়ারগান হাতে হেটে হেটে কাটিয়েছে। বন্ধুও জুটেছে অনেক। এমনিতেই বন্ধুর সংখ্যা কম ছিলোনা, এয়ারগান কেনার পর থেকে আর বেড়ে গেল। শিকারটা বোধহয় এভাবেই চলতো, যদিনা ঐদিনের ঘটনাটা বাপ্পি ঐভাবে উপলব্ধি না করতো...
দিনটি ছিলো পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে নানা উৎসবের আয়োজন হয়েছে। কিন্ত বাপ্পি ঐদিনটাকে শিকারের জন্য বরাদ্দ দিলো। বন্দুক এয়ারগান, দুটা নিয়েই রওয়ানা হলো। সাথে পাচ সঙ্গি। গ্রামের রাস্তা দিয়েই হাটছে, নাড়কেল গাছে একটা ঘুঘু দেখে নিশানা ঠিক করলো। ট্রিগারটা টিপতেই পাখিটা রাস্তায় পড়ে ডানা ঝাপটানো শুরু করলো।
একটি বাচ্চা মেয়ে শাড়ি পরে মেলায় যাচ্ছিল ওই পথ দিয়ে। সে দেখলো হঠাত করে একটা পাখি রাস্তার উপর পড়ে ডানা ঝাপটাচ্ছে ! সেতো দারুন অবাক, পাখিটা কিভাবে পড়লো! তারপর সামনের দিকে বাপ্পিদের দেখে যখন বুঝতে পারলো যে এইটাকে শিকার করা হচ্ছে, পখিটিকে কোলে তুলে কান্না জুড়ে দিল। পাখিটার ডানায় গুলি লেগেছে। বাপ্পির বন্ধুরা মেয়েটিকে ধমকদিতে গেলে বাপ্পি নিষেধ করল। অতপর বাপ্পি বাচ্চা মেয়েটার কান্না রোধের জন্য ঐ ঘুঘুটাকে পুনরায় সুস্থ করে তুলে। অবস্য অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছিল সেদিন, কিন্তু তারপরও বাপ্পি কেমন যেন একটা মানুষিক শান্তি পেলো। আর তারপর থেকেই পাখিশিকার সম্পূর্ণরুপে ছেড়ে দিল।
আজও পহেলা বৈশাখ, এখনো ঐদিনের কথা বাপ্পির খুব মনে পড়ে। ঐঘটনার পরথেকে পাখিমারা ছেড়ে দিলো বটে, কিন্তু পাখি ছাড়লোনা! বাপ্পি এখন পাখি পুষে, অনেক যত্ন করে পুষে। আর প্রতি পহেলা বৈশাখে বেশকিছু পাখিছেড়ে দেয়। শহর থেকে বিভিন্ন পাখি কিনে এনে তাদের যত্ন করে। আর পাখি দেখলে শ্যুট এখনো করে, তবে সেটা আর বন্দুক দিয়ে নয়, ক্যামেরা দিয়ে !
১০ এপ্রিল - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৬ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪