আজমল সাহেব বৃষ্টি মোটেই পছন্দ করেননা। বৃষ্টির পুর্বাভাস দেখা মাত্রই উনার মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। আর বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই- খুব সামান্য বিষয়েও রাগারাগি করে একাকার করে ফেলবেন। এই তো সেদিন উনি অফিসে আসলেন, আর বৃষ্টি শুরু হল। সবাই বুঝছিল আজ কিছু একটা গন্ডগোল পাকাবেন। ঠিক তাই হোলো... ২ টেকনিশিয়ান সহ ১ এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে একেবারে অফিস থেকে বেরই করে দিলেন ! আসলে ওদের তেমন কোনো দোষ ছিল না, মেশিনে ডিশটার্ব দিতেই পারে, তাই বলে ওদের এমন অপমান করা উচিত হয়নি। কিন্তু বিষয়টা বুঝতে পারলেন বৃষ্টিটা থামার পরে। আর তারপরই ইমার্জেন্সি কল করে সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার প্রমিতাকে রুমে আনলেন-
“ ওই ভদ্রলোক তিনটা কোথায় গেলো একটু খুঁজে দেখুনতো ”
“ জী স্যার”
“ আর হ্যাঁ, এগেইন মেশিনে ডিশটার্ব দিলে আমাকে জানাতে বলবেন, নিজে থেকে যেনো কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়”
“ জী স্যার, একটা কথা বলব স্যার?”
একটু ভেবে আজমল সাহেব উত্তর দিলেন- “হ্যাঁ”
“ স্যার, বাসায় কি আজ কোনো গোলমাল হয়েছিল ? যেভাবে রেগে গেলেন... মেশিনে তো ডিশটার্ব দিতেই পারে...”
এই মেয়েটা খুব ভালো করেই জানে যে তিনি বাসায় একা থাকেন। এখনো বিয়ে থা করেণনি। একজন বুয়া রাখা আছে, সেই রান্না বান্না করে দেয়। তাহলে গোলমালটা বাঁধবে কার সাথে? প্রায় প্রায়ই মেয়েটা এরকম খোঁচা মারা কথা বলে, উদ্দেশ্যটা কিছুটা বুঝলেও তিনি এগোতে দেন না...
“বাসায় গোলমাল হতে যাবে কেনো? ওরা ভুল করল তাই একটু শাস্তি দিলাম, এই যা”
“আচ্ছা, স্যার। আমি দেখছি ওরা কোথায় গেলো”
“বৃষ্টি”- আসলেই খুব খারাপ। বাইরে বেরোনো যায় না, রাস্তা ঘাটে কাঁদা, নোংরা অবস্থা চারদিকে, রোদের দেখা পাওয়া ভার, বাসায় বুয়া আসে না, কর্মচারীরাও ঠিকমত অফিসে আসে না- ন্যাঁকা অজুহাত, বৃষ্টি ছিল ! বৃষ্টির দিনে আরো নানা ঝঞ্ঝাট... সবমিলিয়ে বৃষ্টি আজমল সাহেবের দুচোখের বিষ। মোটেই সহ্য করতে পারেন না। কিন্তু ওদিকে আবার প্রমিতা চৌধুরি তার সিদ্ধান্তে অটল- আজমল সাহেবকে সে বৃষ্টি পছন্দ করিয়েই ছাড়বে। আসলে যে সে স্যার কে অত্যধিক ভালোবাসে, সেটি কোনো কায়দায়ই বলার সুযোগ পাচ্ছে না। অনেক চেষ্টা করেছে, যখন স্যারের মন ভালো থাকে তখন নানা ভাবে ভালোবাসার প্রসংগটা উঠানোর চেস্টা করেছে। কিন্তু স্যার সুকৌশলে এড়িয়ে যান। তাই প্রমিতার পন- ভালো মেজাযে যখন হয়নি, এবার তিরিক্ষ মেজাযে থাকাকালেই সে ভালোবাসার দাবীটা করে ফেলবে...
আজমল সাহেব ও যে বিষয়টা বুঝতে পারেননি তা নয়, তিনি আসলে চাচ্ছেন না। কেনো চাচ্ছেন না- এই প্রশ্নটা নিজের কাছে অনেকবার করেও উত্তর পাননি। প্রমিতা মেয়েটি তো খারাপ নয়, ভালোই। দেখতে ও আকর্ষনীয়, আবার তার যোগ্যও বটে। তবে কেনো তিনি তাকে পাত্তা দেন না?
শুক্রবার। বর্ষাকালটা এবার তার নামের যথার্থতা প্রমাণ করে ছাড়লো বুঝি ! বৃষ্টি হচ্ছে তো হচ্ছেই, থামাথামির কোনো লক্ষন নেই। নামাযে যেতে পারেননি বলে আজমল সাহেব মুখ পুড়িয়ে বসে আছেন। তারপর আবার দুপুরের রান্না হয়নি- বুয়া আসে নি। আসবেই বা কিভাবে এই ঝড় বৃষ্টির মধ্যে। তিনিও অবশ্য রান্না করতে পারেন, কিন্তু নামাযে যাবেন বলে প্রস্তুত হতে হতে রান্নার কথা আর মনে আসেনি। বুঝতেও অবশ্য পারেননি যে বৃষ্টি থামবে না, বুয়াও আসবে না।মেজাজ খুবই খারাপ- এখন কি করবেন , তা ভাবছেন। এমন সময় কলিং বেলের আওয়াজ... কে এলো ঝড়বৃষ্টি কাঁধে করে?
খুব কড়া কন্ঠে দরজার কাছে যেয়ে বললেন “কে?”
“স্যার আমি, প্রমি”
আজমল সাহেব একদিন প্রমিতাকে বলেছিলেন- তোমাকে যদি প্রমি বলে ডাকি, কেমন হয়? অবশ্য প্রমি বলে কখনো তো ডাকেন না’ই বরং পরবর্তিতে আপনি-আপনি করে দুরত্ত বাড়িয়েছেন।
“ কি ব্যাপার, এখন এই বৃষ্টির মধ্যে, দুপুরে !?”
“ তাই বলে ভিতরে ঢুকতে দেবেন না, স্যার ?”
“ ও হ্যাঁ, আসেন আসেন...”
“ এইটা অফিস না স্যার, বাসা। আমাকে আপনি করে বলার কোনো মানে নেই”
“ আচ্ছা আচ্ছা , ঠিক আছে... বোসো”
এতক্ষনে আজমল সাহেব খেয়াল করলেন প্রমিতার হাতে টিফিন বক্স।
“ একটা টাওয়েল দিন না প্লিস”
“ ওহ, শিওর শিওর...” টাওয়েলটা এগিয়ে দিলেন।
“স্যার আসলে বিষয়টা হয়েছেকি, আজ এই বৃষ্টির দিনে খুব ইচ্ছা করছিল আপনাকে খিচুড়ি খাওয়াবো... তাই খিচুড়ি রান্না করে নিয়ে এলাম, সাথে ইলিশ ভাজি !”
আজমল সাহেবের রাগটা যেনো আরো বেড়ে গেলো।
“আপনার পছন্দ না, স্যার?”
“না, মোটেও না” অত্যন্ত কর্কষ স্বরে উত্তর দিলেন।
“ তাহলে স্যার... আমি ভেবেছিলাম আজ একসাথে লাঞ্চ করব” আমতা আমতা করে বলল প্রমিতা।
“ ভাবলেই তো হবে না”
“ তাহলে আমি চলে যাব, স্যার ?”
“ হ্যাঁ, যেতে পারেন”
প্রমিতা এমন উত্তর কল্পনাতেও আনেনি,
“ বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে... বৃষ্টিটা থামলেই যাই?”
“ বৃষ্টির মধ্যেই তো এলেন”
“ আচ্ছা, আমি যাচ্ছি তাহলে, স্যার।বিরক্ত করার জন্য অনেক দুঃখিত”-বলেই প্রমিতা উঠল।
“ দুঃখিত হবার কিছু নেই”
“ মনে চাইলে আপনি খেয়ে নিয়েন, অনেক আশা করে রান্না করেছিলাম...”
“ আমার মনে চাইবে না, দয়া করে ওগুলো নিয়ে যান”
প্রমিতা কাঁদতে কাঁদতে বেরোলো।
অতঃপর আজমল সাহেবের ও কেনোযেনো বুকটা হুঁ হুঁ করে উঠল। নাহ, প্রমিতাকে খেদিয়ে কাজটা কি তিনি ঠিক করলেন? কেনো করলেন এমনটা তিনি?
মেয়েটা কতোটা আশানিয়েই না এসেছিলো!আর খিচুড়িওতো তিনি খুব ই পছন্দ করেন। তাহলে? রাগ আরো বেড়ে গেলো, রাগেতে মাথার চুল টেনে ছিড়ে ফেলতে মনে চাচ্ছে। নাহ, বৃষ্টিটা যে কেনো আসে? বারবার আসে...
সারাদিন তিনি কিছুই খেলেন না। রাতেও খেলেন না। খুব কষ্ট হচ্ছিল দুপুরের ঘটনাটায়, যাহোক পরদিন অফিসে যেতে হবে-ঘুমিয়ে পরলেন সকাল সকাল।
সকালটা অনেক সুন্দর- রোদেলা সকাল। ফুরফুরে মেজাজেই আজমল সাহেব অফিসে পৌঁছালেন। প্রথমেই প্রমিতার খোঁজ নিলেন-ভেবেছিলেন আজ বোধহয় অফিসে আসবে না। কিন্তু ঠিকই এসেছে! ডেকে পাঠেলেন।
“ আমাকে ডেকেছেন, স্যার?”
“ হ্যাঁ, বোসো”- ইচ্ছা করেই আপনি থেকে তুমিতে চলে এলেন “ আসলে গতকালের ঘটনার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত”
“ না, ঠিক আছে স্যার। আসলে আমারই অপরাধ, আমি বেশি দাবি করে ফেলেছিলাম”
“ না না, বললাম তো ঠিক আছে, আসলে ওই ঝড়বৃষ্টিতে তোমার যাওয়াটাতে আমি অবাকই হয়েছিলাম... আর মুডটাও খারাপ ছিলোতো...”
“ ইটস ওকে স্যার। আমি কিছু মনে করেনি। তবে আমি খেয়াল করেছি বৃষ্টি এলেই আপনার মেজাজটা বিগড়ে যায়... কারনটা জানতে পারি স্যার?”
“ ওসব বাদ দাও”
“ আচ্ছা স্যার”
“ এককাজ করি, চলো লংড্রাইভে বেরিয়ে পড়ি”
প্রমিতা যেন কথাটা শুনতে পাই নি, “সরি স্যার, কি বললেন?”
“ লং ড্রাইভে বেরোতে ইচ্ছা করছে। যাবে?”
“ আপনি বলছেন স্যার!!! আপন তো কখনও কাজে ফাঁকি দেন না”
“ অত কথা নয়, যেতে চাইলে ওদেরকে কাজ গুলো বুঝিয়ে দিয়ে এসো”
“ জো হুকুম জাঁহাপনা! আমি এখনই ওদের কাজ বুঝিয়ে দিয়ে আসি...”
“ অত উঁচ্ছাসের কিছু নেই! কাল অপরাধ করেছিলাম, তাই তোমাকে গাড়ীতে করে ঘুরিয়ে কিছুটা প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই। বেশি কিছু আশা কোরো না!”
“ তাই আমার জন্য অনেক”
গাড়ী বের করলেন আজমল সাহেব। সবসময় নিজেই ড্রাইভ করেন। ছুটির দিনগুলোতে একাকিই এদিক সেদিক ঘুরে বেরান। মাঝে মধ্যে গ্রামের বাড়িও যান। মা-বাবাকে কতোবার বলেছেন শহরে এহে তার সাথে থাকতে- তেরে রাজি হননা, গ্রাম যেনো তাদের রক্ত! গ্রাম ছেড়ে থাকতে পারবেন না।
“ স্যার, আমার বিশ্বাস হচ্ছে না, আপনার সাথে আমি ঘুরতে বেরিয়েছি!!!”
“ অবিশ্বাসের কি আছে? নিজ চোখেই তো দেখছো!”
“ না, তারপরও অনেক কিছুই আছে যা নিজ চোখে দেখলেও বিশ্বাস হতে চায় না”
“ অত ঢং করো কেনো?”
“ আপনি অত বেরসিক কেনো, স্যার?”
সামনে একটা মোড়, ড্রাইভিং হুইলটা ঘোরাতে ঘোরাতে আজমল সাহেব বললেন “ বেরসিক বলতে কি বুঝাচ্ছো?”
“ এই যেরকম ভালো করে কথা বলতে চান না, ভালোবাসতে চান না...”
“ মানে?” হঠাৎ করে কড়াব্রেক করে বসলেন। প্রমিতাও ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে। সে ঝাঁকি খেয়ে অনেকটা সামনে দেকে ঝুকে গেলো।
“ গাড়ী থামানোর কোনো মানে নেই, স্যার” বেশ খানিকটা কড়া করে বলল প্রমিতা।
গাড়ীটি আবার চলতে শুরু করল।
“ মানেটা হচ্ছে আমি আপনাকে ভালোবাসি”
আজমল সাহেব চুপ।
“ বুঝতে পেরেছেন? আমি আপনাকে ভালোবাসি, আর এটা নিশ্চইয়ই কোনো অপরাধ না...”
আজমল সাহেব চুপ মেরে আছেন। চাহনিতে কেমনযেনো উদাসীনতা। হ্যাঁ, আসলেই উনি যেনো কোথায় হারিয়ে গেলেন, তা’নাহলে সামনের রিক্সাটাকে ধাক্কা দেবার কোনো মানে ছিলো না। শেষ রক্ষাটা হলো প্রমিতার জোরে “স্যার” বলে চিৎকার করাতে। চালকের তেমন কিছুই হয়নি, তবে রিক্সাটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আজমল সাহেব নেমে যেচে দু’হাজারটাকা ক্ষতিপুরন দিলেন। তারপর পুণরায় গাড়ী চালাতে শুরু করলেন,
“ ভয় পেয়েছে নাকি, প্রমিতা?”
“ না স্যার, কিন্তু এমন করলেন কেনো, আমি যতদুর শুনেছি-আপনিতো খুব ভালো ড্রাইভ করেন। আমি কি কোনো অন্যায় করলাম, ভালোবাসাটার কথা বলে?”
“ যদি আপনার খুব আপত্তি থাকে, আমাকে যদি খুবই অপছন্দ হয় তাহলে ঠিক আছে, আমি আর বিরক্ত করবনা”- বলেই কাঁদা শুরু করল প্রমিতা।
“ না না প্রমিতা, ঠিক আছে” খুব ব্যস্তভাবে আজমল সাহেব বলতে লাগলেন “ভালোবাসাতো আর খারাপ না, আর তোমাকে আমি অপছন্দ করতে যাবো কেনো? আসলে কেনোযেন অন্যমনস্ক হয়ে গেলাম তাই এক্সিডেন্টটা হলো”
“ কিন্তু স্যার, আমি আপনাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি” কান্নাজড়িত কন্ঠে প্রমিতা তার ভালোবাসার আবেদনটা আবার করে ফেলল।
কিছুক্ষন পর আজমল সাহেব বলা শুরু করলেন, “ এতো স্যার স্যার আর কোরোনাতো, প্রকৌশলী আজমল হোসেন বাদেও আমার একটি নাম আছে, ‘অয়ন’- মোঃ আজমল হোসেন অয়ন, ভালোবাসলে এত স্যার স্যার আর আপনি আপনি করলে হয়? আমাকে এখন থেকে তুমি অয়ন বলেই ডেকো”
প্রমিতা যেনো অথৈ সাগরে একখানা মার্কিন নৌবহর পেলো-“ তোমার নাম অয়ন! খুব সুন্দর নাম তো, আগে জানতাম না তো। কে রেখেছিলো নামটা?”
“ কে রেখেছিল তা জানিনা, তবে আগেও একজন অনেক সুন্দর বলেছিল”
“ আচ্ছা অয়ন, বলতো তোমাকে আমি এত ভালোবাসি কেনো?”
খানিক্ষন চিন্তা করে অয়নই জানতে চাইল- “কেনো?”
“ আমিও জানিনা!”- প্রমিতার উত্তরে দুজনেই হেসে উঠল। খুব খোশগল্পের মাধ্যমে ওরা ভালবাসা বিনিময় করতে করতে এগিয়ে চলল গ্রামের দিকে। আবহাওয়াটাও সুন্দর, আকাশে মেঘ যেন খেলা করছে। এই মেঘ এই রোদ। প্রমিতা খেয়াল করল আস্তে আস্তে আকাশে মেঘ জমা হচ্ছে। বৃষ্টি হবে বোধহয়। প্রমিতা একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে- আজ যদি বৃষ্টি হয় তাহলে সে অয়নকে নিয়ে বৃষ্টিস্নান করবে।
হ্যাঁ, প্রমিতার মনেহওয়াটা সঠিক হল, বৃষ্টি শুরু হল।দুধারে বিস্তৃত মাঠ, ফাঁকা মাঠের ভিতর দিয়ে রাস্তা। আসপাশে বাড়িঘর, দোকানপাট নেই বললেই চলে। বৃষ্টিটা শুরুতে আস্তে আস্তে হলেও এখন জোরেই হচ্ছে, অমিতও আস্তে আস্তে করে গাড়ী চালাচ্ছিল। এবার প্রমিতার কথায় রাস্তার পাশে স্থির হল। পাশ দিয়ে একটা বাস সাই করে চলে গেলো।
“ অমিত”
“ হ্যাঁ, বল”
“ আমি তোমাকে খুব ভালবাসি”
“ আমিও বেসেফেললাম!”
“ অমিত”
“ হ্যাঁ, শুনছিতো, বল”
“ একটা কথা বলব? রাগকরবে না তো ?”
“ আহা, বলনা”
“ যদি রাগ কর!”
“ না রাগ করবনা, বল”
“ যা বলব শুনতে হবে, কথা দাও”
“ হ্যাঁ, দিলাম”
“ আমি এখন বৃষ্টিতে ভিজব, আমার সাথে তোমাকেও ভিজতে হবে!”
অমিত কেমনযেন চমকে উঠল- “ কি বলছ এসব তুমি যা তা”
“ হ্যাঁ, আমি বলছি-এখন এইমুহুর্তে আমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে হবে”
প্রমিতা একপ্রকারে অমিতকে জ়োর করে টেনেই গাড়ীথেকে নামাল।
আসলেইতো বৃষ্টিতে ভিজার আলাদা মজা... সম্পুর্নরুপে ভিজে যেয়ে অয়ন হঠাৎ করে অন্য জগতে চলে গেলো- চলে গেলো দশ বছর আগের স্মৃতিতে... ... ... অয়ন তখন সবে বুয়েটে ক্লাশ শুরু করেছে। সানিয়া একাদশ প্রথম বর্ষের ছাত্রী। প্রেমটাও চলছে চুটিয়ে। সানিয়ার জরুরি ফোনে অয়ন ক্লাশ থেকে বেড়িয়ে দেখা করতে গেলো ওর কলেজে, “ কি ব্যাপার, এমন জরুরি তলব!”
“ এমনিই, তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছিল-তাই”
“ তাই ! দেখো তাহলে প্রান ভরে”
কিছুক্ষন ওর চোখে চোখ রেখে সানিয়া বলল, “ হুঁ, দেখেছি... চলো এবার বেড়িয়ে আসি কোথাও থেকে”
“ জো-হুকুম, মোর হৃদয়ের সম্রাজ্ঞী... বলুন কোথায় যাওয়া যায় আজ?”
“ তোমার ইচ্ছা”
সানিয়ার কলেজের ক্যান্টিনে বসে কথা হচ্ছিল। বেরোনোর সময় ওরা খেয়াল করলো আকাশে ঘন মেঘ জমছে,
“ এই, আজ যদি বৃষ্টি নামে আমরা কিন্তু ভিজব, আমার না বৃষ্টিতে ভিজতে খুব ইচ্ছা করে !”
“ অবস্যই ভিজব, একশবার ভিজব- বৃষ্টি আমারও খুব পছন্দ”- আসলেই তখন অয়নের বৃষ্টি খুব পছন্দ ছিল।
আর ঐদিন বৃষ্টিও নামলো খুব, ওরা ছেলেমানুষি করে ভিজতে থাকলো ঘন্টার পর ঘন্টা... ... ...
... ... ... রাতে ১০৩-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত জ্বর চলে এলো সানিয়ার ... ... ... ডাক্তারের গুরুত্তহীন চিকিৎসায় তিনদিন পর অকালে চলে গেলো সানিয়া... ... ... উহ! সানিয়ার বাবাই যে কেনো ওকে সরকারী হাসপাতালের ডাক্তার দেখিয়েছিল ?... ... ... মনে আসতেই অয়ন এখনো পাগল প্রায় হয়ে যায়... এ বেদনা কি ভুলে থাকার? না মোটেও না... সেই থেকে অয়ন তার প্রিয় বর্ষাকে মোটেই সহ্য করতে পারে না, আর ডাক্তার দেখলেই মারমুখি হয়ে যায়...
কিন্তু আজ? আজ এতকাল পরে এই মেয়েটা তাকে বৃষ্টিতে নামিয়েই ছাড়লো -হঠাৎ বিশাল বজ্রপাতের শব্দে অয়ন বাস্তবে ফিরে এল, চোখ যেনো ঝলসে গেলো। খুব কাছেই বোধহয় বাজটা পড়ল।
আর প্রমিতা? প্রমিতা কোথায়?
প্রমিতা এতক্ষনে খুশির জোঁয়ারে ভাসতে ভাসতে বেশ দূরে চলে গিয়েছিল... আর তাই এবারো অয়নকে আরেকটি বিভীষিকাময় অধ্যায় পার হতে হচ্ছে... ।
পরদিন পেপারে খবরটা এলো বেশ রসিকভাবে “একজন তড়িৎ প্রকৌশলীর তড়িতাহত হয়ে মৃত্যুবরন”!