রফিকের মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ হয়েছে মাস খানেক হলো। তার পুরোনাম রফিকুল ইসলাম খাঁন। পরীক্ষার আগে চাকুরীর জন্য আবেদন করেছিলেন। আর সেই সূত্র ধরে চাকুরীও পেয়েছেন মতিঝিলের একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে। নতুন চাকুরী বিধায় সময়কে খুব গুরুত্ব দিতে হয় তাকে। বিশেষ করে অফিসে ঢুকার এবং বের হবার সময়টাকে খুবই গুরুত্বের সাথে মানতে হয় তাদের কে। যদিও প্রাইভেট কোম্পানী মানেই সময় নিষ্ঠতা একান্ত অগ্রগন্য।
যা হোক, প্রতিদিনের মত আজও সকালে ঘুম থেকে উঠে অফিসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি, কিন্তু সময়ের সাথে মোটেই পেরে উঠছেন না। তরি-ঘরি করে বাসা থেকে বের হয়ে বাসষ্ট্যান্ডের দিকে যাচ্ছেন। রফিকের বাসা থেকে ফার্মগেট বাসষ্ট্যান্ড মাত্র দুই মিনিটের পথ। বাসষ্ট্যান্ডে পাঁচ-সাত মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পরেও কোন বাসেই উঠতে পারলেন না তিনি।
বার বার মোবাইলে সময় দেখছিলেন। মাত্র চলি্লশ মিনিট বাকি আছে ন'টা বাজতে। নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হতে না পারলে বসের অকথ্য কথা শুনতে হবে। হঠাৎ একটি বাসে উঠার সুযোগ পেলেন তিনি। বাসের পিছনের দিকের বেশ কিছু সিট খালি আছে। তিন সিটের একটিতে বসে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলছেন ঠিক তখনি এক ভদ্রলোক এসে বললো -
- ভাই একটু চেপে বসবেন?
- জ্বী! অবশ্যই ।
রফিক লোকটার মুখের দিকে এক পলক চেয়ে জানালার পাশের সিটে চেপে বসল। কয়েক মিনিট পরে তার সিটের পাশে একটা ছাতা দেখতে পেল। ছাতার কালার আর বাসের সিট কভারের কালার একই হওয়াতে বোঝা যচ্ছিলনা এখানে যে ছাতা'টা রয়েছিল। ইচ্ছাকৃত হোক আর অনিচ্ছাকৃত হোক বাস থেকে নামার সময় আনমনেই রফিক ছাতা'টা সঙেগ নিয়ে নিলেন। রফিকের কখনো ছাতা ব্যবহার করার অভ্যাস ছিলনা, তার যুক্তি ছিল ছাতা ব্যবহার মেয়েলি ফ্যাশন অথচ এখন সব সময় তার হাতে ছাতা দেখা যায়।
ছাতা পাওয়ার পরের সপ্তাহে একদিন দুপুরে বৃষ্টি হচ্ছিল আর সে সময় রফিকের সহকমর্ী মাসুম সাহেব যিনি রফিকের পাশের চেয়ারে বসেন তিনি ছাতা চেয়ে বসলেন-
- রফিক ভাই ছাতা'টা একটু লাগে যে ?
- কোথায় যাবেন ?
- নাজিমের দোকানে, আপনার তো আবার ওসবের অভ্যাস নাই।
- চলেন যাই চা তো খাওয়া যাবে।
- রফিক ভাই জি.এম স্যার যে কোন সময় চলে আসতে পারেন, দু' জন কে এক সাথে বাইরে যেতে দেখলে মাইন্ড করবেন। বেটার হয় আপনি যদি পরে যান।
- আচ্ছা ঠিক আছে আপনি যান। এই বলে ছাতা'টা তার সহকমর্ীর দিকে বাড়িয়ে দিলেন রফিক।
মাসুম সাহেব প্রায় বিশ মিনিট পরে ফিরে এসে পান চিবাতে চিবাতে রফিককে উদ্দেশ্য করে বললেন -
- রফিক ভাই! ভাবী'র ছাতা নিয়ে এসেছেন ?
- কিন্তু আপনি কিভাবে বুঝলেন? রফিক যে ব্যচেলর তা বুঝতে না দিয়ে জিঙ্গাসা করেন।
- না, মানে প্রথম দিকে তো আপনাকে ছাতা আনতে দেখিনাই, তাছাড়া ------!
- তাছাড়া কি? একটু কৌতুহল নিয়ে যানতে চায় সে।
- ভাবী'র অনেক বুদ্ধি আছে বলতে হয়। মুচকি হেসে বললেন মাসুম সাহেব।
- কিভাবে বুঝলেন? আপনিতো আমার ওয়াইফ কে কখনো দেখেন নাই।
- তা ঠিক, তবে উনি যে বুদ্ধিমতি ছাতায় ওনার নাম, ফোন নম্বর দেখেই আমি বুঝতে পেরেছি।
রফিক এ বিষয়ে আর কথা না বাড়িয়ে কাজে মনযোগ দেয় এবং মনে মনে ভাবতে থাকে কি নাম লেখা আছে ছাতা'র ভিতর, এতো দিন ব্যবহার করেও নিজের চোখে পড়ল না বিষয়টা। তবে একটা মেয়ের নাম যে লেখা আছে এটা তো কনফার্ম কিন্তু মেয়েটা দেখতে কেমন ফর্সা না কালো, স্মার্ট না আনস্মাট আরো অনেক কিছু ভাবতে থাকে অদেখা সেই মেয়েটিকে নিয়ে। যেন মেয়েটির প্রেমে পড়েছে সে। এক সময় খেয়াল ফেরে যখন তার ডিরেক্টর স্যার এসে বললেন -
- রফিক সাহেব আজতো আর সময় নেই কাল সকালে আপনার সঙে বসব। আপনি পেপারস্ গুলোর এক সেট ফটোকপি করে রাখবেন।
- জি স্যার, সব রেডি করে রাখব। আচমকা উত্তর রফিকের।
সম্বিৎ ফিরে বাস্তবে ফিরে আসে সে চেয়ে দেখে তার রুমের সকল সহকমর্ী অফিস থেকে চলে গেছেন। সে একাই বসে আছেন।
সে দিন বাসায় এসে ছাতা'টা ভাল করে পর্যবেক্ষণ করেন, ছাতা'র ভিতর দিকে গোটা গোটা অক্ষরে খুব সুন্দর করে লেখা 'সুলতানা' এবং তার নীচে একটি মোবাইল নম্বর। তারপর থেকে রফিক সারাক্ষন সুলতানার কথা ভাবতে থাকে, কখনো প্রেমিকার মত কখনো স্ত্রীর মত। এভাবে কেটে যায় আরো কিছু দিন। রফিক একদিন সিদ্ধান্ত নেয় সুলতানা কে ফোন করবে। কিন্তু সাহসে কুলায় না ফোন করে কি বলবে? তাই মনে মনে রিহার্সল করে-
- হ্যালো ! সুলতানা বলছেন?
- জ্বী ! আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না! কে আপনি? নিজেই নিজের কথার উত্তর দেয়।
- চিনতে না পারলে কি কথা বলাযায় না।
- অপরিচিত লোকের সাথে আমি কথা বলিনা।
- কেন?
- আননোন নম্বার থেকে ফোন করে শুধু প্রেমের আলাপ জমায়, আপনাদের মত সবাইকে আমার চেনা আছে।
- কিন্ত আমি সবার মত না, আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন।
- থাক আর বিশ্বাস করতে হবেনা, সবাই প্রথম প্রথম এমনই বলে পরে আলাপ জমায়।
- কিন্তু আমি আপনাকে ফোন করেছি অন্য কারনে।
- যেই কারই বলেন, আমি আপনারে চিনাফেলছি ভাব জমানোর লাইগা আপনি ফোন দিছেন, খবরদার আর কখনো এই নাম্বারে ফোন দিবেন না।
রিহার্সেল শেষে রফিক নিজেই নিজের মুখে একটা চর মারে। রফিক ! এভাবে বলেল হবে না। তোমাকে আরো সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করতে হবে। তোমার কথায় জাদু থাকতে হবে। এমন করে কথা বলতে হবে যেন সে নিজেই তোমার সাথে কথা বলার জন্য ব্যকুল থাকে। এসব ভেবে সে আবার রিহার্সল শুরু করে-
- হ্যালো !
- কে বলছেন?
- আমি রফিক, রফিকুল ইসলাম খান।
- র-ফি-ক এ নামে তো কাউকে চিনিনা। আপনি কাকে চাচ্ছেন?
- এটাকি সুলতানার নম্বার?
- জ্বী ! আমিই সুলতানা, আপনি আমার নাম জানলেন কিভাবে?
- আপনার যে ছাতা'টা হারিয়েছে সে ছাতার মধ্যে আপনার নাম-মোবইল নম্বর...লেখা ছিল।
- ও আচ্ছা, আপনি না ভাইয়া অনেক ভাল। কি বলে যে আপনাকে ধন্যবাদ দিব।
- না না এতে ধন্যবাদ দেবার কি আছে। এটাতো একটা সাধারন ব্যাপার কারও কিছু পেলে তাকে ফেরত দিতে হয়, তাছাড়া আপনার নম্বর না থাকলে তো যোগাযেগ করতে পারতাম না।
- ভাইয়া আমার বাসার ঠিাকানা দিতে একটু সমস্যা আছে, আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে একটা কথা বলি।
- ঠিক আছে বলেন এতে মনে করার কি আছে।
- ফার্মগেটে আমার একটা পরিচিত দোকান আছে, আপনি যদি কষ্ট করে সেই দোকানে ছাতা'টা পৌছেদিতেন, আমার খুব উপকার হতো, বোঝেন তো বর্ষার দিনে ছাতা ছাড়া চলা-ফেরা করা খুবই কষ্ট কর।
রফিক এবারও নিজের গালে চড় খেল। তবে এবার আর রিহর্সল না সত্তি সত্তি ফোন করবে। পকেট থেকে মোবাইল বের করে ফোন করে সেই নম্বরে- রিং বাজছে কেউ ফোন ধরছে না। রফিকের হার্টবিট বেড়ে যায় ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিতে থাকে। আবার ডায়াল করে ও পাশ থেকে একটা পুরুষ কন্ঠ ভেসে আসে-
- হ্যালো! কে বলছেন?
- আমি রফিকুল ইসলাম, এটা সুলতানা'র নম্বার না।
- জি্ব ভাই, আমিই সুলতান। মাঝে মধ্যে সুলতানা লিখি, তানা হলে কেউ ফোন করে না। আপনার ঠিকানা বলেন আমি এসে ছাতা'টা নিয়ে যাব। হ্যালো! হ্যালো!! ভাই শুনছেন...!
অপর প্রান্তের কথা শুনে রফিকের মুখ হা হয়ে যায়, কোন শব্দ তার মুখ থেকে বের হয় না। কান দুটি যেন শ্রবণ শক্তি হারিয়ে ফেলেছে, কিছুই সে আর শুনতে পাচ্ছেনা, শুধু দু'চোখ দিয়ে তাকিয়ে দেখছে রাস্তায় অনেক লোক বৃষ্টিতে ভিজে যার যার গন্তেব্যে ছুটে চলছে, তাদের অনেকের কাছেই ছাতা নাই।
০৯ এপ্রিল - ২০১১
গল্প/কবিতা:
১১ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪