চোখে চোখে

উচ্ছ্বাস (জুন ২০১৪)

বিষণ্ন সুমন
  • ১৫
সে তাকাল। একবার, দুইবার, পর পর বেশ ক’বার।
আমি ঘার ফিরিয়ে পেছনে তাকালাম। কই, তেমন কাউকেই তো চোখে পড়ছে না। তবে কি আমিই !
আবার মুখ ঘুরিয়ে সামনে ফিরতেই চোখে চোখ পড়ল। সে তাকিয়ে আছে অপলক। দৃষ্টিতে মুগ্ধতা। ঠোঁটের কোণে চাপা দুষ্ট হাসি। আমি চমকিত হলাম। আমার এই ২২ বছর জীবনে নিঃসন্দেহে এই ঘটনা ব্যতিক্রম।
মানুষটা আমি দেখতে আহামরি কিছু নই। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের আবরণে গোলগাল একটা মুখ। তবে সবাই বলে এই মুখে আঁকড়ে থাকা আমার বড় বড় চোখ দু’টি নাকি অদ্ভুত মায়াময়, যা সহজেই সবাইকে মায়ায় জড়িয়ে নেয়। কিন্তু সে তো পরিচিতজনদের বেলায়। কিন্তু, অপরিচিত কারো চোখের আয়নায় নিজের মুখ দেখা- আমার জীবনে অবশ্যই প্রথম।
তাই আমিও এবার বেশ আগ্রহ নিয়েই মেয়েটির দিকে তাকালাম। আমার ঠিক উল্টোদিকে মুখোমুখি সিটে বসে আছে। নিপট সারল্যে ভরা মিষ্টি একটা মুখ। চোখের তারায় কৈশোরের ঝলকানি। বয়স খুব বেশী হলে ষোল কি সতের হবে। আমি তাকাতেই আস্তে করে মুখ নামিয়ে নিল। দৃষ্টি আনত।
আমিও দৃষ্টি সরিয়ে নিলাম। পাশের সিটে এক ভদ্রমহিলা বসে। মুখের আদলে জানান দিচ্ছে, সম্ভবতঃ মেয়েটির মা হবেন। ট্রেনের জানালায় হাত ঠেকিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছেন। কি এক অজানা আকর্ষণে আবারো ওর দিকে ফিরলাম। নির্নিমেষ তাকিয়ে আছে ও। এবার আর চোখ ফিরিয়ে নিল না। দৃষ্টিতে ঝরে পড়ছে এক অজানা আকুতি- যার আহবানে বুকের ভেতরটা উথাল-পাতাল করে উঠলো আমার।
সহসা মোবাইল বেজে উঠায় আমাদের চোখা-চোখিতে ছন্দপতন ঘটল। চমকে গিয়ে কোলের উপর রাখা ছোট পার্সটির চেইন ধরে টানাটানি শুরু করে দিল ও। মুহূর্তেই বেড়িয়ে এল মোবাইলটা। বাটন টিপে রিসিভ করেই কানে ঠেকালো- “কে আব্বু। ট্রেন ছেড়েছে এই তো কিছুক্ষণ আগে। আম্মু'কে দেব ? ধরো, এই দিচ্ছি।” মোবাইলটা পাশের ভদ্রমহিলার দিকে এগিয়ে দিল, “আম্মু, আব্বু ফোন করেছে”।
মোবাইলটা ওর মায়ের হাতে দিয়ে যেইনা আবার চোখ ফেরাল, তখনি বুদ্ধিটা মাথায় এল। তড়িৎ দাঁড়িয়ে মাথার উপর রাখা র‌্যাক থেকে ব্যাগটা টেনে নিলাম। কলমটা হস্তগত করেই ব্যাগটা আবার যথাস্থানে রেখে দিলাম। দ্রুত এগিয়ে গেলাম টয়লেটের দিকে। ভেতরে ঢুকে দরোজা বন্ধ করেই টপাটপ পরনের শার্টটা খুলে ফেললাম। ভেতরে হালকা আকাশী টি-শার্ট। শার্টটা হ্যাংগারে ঝুলিয়ে পরনের টি-শার্টটা খুলে হাতে নিলাম। মাত্র সেদিন আজিজ সুপার মার্কেট থেকে কিনেছি। ওটার বারোটা বাজাতে যাচ্ছি ভেবে একটু মায়া হলো। পরক্ষণেই ওই মুগ্ধ চোখের কথা ভেবে মায়া-টায়া সব ঝেড়ে ফেলে ওটাকে দেওয়ালে চেপে ধরলাম। বুকের দিকটায় সুন্দর নকশাকারে লিখে নিলাম আমার মোবাইল নাম্বার। কাজ শেষ করে নিজেই নিজের পিঠ চাপড়ে দিলাম। ভাল করে না তাকালে কেউ বুঝতেই পারবে না, নকশার আদলে ওটা আসলে কতকগুলো সংখ্যা- যার আড়ালে লুকিয়ে আছে একটা মোবাইল নাম্বার।

সীটে ফিরে দেখি ভদ্রমহিলা তখনো কথা বলে যাচ্ছেন। ওর দিকে ফিরতেই চোখে কপট শাসনের আভাস দেখতে পেলাম- যেন বলতে চাইছে, এই যে মশাই কোথায় গিয়েছিলন। আমি দৃষ্টিতে আশ্বস্ততা ফুটিয়ে স্বাভাবিক ভাবে গলার কাছটায় শার্টের বোতামে হাত দিলাম। মুখটা কাঁচুমাচু করে একটা উফ্ শব্দ করে এমন ভাব করলাম যেন গরমে মরে যাচ্ছি। দ্রুততার সাথে শার্টের উপর দিকের তিনটি বোতাম খোলে দিলাম। খোলা শার্টটা দু’পাশে ছড়িয়ে দিয়ে মুখটা নামিয়ে বুকের উপর জোরসে ফুঁ দিতে লাগলাম। আড়চোখে লক্ষ্য করলাম, ও হতভম্ব হয়ে আমার কাণ্ডকারখানা দেখছে। পরক্ষণেই আমার বুকের উপর চোখ পড়তেই মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল ওর।
কথা শেষ করে মোবাইলটা ওর হাতে ফিরিয়ে দিতেই ও এমন ভাব করলো যেন মায়ের উপর কিছুটা বিরক্ত। “উফ্ আম্মু, কত কথা যে বলনা’ বলেই মোবাইল টিপতে লেগে গেল। “ঝাড়া দশ মিনিট ধরে কথা বলেছো, জানো” বলে আস্তে করে মোবাইলটা আবার পার্সে রেখে দিল। ভদ্রমহিলা সামান্য হেসে মেয়েকে কিছু বলতে যাবেন এমনি সময় চোখ পড়ল আমার দিকে। কেমন যেন সন্দেহের চোখে আমার দিকে তাকিয়েই আবার মেয়ে দিকে ফিরলেন। আমি তড়িঘড়ি করে শার্টের খোলা বোতামগুলো লাগিয়ে নিপাট ভদ্রলোক সেজে গেলাম। দৃষ্টি ততক্ষণে জানালা গলে বাইরে মেলে দিয়েছি। ভেতরে ভেতরে টেনশনে মরে যাচ্ছি। আমি নিশ্চিত, ও নাম্বারটা মোবাইলে তুলে নিতে পারেনি।



“এত সুন্দর টি-শার্ট’টা নষ্ট করে ফেললেন ?”
“না মানে, আমি ...... !” কি বলব বুঝতে না পেরে আমতা আমতা করে উঠলাম।
কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম টেরই পাইনি। একে তো মেয়েটার জন্য মন খারাপ ছিল, তার উপর জার্নিতেও ভীষণ ক্লান্ত ছিলাম। তাই বাড়ী ফিরে কাপড় ছেড়েই বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিলাম। শোয়ার সাথে সাথেই ঘুম। ঘুম ভাঙ্গলো মোবাইল রিং এর শব্দে। ধরতেই অপরিচিত মেয়েলী কণ্ঠের এমন প্রশ্নে আমি হতবিহব্বল হয়ে গেলাম। কি বলব বুঝে উঠতে পারলাম না।
“থাক ওটার জন্য আর মন খারাপ করতে হবে না। সার্ফ এক্সেল আছেনা। ওতে বিশ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। দেখবেন সব দাগ হাওয়া”। বলেই লাইনটা কেটে দিল।
মুহূর্তেই ঘুম টুটে গেল আমার। লাফিয়ে বিছানা ছাড়লাম। এখনি দোকানে যেতে হবে। এক প্যাক সার্ফ এক্সেল কিনে আনতে হবে। আর মোবাইলে যথেষ্ট পরিমাণ টাকা রি-চার্জ করতে হবে তো বটেই।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Sondha rani Kundu Khub sundor hoease......valo thakun.
সকাল রয় ভালো লাগলো গল্পটি। একটা গল্পের গন্ধ পেলাম। আপনার সুকৌশল বর্ণনাশৈলী মুগ্ধ করলো। শুভ কামনা
আমি জানি কেমন লিখেছি । তারপরেও এই যে ভালোলাগা এই কেবল আমার প্রতি তোমাদের সবার অকপট ভালবাসার বহিপ্রকাশ । এর মুল্য আমি কোনদিন দিতে পারব কিনা জানিনা । তবে আমি যারপরনাই কৃতজ্ঞ । অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া, কস্ট করে এই সামান্য লিখাটা এমন অসামান্য আগ্রহ নিয়ে পড়েছ বলে ।
মিজানুর রহমান রানা কোনো সুকীর্তিই এক লহমায় তৈরি হয় না, সময় লাগে, সময়কে ধারণ করেই ধীরে ধীরে তা গড়ে ওঠে। আপনার গল্প বলার ঢং আমার বেশ প্রিয়। অনেকদিন পর আপনার গল্প পড়ে আশান্বিত হলাম। সেরাটাই থাকলো। শুভ কামনা।
গল্পকবিতা আর কিছু না হোক অকপট ভালবাসায় মোড়া একটা পরিবার ঠিকই আমায় দিতে পেরেছে । সেই কারণেই বুঝি এই পরিবারের ভায়েরা সবাই এসে একে একে আমার ঘরে পদধুলি দিচ্ছে । অসীম কৃতজ্ঞতা রানা ভাই এই ভাইটাকে কষ্ট করে দেখে গিয়েছেন বলে । এভাবে যদি সবাই ফিরে আসতো তবে বোধকরি আবারো আলো ঝলমলে হয়ে উঠত আমাদের গোটা পরিবার ।
ক্যায়স N/A UNION ALL SELECT NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL# খুব মজা পেলাম আপনার গল্পটা পড়ে সুমন ভাই। আমার কিছু বন্ধু- বান্ধবের কান্ডকারখানার কথা মনে করিয়ে দিলেন। উপস্থাপনাও বেশ চমৎকার। ভালোলাগা এবং ভোট দুটোই থাকল। আমার পাতায় নিমন্ত্রন রইল।
ধন্যবাদ ভাই । কষ্ট করে পড়েছেন বলে খুব ভাল লাগল ।
ঝরা পাতা গল্পটা ভাল লাগল। লেখক একজন বিষন্ন মানুষ হয়ে এরকম উচ্ছ্বাসমাখা গল্প লিখেছেন এই ব্যাপারটিও ভাল লাগল। কোনটা বেশি ভাল লাগল এইটা নিয়ে আমি নিজেও দ্বিধান্বিত... শ্রদ্ধা :)
পূর্ণেন্দু পত্রীর কথোপকথন কবিতার মত করে বলতে হয়, ভিখেরীকে কি ডাকাত হতে ইচ্ছে করবেনা একদিনও ?
রোদের ছায়া বিষণ্ণ তা কেটে গেলো আপনার গল্পটা পড়ে। আজকালকার প্রেম কাহিনী দারুণ হয়েছে। সার্ফ এক্সেল ওয়ালারা জানলে বেশ ভালো একটা বিজ্ঞাপন বানাতে পারবে ।
ধন্যবাদ মৌসুমী, আমি তবে ফুরিয়ে যাইনি । চাইলে এখনো লিখে যেতে পারব তাহলে ।
Rajib Ferdous গল্পটা তো ভাল লেগে গেল ভাই। নাজনীন পলির সাথে একমত। জান্নাতুল ফেরদৌস এর সাথেও একমত। আমার আমার মত হচ্ছে, গল্পে দারুন টান ছিল। তাই এত অল্প পড়ে মন ভরলোনা। আরো আরো পড়তে চাই।
গল্পকবিতায় যে মানুষটাকে পাঠক হিসেবে পেলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতাম, সেই সঙ্গে শংকিত থাকতাম তাকে খুশি করতে পারব কিনা এই ভেবে । সেই তুমি এদ্দিন পরে আমার লিখার মাধ্যমে গল্পকবিতায় ফিরে এসেছ দেখে কি যে খুশি লাগছে তা তোমাকে বলে বুঝাতে পারছি না ভাই । আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ ।
নাজনীন পলি এতো আল্প কথায় এতো সুন্দর গল্প হতে পারে জানতাম না , দারুণ লিখেছেন সুমন ভাই ।
গল্পকবিতার পুতুল পুতুল মিষ্টি মেয়েটার সুন্দর চোখে সবই সুন্দর হয়ে ধরা দেবে এটাই স্বাভাবিক ।

২৪ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৬৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪