আমি কতটুকুই করতে পারি

দেশপ্রেম (ডিসেম্বর ২০১১)

বিষণ্ন সুমন
  • ৪৪
  • 0
ইদানীং আমার কি যে হয়েছে আগের মত আর লিখতে পারিনা। লিখতে গেলেই কলম থেমে যায়। কিন্তু না লিখলে তো চলবে না। রানা ভাইকে কথা দিয়েছি, বিজয় দিবস সংখ্যায় লেখা জমা দেব। আর আমার স্বভাবে কথা দিয়ে তা না রাখার কোন দৃষ্টান্ত নেই। তাছাড়া এর সাথে অর্থের সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ সংখ্যা বলে কথা। সন্মানীটা একেবারে ফেলনা নয়। এখানে-ওখানে দু'কলম লিখে যা পাই তাই দিয়েই তো এই নগন্য জীবনটা চলছে।

আমি নিরব হাসান। বাবা-মা গত হয়েছেন অনেক আগেই। আত্নীয়-স্বজনের দয়ার বদৌলতে মফস্বলের এক কলেজ থেকে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে একদিন এই ঢাকা শহরে এসেছিলাম পেটের ধান্দায়। সেই থেকে দেখতে দেখতে আজ প্রায় বছর পাঁচেক হয়ে গেল এখানে পড়ে আছি। হ্যাঁ, পড়েইতো আছি। কেননা, সত্যিকারের মানুষ হিসেবে দাঁড়ানো যাকে বলে আমি তা এখনো পারিনি। সে কারণে আত্নীয়-স্বজন'ও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাদের ভাষায় আমি নেহায়েৎ অপদার্থ গোছের কেউ, যার দ্বারা কখনোই কিছু হবেনা। আমি মনে মনে হেসেছি, কারণ নিজের জন্য কিছু করবো এমনটি ইচ্ছে আমার আদৌ ছিলনা। আমি জ্ঞান হবার পর থেকেই দেখেছি, নিজের প্রতি আমিও মোটেও খেয়ালী নই। কাছের মানুষদের জন্য আমার মনটা ঠিক টানে না। বরং অন্যের জন্য আমি খুব অল্পতেই ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠি। যারই ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক সংগঠনের সাথে জড়িয়ে পড়ি স্কুল জীবনেই। সে কারণেই বোধকরি ছেলেবেলাতেই মা-বাবা আমায় নিজের মত করে চলতে দেবার পথটা প্রশস্ত করার নিমিত্তে আমাকে ছেড়ে চির প্রস্থানের দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। এতে আমি কষ্ট পেলেও ভেঙ্গে পড়িনি। বরঞ্চ শোক'কে শক্তিতে রূপান্তরিত করে আরো বেশী করে জনসেবায় ঝাঁপিয়ে পড়েছি। তাতে আখেরে আমার কতটুকু ভাল হয়েছিল জানিনা, তবে এই দেশকে, তথা এই দেশের মানুষকে ভালবাসার এক অপরিমেয় শক্তি অর্জন করেছি। লেখালেখির অভ্যেসটা আগে থেকেই ছিল। কলেজে থাকাকালীন লোকাল পত্রিকায় টুকটাক লিখার পাশাপাশি ঢাকার কিছু পত্রিকাতেও নিয়োমিত লিখে যাচ্ছিলাম। যার সুবাদেই রানা ভাইয়ের মত কিছু বড় মনের মানুষের সাথে পরিচয়। রানা ভাই ঢাকার একটি জাতীয় দৈনিকের সহকারী সম্পাদক হিসেবে কর্মরত। মূলতঃ তার ইচ্ছেতেই আমার ঢাকায় আসা।

ঢাকায় এসে আর সব বেকার মানুষের মত আমারও শুরুটা হয়েছিল অভাব নামক বস্তুটির সাথে সহাবস্থানের মাধ্যমে। তবে রানা ভাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় সেটা খুব বেশীদিন স্থায়ী হয়নি। অল্পদিনেই একটা চলনসই জাতীয় সাপ্তাহিকীতে জুনিয়র রিপোর্টার হিসেবে কাজ জুটে যায় আমার। সেই থেকে লিখে যাচ্ছি। সময়ের আবর্তে এখন আমি একটা প্রথম শ্রেনীর জাতীয় দৈনিকে সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত। কিন্তু অবস্থান বদলালেও আমার অবস্থার কোন হেরফের ঘটেনি। কারণ একটাই, আমার সেই পুরনো স্বাধীনচেতা মনোভাব আর সত্য বলার মানসিকতা। সাংবাদিকতা পেশায় যার তেমন কোনো মূল্য নেই। এখানে সেই তত দামী, যার মিথ্যে বলার দক্ষতা যত বেশী। মাঝে মাঝে ভাবি, একদম সত্যের মত করে মিথ্যে বলতে এ পেশার লোকদের মত করে আর কেউ পারেনা বোধহয়। আমি এদের মত নই এ ব্যপারটা আমায় যতটুকু না সুখ দেয়, তারচেয়ে বেশী ক্ষতবিক্ষত করে বিবেককে- যখন দেখি আমার মতই আর কেউ আমার ঠিক উল্টোটি ভাবছে। সে কারণেই ইদানীং আর লিখতে ইচ্ছে করে না। আর এই না লিখার ইচ্ছেটাই ধীরে ধীরে বন্ধ্যাত্বের দিকে ঠেলে দিয়েছে আমায়। যার দরুণ এখন প্রয়োজনের মুহুর্তেও আমি লিখতে পারছিনা।

আমার টেবিলের আশপাশে এই মুহুর্তে ফুল ফুটে আছে। একরাশ সাদা ফুল। হ্যাঁ, হঠাৎ করে কেউ আমার ঘরে চলে এলে ঠিক তাই ভাববে। মনে করবে একরাশ ফুলের ভেতর বসে আছি আমি। পত্রিকায় কাজ করার একটা সুবিধা হলো এখানে দিস্তা দিস্তা কাগজ ফ্রি পাওয়া যায়। যার বেশীরভাগই এখন আমার আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সব দুমড়ানো-মুচড়ানো কাগজ। এর প্রতিটাই বহন করে আছে আমার না লিখতে পারার চিহৃ।

সহসা চোখ পড়ল টেবিলের উপর রাখা সিগারেটের প্যাকেটের উপর। টেনে নিয়ে একটা ধরালাম। বুক ভরে বিষাক্ত ধোঁয়া গিলতে গিয়ে চকিতে একটা ভাবনা উদয় হলো। দৃষ্টি পড়ল সিগারেটের সুদৃশ্য প্যাকেটের এক পাশের লিখাটার দিকে। ওতে স্পষ্টাক্ষরে লিখা আছে, "ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর"। আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান, গানটার কথা মনে এলো। আসলেই তো তাই। আমাদের চারপাশে যত অনিয়ম যত অন্যায় হচ্ছে, সবই দেখি, সবই বুঝি। তারপরেও আমাদের কন্ঠে নেই কোনো প্রতিবাদ, নেই কোনো অনুতাপ। বরঞ্চ এই অন্যায়-অবিচারকে ন্যায়ের মোড়ক পড়ানোর কতই না অপচেষ্টা আমাদের। অথচ তারপরেও আমরা নাকি সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ। হ্যাঁ মানুষ, তবে অবশ্যই অমানুষ। ঠিক যেন এই সিগারেটের সুদৃশ্য মোড়কের মাঝে আড়াল করা প্রাণ হন্তাকারী বিষের মত। মানুষের আদলে একজন অকপট অমানুষ- যার কোন উপকারীতা নেই। যত্তসব ভন্ডামী।

টেবিলের উপর ইন্টারকম বেজে উঠায় সহসা চিন্তার জাল ছিন্ন হল আমার। সদ্য ধরানো সিগারেটটা আ্যাশট্রেতে গুজে হাত বাড়িয়ে রিসিভার তুললাম। সম্পাদক সাহেবের রুমে ডাক পড়ল। কারণটা বুঝতে অসুবিধা হলোনা। আ্যশট্রেতে সিগারেটটা পুড়ছে দেখতে পাচ্ছি। হাত থেকে রিসিভারটা রেখে এক দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে থাকলাম। মাত্র একটা টান দিতে পেড়েছিলাম মাত্র। অথচ দাম দিয়ে কেনা পুরো সিগারেটটাই পুড়ে ছাই হয়ে গেল। সহসা নিজের ভেতর একটা গোপন শক্তির আস্ফালন টের পেলাম। চাইলেই তো সব অনিয়ম অনাচারকে এভাবে নির্মুল করতে পারি, যদি আমার মাঝে তা করার ইচ্ছেটা জেগে উঠে।

আসতে পারি দাদা ? সম্পাদক সাহেবের রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে উনার দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম।

হুমম্, এসো হাসান।

আমি ভেতরে ঢুকতেই উনার টেবিলের সামনে রাখা চেয়ার দু'টোর একটির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। বসো।

আমি বসতেই আমার সামনে এক দঙ্গল কাগজের একটা ফাইল ঠেলে দিলেন। ওতে কি আছে আমি জানি। তবুও নিরীহ মানুষের মত চোখে প্রশ্ন তুলে তাকালাম।

এটা কি লিখেছ ? তোমাকে তো এভাবে লিখতে বলিনি।

কিসের কথা বলছেন দাদা ? আমি এবারো না বুঝার ভান করলাম।

আমি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কেসটার কথা বলছিলাম।

ওটার রিপোর্ট তো করে দিয়েছি। আমি শশব্যস্তভাবে উত্তর দিলাম।

তা দিয়েছ। কিন্তু, আমি যেভাবে বলেছি সেভাবে তো নয়। তার কন্ঠে কিছুটা বিরক্তির আভাস টের পেলাম।

দাদা আপনি তো ভাল করেই জানেন, সেটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি যথাসম্ভব সংযত অথচ দৃঢ় কন্ঠে উত্তর দিলাম।

সম্পাদক সাহেব ক্ষাণীকটা থতমত খেয়ে গেলেন। তার চোখের তারায় একটা আগুনে ভাব খেলে যেতে দেখলাম। তারপরেও কন্ঠটা যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে বললেন, তুমি যেমন জানো তেমনি আমিও জানি, সেটা সত্য নয়। কিন্তু, তোমাকে এটাও বুঝতে হবে। প্রেসারটা এসেছে খোদ প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের প্রধানের কাছ থেকে। এর সঙ্গে সেনাবাহিনীর অনেক রথী-মহারথীও জড়িত। এদের নাম প্রকাশ পেয়ে গেলে আর্মিতে কিরকম কেলেংকারী ব্যাপার ঘটে যাবে ভেবে দেখেছ ?

একটু থেমে দম নিলেন সম্পাদক সাহেব। সামান্য ঘুরে পাশেই টি-টেবিলে রাখা একটা পানি ভর্তি গ্লাস টেনে নিলেন হাতে। ঢকঢক করে গিলে নিলেন পানিটা। বুঝলাম ব্যপারটা উত্তেজিত করেছে তাকে। আমিও তো সেটাই চাই। এমনিভাবে সবাইকে নাড়িয়ে দিতে পাড়লে তবেই না সত্যটা বেড়িয়ে আসবে। শোন ব্যপারটা যদি শুধু সিভিলিয়ানদের নিয়ে হতো তবে সমস্যা ছিল না। আবার শুধু আর্মিদের নিয়ে হলে তো কথাই ছিল না। বিষয়টা প্রকাশ হবার আগেই ধামাচাপা দেওয়া যেত। যেহেতু, ঘটনাটায় আর্মি ও সিভিলিয়ান উভয়পক্ষই জড়িত, কাজেই এটাকে একটা বিশ্বাসযোগ্য শেপ দিতেই তোমাকে ওভাবে লিখতে বলা হয়েছে। তোমার দেওয়া সমস্ত তথ্য প্রমাণ ঠিকই থাকবে, শুধু ওখান থেকে কয়েকটা স্পর্শকাতর নাম বাদ দিতে হবে।

না দাদা, আমি তা পারবো না। দেশের সাথে এতবড় বেঈমানী আমি কিছুতেই করতে পারবো না। আমি আগের মতই দৃঢ়তা বজায় রেখে সংযত কন্ঠে উত্তর দিলাম। তারচেয়ে আপনি বরঞ্চ আর কারো নামে এটা ছাপিয়ে দিন।

তুমি ভালো করেই জানো, আর কারো নামে এটা ছাপানো মানে, রিপোর্টটাকে পুরোপুরি ক্লিনিক্যালি ডেড ঘোষনা করা। তুমিই একমাত্র লোক, যার হাত দিয়ে বেরুনো খবর কখনোই ভিত্তিহীনতায় অভিযুক্ত হবে না। আর আমরাও চাই, খবরটা সবাই গুরুত্বের সাথে নিক।

যদি তাই ভাবেন, তবে কেন সত্যটা প্রকাশ করতে চাইছেন না ? মিথ্যে প্রকাশ করে আপনার কি লাভ ? আমিও সমান তালে জবাব দিয়ে দিলাম।

সহসা উনি এমন একটা কাজ করলেন, যার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। চেয়ার ছেড়ে সটান দাঁড়িয়ে গেলেন । প্যান্টের পকেট থেকে একটা হলুদ লম্বাটে খাম বের করে ছুড়ে দিলেন আমার দিকে। দেখো এটা ভালো করে।

খামটা টেনে নিয়ে ভেতরে আংগুল ঢুকিয়ে দিলাম। রীতিমত চমকে উঠলাম আঙ্গুলের ফাঁকে একটা ব্ল্যাংক চেক আবিস্কার করে। এটার মানে কি দাদা ! আমার কন্ঠস্বর কেঁপে উঠছে টের পেলাম।

ওটা তোমার। ঠিক এরকম একটা আমিও পেয়েছি। তোমাকে ওটা নিতেই হবে, যেহেতু আমাদের আর কোনো উপায় নেই। এটা ফিরিয়ে দেবার মানে হলো, আমাদের নামের পাশে মরহুম জুড়ে দিয়ে নিজেই খবর হয়ে যাওয়া। কিন্তু, আমি তা চাই না। আমি আরো কিছুদিন বাঁচতে চাই। "সত্য সন্ধানী" পত্রিকায় নিত্য-নতুন সত্য খবর ভরে দিয়ে দেশবাসীর মনের মণিকোঠায় চিরঞ্জীব হয়ে থাকতে চাই।

দাদার কথাগুলো আমারও কানে বাজলো খুব। চকিতে মনে হলো, ওটা ছিল দশ কোটি টাকার একটা অস্ত্র কেলেংকারী। সামরিক অস্ত্রাগার থেকে ভোজভাজির মত অস্ত্র লাপাত্তা হয়ে যাবার চাঞ্চল্যকর ঘটনা। আচ্ছা, পুরো দশ কোটি টাকার অংকটাই চেকের ফাঁকা ঘরে বসিয়ে দিলে কেমন হয়। চিন্তাটা মনে ধরলো আমার। আমি হো হো করে হেসে উঠলাম। ওকে দাদা, আপনিই জিতলেন। চেকটা আমি নিচ্ছি। শার্টের বুক পকেটে ওটা রেখে টেবিল থেকে রিপোর্ট ফাইলটা তুলে নিলাম।

স্বস্থির একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে ধপ করে চেয়ারে বসে পড়তে দেখলাম দাদাকে। ওটা আমি চেঞ্জ করে এখুনি পাঠিয়ে দিচ্ছি, কথাটা উনাকে বলেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। বুকের উপর একটা প্রচন্ড শক্তির উত্তাপ টের পাচ্ছি, যে শক্তিবলে আমি চাইলেই দেশের সকল অনাচারকে ঝেটিয়ে বিদেয় করে দিতে পারবো। তবে সবার আগে যেটা করতে হবে, তা হলো বাজার থেকে সব সিগারেট কিনে নিতে হবে। তারপর সবগুলো এক করে আগুন জ্বালিয়ে দিতে হবে। আর কোনো ভন্ডামীর সুযোগ আমি দেব না।

রুমে ঢুকেই ফাইলটা খুলে ত্বরিৎ কিছু কাগজ এদিক-সেদিক করে সেগুলোকে ভাঁজ করে একটা খামে ঢুকালাম। উপরে রানা ভাইয়ের পত্রিকা অফিসের ঠিকানা লিখলাম। পটাপট শার্টের বোতাম খোলে গেঞ্জির ভেতরে খামটাকে রেখে দিলাম। এবার টেবিলের উপর থেকে ফাইলের বাকি কাগজগুলো হাতে নিয়ে ঢুকে গেলাম টয়লেটে। মেঝের উপর স্তুপ করে কাগজগুলোকে রেখে পকেট থেকে সিগারেট লাইটার বের করে আগুন ধরিয়ে দিলাম। কি মনে করে বুক পকেট থেকে ব্ল্যাংক চেকটাও বের করলাম। ছুড়ে ফেলে দিলাম ওটাকে আগুনের ভেতর। মিনিট দু'য়েকের মাঝেই পুড়ে ছাই হয়ে গেল সব। পানির কল ছেড়ে দিতেই নিমেষেই নেই হয়ে গেল ছাইগুলো। সবকিছু জ্বালানোর কাজটা আমি ভালই শুরু করতে পেড়েছি ভেবে তৃপ্তি বোধ করলাম।

টয়লেট থেকে বের হয়েই উপলব্ধি হলো, আমার আর কিছুই করার নেই। নিজেকে খুব ভারমুক্ত মনে হলো। তাই কাউকে কিছু না বলেই অফিস থেকে বেরিয়ে গেলাম। সন্ধ্যা ইতিমধ্যে জাকিয়ে বসেছে। রাস্তায় পা দিয়েই টের পেলাম আমাকে ফলো করা হচ্ছে। সহজাত প্রবৃত্তি বশেই দু'তলায় সম্পাদক সাহেবের রুমের জানালার পাশে চোখ গেল। আবছা একটা ছায়া সরে যেতে দেখলাম। দ্রুত হাঁটা দিলাম। আমায় যে করেই হোক বড় রাস্তার ধারে পৌছুতে হবে। সবে গজ পঞ্চাশেক এগিয়েছি, এমনি সময় ধুপ্ একটা শব্দ শুনতে পেলাম। সাথে সাথেই পেছন থেকে প্রচন্ড একটা ধাক্কা অনুভব করলাম। হুমড়ি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম তাল সামলাতে না পেরে। বুকের ভেতর প্রচন্ড একটা যন্ত্রণা হচ্ছে। মুখের ভেতর কেমন একটা নোনতা স্বাদ পেলাম। ভীষণ শ্বাসকষ্ট হতে লাগলো। দ্রুত একটা পদশব্দ এগিয়ে এলো আমার দিকে। গাঢ় লম্বা একটা ছায়াকে আমার পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে পড়তে দেখলাম। তার ডান হাতটা লম্বা করে মেলে দিল আমার দিকে। আবারো একটা ধুপ শব্দ শুনতে পেলাম। সেই সঙ্গে মনে হলো কেউ যেন একটা দশমনি পাথর চাপিয়ে দিল আমার বুকে। চোখের পাতা সহসা স্ফীত হয়ে গেল আমার। পরমুহর্তে একটা নিকষ কালো পর্দা এসে ঢেকে দিল আমার দু'চোখ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিজানুর রহমান রানা ১৯২ বার দেখা হয়েছে, তারপরও সুমন ভাইযের মন বিষণœ। বলেছেন গল্পে পাঠক নেই! আর কতো পাঠক দরকার হে প্রতিভাধর গল্পকার?
মিজানুর রহমান রানা একজন পরিপূর্ণ গল্পকার তার ইচ্ছেমতো গল্পকে সাজান। তিনি তার পারিপার্শ্বিকতা, আবহ, ঘটনাচক্র, মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, বাস্তবতা-অবাস্তবতা এবং আমাদের সাদা চোখে দেখা-না দেখাগুলো কল্পনার সাহায্যে তুলে ধরেন। আমরা অনেকেই সাদা চোখে যা দেখি না, একজন গল্পকার কল্পনায় তা প্রত্যক্ষ করেন। এক্ষেত্রে আমাদের বাস্তবতার সাথে গল্পকারের কল্পনাদৃশ্য অনেকক্ষেত্রে নাও মিলে যেতে পারে অথবা হুবহু মিলে যেতে পারে। সার্থক গল্পকার তার গল্পে পাঠকের জন্যে যেমন বিনোদনের মাত্রা প্রয়োগ করেন তেমনি কিছু কিছু প্রশ্ন তুলে ধরেন, যার উত্তর তিনি দেন না। তিনি পাঠকের কাছেই এর উত্তর এবং ভাবনাটা রেখে দেন। যাতে পাঠক এই গল্প নিয়ে বহুকাল যাবত ভাবতে পারে। তাই এই গল্পের পরিণতিটাও বিজ্ঞ পাঠকের কাছে ছেড়ে দিয়েছেন গল্পকার। পাঠকই সেটা নিয়ে ভাববে, এখানে পাঠকের অজানা বিষয়ের উত্তর দেয়ার দায় গল্পকারের নেই বলেই আমি মনে করি। সেটা একান্তই পাঠকের নিজস্ব চিন্তা-চেতনা বোধের ওপর বর্তাবে। আরেকটি কথা, গল্পকার উত্তর পুরুষে গল্প লিখলেই তা আত্মজীবনী মুলক হয় না। ধন্যবাদ।
বিষণ্ন সুমন যেহেতু দীর্ঘ ৫ বছর একটা জাতীয় সাপ্তাহিকীতে প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেছি, তাই এই জগতের প্যাচ-গোচ'গুলু মোটামোটি সবই জানা আছে। সেই অভিজ্ঞতার আলোকেই এই গল্প লিখা। সাংবাদিকতা পেশায় সবচেয়ে বিপদজনক হলো ক্রাইম রিপোর্টিং। আর যে কোনো ক্রাইম রিপোর্টিং এর ক্ষেত্রে ইনফরমেশন সোর্স কে উক্ত রিপোর্টের মূল ভিত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। মূলত পাঠক যা দেখে তা হলো সেই মূল রিপোর্টের প্রক্ষেপন মাত্র। তাই এই গল্পে নিরব ছাড়া আর কারো নামে রিপোর্ট'টা ছাপানো সম্ভব ছিলনা, যেহেতু সমস্ত রেফারেন্স ও তথ্য সুত্রগুলু ওর কাছেই ছিল, যা রিপোর্ট'টির সত্যতা প্রমানে অবশ্যই প্রয়োজনীয়। এমতাবস্থায় ও যখন কথা দিয়েও রিপোর্ট'টি চেঞ্জ না করেই, কাওকে না বলেই অফিস থেকে বেরিয়ে যায় এবং জানালার আড়াল থেকে সম্পাদক সাহেব তা দেখে ফেলেন, তখনি ওর ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায় । কারণ ওকে বাচিয়ে রাখা মানে হচ্ছে প্রকৃত ঘটনা অন্য কোথাও প্রকাশ হয়ে যাবার সুযোগ সৃষ্টি হওয়া, যা প্রতিপক্ষ কখনই হতে দিতে পারেনা। আশাকরি এবার খটকা দূর হয়েছে @ মুকুল দা ও নিরব ।
নিরব নিশাচর চমত্কার গল্প... নির্ভরযোগ্যতার স্বার্থে হাসন কে দিয়েই খবরটা করাতে চেয়েছিল সম্পাদক, তবে তাকে ছাড়াও খবরটা করানোর উপায় ছিল... তাই হাসান কে এত বেশি প্রেসার না দিলেও চলত... আর হাসানের উপর প্রেসার দেখাতে চাইলে হাসানের নিকট গুপন কোনো তথ্য আছে যা সম্পাদক কে দিতে চাইছেন না , এমনটা দেখালে পারতেন... গল্প লিখা বরাবরের মত সাবলীল এবং চমত্কার ... মুকুল দা, আমি, রানা ভাই... তারপর কে ? দেখার অপেক্ষায় রইলাম ...
খোরশেদুল আলম গল্পের শেষ দৃশ্যের মত চলছে দেশ। আর এভাবে চলতে থাকলে দেশটাও শীঘ্রই এই দৃশ্যে পরিনত হবে। নিরব হাসানের মত মানুষ অনেক আছে। অসত্যের চাপে তারা সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। পারে না দেশকে কিছু দিতে। বরাবরের মতো শেষে চমক। শুভেচ্ছা।
হোসেন মোশাররফ লেখার ধারাটা আগের মতোই, একটু যেন ওলট পালট ....
প্রজাপতি মন :-( আমাদের দেশের সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকদের অবস্থা কি এমনই হয়? অনেক কষ্ট লাগে এসব দেখলে। গল্প অনেক ভালো লেগছে। কিন্তু আরও ভালো লাগতো যদি তিনি সত্যি সংবাদ টা পরিবেশন করতেন।
পন্ডিত মাহী বেশ ভালো...
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি নিরব হাসানের নিরবতা দিয়ে গল্পের শেষটা খুবই চমতকার। গল্পের ধারাবাহিকতার সাথে সমাপ্তিটা ভীষন ভাবে মনটাকে দোলালো। শুভকামনা সুমন ভাইয়া, প্রাপ্যটা দিয়ে দিলাম ....
আহমাদ মুকুল সুন্দর গল্প। তবে কাহিনীতে খটকা আছে কিছুটা, নীরব হাসান তো বলেই ছিল অন্য কাউকে দিয়ে চাহিদামত খবর ছাঁপিয়ে নিতে। সম্পাদক বলেছিলেন, সেটি সম্ভব না। সেক্ষেত্রে নীরবকে মেরে ফেলাটা যুক্তিসংগত নয়। আরেকভাবে নিতে পারি, শেষটুকু নীরবের প্রতিকী মৃত্যু, মানে আপোস করা।

২৪ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৭০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪