মরার ঈদ

ঈদ (আগষ্ট ২০১৩)

বশির আহমেদ
  • ৮১
হাসিম মিয়া হত দরিদ্র এক জন লোক । তার ভিটে মাটিটা ছাড়া আর জমি জিরাত বলতে কিছুই নাই । দিনমুজুরী করে কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে জীবন চালিয়ে যাচ্ছে । সু`দিনে যাও চলে যায় কিন্তু বর্ষা বাদলা কিংবা বন্যা হলে কয়েক দিন এক নাগারে বউ বাচ্চা নিয়ে উপুষ কাটাতে হয় । রোজা এসে গেছে সামনে ঈদ ছেলে মেয়েরা বায়না ধরেছে এবার তাদের নতুন জামা না হউক ছেলেদেরকে টুপি ও মেয়েদের লালফিতা কিনে দিতে হবে । যেখানে দু বেলা দুমোটো ভাতই দিতে পারে না সেখানে বাড়তি খরচ টুপি আর ফিতা কোত্থেকে কিনে দিবে হাসিম মিয়া ভেবে পায় না । তবু হাসিম মিয়া ছেলে মেয়েদের খুশী করার জন্য মিথ্যে করে বলেছে দেবো রে দেবো ।
দেশে এখন প্রচন্ড খরা চলছে গ্রামে কোন কামকাজ তেমন একটা নাই । হাসিম মিয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে খড়ার সময় প্রতিবারের মত এবারও সে গঞ্জের হাটে আড়তে লুডিং আনলুডিং এর কাজ করবে । তাতে মোটামুটি ভালই রোজগার হয় । যত বোঝা তত রোজগার । বন্ধরের জাহাজ বা নৌকা থেকে লুডিং আনলুডিং এর কাজ । তা ছাড়া ঈদের সময় আড়তদারেরা জাকাত ফেতরা বাবদ বেশ কিছু টাকা পয়সা দান খয়রাত করে থাকে । সামনে থাকলে তার কিছু অংশ বিশেষ হাসিম মিয়ার ভাগ্যেও জোটে কখনো কখনো । আগামী কাল থেকেই গঞ্জের হাটে যাবে বলে হাসিম মিয়া মনস্থির করেছে । বড় ছেলেটার বয়স দশ পেরিয়ে এগারোতে পড়েছে । সেও তার বাপের সাথে গঞ্জের হাটে যাবার বায়না ধরেছে । যে বড়বড় বস্তা তার ছেলে জজমিয়ার পক্ষে তা মাথায় তোলা সম্ভব না । তবু ছেলে কে নিয়ে যাবে বলেই ঠিক হয়েছে ।
হাসিম মিয়া গরীব হলে কি হবে সংসার মাশাল্লা এক খান বানাইছে বড় ই । চার ছেলে দুই মেয়ে বউ জামাই মিলে আটজন খানেওয়ালার সংসার । ছেলে মেয়ে গুলিও হয়েছে সারাদিন খালি খাই খাই করতেই থাকে । হাসিম মিয়ার বউ আছিয়া মাশাল্লা বছর বিয়াইন্না গাই । বছরের এই মাথায় একটা আবার ঐ মাথায় একটা করে বিয়াইয়াই গেছে । মাঝে দুইডা বাচ্চা আতুর ঘরে মারা না গেলে দশজন খানেওয়ালার সংসার হয়ে যেতো । বউডারই বা দোষ কি বেটা হাসিম মিয়াই তো একটা খচ্চর । দিন নাই রাত নাই সময় পাইলেই খালি বউয়ের গুত্তায়ঢুইক্কা পইড়া থাকে । বিয়ার সময় কি নাদুস নুদুস বউটা ছিল । শালা খাটাশের অত্যাচারে, আধাপেটা খাওয়া আর বছর বছর বিয়ানের ফলে বউডা আজ অস্থিচর্মসার দেহ নিয়ে কোন রকম বাইচ্চা আছে । এই শরীর নিয়াই তাকে আবার অন্যের বাড়ী বাড়ী কাজ করে বাসী পান্তা যা পায় তা দিয়ে নিজে না খেয়ে ছেলে মেয়েদের খাওয়াতে হয় । স্বামী সারাদিন কাম করে যা পায় তা দিয়ে সন্ধ্যায় কিছু চালডাল কিনে আনে। তা দিয়ে ছেলে মেয়ে সবাইকে খাইয়ে যা থাকে তাই মুখে তুলে । অনেক দিন সবাইকে খাইয়ে নিজে না খেয়েই পড়ে থাকে ।
হাসিম মিয়া পর দিন সকাল সকাল জজমিয়াকে নিয়ে গঞ্জের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ল । গঞ্জে এসে দেখে লুডিং আনলুডিং এর কাজ পুরো দমে চলছে । আরতদার মকিম বেপারী হাসিম মিয়াকে দেখে দ্রুত কাজে লেগে পড়তে বললো । হাসিম মিয়া ছেলের বেপারে কথা বলতে চাইলেও মকিম বেপারীকে সুযোগ মত না পাওয়ায় নিজে কাজে লেগে পড়লো । কারন এখানে যত বস্তা সে টানতে পারবে তার উপর মুজুরী নির্ভর করবে । তাই আর বিলম্ব না করে হাসিম মিয়া ছেলেকে আড়তের বারান্ধায় বসে থাকতে বলে নিজে কামে লেগে গেল । আখের গুড়ের বড় বড় মটকা মাথায় করে জাহাজ থেকে নামিয়ে গোডাউনে রাখতে হচ্ছে । এক একটা মটকার ওজন প্রায় দেড় মন হবে । হাসিম মিয়ার না খাওয়া শরীরটা প্রায় ভেঙ্গে আসে । কোন উপায় নেই হাসিম মিয়াকে যে কাজ করতেই হবে । সামনে ঈদ ছেলে মেয়েদের বায়না তা ছাড়া সংসারের প্রয়োজনে অনেক টাকা যে তার দরকার । প্রতিটি মটকা বহন করে যথা স্থানে রাখার জন্য হাসিম মিয়া পাবে পঞ্চাশ পয়সা । সারা দিনে তাকে অন্তত এক শত মটকা টানা দরকার । তাতে করে সংসারের খাওয়া খরচের পর ও দুটো পয়সা হাতে থাকবে । হাসিম মিয়া গায়ের জোড়ে অসাধ্যকে সাধ্য করার জন্য অমানষিক পরিশ্রম করে যাচ্ছে ।
দুপুরে খাবার সময় আড়তদারের কাছ থেকে পাচ টাকা অগ্রিম নিয়ে বাপ বেটা আটার রুটি আর গুড় দিয়ে আধপেটা খেয়ে নিল । দ্রুত খাওয়া শেষ করে হাসিম মিয়া আড়তদার মকিম বেপরীর সামনে এসে দাড়াল ।
মকিম বেপারী হাসিম মিয়াকে বলল কি হাসিম আবার কি হলো ?
বেপারী সাব দয়া কইরা আমার পোলডারে যদি একটা কাম দেন । পোলাডা অনেক আশা কইরা আইছে ।
আরে তোমার পোলাতো অনেক ছোট তারে আড়তে আমি কি কাম দিমু ।
যদি দয়া কইরা কিছু একটা দেন যেমুন গোদামের ভিতরে মাল গুলি সাইজ কইরা রাখুন কিংবা আপনাদের হুট হরমাশ হুনুন ।
আমার যদিও দরকার নাই তবু যখন বলছ- তারে আমার বাসার জন্য রাইখা যাও । রোজ বাস থেকে দুপুরের খাবারটা আনবে সেই সাথে বাসায় হুটহরমাশ শুনবে । তা পারবে তো ?
জি সাব পারবো । কিরে জজ পারবি না ? জজ জবাবদেয় হ পারুম ।
বেতন কিন্তু দিমুনা তয় তিন বেলা খাওয়া পড়া পাইবো । রাজি আছ নি বল ?
হ সাব রাজি । হাসি মিয়া ভাবে অন্তত এক জনের খাওয়া পড়ার খরচ তো কমলো ।
হাসিম মিয়া রোজার দিনেও অমানুষিক পরিশ্রম করে যাচ্ছে । পনর রোজার দিন হঠাৎ করে হাসিম মিয়া একটা চালের বস্তা মাথায় তুলতেই কোমরটা জানি কেমন মোচর দিয়ে উঠলো । হাসিম মিয়া বস্তা সহ মাটিতে পড়ে গেল । সাথী কয়েক জন দৌড়ে গিয়ে হাসিম মিয়াকে টেনে তুলতে গেলেও হাসিম মিয়া আর সোজা হয়ে দাড়াতে পারলো না । ব্যথায় কুকড়ে উঠলো । মকিম বেপারী দ্রুত তাকে গঞ্জের হাসপাতালে পাঠাবার ব্যবস্থা করলো । হাসপাতালে নেবার পর পরীক্ষা নিরীক্ষায় জানা গেল হাসিম মিয়ার মেরু দন্ডের হাড় ভেঙ্গে গেছে যা আর স্বল্প চিকিৎসায় ভাল হবার নয় । তবে ব্যথা উপশমের জন্য তাকে বেশ কয়েক দিন হাসপাতালে থাকতে হবে । হাসিম মিয়া হাসপাতালে পড়ে রইল । বাড়ীতে বউ বাচ্চা কি খাবে কেমন করে চলবে হাসিম মিয়া ভেবে পায় না । হায়রে বিচিত্র জীবন মানুষ ভাবে এক আর হয় আর এক । ভেবে ছিল এবার ঈদটা সবাইকে নিয়ে ভাল ভাবে কাটাবে কিন্তু বিধি বাম একটা দুর্ঘটনা সব কিছু চুরমার করে দিল ।
ঈদের পাঁচদিন আগে হাসিম মিয়াকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে দিল । গায়ের কয়েক জন মিলে একটি কাঠের পাটাতনে শুয়ে কাধে করে বাড়ী নিয়ে এল । এ দিকে হাসিম মিয়ার বউটা একা দশ বাড়ী পরিশ্রম করে কোন রকমে সবার মুখে দুমুঠো ভাতের জোগার করে যাচ্ছে । কাল ঈদ তাই আছিয়া অন্যের বাড়ীতে কাজে ব্যস্ত । রাত অনেক হলো আছিয়া ফিরছে না । ছেলে মেয়ে গুলো না খেয়ে ক্লান্ত হয়ে এক সময় ঘুমিয়ে পড়েছে । হাসিম মিয়ার চোখে ঘুম নেই । বড় ছেলেটা আড়ত দারের বাড়ীতে আছে । এক সময় দরজায় কে যেন নাড়া দিয়েছে হাসিম ভাবলো আছিয়া এসেছে । না ঘরে ঢুকেছে জজমিয়া ।
আব্বা তোমার শইলডা এহন কেমুন ?
আর আমার শইল । তুই এত রাইতে কেমনে আইলি ? কাল ঈদ আইজ তারা তোরে আইতে দিল ।
হ আব্বা মহাজন নিজেই আমারে পাডাইছে । তোমার লাইগা একটা লঙ্গি মার লাইগা একটা শাড়ী আর দুইশ টাকা দিয়া কইল
যা রে জজ তুই বাড়ী যা । এগুলি দিয়া কাইল সকালে ঈদের নামাজের আগেই আইয়া পরিছ । আমি লইয়া ই দৌড় দিছি । বাজার থেকে আবু আর খুশীদের জন্য তিনডা টুপি আর ফিতা কিন্না আনছি আব্বা । ভালা করছি না আব্বা ।
হ রে বাপ অনেক ভালা করছস । তর মায় তো এখনো ঘরে ফিরে নাই । কার বাড়ী যেন গেছে কইতে পারি না ।
আচ্ছা আমি দেখতাছি । তুমি চিন্তা কইরো না । বলেই সে আবার ঘর থেকে বাইরে এসে মাকে খুজতে বেড়িয়ে পড়লো ।
চিন্তা কইরোনা কইলেই কি আর চিন্তা না কইরা পারা যায় । হাসিম মিয়া বুঝতে পারছে এ কয়েক দিনেই তার ছেলে অনেক বুঝদার হয়ে উঠেছে । এত কচি দুধের বাচ্চা যে এমন বুঝদার হয়েছে তা দেখে বেশ ভাল লাগছে । হাসিম মিয়া ছেলে মেয়েদের কথা দিয়েছিল টুপি আর ফিতা কিন্না দিবো সে পারে নাই পোলা তার মান রাখছে বলে অসুস্থ অবস্থায়্ও তার মনটা অনেক হালকা লাগছে । রাত প্রায় দশটার দিকে আছিয়া তার ছেলেকে নিয়ে ঘরে ঢুকলো । আছিয়া তার শাড়ীর আচলের নিচ হতে ভাতের বলটা নামিয়ে রেখে হাসিম মিয়ার সামনে এসে দাড়াল । পোলাপাইনতো শুইয়া পড়ছে আপনে কয়ডা খাইয়া লন । যারে জজ হাতমুখ ধুইয়া আয় তুই্ও কয়ডা ভাত মুখে দে । বলেই আছিয়া একটি বাটিতে কিছু ভাত আর তরকারী মেখে নিয়ে হাসিম মিয়াকে খাইয়ে দিতে শুরু করলো । তিন জনেই খ্ওায়া শেষ করে শুয়ে পড়ল । কারন সকাল সকাল আবার আছিয়াকে উঠে চৌধুরী বাড়ী যেতে হবে ।
বাইরে ফর্সা হয়ে উঠেছে । গ্রামের মানুষ জেগে উঠছে । আছিয়ারও ঘুম ভেঙ্গে গেল । দেখতে দেখতে ছেলে মেয়ে গুলিও উঠে পড়েছে । জজ মিয়া উঠেই ছোট তিন ভাই ও বোনদের কে উপহার গুলো হাতে ধরিয়ে দিয়ে মা বাবাকে বলে মহাজনের বাড়ীর উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লো । কাগজের রঙ্গিন টুপি আর লাল ফিতা পেয়ে হাসিম মিয়ার ছেলে পেলেরা কি যে খুশী তা আর বলে শেষ করা যাবে না । পাঁচ ভাই বোন এক দৌড়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গিয়ে সবাইকে দেখাতে লাগলো দেখ ভাইয়া আমাদের জন্য নতুন টুপি আর ফিতা আনছে । বলতে বলতে সারা পাড়ায় ঘুরতে লাগলো এবং গরুর নতুন বাছুরের মত লাফাতে শুরু করে দিল । হাসিম মিয়া ভাঙ্গা বেড়ার ফাঁক দিয়ে দেখতে দেখতে তার মন খুশীতে ছেলে মেয়েদের সাথে সাথে নেচে উঠছে । আজকের ঈদটা যেন হাসিম মিয়ার জীবনে নতুন এক আনন্দ নিয়ে এসেছে । মেয়ে দুটো তার মায়ের কাছে ফিতা নিয়ে গিয়ে বলল- মা ফিতাটা মাথায় সুন্দর কইরা বাইন্দা দেও ।
আছিয়া বলল- মারে আমিতো কোন দিন ফিতা বান্দি নাই । ফিতা কেমনে বানতে অয় আমি ত জানি না । তরা তোদের খুশী আফার কাছে যা । হেয় তোগেরে ফিতা বাইন্দা দিব নে ।
দুই বোন খুশী আফার কাছে দৌড়ে গেল । খুশী নারকেল কুড়ানোয় ব্যস্ত । তারা গিয়ে বলল খুশী আফা ভাইয়ে নতুন ফিতা আইন্না দিছে তুমি আমাগেরে ফিতাডা বাইন্দা দেওত ।
খুশী বলল- এখন যা পারুম না । দেখছস না কাম করছি । আর তরা গতর (গোসল) ধুইছস যে এখন ফিতা বান্দবি ? যা গতর ধুইয়া আয় তখন বাইন্দা দিমুনে ।
মনটা বেজার করে দুই বোন ঘরে ফিরে এল । ঘরে বসেই দুই বোন সিদ্ধান্ত নিল তারা এখনই বিলে গিয়ে ডুব দিয়ে আসবে । যেই কথা সেই কাজ । বিল থেকে ঝপাং ঝপাং কয়েকটা ডুব দিয়ে তারা উঠে এল । মাথা না শুকাতেই তারা আবার গিয়ে খুশীর কাছে হাজির ।
খুশী এবার শান্ত ভাবে বলল আরে বোকার দল মাথাটা আগে ভাল কইরা শুকাইয়া আয় ।
মাথা শুকায়ে আসার পর খুশী দুই বোনকে সুন্দর করে মাথা আচড়িয়ে ফিতা দুটো বেধে
দিল ।
পড়নে ছিরাফাড়া ময়লা হাফ পেন্ট আর খালি গায়ে মাথায় ফিতা বেধে দু বোন আর কাগজের টুপি মাথায় দিয়ে তিনভাইয়ের আনন্দ আর ধরে না । তারা আনন্দের আতিশয্যে এ বাড়ী ও বাড়ী ঘুরে বেড়াতে লাগলো ।
আছিয়া বড় ছেলেকে বিদায় দিয়েই চৌধুরী বাড়ীর উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লো । চৌধুরী চাচী বারবার বলে দিয়েছে কাক ডাকা ভোরে সে যেন তাদের বাড়ী এসে হাজির হয় । কারন অনেক কিছু রাধতে হবে । দুই রকমের সোয়াই, খিচুরী ,গরুর মাংস, মোরগীর মাংস, ভাত । চৌধুরী চাচা খেয়ে তার পর নামাজে যাবে । তিনটি চুলায় সোয়াই,খিচুরী আর গরুর মাংস বসানো হয়েছে । আছিয়া চুলায় জালদিচ্ছে এক সময় সোয়াই বলগ উঠে ভলকানো শুরু করেছে । আছিয়া এক দৃষ্টে তা দেখছে দেখতে দেখতে এক সময় আছিয়ার চোখ দিয়ে ঝরঝরিয়ে পানি পড়তে শুরু করেছে । আছিয়া শত চেষ্টা করেও তার মনের ভলকানি থামাতে পারছে না । লোকটা এবার গঞ্জের কাজ থেকে ফিরে একদিন বললো- জানিস বউ এবার যদি পুরা মাসটা গঞ্জে কাম করতে পারি তয় ঈদটা অনেক ভাল কইরা করতে পারুম । প্রতিবার পোল মাইয়াগো কথা দেই ঈদে তাগেরে নতুন জামা জুতা কিন্না দিমু কিন্তু পারি না । এবার মনে অয় খোদা মুখ তুইল্লা চাইছে । তাগেরে এবার নতুন জামা কাপড় কিন্না দিমু আর তুই ভাল কইরা পাতিল ভর্তি কইরা সোয়াই রানবি । কিন্তু কিত্তে কি অইয়া গেল লোকটা কোমর ভাইঙ্গা ঘর বৈঠা অইল । পোলাপানের জন্য নতুন কাপড়ত দুরের কথা একটু সোয়াই মুখে দিব তাও অইল না ।
আছিয়া চৌধুরী গিন্নির চোখ ফাঁকি দিতে পারল না । কিরে আছিয়া তুই কানতাছস কেন ? হাসেম কি তরে কিছু কইছে ?
নাগো চাচী হেয় কিছু কয় নাই । কই কানছি না ত । অমনই চোখে ধোয়া লাইগ্গা চোখ দিয়া পানি পড়তাছে ।
দেখ ছেমড়ি আমারে উল্টা পাল্টা বুঝাইস না । কি অইছে আমারে ক ।
দু:খের কথা কি আর কমুগো চাচী হেয় কোমর ভাইঙ্গা ঘর বৈঠা হইছে । পোলা পানগোরে কথা দিছিল এবার ঈদে নতুন জামা কাপড় কিন্না দিবো । পাইলা (পাতিল) ভইরা সোয়াই রাইন্দা খ্ওায়াইবো । কিন্তু দেহেন কি কপাল । কিছুই করতে পারলোনা । এ কথা মনে কইরা চোখ দিয়া পানি পড়তাছে । কন খোদার এইডা কিমুন বিচার । সব দুঃখু কষ্ট কি খালি গরীবের লাইগ্গা গো চাচী । আমি অহন কি করুম গো চাচী কইতে পারে ন ? পোলাপান গুলি ঈদের দিন ভাল মন্দ খাইতে চাইলে কইত্তে খাওয়ামু ? মরার ঈদ গরীবের লাইগ্গা না আইলে পারে না ?
চৌধুরী গিনি আছিয়ার প্রশ্নের কোন জবাব দিতে পারে না । দুনিয়ার কেউ এ প্রশ্নের জবাব দিতে পারবে না । শোষক আর শোষিতের ব্যবধান দিনদিন বাড়বে বই কমবে না । হাসিম মিয়াদের ভাগ্যের চাকা চিরদিন এমনি করে মাঝা ভেংগে মুখথুবরে পড়ে থাকবে ।


আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
জাকিয়া জেসমিন যূথী খুব সুন্দর লিখেছেন, বশির ভাই। ঈদের মধ্যে শত ব্স্তযতায় তবু যে লেখা দিতে পেরেছেন এবং লেখাটি অনবদ্য হয়েছে সেটাও অনেক। অনেক ধন্যবাদ, সমাজের একটি ছবি অংকনের জন্য। আমাদের চারপাশের যারা দুঃস্থ আছেন, তাদের পাশে আমরা যদি এক-দুজনে করে হেল্প করি, তাহলে এই অবস্থা আর থাকবেনা। এই অবস্থাগুলোর উন্নতির জন্য আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। আশা করি, এক সময় এই প্রবাদ প্রবচণগুলোও কালের ডায়রী হয়ে যাবে।
আমার বিশ্বাস আমার আদর্শকে গল্পে আকতে চেষ্টা করেছি । জানি সাহিত্যের মুল্যায়নে তা অখাদ্য তবু শ্রমজিবি মানুষের একটা করুন চিত্রতো কিছুটা হলেও তুলে ধরতে পেরেছি । আমাদের ব্যক্তিগত চেষ্টায় সাময়িক সাহায্য করা গেলেও চির স্থায়ী সমাধান একান্ত প্রয়োজন । ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য ।
ব্যক্তিগত চেষ্টাই কেউ শুরু করলে এক দুজন করে অনেকের ইচ্ছার আর মনোভাবের পরিবর্তন আসবে। আর এরপরে সম্মিলিত প্রচেষ্টা। আজকাল সরকার কে দিয়ে কিছু হয়না।
সূর্য গল্প পড়তে পড়তে অনেকগুলো প্রবচন মনে পড়ে গেল, "আল্লাহর মাল আল্লাহয় দেখব" "যদি থাকে কিসমতে ভাসতে ভাসতে আসিবে" আর সবচেয়ে বড় যেটা তা হলো "আল্লাহ কষ্টে ফেলে মানুষের ঈমান পরীক্ষা করেন" ধর্মের গভীরে এর কতটা বাস্তবতা আছে তা বলতে পারব না তবে এগুলো খুব ব্যবহার হয়, মানুষ মানেও। হাসিম মিয়ার বউয়ের "মরার ঈদ গরীবের লাইগ্গা না আইলে পারে না?" এর মতো আমারও বলতে ইচ্ছে করে কষ্ট আর পরীক্ষার সবগুলোই কেন গরীবের জন্য??????? কষ্ট গল্প ভালো লাগলো, তবে আরেকটু গুছিয়ে লিখার সুযোগ কিন্তু ছিল বশির ভাই।
অফিসে কাজের ফাকে ফাকে লিখেছি । এখন মনে হচ্ছে আরও বাস্তব সম্মত ও আকর্ষনীয় করা যেত । আরও কিছু প্রবাদ প্রবচন গল্পে জুড়ে দেবার অবকাশ ছিল ্ সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় কোন পকার সম্পাদনা ছাড়াই পোষ্ট করে দিয়েচি । আপনার সুচিন্তিত মতামতের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ।

০৭ এপ্রিল - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৩৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪