বন্ধু থেকে বান্ধুবী

বন্ধু (জুলাই ২০১১)

নুপুর সুপ্রিয়
  • ৪৩
  • 0
  • ১৪
বন্ধুরা জিজ্ঞেস করল : চার জনের মধ্য কাকে তোর বেশী সুন্দর লাগে? অকপটে বলে পেললাম: মাধবী। ইউনুস আর দেরী করল না। শেখ ফরিদ থেকে সাদা চক নিয়ে ক্লাসের পাশে যেখানে টিউবলটি ছিল। তার মুখমুখি দেয়ালে লিখে দিল। এম+এম। তখনও ব্যাপারটি আমি টের পায়নি। বন্ধু আলমগীর এর কথায় টিউবলের সামনে গিয়ে দাড়ায়। সেখানে অনেক ছাত্রছাত্রী জমাট হয়ে আছে। দেয়ালে এর আগে আরো অনেক নামের সংক্ষেপ এব্রিবিয়েশন ছিল। তবে এত বড় ছিল না। তা ছাড়া এই সদ্য লেখা। এর আগেও শিক্ষাক সব ক্লাসের ছাত্রছাত্রীকে হুশিয়ারী সংকেত দিয়ে দিয়েছেন। তার পর থেকে পুরনো লেখাগুলো ছাড়া নতুন কোন লেখা যোগ হয়নি। কিন্তু অনেকদিন পর এইভাবে বড় বড় লেখার সতেজতা যেমন সবার চোখে পড়ে তেমনি করে অনেকে লেখকের সাহসীকতার সাথে কে এই নামের বিশেষণের বিশেষিত তা দেখে সমালোচনা করতে থাকে। আমি তাজ্জব হয়ে কি করব। ভালোভাবে না ভেবে সবার ভিড় কেটে কল থেকে এক কোষ্ট পানি নিয়ে লেখাটি মুছে দিয়। এর মধ্যে আমার বোকামীতে আমাকে সবাই চিনতে পারল। জুনিয়ারেরা ভয়ে সামনে না বললেও পিছনে এম এম বলে হামাহাসি করছিল। ক্লাসে গিয়ে রেগে গেলাম ইউনুসের সাথে। তারাএ সবায় হাসছে। ইতিমধ্যে শিক্ষক আসায় সে বিষয়টা ঘন্টাখানেকের জন্য স্থগিত হয়ে পড়ে। শিক্ষক প্রস্থানের সঙ্গে সঙ্গে আমার সাথে ইউনুচের তমূল তর্কে জড় বহিতে থাকে। সে ধমক দিয়ে বলে বেশী কথা বললে পুরো গ্রামের সব খালি দেয়ালে ছিগা করে দেবো। তখন কি করবি? এই ধমক খেয় কিছুটা শান্ত হয়ে পড়ি। বন্ধু আলমগীর আমার পক্ষ সমর্থন করে বলে এই মাধু এইটি কিছুনা। এই নিয়ে বেশী ভাবলে দেখবি সত্যি সত্যি তার প্রেমে পড়ে যাবি। তার সাথে ওয়াদা করলাম এই নিয় আর ভাবব না এবং কারো সাথে তর্কও করব না। যে যা ইচ্ছা বলুক। তারপর দিন চুপেচুপে সে লেখা দেখতে গিয়ে শেখ ফরিদের হাতে ধরাপড়ি। দেখি যে লেখাটা পানির ঘর্ষনে তখন মুছে গিয়েছিল। এখন দেখছি তা স্পষ্ট হয়ে দেখা যাচ্ছে। শেখ ফরিদ ক্লাসের সবার সামনে আমাকে ডরফোক সম্মোধন করে ব্যাপারটি বলেদিল। সেদিনের লজ্জার পর ব্যাপারটি মাথা থেকে একেবারেই সরে ফেলেছি। তার সপ্তাহম দু’এক পর মধুমিতাও নীলুআপা ব্যাপারটি ধরতে পেরে আমাকে এম+এম বলে ডাকে। আমি হতবম্ব হয়ে চিন্তা করতে লাগি ব্যাপারটি এরা জানল কিভাবে। মধুমিতার সাথে আমার জস্ট ফ্রেন্ডশীফ। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিরাম ব্যাপারটি মধুমিতাকে একা পেলে জিজ্ঞেস করে উদঘাটন করতে হবে। সেদিন রাতেই নীলু আপাদের ঘরে মধুমিতাকে একা পেলাম। তার থেকে জানতে পাররাম তার বান্ধুবী মর্জিনাদের বাড়ী মাদ্রাসা সংলগ্ন। প্রায় সময় মাদ্রাসার চাঁদে বিকেলে তারা ধান শুকায়। আর ঐ পথ দিয়ে আসা যাওয়া করে। মর্জিনা আগেই থেকে জানত আমার কথা। মধুমিতা বলেছিল তাকে। তাই তার চোখে দেয়ালে এম+এম টা দেখতে পেয়ে আমাকে সন্দেহ করছিল। মর্জিনার সিউর হয়েছিল শেখফরিদকে জিজ্ঞেস করে। আবার শেখ ফরিদ মর্জিনার চাচাত বোন। শেখফরিদের ও মর্জিনার এপ্যায়ার প্রায় ছোট বেলা থেকেই। তাজাগরম খবরটা মর্জিনা নিজে ধরে না রেখে মধুমিতাকে জানিয়ে দিয়েছে। মধুমিতার প্রশ্ন আমার কাছে। এই বাড়ীর বেশী ভাগ মেয়ের নামের প্রথম অক্ষর এম। এখন সে সুভাগ্যি মেয়েটা কে? আমি বররাম: যদি বলি তুমি। সে বলল: আমি যদি বলি মাধবী। তখন আর আমাকে আর কিছু বলতে না দেখে মাধুমিতা বলল: ব্যাপারটি মাধবীও জেনেগেছ। এবং আপনার উপর ভিষণ ক্ষেপে আছে। আমি ভয়ে মধুমিতার সাহায্য কামনা করলে সে শর্ত দিয়ে বসল। ঠিক আছে আমি বরব আমার নামটাই। তবুও আমার চলন বলনে মাধবী বুঝতে পারল আমি তাকেই চাই। এইদিকে অভিনয়ের মাঝে মধুমিতার মনে যে আমি কখন ঠাঁই করে নিয়েছি সেদিনই বুঝতে পারলাম। আমাকে নিয়ে মাধবী ও মধুমিতার ভিষণ ঝগড়া লেগে একজনের সাথে আর একজন এক সপ্তাহ কথা বন্ধ রাখে। এরপর মধুমিতার মাধবীদের ঘরে আসতোনা। আর মাধবীও মধুমিতাদের ঘরে যেত না। মাঝখানে আমিও বিপদে পড়লাম। মাধবীর কথায় মাধবীর মা আমাকে বলল: মধুমিতা এখন বিবাহ বয়সী একটা মেয়ে তোমার বারবার সে ঘরে আসা যাওয়া ঠিক নয়।। ব্যাপারটি বুঝতে পেরে নীলু আপাদের ঘরে দীপুকে দিয়ে মধুমিতা ডেকে এনেছি। মধুমিতা বলল: মাধবী আপনাকে ভালবাসে না। এবং কি এই বাড়ীর কারো সাথে আপনার বন্ধুত্ব থাকুক সেটাও সে চায় না। কারণ কি জানতে চাইলে মধুমিতা বলল: হিংসুটি স্বভাবের। কথাটা শুনে যে আমার খারাপ লাগল তা বুঝতে পেরে মধুমিতা যেতে চাইল। এই প্রথম তার হাত ধরছি আমি। সে শিহরে উঠল। হয়ত অন্য কিছু ভাবছে। কিন্তু একটি অনুরোধ করেত যে হাত ধরছি সে পরে টের পেল। অনুরোধটি ছিল: মধুমিতা সত্যি আমি মাধবীকে মনে প্রাণে ভালোবেসে পেলেছি। কিন্তু সেই ভালোবাসা আমি তার কাছ থেকে পায়নি। পেয়েছি তোমার কাছ থেকে। কিন্তু এই মন যে মানে না। তুমি আমার বন্ধু থেকে কখন যে এত কাছে চলে এলে শুধু মনের কারণে বান্ধুবীর জায়গাটা দখল করতে একটু খানি বাকী আছে। মধুমিতাকে গ্রাম-শহর এ আত্নীয়দের মধ্যে হতে অনেকেই প্রেমের অফার দিয়েছে। অনেক প্রস্তাব পত্র আমি নিজ হাতে মধুমিতাকে যখন দিতে যেতাম তখন সে ফেল ফেল করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকত। আমি ফিরে না তাকিয়ে সেখান থেকে চলে আসতাম। সে দিন মাধবী মধুমিতার সামনে আমাকে অহংবোধের বাক্যবাণ নিক্ষেপ করে যে অপমান করেছিল তা দেখে মধুমিতার চোখের জল ঝরে পড়ছিল। অবশেষে মধুমিতা মাধবীকে বলল: এত অহংকার ভাল না। তা বলেই সে সেখান থেকে চলে গিয়েছিল। মধুমিতির গায়ে হলুদ সহ বৌ-ভাত ও ফিরনী পর্যন্ত আমি নিমত্রণন্নে ছিলাম। হলুদ আসরে বেশ কাঁদল। বৌ-ভাতে শধু মধুমিতা একটি কথায় বলল: আমি আপনার মত একজনকে জীবন সঙ্গি পেয়েছ। তাকে সেদিন খুব খুশি দেখলাম। তার এতটা খুশি দেখে আমার চোখের কোণে পানি জমে গিয়েছিল। কিছুটা হিংসায় সে দিন মাধবী আমাদের উভয়ের সামনে এসে জ্বল-জ্বল করছিল। মাধবী এই প্রথম মধুমিতার সামনে থেকে হাত ধরে টেনে নিতে চাইছে। মধুমিতা চোখটিপ দিয়ে হেসে যেতে ইশারা করল। মধুমিতা ভাবছিল হয়ত মাধবীর পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু তা না মাধবী একপার্শ্বে নিয়ে আমাকে শাসন করল: কেন আমি মেয়ে মানুষের রুমে। সামনে যেতে বলল। তারপর সে শাসনকে ভালবাসা ভেবে আমি সামনের রুমে চলেগিয়েছি। মধুমিতার সাথে এমরিকা যাওয়ার আগে প্রায় পাঁচবার সাক্ষাত মিরেছে। তৃতীয়বার বাসাতে স্বামীকে সামনে বসিয়ে আপ্যয়ন আমাকে করেছিল তা দেখে তার স্বামী বলল: বন্ধ থেকে কি বান্ধুবীতে রূপ নিচ্ছে না তো। কামরূল সাহেব ইজ্ঞিনিয়ার। অনেক চাটু। কিন্তু মধুমিতা তার পাত্তা না দিয়ে আমার প্রতি তার অনুরাগের মমতা ঢেলেদিল। সে দিনের পর থেকে কামরুল সাহেব এ আমাকে আডচোখে দেখল। মধুমিতা এক মেয়ে এ এক ছেলে সহ স্বামীর সাথে এমেরিকায়। জীবনে যাকে বান্ধুবী ভেবেছি সে তো বান্ধুবী হয়নি আর যাকে বন্ধু ভেবেছি সে বান্ধুবীর উষাচল ঢেলে দিতে চেয়েছিল। আজ ক্ষণকালের জন্য হলেও তাকে সাধুবাদ জানাই। হয়ত নিজের প্রেমকে পবিত্র আরাধনার আসনে অধিষ্টিত করত গিয়ে বৈধচেতম্য ভুলে গিয়েছিলাম। ভাল থেকো মধুমিতা যেমনটি তুমি আমার ভালোকামনা করেছিল তার থেকে শতকোটি গুন বেশী। যে ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নয় তাকে যদি ভালোবাসা দেয়া হয় সে পাত্র কখনও কি ধারণ ক্ষমতা রাখতে পারে। আজ মনে হয় মানুষ বড় অদ্ভুত। যা অনায়াসে পায় তার মূল্য সে বুঝেনা। আর যা পায় না তার জন্য দেবদাসের তাপস্যে লিপ্ত হয়। ক্ষণিকের এই জীবন সহজের পরিবর্তে কঠিন করে তোলে। যেমনটি আজ আমি অনুভব করছি। তবু্বো শেষ কথা বলি: শ্বাসত চিরন্তন প্রেম কখনো মুছে যায় না। তেমনি করে এই হৃদয় থেকে মাধবীকে আজো আমি সরাতে পারেনি।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ম্যারিনা নাসরিন সীমা ভাল লাগলো । তবে গল্পে প্যারা করা হলে পড়তে সুবিধা হতো ।
মোঃ আক্তারুজ্জামান ভালো কিন্তু যত্নটা কম মনে হয়েছে|
বিন আরফান. চমত্কার. ছবিটির মত গল্প চোখের সামনে ভাসে. আর সত্যিই মানুষ বড় অদ্ভুত. প্রেমের পরশ গায়ে লেগেছে বটে. শুভ কামনা রইল.
Akther Hossain (আকাশ) সুন্দর প্রেমের কাহিনী !
নুপুর সুপ্রিয় সামছুল আলম আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
সামছুল আলম আপনার লিখাটি ভালো লেগেছে।
নুপুর সুপ্রিয় সূর্য আপনার সুন্দর মতামতের জন্য প্রথমে আপনাকে ধন্যবাদ আর আপনার পরমর্শ গুলি কাজে লাগাবো
নুপুর সুপ্রিয় জুনাইদ আলহাবিব ধন্যবাদ চেষ্টা করব
নুপুর সুপ্রিয় M.A.হালিম আবার ও ধন্যবাদ

০৭ এপ্রিল - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪