আমরা জানতে চাই বিজয়ের আসল কথা

মুক্তিযোদ্ধা (ডিসেম্বর ২০১২)

এস. এম. কাইয়ুম
  • 0
"বিজয়ের মাস বিজয় গাথা, মনে পড়ে একাত্তরের স্মৃতি কথা"।
"বিজয় বিজয়, মহা বিজয়- এনে দিল জনতার জয়"।

ইহা সারা বিশ্বের জনতার জয় নয়, ইহা শুধু বাংলাদেশের জনগনের জয়, স্বাধীনতার জয়। এ যেন অকাল পক্ষ পাওয়া। একালে নয়-সেকালেও নয়- ইহা ৭১রের বিজয়ের সিন্ধু। আজ আমরা স্বাধীনতা অর্জনের ৪০ বছর ফাঁড়ি দিয়েছি। এক বছর কিংবা দুবছর নয় প্রায় ৩ যুগেরও বেশী সময়। এ বিজয় পেয়েছি হাজার প্রাণের বিনিময়ে, দীর্ঘ নয় মাস অবিরাম যুদ্ধ করে। এক্কা কিংবা দুক্কা খেলে নয়-ত্রিশ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে। এ বিজয় আর আমরা ছিনিয়ে নিতে দেবনা। দেশের ভিতরে ঘুরপাক বা ষড়যন্ত্রের জাল বুঁনতে দেব না। যা হয়েছে তা আর পূণরাবৃত্তি হতে দেবনা। আমাদের যা আছে তাঁই নিয়ে সচেষ্ট থাকবো। অন্যের ভালো কিছু না করতে পারলে অনত্দত মন্দ বা ধারধারিতে যাবো না। আবার অন্যের স্বার্থের নাকগলানি শয্য করবো না। নিজের লাভের ও লোভের জন্য দেশের সর্বনাশ বয়ে আনতে দেবনা। দেশ আমাদের মা। এ দেশকে রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দাঁয়িত্ত্ব।

আমরা তরম্নন প্রজন্ম, আমরা জাতির ভবিষ্যত। সুতরাং আমরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঠিক তথ্য ও সত্য ঘটনাগুলো জানতে চাই। এবং আমাদেরকে জানানো সকলের কর্তব্য। কিন্তু দেশের কিছু সংখ্যক লোকের কাছ থেকে জানতে পারি যে, শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন আবার অন্যান্য কিছু সংখ্যক লোকের কাছ থেকে জানতে পারলাম যে, মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। আমরা দেশের নাগরিক । আমরা এদেশের ভালো মন্দ সব বিষয় জানার কিংবা শুনার অধিকার আছে। কিন্তু এ নয় যে, আমরা স্বাধীনতার সময় জন্ম হয়নি বলে, আজ আমাদেরকে সত্যমিথ্যার দন্দে লড়াই করে সঠিক ইতিহাস জানতে হবে। দেশ ও মাতৃকার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারিনি বলে, আমাদেরকে এত ভোগানত্দিতে ভোগতে হবে। কেন? আমাদেরকে আসল ইতিহাস জানানো হচ্ছে না? আমাদের অপরাধ কী???????

আমরা জানতে পারি এবং স্বাধীনতা বা বিজয় দিবস এলে দেশের কিছু পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়ে থাকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই মহান মুক্তিযুদ্ধের বা স্বাধীনতা যুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন - " এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা। আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশের মানুষ যে যেখানে আছেন, আপনাদের যা কিছু আছে তা দিয়ে সেনাবাহিনীর দখলদারীর মোকাবিলা করার জন্যে আমি আহ্বান জানাচ্ছি। পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলাদেশের মাটি থেকে উতখাত করা এবং চুড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আপনাদেরকে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে"। (স্বাধীনতার ঘোষনা সংবলিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাণীটি সমগ্র বাংলাদেশে প্রচারের জন্যে ২৫শে মার্চ মধ্য রাত অর্থা ২৬শে মার্চ ১৯৭১-এর পারম্ভে (ততকালীন) ইপিআর ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে চট্রগ্রামে পেরণ করা হয়েছিল।

এবং আরো ও জানি পারি যে- গণহত্যা শুরম্নর পর বঙ্গবন্ধুর দেয়া ঘোষনা চট্রগ্রামের আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল হান্নান এবং হাটহাজারী কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল আবুল হাশেম সন্ধীপ ঘোষনাটির বাংলা অনুবাদ স্বল্প সময়ের জন্য বেতারে পাঠ করেন বলে জানা যায়। বঙ্গবন্ধুর নামে বাংলাদেশের স্বাধীনতার একাধিক ঘোষনা প্রচারিত হলেও সবচেয়ে কার্যকর ঘোষনাটি দেন ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর জিয়াউর রহমান। ২৭ মার্চ চট্রগ্রামের কালুরঘাট ট্রান্সমিটার থেকে বেলাল মোহাম্মদসহ একদল দুঃসাহসী বেতারকমর্ীর সহযোগিতায় স্বাধীন বাংলা বিপস্নবী বেতার কেন্দ্রের দ্বিতীয় অধিবেশনে মেজর জিয়ার এই ঘোষনায় অনেকেই নিশ্চিত হন যে, দেশজুড়ে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরম্ন হয়েছে এবং এতে বাঙালী সামরিক সদস্যরা অংশ নিচ্ছেন। ৩০ মার্চ পর্যনত্দ প্রচারিত মেজর জিয়ার কয়েকটি ঘোষনায় দেশের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধা ও বাঙালী সামরিক সদস্যরা উজ্জীবিত হন। রেডিওর ঘোষনাগুলোর মাধ্যমে দেশের বাইরে সশস্ত্র প্রতিরোধের খবরটি পৌছে যায়। এবং দূর্ভাগ্য যে, কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রটি ৩০মার্চ পাকিস্থানি বিমান বাহিনী বোমা ফেলে ধ্বংস করে দেয়।


একা শেখ মুজিব কিংবা মেজর জিয়ার যুদ্ধে দেশ স্বাধীন হয় নাই- দেশ স্বাধীন হয়েছে দেশের আপামোর জনতার সক্রিয় অংশগ্রহণে। কিন্তু এটা মনে রাখা দরকার যে, শেখ মুজিব ও মেজর জিয়াসহ সকলই আমরা এদেশের মানুষ এবং এদেশের মুক্তিযুদ্ধসহ অন্যান্য যুদ্ধে এইদেশেরই মানুষ ঝাপিয়ে পড়েছিল এবং ভবিষ্যতে এদেশেরই মানুষ এগিয়ে আসবে। কারণ দেশটা আমাদের। দেশের রক্ষনাবেক্ষন আমাদেরকেই করতে হবে। অন্যরা এসে দখলদারী করতে পারবে কিন্তু দেশকে ভালবাসবে না। দেশ ও মাতৃকার টানে গান গাইবে না, আবেগ আর ভালবাসা দিয়ে।

বিজয়ের এতগুলো বছর পরেও সত্যিকারের যুদ্ধাপরাধীদের নামের তালিকা আদৌ জানাতে পারলাম না। মাঝে মাঝে কিছু প্রকাশ হয়ে থাকে আবার উধাও হয়ে যায়। শুধু শুনেছি দেশে এখনও যুদ্ধাপরাধীরা আছে। তাঁদের না কি বিচারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সম্পূর্ণ আলাদা ভাবে বিচারের ট্রাইবুন্যাল গঠন করা হয়েছে। অথচ দেখে দেখে আর শুনে শুনে পাঁর হয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। সকল মানুষের তো বয়স তমকে নয়, তারাও হয়তো একদিন সবাই প্রকৃতির নিয়মেই অপারে চলে যাবে। হয়তো বা আর তাঁদের পৃথিবীর বুকে যুদ্ধাপরাধী হয়ে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে না। এভাবেই তাঁরা হয়তো এ নশ্বর পৃথিবী থেকে পাঁর পেয়ে যাবে। আর এমনি করে কেটে গেল ৩৯টি বছর। অাঁদৌ কি তাদের বিচার হবে হবে না, তাও আমরা পরিস্কার ভাবে জানতে পারি নাই। সরকার দল যাদেরকে যুদ্ধাপরাধী বলে অভিহিত করছে অথচ তাঁরা বলছে- আমরা যুদ্ধাপরাধী নয় বরং যাঁরা বলছে তাঁরাই নাকি যুদ্ধপরাদের সাথে জড়িত ছিল এবং তাঁদের প্রতি নিজ কিংবা দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করা হচ্ছে। একটা ব্যাপার সুস্পষ্ট যে- আমাদের এই দেশে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে না কেন! তা ঘটেছে প্রকট ভাবেই কিন্তু দূর্ভাগ্য যে প্রত্যেকটা ঘটনার সত্যটা জানা গেল না। কে বা কারা বা কেন করছে? তার কোন হদিস সঠিকভাবে উদঘাটন করা গেল না। তবে মাঝে মাঝে এখনও কোন না ঘটনা ঘটেই চলছে। যখন ঘটে তখন শুধু শুনতে ও দেখতে পাই। যেমন- সিপাহী বিদ্রোহ, সৈরাশাসন, গ্রেনেড হামলা, বিডিআর বিদ্রোহ ওয়ান ইলেভেন ইত্যাদিসহ দেশের ছোট বড় নানান ঘটনা।

প্রতিটি বিজয় দিবসের ভাবনা আমাদেরকে নতুন করে ভাবতে শেখায় নতুন উদ্দপনায়, নতুন প্রত্যাশায় জেগে উঠতে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমদেরকে নাড়া দেয় প্রতিটি মুহুর্তে গভীর আনমনা হয়ে। আমরা অনুভব করি আমাদের অতীতের প্রায় সকল ঘটনাগুলোকে। আমরা স্বপ্ন দেখি নতুন করে আলোর মিছিলের জয়গান গেয়ে। এতে করে তরম্নন প্রজন্মের দেশের প্রতি গভীর ভালবাসা ও মমত্ত্ববোধ প্রবল ভাবে উদিয়মান হয়। উজ্জিবীত হয় দেশপ্রেম এবং স্মরণ করি উজ্জল ভবিষ্যতের দিকপালকে। যাতে করে অতীতের ভুলত্রম্নটিকে শুধরিয়ে নতুন করে বাংলার আকাশে সুষম আলো জ্বালাতে। যে আলোয় মন-মানষিকতা উন্নতির শিকড়ে আকড়ে ধরতে সাহায্য করবে।


দূশ্চিনত্দার দন্দে আমরা জড়িত হতে চাই না। আমরা সত্য স্বাধীন মুক্ত পাখির মত। এখন আমরা যা কিছু শোনবো তা পরবর্তিতে আগামীর প্রজন্মরা সেই ভাবে জানতে পারবে। এবং ইহা যদি মিথ্যা হয় তাহলে সারা জীবন সংশয় থেকে যাবে। আর সত্য হলে তা গর্বের উজ্জল সারিতে প্রতিয়মান হবে। সুতরাং সাবধান আমাদেরকে আগামী প্রজন্মের কাছে মিথ্যাবাদী বা অপরাধী করবেন না। এ আকুল আবেদন দেশের সুশীল শিক্ষিত সমাজের কাছে। যাঁরা আমাদের জানাচ্ছেন ও শিখাচ্ছেন দেশের ইতিহাসগুলো। জানানো এবং শিখানোর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কিন্তু অনুরোধ রইল আপনাদের প্রতি- নিজের জন্য বা কাঁরো প্ররোচনায় পড়ে আমাদের সত্য ইতিহাসগুলো নিজের মত করে জানাবেন না। সত্য বই নতুন করে নিজের সারিতে সাজাবেন না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
তাপসকিরণ রায় গল্প বলে মনে হলো না--অনেকটা প্রবন্ধের ধাঁচে লেখা.কিন্তু বেশ শুদ্ধ ভাবনার ওপর লিখিত--এ বিবৃতির আলাদা একটা মূল্য আছে বলে মনে হলো.লেখাটিতে অনেক ভুল আছে--ভুল যেভাবেই ঘটুক না কেন এ মূল্যবান লেখাটিকে ফেয়ার করে রাখবেন--এটা আমার একান্ত অনুরোধ.
প্লিস ভুল গুলি কুট করুন -
ভালো লাগেনি ২৪ ডিসেম্বর, ২০১২
আহমেদ সাবের অনেকগুলো প্রশ্ন আছে আপনার প্রবন্ধে। শুধু স্বাধীনতার ঘোষণা প্রসঙ্গে একটু বলি। আপনাকে কেউ চিনে না, জানে না। আপনি যদি হঠাৎ করে সবাইকে একটা উদ্দেশ্যে ডাক দেন, কেউ কি আপনার ডাকে সাড়া দেবে? আর আমাদের স্বাধীনতা দিবস ২৬শে মার্চ। স্বাধীনতার পরের দিন ২৭শে মার্চ কি স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়া যায়? বড়জোর স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করা যায়। তবে, ঘোষণার চেয়ে দেশ অনেক বড়। আসুন আমরা সবাই অহেতুক বিতর্ক বাদ দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের কথা ভাবি।
ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান কমেন্ট শুনে
সূর্য প্রথমে বেশ একটা শপথ শপথ ভাব ছিল, তার পর ঢুকে গেলে যুদ্ধের ঘোষণা, মুক্তিযুদ্ধ, রাজাকার তালিকা। এতগুলো বিষয় আসায় একটা প্রবন্ধের আমেজ চলে এসেছে। আর ঘোষণা সম্পর্কে একটা ছোট ঘটনা (সবার জানা ঘটনা) বলি এই যে ক'বছর আগে বিডিআর জওয়ানরা সেনাবাহিনীর অনেক সদস্যকে মেরে ফেলল, সংবাদে আমরা লাইভ দেখলাম তারা আহবান করছে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে... কয়জন লোক তাদের হয়ে রাস্তায় নেমেছে? পাকিস্তান আমলে সংখ্যাগরিষ্ঠ পাক আর্মির সাথে বাঙালী অনেকেই ছিলেন তাদের সাথে জন সম্পৃক্ততা ছিল কি? ঘোষণাটা আসতে হয় জন সম্পৃক্ত মানুষের কাছ থেকে, যা মুজিবের ছিল। বাকি সব রাজনৈতিক ফায়দা লোটা....
আমি আপনার সাথে একমত পোষণ করছি
এশরার লতিফ লেখাটি প্রবন্ধধর্মী, স্বাধীনতার ঘোষক বিষয়ক দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে আবর্তিত, যুদ্ধাপরাধীদের প্রকৃত তালিকার প্রসঙ্গও এসেছে. লেখককে ধন্যবাদ. আমি যদ্দুর জানি সমাধানটা এরকম, সামরিক শাসকটি যদি মাইক্রোফোন হন সে ক্ষেত্রে আমাদের জননেতা ছিলেন প্রকৃত বক্তা. অনেক ধন্যবাদ.
মিলন বনিক তথ্য সম্রদ্ধ সুন্দর লেখনি...ভালো লাগলো কায়ুম ভাই..শুভ কামনা....
সিয়াম সোহানূর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্মৃদ্ধ সুন্দর প্রবন্ধ ধরনের লেখা । বেশ ভাল লেগেছে । শুভকামনা রইলো ।

০৭ এপ্রিল - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪