পরিচয়, রহিমা কাজের মেয়ে। অভিজ্ঞতাটাও কম নয়। পাঁচ ছয় বছরের কাছাকাছি। বিদ্যা বুদ্বিও নিতান্ত কম নয়। থ্রি কি ফোর পর্যন্ত পড়ালেখা। তারপর বাবার মৃত্যু। ব্যাস মেয়ে মানুষের উপর সংসার। আর কতটুকুই বা এগুনো যায়।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে রহিমার কাজের অভাব হয় না। ডাকও পরে এ বাড়ী ও বাড়ী। আবার দ্বিমতও হয়। বিশেষ করে যে পরিবারে গিন্নির স্বাস্থ্যহানি বেশী ওরা ভালোভাবে নেয় না। রহিমাকে অপবাদ দেয়। যেন তেন নয়। পুরুষ খেকো অপবাদ।
টগবগে যৌবন বলে কথা। রহিমার রূপ তেমন নেয়। আছে যৌবন। প্রেম আছে। আছে মন। তবে তা সীমিত। গরীবের আবার প্রেম, সেই ভয়টায় বেশী। তার উপর কাজের মেয়ে। লাথি গুঁতা খেয়েও যার যৌবন ঠিকরে বের হচ্ছে শরীরের প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে।
পনেরোর কাছাকাছি বয়স। অনেক কিছুই বোঝে। এ বাড়ীর গিন্নির চাইতে কর্তার আদরটায় যেন একটু বেশী। কাজের ফাঁকে নানা ছল ছুতোয় রহিমার গায়ের ঘামের গন্ধ শুঁকে। জিব বের করে লোলুপ দৃষ্টিতে থাকিয়ে থাকে। শরীরের ভাঁজে যদি একটু হাত রাখা যেত। কাঁধের নীচে হাত রেখে সমবেদনা জানায়। ইস্ কি কষ্টটায় না হচ্ছে তোর। শাড়ীটা ছিঁড়ে গেছে। আমি কালই তোর জন্য একটা দামী শাড়ী নিয়ে আসবো।
রহিমা কাজের মেয়ে। তাই অতটা ভোগ বিলাস পছন্দ নয়। রহিমার মা আসে। কর্তার সহাস্য উপরিতে বিদায় নেয়। মেয়েতো ভালোই আছে। অন্ততঃ খাওয়া পরার অভাব নেয়। সাহেব মানুষটাও মন্দ না। ভালো মন্দ দেখ ভালো করে। নিজে থেকে শাড়ী কিনে দেয়।
রহিমার ভিতরের মানুষটা অন্য রকম। প্রতিবাদী। নিজের মনে নিজেই বিদ্রোহ করে। প্রকাশ করতে পারে না। পত্রিকার পাতায় চোখ আটকে যায়। জল ছল ছল করে। নুরজাহানের কথা মনে হয়। ওটুকুতেই শেষ। ক’দিন থানা পুলিশ। বিনে পয়সায় নূরজাহানরা আর ক’দিন বেঁচে থাকবে খবরের পাতায়। কোন সুরাহা হয় না। দোষী সাজা হল না বেকসুর খালাস পেল সে খবর রহিমার কান পর্যন্ত পৌঁছায় না। রহিমারা তাই অনেক বেশী সন্ত্রস্ত।
গিন্নির অত্যাচার। ওটা তেমন গায়ে মাখে না। রহিমার ধারনা, কাজ করে যখন খাচ্ছি ওটুকু কষ্ট তো সইতেই হবে। রহিমাকে মানুষ হিসাবে দেখে না। এতে বড় রাগ হয়। গিন্নির পা টিপতে গিয়ে সে রাগ বেশীক্ষণ স্থায়ী হয় না।
মনিবের কুদৃষ্টি সারাক্ষণ। সুযোগটা নিল সেদিন। গিন্নি ছিল না। থুতনিতে চিক চিক করছে ঘাম। নাকের ডগায়ও। বুকের আঁচলটা সরিয়ে ঘাম মুছতে গিয়ে বাঁধল বিপত্তি। কর্তা দামী তোয়ালে এগিয়ে দিয়ে বলল - এ কি করছিস। এই নে তোয়ালে। এটা তো তোর জন্য। তোয়ালে দিতে গিয়ে হাতটা বেশরম হয়ে গেলো। লাজ লজ্জার মাথা মুড়িয়ে বেসামাল হয়ে উঠল রক্ত কণিকা। শরীরের উত্তাপ ছিল সূর্যরে উত্তাপের চেয়েও প্রখর। রহিমার চোখ ঝলসে যাচ্ছিল। কতটা প্রখর উত্তাপ হলে সূর্যের দিকে চোখ তুলে থাকানো যায় না, তা রহিমার জানার কথা নয়। রহিমার শুধু মিনতি ছিল - আপনে আমার বাবার লাহান। আমার সর্বনাশ কইরেন না। আপনের পায়ে পরি।
মনিবের অস্বাভাবিক আচরণ। অর্থের প্রলোভন। শরীরের বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ার। সব শক্তি যেন এক সাথে মিশেছে। ঠেকায় কে ? অনেক অর্থ, শাড়ী গয়নার হাতছানিতে বিছানায় শুইয়ে দিতে চাইল।
মুচকি হাসল রহিমা। বাঁকা চোখে সম্মতির ইঙ্গিত। বলল - একটু দাঁড়ান। আমি আসছি। কর্তা রাজরানী বানাতে চায়। একটু বিশেষ সময়ের জন্য। তারপর আবার তাড়িয়ে দেবে। রহিমা ভালোই জানে।
রান্না ঘরে ভাত বসিয়ে এসেছে। ভাতটা পুড়ে যাচ্ছে। চোখের সামনে তরকারী কাটার বটি। এক মুহূর্ত ভাবল রহিমা। মন সায় দিল। বটিটা হাতে নিয়ে শোয়ার ঘরে যেতেই কর্তা বিব্রত বোধ করলেন। তিনি বিচলিত হলেন। প্রাণ বাঁচাতে হবে। শরীরের উত্তাপ নেমে এসেছে শূন্য ডিগ্রিতে। নেতিয়ে পরেছে সমস্ত ইন্দ্রিয়। ব্যর্থতার রুদ্ররোষে রহিমার সতীত্বের দেয়াল ভেঙ্গে যাবে। এমনকি জীবনও যাবে।
রহিমা নিশ্চিত জানে। তার লাশ পাওয়া যাবে হয়তো নর্দমায়, নয়তো কোন সুটকেসে পাওয়া যাবে হাত পা কাটা টুকরোগুলো, কিংবা গ্রাম্য সালিশে বিচার হবে। নূরজাহানের মতো বিচার হবে। দোররা মেরে মাটিতে পুঁতে হত্যা করা হবে। ইস্যু একটায়। রহিমা টাকার লোভে মনিবকে পটিয়ে বিছানায় যেতে চেয়েছিল। তাতে রায় কখনও রহিমার পক্ষে যাবে না।
সে যাত্রায় হয়তো রক্ষা। রহিমা জীবন বাজী রেখে পথে নামে। সমাজ মুখ টিপে হাসে। নিন্দা রটায় রহিমা বেশ্যা। বেশ্যারাও তো মানুষ। কারা একজন নারীকে বেশ্যা বানায়। তা সবাই জানে। জানে রহিমাও। বেশ্যা হয়েও কারো কুদৃষ্টি এড়াতে পারে না। ভালো হতো, যদি পুরুষ মানুষগুলো বেশ্যাদের মনে প্রাণে ঘৃণা করতো। তাদের কাছে না যেতো। রাতের অন্ধকারে চুপি চুপি পশুর ক্ষিদে না মেটাতো। তবে তো আর বেশ্যা সৃষ্টি হতো না। রহিমারাও বেশ্যা বলে স্বীকৃতি পেতো না। মানুষ হিসাবে বাঁচতে পারতো। আর পুরুষগুলোই বা কেমন ? দিনের বেলায় তারা বেশ্যা দেখলে সাতবার তওবা করে, ঘৃণা করে। চোখ তুলে তাকাতেও যেন লজ্জায় মরি মরি। আর রাতের বেলা ভালোবাসাটা যেন উথলে উঠে। কারণ রাতের অন্ধকারে চেহারা দেখা যায় না।
রহিমা ঘৃণা করতে জানে। আর জানে আমি বেশ্যা নই। আমি মানুষ। নারী হিসাবে ভালবাসতে পারি। সংসার করতে পারি। প্রাকৃতিক নিয়মে সন্তান জন্ম দিতে পারি। আমি সব দিতে পারি একজন পুরুষকে, যদি সেই পুরুষটি একজন মানুষ হয়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।