ফুলির খুব জ্বর। বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর এসেছে। বয়স বেশী না। এই ৭ বা ৮ বছর। মধুবালা মেয়ের কপালে হাত রাখল। “ইস, গরমে না তোর শরীল পুইড়া গ্যাতাছে গা”।গণু মিয়া রিক্সা চালক। ফুলির বাবা। কিছুদিন ধরে বৃষ্টি লেগেই আছে। আকাশ মেঘলা হয়ে থাকে। হাতে এখন বেশি টাকাও নাই। ভাবছে কী করবে। “ করিমের মাও, শরীলটা ধুয়ে দাও, তাপ একটু কম্বনি” ছাপড়া একটা ঘর থেকে আকাশের দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো গণু মিয়া। গণুর শরীরটাও ভাল না। বয়স হয়ে গেছে। রিক্সা চালিয়ে যা পায়, কোনমতে তাদের সংসারের চারজনের চলে। করিম স্কুলে গেছে। বৃষ্টিতে ভিজেই মনে হয় বাড়ি আসবে সে। হুক্কাতে টান দিতে লাগলো গণু মিয়া। করিম ভিজে ভিজে আম গাছের নিচে এসে দাঁড়াল। দেখতে পেল তার বাবা দাওয়ায় বসে হুক্কা টানছে। করিম তার বাবাকে খুব ভয় পায়। সামনে আর গেলো না। ওদিকে গণু মিয়া দেখতে পেলো কে যেন আম গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে। ডাক দিলো, “ ঐ ওনে ক্যারা রে?” বিষম খেয়ে উঠলো করিম। গণু মিয়া আবার ডাক দিলো। আম গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল করিম। গুটি গুটি পায়ে খুব ভয়ে করিম তার বাবার কাছে গেলো। গণু মিয়া মারতে এসে দেখলো সকালে যে গালে চড় দিয়েছে তার এখনো দাগ রয়েছে। মারতে পারলো না গণু মিয়া। বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরল। “আর কষ্ট দিস না আমারে, আমি না মইরা যামু”। কান্না আর ধরে রাখতে পারল না গণু মিয়া। অঝোড় ধারায় কেঁদে দিল সে। বৃষ্টির পানি আর চোখের পানি মিশে একাকার হয়ে গেল।
রাতে ফুলির জ্বর আরও বেড়ে গেলো। গতবার মধুবালা’র জ্বরের সময় যে ওষুধ কেনা হয়েছিল তাই ফুলিকে খাওয়ালো। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। মাথায় পানি ঢালতে লাগলো মধুবালা। করিম অনেক আগেই ঘুমিয়ে পরেছে। এক সময় ফুলিও ঘুমিয়ে পড়ে। মধুবালা দেখতে পায় তার স্বামী গণু মিয়া দাওয়ায় বসে কী যেন ভাবছে। পিদীম জ্বালিয়ে স্বামীর মুখের কাছে ধরলো মধুবালা। অঝোড় ধারায় কাঁদছে তার স্বামী। মধুবালা তার স্বামীর কাঁধে হাত রাখলো। “ শোবা না?” ফুলির মা’র প্রশ্ন। অভাবের সংসার তাদের। কোনো মতে দিন চলে। গণু মিয়ার রিক্সা চালাতে হয় অন্যের। নিজের রিক্সা নেই। খুব অভাব তাদের সংসারে। “চল” আর কিছু বলল না গণু মিয়া। নীরবে যেন শুয়ে পড়ল। “আমি কইছিলাম কী, ওরে বেলদ’র শাজাহান ডাক্তরের কাছে নিয়া যাও”। ধীরে ধীরে বলল মধুবালা। “ মাগী, খালি কী তোরই চিন্তা, আমার চিন্তা নাই, ওরে যে নিয়া যামু, ট্যাহা পামু কই, ট্যাহা কী গাছ থেইক্যা পড়ে” রাগের স্বরে কথাগুলো বলে ফেলল গণু মিয়া। বুকের ভিতরটা যেন পুড়ে যাচ্ছে তার। এই অভাবের মধ্যে সবাই গণু মিয়াকে ছাড়লেও মধুবালা তাকে ছাড়ে নি। কোনো দিন একটা শাড়ী কিনবার কথাও বলে নি। অথচ তার সাথেই এমন কথা বলে ফেলল সে। খুব কান্না পাচ্ছে গণু মিয়ার।
আজকে আকাশে মেঘের কোনো চিহ্ন নেই। রোদ এসে পড়েছে তাদের আঙ্গিনায়। গণু মিয়া রিক্সার খোঁজে গেল। যে রিক্সা চালাতো, সেটা আর পেলো না। “ আহস না কত দিন ধইরা?” ব্যাঙ্গাত্নক প্রশ্ন করল জুলহাস আলী। “ বাপু, বৃষ্টি আছিল, আর তাছাড়া শরীলটাও ভালা আছিল না”। গণু মিয়ার সহজ-সরল জবাব। “তাইলে আইজ়কা আইলি ক্যা? আইজকাও ঘুম পারতি”। জুলহাস আলীর আবার কটাক্ষ প্রশ্ন। গণু মিয়া রিক্সার গ্যারেজ হতে বেরিয়ে আসে। জুলহাস আলী গাড়ির মালিক। “শালা, শুয়োরের বাচ্চা” গালিটা মনে মনেই দেয় গণু মিয়া।তার পরেও আশ-পাশ তাকিয়ে নিলো একবার। কোনো কাজ পাচ্ছে না গণু মিয়া। সাঁঝের বেলা একটা কামলা দিয়ে ফিরে এলো গণু মিয়া। হাতে পঞ্চাশ টাকা। মধুবালা মেয়েকে তখন ভাত খাওয়াইয়া দিতে লাগছিলো। করিম তখনো ঘরে ফিরে নি। “এ্যাই, হুনছো, ঐ পাড়ার জোয়ার্দার আছে না, ঐ যে রহিম জোয়ার্দার , ওর নাকি পুলার ঠাণ্ডা লাগছে, এখনি সিঙ্গাপুর নিয়া যাইতাছে” মধুবালা তার স্বামীর কাছে কথা গুলো বলল। “ তোমার কাছে কইলো ক্যারা?” গণু মিয়ার প্রশ্ন। “ করিমনের দাদী কইল” একটু অবাক হয়ে যায় গণু মিয়া। “ বাজান, আমারে ডাক্তার দেহাও না ক্যান, আমারে হিঙ্গাপুর লইয়া যাবা না?” ফুলির চোখে-মুখে অভিমানের প্রশ্ন। এখনই বুঝি কেঁদে ফেলবে। গণু মিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে আর বলে, “ হ, তোরে লইয়া যামু”। গণু মিয়া আকাশের দিকে তাকায়। অনেক দূর আকাশে একটা উড়োজাহাজ উড়ে যাচ্ছে। হয়তো ওই উড়োজাহাজে রহিম জোয়ার্দার আর তার ছেলে যাচ্ছে। হয়তো বা কোন দূর দেশে যাবে। গণু মিয়া আকাশের দিকে তাকিয়ে আবার একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, বলে, “ হ, হ, যামু”। গণু মিয়ার চোখ থেকে হঠাৎ করে এক ফোঁটা জল বেরিয়ে এল। আর কেবলি দীর্ঘশ্বাস…...............কেবলি দীর্ঘশ্বাস……………………শুধুই দীর্ঘশ্বাস…………………
০৫ এপ্রিল - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৩ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪