আত্নদহন

কষ্ট (জুন ২০১১)

নাঈম হাসান আসিফ আসিফ
  • ৬৭
  • 0
  • ৫২
রাত অনেক। হঠাৎ করে ঘুম ভেঙ্গে যায় পথিকের। প্রচুর তেষ্টা পেয়েছে। ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা পানি বের করে খায়। প্রচুর ঠাণ্ডা। মাথায় একটু ঢালা যাক। বেশ কিছুদিন যাবত মাথা-ব্যথা করছে। ঠাণ্ডা পানি দিলে মাথা-ব্যথা একটু হলেও কমবে এই ভেবে মাথায় পানি দিল পথিক। মাথা মুছে ফ্যানের নিচে এসে দাঁড়ালো। একটু আরাম লাগছে। প্যান্টের পকেটে হাত দিল। সব কিছু ঠিক-ঠাক আছে কিনা দেখার জন্য। সকাল হলেই তো তাড়াহুড়া করে ভার্সিটি যেতে হয়। না, পকেটে ১০-১৫ টাকা আছে। দিনটা মনে হয় যাবে না। “বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিতে হবে”কথাটা মনে মনেই বলে ফেললো পথিক। হঠাৎ করেই ভাবে, আচ্ছা, বাবা কেমন? বাবা কি স্বর্গ থেকে নেমে আসা শুভ্র ফেরেশতাদের মতন হয়? আচ্ছা, বাবা নামক প্রাণীটার চরিত্র কেমন? আচ্ছা, বাবার বুকে ঘুমাতে কেমন লাগে? ধুর, কি সব আজে বাজে বকছি। কি সব আজে বাজে চিন্তা মাথায় এসে ভর করে।কতবার ভেবেছে , এগুলো নিয়ে কিচ্ছুই ভাববে না, তবুও কেন মাথার ভিতর থেকে এই প্রশ্নগুলো সরে না? কয়েকদিন ধরে রাতে হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙ্গে যায় । পরিস্কার ঘুম হয় না। নিজ চোখে বিভৎস দৃশ্য দেখে হয়ত কারোর-ই ঘুম আসার কথা না। গা – টাকে বিছানায় মেলে দেয় পথিক। ভোর হয়ে আসছে প্রকৃতিতে। আচ্ছা, আমার জীবনে ভোর হবে কি কখনো?

পথিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। ছোট কাল থেকেই চোখে মুখে স্বপ্ন ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। পথিকের ক্লাশ শুরু হয় ৮ টায়। হাত-মুখ ধুয়েই রয়না দিতে হয়। ক্লাশ শুরুর ২-৩ মিনিট আগে গিয়ে সে শেষ বেঞ্চিতে একাএকা বসে থাকে। শুধু আজকে না, সব সময় তাই করে। পথিকের কোন বন্ধু নেই। ক্লাশ শেষ হলে যখন ওর সহপাঠীরা টি,এস,সি এর দিকে যেত তখন ও চুপচাপ বাসা ফিরে আসত। প্রথম প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে এক মেয়ে কে ভাল লেগেছিল পথিকের। তার কাছে গিয়ে একদিন প্রশ্ন করেছিল, “ আচ্ছা, বলতে পারো , মা, কেমন হয়?” মেয়েটা হেসেছিল। পথিকের খুব খারাপ লেগেছিল। মাথা নিচু করে সে চলে এসেছিল। পর দিন ক্লাশে গিয়ে দেখতে পায় সবাই ওর দিকে তাকিয়ে কেমন করে হাসে।। পথিক বুঝতে পারে, ঐ মেয়েটা সবার কাছে বলে দিয়েছে। ঐ দিনের পর থেকে পথিক কারো সাথে বসে না, শেষ বেঞ্চিতে একা বসে বসে কী যেন সারাক্ষণ চিন্তা করে। খাতায় আঁকিবুকি করে। ছবি আঁকে। মায়ের ছবি, বাবার ছবি, বোনের ছবি। সুখী ফ্যামিলির ছবি। আঁকে আর মুছে, মুছে আর আঁকে। কোন কোন ছবি এঁকে পৃষ্ঠা মুড়িয়ে জানালা দিয়ে ফেলে দেয় ।ক্লাশ শেষ হলে ওর ছবি আঁকা শেষ হত। পথিক মাঝে মাঝে কবিতা লিখত। মাঝে মাঝে আমাকে ও ওর কবিতা দেখাত। সব গুলো কবিতাই দেখতাম। কোনটা মা, আবার কোনটা বাবা’কে নিয়ে। প্রথম প্রথম ঘটনা বুঝতাম না, কিন্তু বেশ কিছু দিন পরেই ধরে ফেললাম ঘটনা টা। একদিন প্রশ্ন করেই ফেললাম, “ আচ্ছা, পথিক, তোমার সব কবিতা বাবা, মা কে নিয়ে লেখা কেন?” পথিক মুখটা নিচু করে রাখতো। কিছুক্ষণ কী যেন ভেবে বলত, “ আমি মা- বাবা ছাড়া যে কোন কবিতা লিখতে পারি না, চাচা”। আমাকে ও চাচা বলে ডাকত। পথিক যখন ঢাকায় আসে তার কিছু দিন পর থেকেই আমার সাথে পরিচয়। আমি যখন ছাদে বাগানের চারা গাছ গুলিতে পানি দিতাম তখন দেখতাম ছাদের এক কোণে বসে এক ছেলে খুব আনমনে কিছু একটা লিখার চেষ্টা করছে। আবার কখনো বা আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা খোঁজার চেষ্টা করছে। পেত কিনা জানি না। প্রথম প্রথম পাত্তা দিতাম না। বেশ কিছু দিন একই দৃশ্য দেখে ওর কাছে গেলাম।সাবধানে পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। দেখলাম একটা ছবি আঁকার চেষ্টা করছে। নিচে লেখা “মা”। হঠাৎ করেই ও বুঝতে পারলো কেউ একজন ওর পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।ও পিছনে তাকিয়ে উঠে পড়ল। এই প্রথম ছেলেটা দেখলাম। অদ্ভুত রকমের সরলতা আর মায়া যেন ওর চোখে-মুখে। চলে যেতেছিল কিন্তু আমি ওকে থামালাম। অনেক কিছু জিজ্ঞেস করলাম। কোনটার দিল আবার কোনটার উত্তর খুব সঙ্গোপনে এড়িয়ে গেল। সেদিন থেকেই ওর সাথে আমার বন্ধুত্ব। তবে ছেলেটা নিজ থেকে কোনটার উত্তর দেয় না, খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বের করে নিতে হয়। মাঝে মাঝে আমার ঘরে নিয়ে আসতাম। বেশীক্ষণ থাকতো না, চলে যেত। আমি ওর কষ্টটা কখনো বুঝতে পারতাম না। কি এমন কষ্ট ওর বুকে যা সব সময় লুকিয়ে রাখত! আমাকে একবার জিজ্ঞেস করেছিল, আচ্ছা, আপনি কি এখানে একাই থাকেন? আমি বলেছিলাম, হ্যাঁ। তোমার চাচী মারা যাওয়ার পর থেকে একাই থাকি। তোমার একটা ভাইয়া ছিল। সে তার বউ কে নিয়ে আমেরিকায় থাকে। এখন একাই থাকি, তবে এই মাত্র একটা বন্ধু পেলাম, কি আমার বন্ধু হবে?” সবগুলো কথাই একটানে বলে ফেললাম। পথিক সব সময় আমার ঘরে এলে দেয়ালে টাঙ্গানো ছবিগুলো দেখত। সেই ছবিতে কোনটা আমি, কোনটা নিয়াজ (আমার ছেলে) ও তার মা, কোনটাতে নিয়াজ ও তার বউ, আবার কোনটাতে আমরা সবাই। পথিক ছবিগুলো দেখতে দেখতে যে ছবিতে নিয়াজ ও তার মায়ের ছবি ঠিক সেখানে এসে দাঁড়াল। ঐ ছবির দিকে তাকিয়ে বললো, আমার কোনো বন্ধু নাই যে। কিছু বলতে লাগলাম ঠিক ঐ মুহুর্তে ও বললো, “বলতে পারেন চাচা, মা কেমন হয়? মা কি কোনো স্বর্গের পবিত্র নারী?” আমি পথিকের প্রশ্নের মাথা-মুণ্ডু বুঝতাম না। একদিন পথিকের কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ওর মা-বাবার কথা। কিছুই বলে নি। তাড়াতাড়ি করে চলে গিয়েছিলো। আমার শেষ বয়সের দিন গুলো ভালই কাটছিল। একজন বন্ধু পেয়েছি। যদিও আমাদের বয়সের তফাৎ ছিল অনেক। মাঝে মাঝে লং-ড্রাইভে করে বেড়িয়ে পড়তাম আমি আর পথিক। হঠাৎ একদিন রেডিওতে গান বেজে ওঠে, “ মায়ের এক ধার দুধের দাম..................”। না, এই লং-ড্রাইভে ওকে বিষণ্ণতায় ভোগাব না বলে রেডিও টা বন্ধ করে অন্য গান দিলাম। পথিক বলল, “ আচ্ছা, চাচা, মায়ের দুধের দাম কি কখনো শোধ করা যায় না? আমি পথিকের প্রশ্ন শুনে হাসতাম। বলতাম, “ আরে, পাগল, কোনদিন না, কেউ কখনো করতেও পারে না”। পথিক আমার দিকে তাকিয়ে বলত, “চাচা, আমি যদি শোধ করে দেই”। আমি পথিকের দিকে তাকাতাম। কিছুতেই বুঝতে পারতাম না ছেলেটাকে। কী এমন কষ্ট ওর বুকে যা কাউকে বলতে পারে না। কী এমন অভিমান ওর চোখের মাঝে যা আমরা বুঝতে পারি না।

একদিন দুপুরে শুয়ে আছি, হঠাৎ কলিং বেলের শব্দ পেলাম। খুলে দেখি পথিক। চোখ- মুখ ঘেমে একাকার। ভিতরে নিয়ে এসে তোয়ালে দিলাম আর বললাম, এই দুপুরে হঠাৎ করে? পথিক এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি হাতে নিয়ে বলল, “ক্লাশ থেকে ফিরে এসে দেখলাম বোন আর বোনের স্বামী ঝগড়া করছে তাই আপনার এই খানে চলে এলাম। আমার এই ঝগড়া ঝাঁটি মোটেও ভালো লাগে না, চাচা” কেমন করে যেন দিন দিন ছেলেটার প্রতি মায়া বেড়ে গেল। আমি বললাম, আসো ভাত খাই। প্রথমে ইতস্তত করলেও পরে ঠিকই খেল। আমার পাশে বসেই খাওয়ালাম। যদিও আমি দুপুরের ভাত খেয়েছি তবুও খেলাম। কারণ জানি, আমি না খেলে ও একা একা খাবে না। বিকেলে পথিক কে নিয়ে আশুলিয়ার দিকে গেলাম।যাওয়ার সময় পথিক বলল, “আচ্ছা, চাচা, পৃথিবীতে টাকাই কি সব? টাকার জন্য কেন একজন মানুষ আর একজন মানুষ কে অবজ্ঞা করে? টাকার জন্য কেন বোন তার ভাইকে চিনে না, মেয়ে তার বাবাকে চিনে না? কেন চাচা, কেন?” আমি পথিকের মুখের দিকে তাকালাম। চোখ – মুখ লাল হয়ে আছে। কিসের যেন অভিমান পথিকের চোখে-মুখে। আমি পথিকের হাতটা ধরলাম। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম।মাঝে মাঝে পথিক আমার কাছে অদ্ভুত ধরণের প্রশ্ন করত,”আচ্ছা, চাচা, কোনো গরিব বাবা তার বড়লোক মেয়ের বাসায় গেলে কেন ঐ মেয়েটা তার দামী সোফার সেটে বাবাকে বসতে দেয় না?” মাথায় কিছুই ঢুকত না। কি সব প্রশ্ন করে ছেলেটা। হঠাৎ হঠাৎ ঐ আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতো, “ চাচা, আমি যদি কোনদিন ঐ খানে চলে যাই তাহলে আপনি আমার বোনের বাসায় গিয়ে আমার পড়ার টেবিলে যাবেন। পড়ার টেবিলের বাম পাশে অনেক খাতার ভিড়ে একটা খাতা দেখবেন, খাতার নাম “আত্নদহন”।ঐ খাতাটা আপনি পড়বেন’। আমি বলতাম, “ধুর! কি সব আজে বাজে বকশিস। পৃথিবীটা কত্ত সুন্দর!!! আর তুই কেন মরবি??? তোর পৃথিবী তো শুরুই হয় নি এখনো”।

অনেক দিন পর ব্যাঙ্কে গিয়েছিলাম কিছু টাকা উঠানোর জন্য। আমার ফ্ল্যাটে উঠার সময় কী মনে করে যেন ৩ তলায় দরজার কাছে কান পাতলাম। ভিতর থেকে আওয়াজ আসছে, “ বিশ্বাস কর আপু, আমি এই গ্লাস ভাঙ্গি নি, বিশ্বাস কর আপু”। বুঝতে আর দেরী হল না এটা পথিকের কণ্ঠস্বর। কী করবো বুঝতে পারলাম না। নিজ ফ্ল্যাটে এসে দরজা লাগিয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করলাম। ভাবলাম, পথিকের বোনের স্বামী যখন এই বাসা ভাড়া নেয় তখন তো শুনেছিলাম সে অনেক বড় ব্যবসা করে। ভদ্র ঘরের। কিন্তু এসব কি ? এত বড় ছেলের গায়ে হাত তুলছে কেন? নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না নিজের কাছে। উঠতে যাব ঠিক ঐ সময়ে কলিং-বেল বাজল। খুলে দেখি পথিক। খুব হাসি খুশি আজ ওর চোখে-মুখে। বোঝাই গেলো না, কিছুক্ষণ আগে সামান্য একটা গ্লাসের জন্য ওকে মারা হয়েছে। ছেলেটা কখনো কাউকে কিছু বুঝতে দিত না। আমাকে বলল, “ চাচা, আমাকে কি একটু বাইরে থেকে ঘুরিয়ে আনবেন?” সঙ্গে সঙ্গে পথিক কে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলাম। বাইরে তখন প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিতে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। পথিক দরজা খুলে বৃষ্টিতে ভিজতে গেলো। কিছুক্ষণ পর বললো, আসুন না চাচা, বৃষ্টিতে ভিজি। ওকে আনন্দ দেওয়ার জন্য গাড়ী সাইড করে রেখে বৃষ্টিতে ভিজতে বের হলাম। স্পষ্ট দেখতে পেলাম, ও কান্না করছে। দুই হাত দুই দিকে প্রসারিত করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। খুব হাসি-খুশি মুখ। দেখে আমার মনটা ভরে গেলো, কিন্তু কান্না করছে কেন? নাকি আমারি দৃষ্টিভ্রম।

সকাল সকাল ঘুম ভেঙ্গে গেল। বারান্দায় এসে দেখতে পেলাম নিচ তলায় অনেক গুলো মানুষের ভীড়। অ্যাম্বুলেন্স আনা হয়েছে। অনেকের মাথায় টুপি। খাটিয়াও আনা হয়েছে। বুকটা কেমন যেন কাঁপতে লাগত। পথিকের কিছু না তো? নিচ তলা নামতে গেলাম। ৩ তলা পথিকের বোনের ফ্ল্যাটে অনেক মানুষের ভীড়। ভীড় ঠেলে সামনে গেলাম।যা দেখতে পেলাম তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না মোটেও। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না। বুকটা হু হু করে কেঁপে উঠল। পথিকের মৃত দেহ পড়ে আছে মেঝেতে। বুকটা যেন দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে। জানতে পারলাম ঘুমের ওষুধ খেয়ে চিরতরে বিদায় নিল পথিক। অনুমান করে বুঝতে পারলাম এটি পথিকের বাবা, আর ইনি পথিকের মা। হঠাৎ করে পথিকের কথাটা মনে পড়ল, “ চাচা, আমি যখন থাকবো না , তখন আমার পড়ার টেবিলে যাবেন, বাম পাশে অনেক খাতার ভীড়ে একটা খাতা দেখবেন, নাম “আত্নদহন”। ভীড় ঠেলে পথিকের পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। খুব ধীরে ধীরে বাম পাশের খাতাগুলো সরিয়ে পেয়ে গেলাম “আত্নদহন” নামক খাতাটি। বাসায় নিয়ে আসলাম।এক নাগাড়ে পড়ে গেলাম খাতাটি
১০ ই আগষ্ট, ২০০৭
মা, তুমি কি এই তারিখটার কথা মনে করতে পারো? ১০ ই আগষ্ট , ২০০৪ সালে বাসায় কেউ ছিল না। স্কুল থেকে ফিরে হঠাৎ করে দরজা খুলে দেখতে পেলাম এক পর পুরুষের সাথে তুমি.....................।না, না, কি দেখলাম। এও কি হয় কখনো??? তুমিও আমাকে দেখে ফেলেছিলে। কিছুক্ষণ পর ঐ নরপিচাশ লোকটা চলে গেলো। জানো, ঐ লোকটাকে আমি আজও দেখতে পাই। আমার মাথা নিচু হয়ে আসে। আমি কিছু বলতে পারি না, কিচ্ছু না। আমার খুন করতে ইচ্ছে করে, খুন করতে।

১৫ সেপ্টেম্বর, ২০০৮
মা গিয়েছিল নানুর বাড়িতে, তখন বাসায় আমি, বাবা আর এক কাজের মহিলা। বোনের বিয়ে হয়েছে সেই কবে। রাতে ঘুমিয়ে আছি। হঠাৎ রাত ৩ টায় ঘুম ভেঙ্গে গেল। উঠে এক গ্লাস পানি খেলাম। পাশের রুম থেকে গোঙানির শব্দ কানে আসছে। কাছে গিয়ে দেখতে পেলাম , বাবা কাজের মেয়ের উপর........................। না, না, নিজের চোখ কে কোনো ভাবেই বিশ্বাস করাতে পারলাম না। কিন্তু আসলেই..................। বাবা আমাকে দেখতে পেল না। নিজের ঘরে ফিরে আসলাম, ভাবলাম, কেমন দুনিয়ায় আসলাম আমি? কেমন?

১৭ জুন, ২০০৯
বোন, আজ তুমি আমার গায়ে হাত তুললে। কারণ কিছুই না। তোমার ছেলে গ্লাস ভাঙলো আর দোষ চাপলো আমার উপর। কত কি খাও, আর আমি খাই তোমাদের দেয়া উচ্ছিষ্ট খাবার। প্রচণ্ড গরমে দিনে ফ্যানটাও ছাড়তে পারি না পাছে যদি তুমি দেখে ফেল অথচ তোমরা এ,সি ছেড়ে কী আরামে ঘুমাও। আর আমি ঠাণ্ডা মেঝেতে শুয়ে একটু ঠাণ্ডা নেবার চেষ্টা করি মাত্র। আচ্ছা, বোন, বলতে পারিস, কত টাকা হলে একজন মানুষ কে মানুষ ভাবা যায়? কত টাকা হলে একজন ভাই কে তার বোন চিনতে পারে? কত টাকা?

হঠাৎ করেই দেখতে পেলাম চোখ দিয়ে অঝোড় ধারায় পানি ঝড়ছে। নিজেকে কোনভাবেই বোঝাতে পারলাম না। ভাবলাম, ওদের দেখাই। আবার ভাবলাম, কাকে দেখাবো? ওই নরপশুদের????? পথিক কে নিয়ে গেছে ওদের গ্রামের বাড়িতে। রাত অনেক হল, বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। নিয়াজের মা মারা যাওয়ার পর কখনো এত রাতে বারান্দায় আসা হত না।আজ এলাম। আকাশের দিকে তাকালাম। কী সুন্দর!!!!!!!!! কী পরিস্কার!!!!!!!!! অনেক দিন পর আকাশে তারা দেখলাম। ভাবলাম পথিকও বুঝি ঐ আকাশে তারা হয়ে গেছে। হঠাৎ কে যেন আকাশের বিশাল ক্যানভাস জুড়ে এঁকে দিল, “ বলতে পারেন চাচা, মা, কেমন হয়? বাবা কেমন হয়? কত টাকা হলে ভাইকে তার বোন চিনতে পারে?” প্রশ্নগুলো’র উত্তর দিতে পারলাম না, মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম। অন্ধকারটা কেমন যেন আরো গভীর হয়ে যাচ্ছে। গভীর থেকে গভীরতম............।।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আয়েশা Arabi ভালো লাগলো agea যান
সাবা রহমান ডায়রি টা আসলেই অনেক কষ্টের , ভালো লিখসেন , চালিয়ে যান, আপনার গল্প পড়া হেয়েছিল অনেক আগে , আজ লিখলাম মন্তব্য
নিশাত হাসান আসিফ গল্পের ধারণা সুন্দর , ত্রুটি কিছুটা হলেও গল্পের থিমের কারণে তা উতরে গেছে , ভালো লিখেছেন ভাইয়া
আহমেদ সাবের গল্পটা কিছুটা তৃতীয় পুরুষে, কিছুটা প্রথম পুরুষে বলা। পুরো গল্পটাই চাচা যদি প্রথম পুরুষে বলতেন, তা হলে মনে হয় ভাল হতো। পথিক একজন দুর্বল মানসিকতার যুবক। পিতা মাতার সাথে অস্বাভাবিক সম্পর্কের কারণে এ ধরনের হীনমন্যতার সৃষ্টি। পথিকের এ চরিত্র সৃষ্টিতে লেখক সার্থক। বর্ণনা মাঝে মাঝে একটু বেশী বা একঘেয়ে হয়ে গেছে। সামান্য ভুল-ক্রুটি বাদ দিলে একটি বেশ ভাল গল্প। লেখক সামনে আরো ভাল গল্প উপহার দেবেন বলে আশা রাখি।
নাঈম হাসান আসিফ আসিফ ধন্যবাদ, আমার গল্প পড়ে মন্তব্য করার জন্য , প্রমি আপু আপনার লেখা একটা কোট করলাম , " অতি কাছের প্রিয় মানুষদের ঘৃণ্য চেহারা ভয়াবহ চাপ ফেলে মানুষের মনোজগতে" আর এই জন্যই আমি পথিক কে মেরে ফেলেছি , অনেকেকই প্রশ্ন করেছে আমার এই গল্পে পথিক কে কেন মেরে ফেলা হইছে? আপনার কথাই হোক আমার উত্তর, কিছু কিছু সময় নিজেকে আপোষ করতে হয়, আর কিছু কিছু সময় নিজেকে ধরে রাখা যায় না , আর তখনি মৃত্যু কে আলিঙ্গন করে নিতে হয় যা পথিক কে করতে হয়েছে ........... ভালো থাকবেন সবাই ...........
ফাতেমা প্রমি চোখটা অশ্রুসজল হয়ে গেল.মা,বাবা অনেক ব্যাপক বোধ.কাউকে এগুলো হতে হলে 'ব্যক্তি' না হয়ে ''মা/বাবা'' হিসেবে নিজেকে ভাবতে হয়.আসলেই ভালো,সুন্দর ,সুখী মানুষ/জাতি গড়তে সুন্দর-শুদ্ধ পরিবারের খুব দরকার...অতি কাছের প্রিয় মানুষদের ঘৃণ্য চেহারা ভয়াবহ চাপ ফেলে মানুষের মনোজগতে...লেখনি আর বানানে ছোটখাটো কিছু সমস্যা আছে,তবে কাহিনীটি বেশ..লিখতে থাকুন-আরো সুন্দর কিছু করে ফেলবেন এই প্রার্থনা করছি...
নাঈম হাসান আসিফ আসিফ কষ্ট করে গল্প পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ , গঠনমূলক পরামর্শ দিলে আরোও ভালো লাগবে ......
রিজ্বানুল ইসলাম লেখক এখানে কাকা হিসেবে এসে, গল্পটা আরোও সুন্দর করে দিছে ...... অসাধারণ ভাই..........হাতের লেখার জৌলুস কম না .সেলিনা আপার সাথে এক মত
মারুফ আমিন হুমমমম, ভালো লাগলো
রওশন জাহান ব্যতিক্রমী বিষয়. ভালো লেগেছে.

০৫ এপ্রিল - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪