০৪-১০-১৯৭১ আসরের ওয়াক্ত প্রায় শেষ । আকাশের নীল আভা করুণ রূপ ধরেছে । একটুক্ষনের মধ্যে হয়তো মাগরিবের আজান শুরু হয়ে যাবে । দূর দূর থেকে গোলাগোলির শব্দ আসছে ।বাতাসেও যেন কেমন একটা মৃত্যু মৃত্যু গন্ধ । প্রাণের উপর ভরসা নেই , হানাদার বাহিনীর নজরে পড়লে মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত । কি যেন ভেবে বাসা থেকে বের হলাম ।আমার গায়ে সাদা-লাল ডোরা কাটা শার্ট আর নীল রঙের প্যান্ট ।পায়ে রাবারের স্যান্ডেল । আকাশের দিকে তাকাতেই দেখলাম কয়েকটা পাখির ঝাঁক উড়ে যাচ্ছে । মাগরিবের আযান শুরু হয়ে গেছে । আমি যে বাসায় থাকি, তার একটু সামনে হেঁটে বামে আরও একটু হাঁটলে চৌরাস্তার মোর আসে ।মনে হয় সেখানে মিলিটারির একটা গাড়ি থেমেছে ।আমি একটু একটু করে এগুতে লাগলাম ।হঠাৎ গুলির শব্দ শুনতেই থেমে দাঁড়ালাম ।সাথে সাথে একটা চিৎকারের শব্দ ।কেউ শহীদ হয়েছে ।কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে পাশের দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে রইলাম ।গাড়ির শব্দ শুনে বুঝলাম মিলিটারির গাড়িটা চলে যাচ্ছে ।হয়তো গাড়িটা চলে গেছে, শব্দটা নেই ।আমি একটু একটু করে এগিয়ে গিয়ে দেখলাম একজন পোস্টম্যান নিহত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে । তখন বাতাস বইতে শুরু করল আবার । আমি একটু একটু করে এগিয়ে লাশটার প্রায় কাছে গেলাম ।পোস্টম্যানের ব্যাগটা থেকে কয়েকটা চিঠি বের হয়ে মাটিতে পড়ে ছিল । বাতাসের সাথে কয়েকটা চিঠি এদিক সেদিক উড়তে লাগল । একটা চিঠি উড়ে এসে আমার পায়ে এসে ঠেকল ।আমি চিঠিটা হাতে তুলে নিলাম । চিঠিটা খুলার সুযোগ পেলাম না ।আবার আরও একটা মিলিটারির গাড়ি আসার শব্দ পেলাম । তাড়াতাড়ি সেখান থেকে সরে পড়লাম । চিঠিটা হাতেই রয়ে গেল । বাসায় এসে দরজা জানালা ভাল করে লাগিয়ে দিলাম । যদিও এই এক রুমের একটা ঘরে আমি একাই থাকি । বিদ্যুৎ নেই । মোমবাতি জ্বালালাম । পাশের টেবিলের দুটা বইয়ের উপর রাখলাম । চেয়ার টেনে বসে চিঠিটা খুললাম । চিঠিটা এরকম – “ কেমন আছো মা ? বহুদিন হইল তুমারে দেখিনা । তুমার মুখে “বাবা’ ডাক শুনার জন্য কেমন জানি লাগতাছে । খুব কষ্ট হইতাছে তুমারে রাইখা থাকতে । কিন্তু থাকতে তো হইবোই , দেশ স্বাধীন করতে হইবোনা ! জানি না মা আর কয়দিন থাকতে হইবো ।হারামিগুলারে দেশ থেকা বাইর কইরা ছাড়মু, কথা দিলাম তুমারে । ঠিক মত খাওয়া-দাওয়া কইরো । আমার জন্য চিন্তা কইরো না । আমি ভালোই আছি । তুমার মামা-মামী খুব ভালো মানুষ । উনাদের কথা সবসময় ঠিক মত শুনবা । শ্রদ্ধা করবা । আমি যদি ফিরতে না পারি তাহলে উনাদের সাথেই তুমার থাকতে হইবো । আমি চেষ্টা করবো ফিরা আসতে । তুমারে দেখার জন্য আমার বুকে অনেক কষ্ট হইতাছে । ঠিক মত নামায পড়বা । দুয়া করবা , দেশ স্বাধীন কইরা যেন তুমার কাছে ফিরা আসতে পারি । --- ইতি তুমার বাবা ’’
চিঠির খামে ঠিকানা আছে । ইচ্ছা হচ্ছে নিজে যেয়ে চিঠিটা দিয়ে আসি আর মেয়েটাকে একটু দেখে আসি , যাকে তার বাবা এত ভালোবাসে । আজ রাত দেখি , আশেপাশের পরিবেশ দেখে কাল বের হবো ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
বিন আরফান.
চৌরাস্তার মোর আসে ।মনে হয় = চৌরাস্তা, রাস্তার উত্তর পার্শ্বে মনে হয়...../ তখন বাতাস বইতে এর আগে ক্ষনিকের জন্য স্তব্ধ ছিল তখন বাতাস বইতে ....// পায়ে এসে ঠেকল । = পায়ে নিকট পড়ল । / দুটা = দু'টা / আজ রাত দেখি , আশেপাশের পরিবেশ দেখে কাল বের হবো । = গভীর রাত আতংকে বের হলাম না আশেপাশের পরিবেশ দেখে কাল বের হবো । // = অনেক সুন্দর হয়েছে. চেষ্টা চালিয়ে যান ইনশা-আল্লাহ একদিন অসাধারণ হবে. তবে ইসলামী অনুভূতির মিশলে গল্পের শুরুটা হওয়ায় সর্বোচ্চ নাম্বার পেলেন. কেননা এখানে আমার দূর্বলতা আছে. শুভ কামনা রইল. সালাম.
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।