দক্ষিনসুরে

কষ্ট (জুন ২০১১)

এক খেয়ালী কবি
  • ১৬
  • 0
ভালবাসা বলতে এত কিছু বুঝি না আমি।বুঝতেও যাই না।তবে আপন মনে খুঁজে বেড়াই শত জনমের চেনা একজন কে।দেখা মেলেনি তার আজ অবধি।মন ভাল নেই ছাদে বসে ছিলাম।মিষ্টি একটা পরিবেশ।ঝলমলে রোদ সাথে গা জুড়ানো বাতাস।অনেকদিন পর কেমন নতুন নতুন লাগছে।আপাতত থেমে আছে আমার জীবন।কোথাও ভর্তি হইনি।প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তির চেষ্ঠা চলছে।মাঝখানের এই ফাঁকা সময় গুলো এত ফাঁকা আর রুক্ষ যেন সাহারা প্রান্তর।বাবার শরীরটা ভাল নেই ,দুর্বল।বলেন যা ভাল বুঝিস কর।ভাবি আমি,কতটুকুই বা বুঝি।মাঝে মাঝে ভাবি দূর সব ছেড়ে একটা দোকান নিয়ে বসে পড়ি,পরেই আবার লজ্জা লাগে, কোনও একদিন কি জবাব দেব আমার আগামী কে।ভয় হয় যদি বাবার টাকাগুলো খামোকা নষ্ঠ হয় আমার পেছনে।আজ কাল চাকরীর যা বাজার,কোথাও গ্যারান্টি নাই সবখানে চান্স আছে,যা আমার দরকার নেই।এমন বাউলা পরিবেশ একটা সুখ সুখ ভাব বয়ে আনে।একটা গলা শুনলাম।মনোযোগ দিতে চেষ্ঠা করলাম।ঘাড় ফিরিয়ে দেখি এক মেয়ে দাড়িয়ে।মেয়েটা
-এক্সকিউজ মি বলেছে
জবাব দেইনি।হাবলার মত চেয়ে আছি,যেন মঙ্গল গ্রহ থেকে এসেছি।
সপ্রভিত চেহারার মেয়েটা বলে উঠল
-আপনি কি কথা বলতে পারেন না
আমি ভাবছিলাম পাগল ঠাগল নাকি।ভেঙ্গে ভেঙ্গে গলা দিয়ে বেরুল
-হ্যাঁ পারি
হাসল মেয়েটা।ভাল লাগল না আমার ওর হাসিটা।চিনিনা বলে হয়তো
-আমরা কি কথা বলতে পারি
মনে পড়ল এই মেয়েটাইতো,সে দিন বাসায় এসেছিল।আম্মুর সাথে একটু রাগারাগি করেছিলাম তখন।রেগে গিয়ে কি একটা যেন ছুড়ে ফেলি,তাতে প্রকট শব্দ হয়।মেয়েটা আর তার ছোট বোন তখন আমাদের বসার ঘরে।পাশাপাশি দুইটা রুম।নিশ্চিত যা বোঝার বুঝে ছিল মেয়েটা।একটু কেন যেন লজ্জাবোধ করলাম
-হ্যাঁ বলুন
রীতিমত গৎবাঁধা প্রশ্ন শুরু করল মেয়েটা।কি করি,কি করেছি,সবই জানল,নিজেরটাও জানাল,সীমার মধ্যে থেকে।সমবয়েসি,একই লেভেলের ছাত্রি।অনেক কথা বলে সে।আমার ভাবসাবে নিজেই বলল
-আমি এ রকমি সবার সাথে মিশতে কথা বলতে ভাল লাগে।
পুরো আমার বিপরীত,আমি কখনই এতটা পারি না।মিনিট দশেক পর চলে গেল সে।উত্তর খোঁজার মত অনেক প্রশ্ন রেখে গেল।আমাদের পাশের ফ্লাটে থাকে ওরা।সামনাসামনি দরজা।যা একটা দেওয়ালের ব্যবধান।বুঝলাম আরও আগে থেকেই কথাবার্তা হওয়া সম্ভব ছিল,যদি না আমি উপর দিকে না তাকিয়ে হাটতাম।মনে মনে বিশ্লেষন করছি মেয়েটাকে।রুপ ১০০ তে ৬০ দেওয়া চলে,গুন জানি না,বুদ্ধি আছে।তার পর ভাবছিলাম ভালই হল।পালে বোধহয় এ বার হাওয়া লাগল বলে...


কয়েকদিন পর বিকেল বেলা কেন জানি ঘরে মন ঠিকছিল না।হঠাৎ করেই খুব মন চাইছিল মেয়েটার সাথে আবার দেখা হোক।নিজের মধ্যেই একটা দু ভাগ হয়ে গিয়েছিল।এক ভাগ চাইছিল যাই না ছাদে যদি দেখা হয় আর এক ভাগ বলছিল দূর আমি কেন যাব।অনেক চিন্তার পর হুট করেই বেরুলাম,সোজা ছাদে।মিনিট তিনেক ঘুরলাম কেউ নেই।নেমে পরার সময় একবার উঁকি ও মারলাম ওদের দরজায়।ঘরে যেতে মন মানছিল না,তাই বেরুলাম।গেটের পাশে এসে খামোকাই একবার তাকিয়েছি ওদের ব্যালকনির দিকে বুকটা ছ্যাত করে উঠল।ব্যালকনিতে দাড়িয়ে মেয়েটা বোধহয় আমাকেই দেখছিল,চোখ পড়তেই সরে গেল।মিশ্র একটা অনুভূতি ঠিক বুঝাতে পারবনা।একটু একটু করে সরে যাচ্ছিল মনের কাল মেঘ।ঘন্টা দুই ঘুরলাম বাইরে এমনি এমনি।মনটা কে শান্ত করার জন্য।সন্ধ্যা ঘনাতে যখন আর দেরি নেই ফিরছিলাম।বাড়ির গেট দিয়ে মাত্র ডুকব অমনি ও পাশ থেকে মেয়েটা ও বেরিয়ে এল।আর দুই সেকেন্ড হলে মাথায় মাথায় বারি লাগত।একটু অপ্রস্তুত হয়ে আমি সোজা হেটে চলে এলাম।তাকাইনি ওর মুখের দিকে।পরে ব্যাপারটা নিয়ে একদম ভাবতে মন চায়নি।ওর মধ্যে কি কোন অনুভূতি কাজ করেছিল,হতে পারে,একটু কি হেসেছিল সে,খেয়াল করিনি।রাতে বসে আছি,পুরনো পত্রিকা ঘাটছিলাম এমনি এমনি।বাবা ডাকলেন।আমি প্রাইভেটে যে সাবজেক্টে ভর্তি হতে চাই তাতে অনেক খরচ,বাবার জন্য একটু বেশীই।খুব একটা জেদ কাজ করে ভিতরে।কোথাও চান্স পাইনি সেটা আমার দোষ।প্রাইভেটে কেন পড়তে পারব না,সবাই তো পড়ছে।খুব রাগ হয় তখন নিজের কপালের উপর।মাঝে মাঝে নিজেকে আখের ছোকলা বলে মনে হয়।কোন রস নেই।বাবা জানালেন পরশু আমরা ঢাকায় যাচ্ছি।মুখে প্রকাশ করিনি তবে মনে মনে অনেকটা নির্ভার হলাম।যাক বলল তো,আমি ভেবে ছিলাম রাজিই হবে না।রাতে চমৎকার আবেশে চমৎকার একটা ঘুম হল।পর দিন শুক্রবার।ছাদে আর ও একবার এবং শেষবার দেখা হয়েছিল আমাদের।বই সম্পর্কে কথা হল।ওর কিছু বই আছে,নিজেই বলল পড়তে দেবে।খুব সাধারন ওর চলাফেরা কথাবার্তা,যেন প্রত্যেক দিনের অবিচ্ছেদ্দ্য অংশ সেই ঘরের মেয়েটি।যা একটু আমার চোখে পরেছে ও একটু ইসলামিক মাইণ্ডের।মাঝে ওর বাবার সাথেও কথা হয়েছে।সে এক আজব অভিজ্ঞতা।পাকিস্তান আমলের ১১২ টাকা বেতনের চাকুরে তিনি,আধ ঘন্টাতো শুধু ইংরেজিতেই কথা বললেন।নিজের শিক্ষা দীক্ষা নিয়ে একটু গর্ব আছে ওনার।কথায় কথায় বুঝলাম আমার নানা দাদাদের উনি ভাল করেই চেনেন।প্রথমবার ভালই লেগেছিল এরপর কেন যেন ভাল লাগত না ওনার লেকচার গুলো।খুব একটা পড়তাম না ওনার সামনে






আমার পচন্দে শেষ পর্যন্ত সায় মিলাতেই হল আমার বাবাকে।ভর্তি হলাম ঢাকার এক প্রাইভেট ভার্সিটিতে টেক্সটাইল ইঙ্গিনিয়ারিং এ।ঢাকায় চাচাতো এক বড় ভাই থাকতেন ওনার সুবাদে মেস ও জুটল।সব ঠিক করে ফিরলাম।যখন বাসে বসে,খুব শান্তি লাগছিল,যেন আমি মুক্ত,যা খুশি করতে পারি,ডানা মেলা এক পাখির মত।এক ফোঁটা পানি ও চলে এসেছিল চোখে,বুঝিনি কেন।সে বোধহয় আনন্দঅশ্রুই ছিল।পরদিন যখন আবার জিনিস পত্র নিয়ে ঢাকায় ফিরব বিদায় নিচ্ছিলাম।বাবাই বললেন পাশের বাসার আঙ্কেল আন্টি কে বলে যেতে।অনেক শুভ কামনা করলেন ওনারা,সাথে ফ্রী সদুপদেশ।আড়চোখে একবার ওকে খুঁজিনি বলব না।ওর ছোট বোন বলল ও কলেজে,বিদায় নিয়ে চলে এলাম।সে দিন রাতে ফিরছিলাম যখন আমি স্বাধীন হতে যাচ্ছি এই ভেবেই খুব শান্তি লাগছিল আর আজ যখন সত্যি স্বাধীন হলাম একটা মোচড় কেন জানি না অনুভব করলাম ঠিক হ্রৎপিন্ডের পাশে।ঠিক যেন এক টুকরো কাল মেঘ ডেকে দিল আগুন ঝরানো সূর্যটা কে।ঢাকায় এসেছি মাস খানেক।একটা জিনিস বুঝলাম সামনে থাকলে দামি জিনিস ও মূল্যহীন লাগে আর যখন দূরে সরে যায় তখন বোঝা যায় কত মূল্য ছিল এর।মাঝে মাঝে ভাবতে ভাবতেই যেন আমার মাঝে জীবন্ত হয়ে উঠে ঝুমা।এত সঙ্কুচ,এত লজ্জা যেন চোখ মেলে তাকাতেই পারবে না,ছোঁয়ার আগেই ঝরে যাবে,অনেক যতন করে পুষলাম তাকে বুকের মাঝে।যেন ঝড়ো বাতাস কখনও আসবেই না।ভাবিনি কখনও চিএনাট্যটা এমন হবে।মাত্র ৩৬ দিন পর ভাঙ্গা মনের জোড়া লাগানো এক বুক সপ্ন নিয়ে ঘরে ফিরলাম আমি।আমাকে দেখে বাবা মা অবাক,ছেলে অনেক বদলে গেছে।প্রথম টিউটেরিয়াল পরীক্ষার রেজাল্ট বলছে ছেলে অনেক মনোযোগী।শুধু অপেক্ষা করছিলাম কখন আবার দেখা হবে।১০-১৫ বার এর মধ্যে ছাদে চক্কর দিয়েছি।ঝুমাকে আর দেখতে পাইনি।ওদের বাসায় দেখলাম নতুন মানুষ,বাবা বললেন ওরা গ্রামে চলে গেছে।ঝুমার নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে।তাই এখানে থাকার ওদের কোন দরকার নেই।আর কিছু জিজ্ঞেস করিনি আমি বাবাকে।ভেবেছিলাম রাতেই ঢাকা ফিরব।পরে আর পারিনি খামোকা বাবা মা সণ্দেহ করবে।সেদিন রুমে অন্ধকারে বসে অনেকক্ষন অপেক্ষা করেছিলাম,কখন সকাল হবে।মায়াবী জোঁস্নার সাথে মৃদু দক্ষিনা হাওয়া গা জুড়িয়ে দিচ্ছিল।ইশ এ রকম যদি বুকের ভিতরটা ও জুড়িয়ে যেত।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এক খেয়ালী কবি হ্যাঁ অনেক সময় এটাই হয়...আর ধন্নবাদ আপনার comment এর জন্য@shahnaj
শাহ্‌নাজ আক্তার প্রতিবেশী + প্রেম যদি তারা অবিবাহিত নারী-পুরুষ হয় তাহলে নির্ঘাত একটা কিছু ঘটবেই ....সেটা যাই হোক , অনুমান করে কিন্ত বলিনি কথাটা ...........হাহাহা. যাই হোক খুব ভালো লেগেছে আমার গল্পটি I
এক খেয়ালী কবি dhonnobad ............@kurshedul alom@jhora
খোরশেদুল আলম লেখা স্পষ্ট মনে গেঁথে গেছে বিরহ, ভালো, এক খেয়ালী কবির লেখার উন্নতি কামনা করছি।
এম এম এস শাহরিয়ার একটা জিনিস বুঝলাম সামনে থাকলে দামি জিনিস ও মূল্যহীন লাগে আর যখন দূরে সরে যায় তখন বোঝা যায় কত মূল্য ছিল এর।মাঝে মাঝে ভাবতে ভাবতেই যেন আমার মাঝে জীবন্ত হয়ে উঠে ঝুমা। ..... ঠিক বলেছেন
এক খেয়ালী কবি চেষ্টা করব brother n thanks @সূর্য
অদিতি ভাল লাগল গল্পটা

৩০ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪