জীবন থেকে নেয়া ক্ষুদ্র তৈলচিত্র ।

কষ্ট (জুন ২০১১)

ঝরা
  • ২৮
  • 0
সূর্যটা যখন পৃথিবি থেকে বিদায় নেবে নেবে করছে ঠিক তখন অহনা আছর নামাজটা সেরে তার চার তলার ভাড়া বাড়ি হতে নেমে পড়ল রাস্তায় উদ্দেশ্য ডাক্তারের সিরিয়াল নাম্বার ।ডাক্তারের চেম্বার বাসা থেকে বেস দূরে নয় যেতে মাত্র ১০থেকে ১৫মিনিট লাগে।ডাক্তারের নাম্বার নিতে যতটুকু সময় লেগেছিল ততক্ষনে সূর্য পৃথিবি থেকে বিদায় নিয়ে পৃথিবিটাকে অন্ধকারের গুহায় ঠেলে দিতে চাইলেও রাস্তার নিয়ন লাইটগুলোর দরুন তা আর হলোনা।অহনা নাম্বারটা নিয়ে ফুটপাথ ধরে হাঁটতে লাগলো বাসার উদ্দেশ্যে।হঠাৎ ফুটপাথে বসে থাকা দুটি ছেলের দিকে অহনার দৃস্টি আটকা পড়লো।একটি ৬-৭ বছরের হবে আর অন্যটি ১ বছরের বাচ্চা ।বড়োটি ছোটটিকে কোলে নিয়ে বসে আছে ফুটপাথের এক কোনে।বাচ্চা দুটিকে দেখে অহনার কেনোজানি খুব মায়া হলো সে বাচ্চা দুটির কাছে গিয়ে দেখে ছোটোটি ট্যা ট্যা কোরে কাঁদছে আর বড়োটি অঘোরে ঘুমুচ্চে অহনাতো রিতিমত অবাক চারিদিকে গাঁড়ির হর্ণ ফুটপা্থভর্তি মানুষের আনাগোনা আর এরই মধ্যে নাকি এ বাচ্চাটি বসে বসে এমন মন্ত্রমুগ্ধের মত ঘুমুচ্চে?অহনা বাচ্চা দুটির দিকে ১০ টাকা বাড়িয়ে দিয়ে ডাকতে লাগলো এই বাবু উঠো উঠো এই নাও ১০ টাকা।কে শুনে কার কথা বাচ্চাটিতো ঘুমুচ্চে আর ঘুমুচ্চে অহনার এ কান্ড দেখে অনেকেই সেখানে জোড়ো হয়ে গেলো।অনেক ডাকাডাকির পর বাচ্চাটির ঘুম ভাংলো সে ঘুম ঘুম চোখে টাকাটি নিয়েই আবার ঘুম।
অহনা বাসায় ফিরে এলো।অহনার বিয়ে হয়েছিলো ২০০৫এ।বাবা মা দুজনই অহনাকে খুব ছোট্টটি রেখে পাড়ি দিয়েছিলো খোদার দরবারে তখন থেকেই অহনা ভাইদের কাছে থাকে ।অহনার বয়স যখন ৭কি৮তখন বাবা চলে গিয়েছিলেন আর যখন সে দশম শ্রেণিতে পড়ে তখন মা।মা চলে যাওয়ার পর থেকেই অহনা যেন কস্টের এক মহাসমুদ্রের অতলে আছড়ে পড়লো।সেখানে কোথাও তার সুখ নেই কোনো কিছুতেই ভালো লাগেনা তার।তবুও তো জীবন থেমে থাকেনা একটি মুহুর্তের জন্য।দিন যায় রাত আসে অহনা লেখাপড়া চালিয়ে যেতে থাকে । জিবনের কোনো প্রতিকুলতার সাথে হার মানেনা সে ।শুধু মনের মধ্যে সবসময় কি এক অজানা কস্ট তাকে তাঁড়িয়ে বেড়ায় সে শত চেস্টা করেও এই কস্টের পাহাড়কে মন থেকে দুর করতে পারে না।যখন তার বয়স ১৫কি১৬ছিল তখন মনে কত স্বপ্ন বুনেছিলো কিন্তু মা চলে যাবার পর থেকে যেনো সব স্বপ্নগুলো হলদে হয়ে গেলো ঠিক পাতা ঝরে যাওয়ার আগ মূহুর্তে যেমন হয় ।অহনার কত স্বপ্ন ছিলো তাঁর বর হবে অন্যরকম মনে মনে সে এঁকেও ফেলেছিলো তার স্বপ্নের রাজপুত্রের ছবি।শ্যামলা চেহারার মিডিয়াম উচ্চতা ছিমছাম গঠণের এক ব্যাক্তিত্ববান পুরুষ ।তার হৃদয় হবে বৃস্তৃত আকাশ তার থাকবে অফুরন্ত সাহস অন্যায় দেখলে রুখে দাঁড়াবে আর অহনাকে অনেক অনেক ভালোবাসবে।অনার্স শুরু করার সাথে সাথেই অহনার জন্য পাত্র খুঁজতে শুরু করেছিলো তার ভাইয়েরা ।প্রায় প্রতিদিনই তাকে রং মেখে সং সেজে বসতে হতো পাত্র পক্ষের সামনে।কারও অহনাকে পছন্দ হয় কিন্তু পিতা নাই বলে ফিরে যায়।কাউকে আবার পছন্দ হয়না অহনাদের এভাবে কেটে যায় চার চারটি বছর ।কখনও কখনও অনেক কটু কথা শুনতে হয় অহনার ভাবিদের মুখ থেকে তারা বলতে চাইত অহনা দেখতে খারাপ তাই অকে কেও পছন্দ করে না ।অহনা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবে কই নাতো!আমিতো দেখতে খারাপনা রঙ ফর্শা পাঁচ ফীট উচ্চতা নাকটিও খাড়া পাতলা পাতলা দুটি ঠোট সবকিছু মিলে কোনো ইন্ডিয়ান নাইকার চেয়ে কম কিছুতো সে নয় তবুও কেন সবাই ওভাবে তাকে হেও করে হইতবা আসলেই সে দেখতে ভালনা কিন্তু মা তো সবসময় বলতো সে নাকি পরির মত ।অহনার খুব খারাপ লাগে কিন্তু কিছু করার নাই তার সে খুব অসহায় ।কত ছেলেই না তাকে প্রেম নিবেদন করেছিলো কতজনা কত ঘুরেছিল তার পিছু কিন্তু অহনা তার ভাইরা দুঃখ পাবে বোলে কক্ষনো তাদের দিকে ফিরে তাকায়নি কিন্তু আজ অহনার খুব আফসোস হচ্ছে।যাক সেসব কথা।শেষ পর্যন্ত এক পক্ষকে অহনার ভাইদের পছন্দ হলো এবং সেখানে বিয়ে ঠিক হলো অহনা পাত্রটিকে দেখেছে তার স্বপ্নের সাথে কোনো মিল নাই তবুও সে রাজি হয়ে যায় ।কারন তার এই দুর্বিসহ জীবন থেকে যে করেই হোক তার মুক্তি চাই যেমনি হোক তার একটি আস্রয় চাই যেখানে তাকে প্রতিনিয়ত শুনতে হবেনা কটু কথা সারাদিন কাজ করেও শুনতে হবেনা সে অকেজো।অহনা চোখ বন্ধ করে মনের মধ্যে তার সব স্বপ্নকে চাপা দিয়ে রাজি হয়ে গেল।তারপর তাদের বিয়ে হল।অহনা চলে এলো শশুর বাড়ি সেই যে এলো আর যাওয়ার নাম নেই নিতেও আসে না কেউ মাঝে মাঝে সে ভাইদের গিয়ে দেখে আসে।অহনাও যেনো একরকম পাথর হয়ে গিয়েছিলো বাসর রাতে স্বামীর সাথে গল্প করতে গিয়ে কি এক অজানা কারনে হঠাৎ হাউমাউ করে কেঁদে উঠেছিলো আর মনের ভিতর নাড়া দিয়ে উঠেছিলো তার বুকের ভিতর যখনচাপা দেয়া কস্টগুলো।বেছারা স্বামীটি কিছু না বুজে চুপটি করে রইলো ভাবলো ভাইদের জন্য বুজি খারাপ লাগছে।এভাবে বিয়ের পর পর কয়েক মাস অহনা যখন স্বামীর সাথে একান্তে সময় কাটাত তখন এভাবে হাউমাউ করে কেঁদে উঠত।এক অজানা মানুষ তার উপর মোটেও তার পছন্দের না বয়সও অহনা থেকে অনেক বেশি।
শশুর বাড়ির গৃহস্থালির কাজের ভিড়ে অহনার সময় দ্রুত পার হতে লাগল এর মধ্যে কখন যে অহনার গর্ভে একটি চোট্ট ভ্রূণ জন্মেছিলো তা অহনা বুজতেও পারেনি কিন্তু ভ্রুণটির ৫০ দিন বয়সে যখন মৃত্যু হলো তখন শুধু অহনা নয় বাড়ির সকলেই টের পেলো সকাল থেকেই কি এক অসহ্য ব্যাথা অনুভম করছিলো অহনা তল পেটে কিন্তু সে কাউকে কিছু বলেনি চুপ করে সহ্য করে যাচ্ছিলো কিন্তু ব্যাথার তৃব্রতা যখন সীমা অতিক্রম করল তখন সে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো বাড়ির সকলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করলো ডাক্তাররা জানালো তার গর্ভে একটি সন্তান এসেছিলো কিন্তু ৫০দিন বয়সেই সেটি নস্ট হয়ে গেছে ।অহনার কস্টগুলোর সাথে আরও একটি অনাকাঙ্খিত কস্ট জমা হল।তার বাবুটি পৃথিবির আলো দেখার আগেই চলে গেলো ।তারপর আবার তার গতানুগতিক দিন যেতে লাগলো এভাবে যে কখন পাঁচ বছর কেটে গেলো অহনা টেরও পেলনা ।এখন মনে হয় সে তার স্বামীটিকে অনেক ভালোবাসে এই লোকটি ছাড়া তার পৃথিবি এখন শুন্য।
এই পাঁচ বছরে সে এখনও মা হতে পারলো না ডাক্তারের কাছেও দৌড়াদৌড়ি কম করেনি তারা বলে কোনো সমস্যা নেই।এখন এমন এক অবস্থা আকটি বাচ্ছার জন্য যতটুকুনা অহনা আর তার স্বামীর চাহিদা তার থেকেও যেনো বাইরের মানুষের চাহিদা অনেকগুন বেশি।কোথাও বেড়াতে গেলে অথবা কেউ বাসায় আসলে অহনার দিকে তীর ছুড়ার মত একটি কথাই ছুড়ে মারে বাচ্ছা নাই কেন?বাচ্ছা নাই এটি যেনো তার এক মহা অপরাধ কিন্তু কি অদ্ভুদ একটি বেপার কেও তার স্বামীটিকে কিচ্ছু বলেনা এটা যেন তার জন্যই হচ্ছেনা ।খুব অসহায় লাগে তার কাছে এ সমাজকে খুব তিক্ত মনে হয় তার।মা হতে না পেরে সে যে কত কস্ট পাচ্ছে সেটা না বুঝে উল্টো এ সমাজ তাকে বিদ্রুপ করছে ধিক এ সমাজকে।
আজ আবার ঠিক এ কারনেই ডাক্তারের সিরিয়াল আনতে গিয়েছিলো সে।এই বাচ্ছা দুটিকে দেখে সে চমকে উঠলো আমরা মা হবার জন্য কত কিচ্ছু করছি আর কত বাচ্ছা মা বিহীন বেড়ে উঠছে রাস্তার পাসে ।নিজের অজান্তেই অহনা বিড় বিড় করে উঠলো আমি মা হবো এই পথোশিশুদের মা হব।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এফ, আই , জুয়েল # নারীর প্রতি সমাজের একটা বাঁকা দৃষ্টিভঙ্গির বেহায়া চিত্র---- এই গল্পে ফুটে উঠেছে ।। == অনেকদিন পরে ফিরে এসেছ । ধন্যবাদ ।।
ভালো লাগেনি ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
ফাতেমা প্রমি অনেক ভালো লাগলো অহনার গল্পটা...তবে পড়তে চোখদুটার খুব কষ্ট হলো...ছোট ছোট প্যরা করে লিখলে, যতি চিন্হ আর বানানের দিকে খেয়াল রাখলে অনেক ভালো হত,আপু...এত এত বানান ভুল-ব্যাপারটা একটু কেমন না?? আরো লিখুন-আপনার সুন্দর সব লেখা পড়ে আনন্দিত হই-আপনার জন্য অনেক শুভকামনা রইলো আপু...
আশা গল্পটা ভালো লেগেছে- যদিও পড়তে ভালো লাগেনি। লেখার প্রতি আরো যত্নশীল হওয়ার উচিত।
sakil পারিবারিক এবং সামাজিক অন্ধকারের কিছু কথা উঠে এসেছে সাবলীল ভাষায় . অহনার সাথে গল্প এগিয়েছে দারুন ভাবে . ভালো লেখার হাত আপনার . আগামীতে আমাদেরকে আরো ভালো লেখা উপহার দিবেন সে কামনা করি সেই সাথে আপনার জন্য রইলো শুভকামনা ..
এ কে এম মাজহারুল আবেদিন banan er bapar e amar kotha holo, onek shomoy ato change bhul ashe. Ekhetre podokkhep neoa uchit
মোঃ আক্তারুজ্জামান অসম্ভব রকমের সুন্দর লিখেছেন| ভুল বানান পরিহার করুন| সঠিক বানান, যতির যথাযথ ব্যবহার লেখার- অলংকার! অনেক অনেক শুভো কামনা|
শাহ্‌নাজ আক্তার মা না হতে পারার যে কি তীব্র বেদনা তা একমাত্র ভুক্তভুগিরাই জানেন , আর আপনার গল্পে ও তা ফুটে উঠেছে, লিখতে থাকুন .....
এ কে এম মাজহারুল আবেদিন সহজ কথাও যায় না বলা সহজে, এটা আমাদের সমাজের নিয়ম হয়ে গেছে. কিন্তু আপনি যতটা সহজ করে একটা নিরুপম ছবি দাড় করিয়েছেন, এক কথায়, অসাধারণ. খুব ভালো লাগলো. শুভেচ্ছা রইলো, আরো অনেক অসাধারণ লেখা আশা করছি....
ঝরা সুর্য ভাইয়া শুধু ৫০দিন কেন পাঁচ মাসেও কখনো কখনো বুঝা যায়না ।ধন্যবাদ মুল্যবান মন্তব্য রাখার জন্য।&ধন্যবাদ সবাইকে।

২৮ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪