খুব করে কাঁদছে শোভন।বাবা ছাদে টাঙ্গানো পতাকা টা নামিয়ে দিয়েছেন । অনেক বলে ভাইয়া কে দিয়ে বাংলাদেশের পতাকা টা টাঙ্গিয়েছিল শোভন । বিশ্বকাপ খেলছে বাংলাদেশ। শুধু খেলছেই না এবার বিশ্বকাপ হচ্ছে নিজেদের মাঠে। শোভনের তাই অনেক উচ্ছ্বাস। কিন্তু বাবা পতাকাটাই নামিয়ে দিলেন। শোভন কি আর না কেঁদে পারে। শোভনের বাবা ফরিদ সাহেব সরকারী চাকরি করেন। তিনি শোভনের কান্না থামানোর চেষ্টা করছেন। মনে হচ্ছে পেরে উঠবেন না। শোভনের মা কেই আসতে হবে কান্না থামাতে।“কারণে অকারণে যখন তখন পতাকা টাঙ্গালে পতাকার অসম্মান হয় , বাবা। পতাকার অসম্মান করতে নাই, এটা যে অনেক বড় জিনিস”-শোভনের বাবা বেশ করে বোঝাচ্ছেন ছেলে কে।“ দেখো কত টুকু ছেলে কে কি বোঝাচ্ছে। ৫ বছরের একটা ছেলে কি বুঝে এসবের। শুধু শুধু ওকে কাঁদালে। কি হয় বলো তো , পতাকা টাঙালে। সবাই তো টাঙাচ্ছে। দুনিয়ায় কি শুধু তোমাকেই নিয়ম মানতে হবে”- সালেহা শোভনকে কোলে তুলে নিতে নিতে খুব বিরক্ত হয়ে বললেন।সালেহা শোভনের মা।শোভনের ভাই সুজন একটা কাগজের বাংলাদেশের পতাকা বানিয়ে নিয়ে আসছে শোভনের জন্য।শোভন কান্না থামিয়ে পতাকা টা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।ফরিদ সাহেব হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন।তিনি ছেলেদের কান্না দেখতে পারেন না।আজকেই শোভনের জন্য একটা বাংলাদেশের জার্সি নিয়ে আসতে হবে, মনে মনে ভাবলেন তিনি। পতাকা নিয়ে শোভন ফারিয়া আপুর কাছে গেল। ফারিয়া শোভনদের নিচতলায় থাকে ।ক্লাস নাইনে পড়া এই মেয়েটির সাথে শোভনের খুব ভাব।ফারিয়া আপু ক্রিকেট খেলার খুব ভক্ত। এটা বললে অবশ্য একটু ভুল বলা হবে কারণ ও যতটা না ক্রিকেট ভক্ত তার চাইতে বেশি তামিম ইকবালের ভক্ত। তার সারা ঘরে শুধু তামিমের ছবি। ফারিয়া আপু শোভন কে চুপি চুপি একটা কথা বলেছে যে সে নাকি শুধুমাত্র তামিম কেই বিয়ে করবে।শোভন অনেক কষ্ট করে কথা টা গোপন রেখেছে, কতদিন পারবে তা বলা যায় না।ফারিয়া আপু শোভনের গালে একটা বাংলাদেশের পতাকা এঁকে দিল। শোভন এইবার খেলা দেখার জন্য তৈরি।আজকের ম্যাচে দ. আফ্রিকাকে হারাতে পারলেই বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে। ফরিদ সাহেব হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকলেন।অনেক খুঁজে শোভনের জন্য একটা বাংলাদেশের জার্সি নিয়ে এসেছেন তিনি।শোভনের সাইজের জার্সি সহজে পাওয়া যায় না। দ. আফ্রিকার ব্যাটিং চলতেছে। খুব বেশি মিস করেন নি ফরিদ সাহেব। দ. আফ্রিকার প্রতিটি উইকেট পতনের সাথে সাথে হল্লা বয়ে যাচ্ছে বাসায়। সালেহা খেলা খুব ভালো বোঝেন না কিন্তু স্বামী-সন্তানদের উচ্ছ্বাস তাকেও স্পর্শ করে যায়।খেলা দেখতে দেখতে সালেহা ছেলেগুলোর উপর এক ধরনের মায়াও অনুভব করেন। ষোলকোটি মানুষের প্রত্যাশাকে বয়ে খেলছে ছেলেগুলো। সালেহা মন থেকে দোয়া করেন ওদের জন্য। মোটামোটি ভালোই রান করলো দ. আফ্রিকা। ২৮৫ রান তাড়া করে জেতা সহজ নয়। তবু ফরিদ সাহেব আশাবাদী। শোভনের বাংলাদেশ জিতলেই হলো। বাংলাদেশ জিতলেই ভাইয়া আর সে রঙ খেলতে পারবে সবার সাথে। শোভনের আর একটা আগ্রহ আছে, সেটা হলো তামিম ইকবাল কে নিয়ে। তামিম ইকবাল সেঞ্চুরি করলে ফারিয়া আপু ওকে চকোলেট কিনে দেবে।“ আল্লাহ, ফারিয়া আপুর সাথে যদি তামিম ইকবাল এর বিয়ে হতো।কতোই না মজা হতো তাহলে!! তামিম নিশ্চয় তাহলে আমাকে খেলা শেখাতো”- শোভনের ভাবনার তাল কেটে যায় সুজনের চিৎকারে। সুজন রঙ গুলাচ্ছে। বাংলাদেশ জিতলেই তো মাততে হবে উৎসবে। শোভনের এই বিকালটা একদম ভালো লাগতেছে না। ভাইয়া সব রঙ ওকে দিয়ে দিয়েছে। বাবা মা ও খুব চুপচাপ।ফারিয়া আপু দরজা বন্ধ করে রাখছে। মনে হয় কাঁদতেছে, আপু দরজা বন্ধ করে কাঁদে। কেন যে বাংলাদেশ এত খারাপ খেলে হেরে গেল। তামিম কে বকা দিতে হবে। বাবাকে দিয়ে বকা দেওয়ালে কাজ হতে পারে। বাবা খুব কড়া ধমক দেন। সুজনের ক্রিকেট ব্যাট টা খুব কায়দা করে ধরে শোভন। তার গায়ে বাংলাদেশের জার্সি। শোভনের ভাব দেখে মনে হচ্ছে এখন চার ছয় মেরে বাসায় আনন্দ ফিরিয়ে আনবে সে। শোভনের বন্ধু সুমন বল ছুড়ে দিল। সপাটে মারল শোভন।বল ছাদের বাইরে। এখুনি বকা খেতে হবে বাবার কাছে। তা বকা না হয় খেলই শোভন কিন্তু এরকম হাজার শোভনের হাতে উঠে এলো যে ক্রিকেট ব্যাট সেই ব্যাটেই কি একদিন উচ্ছ্বাসে ভাসবে পুরো বাংলাদেশ?কে জানে, উত্তর তো ভবিষ্যতের কাছে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।