যে গল্প জীবনের!

বিশ্বকাপ ক্রিকেট / নববর্ষ (এপ্রিল ২০১১)

আরাফাত ইসলাম
  • ২৫
  • 0
  • ৩৯
আয়নার সামনে নিজেকে দেখছিলাম, অনেকক্ষণ ধরে। ভাবছ, এ আবার কোন হ্যাংলামি? কিন্তু বিশ্বাস করো এ ব্যাপারটা আমার নিজের কাছে অনেক ভালোলাগে, তাই দিনে অনেকবারই আয়নায় দেখি, হয়তো বা ভাবছ এ আবার কোন রূপসীরে? রূপসী কি-না জানি না তবে রাস্তায় বের হলে এখনও ছেলে-পুলে তাকিয়ে থাকে, হয়তো সৌন্দর্য্যের কিছু ছিটে-ফোঁটা এখনও অবশিষ্ট আছে। অনেকে বলছ,'ও, এ বুঝি তোমার বুদ্ধি?' বিশ্বাস করো, এখন আর এসবে আগ্রহ নেই, এক সময় ছিল! তা তো অনেক পুরানো কথা, যখন ওদের পাত্তাই দিতাম না। আবার আড় চোখ চেয়েও দেখতাম পিছু নিয়েছে কি-না, হয়তো কখনো বা ওদের না দেখলে ভাবতাম,'যাহ্‌, আজ নিশ্চয়ই বুড়ি-বুড়ি দেখাচ্ছে!' সেদিন আবার বাসায় ফিরে এই আয়নাটার সামনেই নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে গরুর দাঁত দেখার মতো পরীক্ষা করে শেষে একটা কারণ বের করে বলতাম, 'যাহ্‌, আজ সত্যিই ভূত-ভূত লাগছে। ধুর ছাই ! টিপটা যে কেন পড়লাম না!' কি ছাইপাঁশ ভাবছি? নিজেকে নিজেই ধিক্কার দিলাম তবে আয়নার উপরের দিকে টিপটা চোখে পড়তেই ফেলে রাখা দিনগুলো যেন কল্পনার মতো ভেসে উঠলো, স্কুল থেকে ফিরেই নিজেকে অনেকক্ষণ ধরে পর্যবেক্ষণ করতাম, আসলে পারতামও! চুলটাকে ডানপাশে ফেলে, কখনো বামপাশে। কখনো থুতনির কোণে পেন্সিল দিয়ে তিল এঁকে নিজেকে খুব করে দেখতাম, এভাবে কতক্ষণ চলে যেত খেয়াল নেই, অবশেষে আমার এই সমালোচক বন্ধুটিকে ত্যাগের পূর্বে কপালের টিপটি ওর কপালে পড়িয়ে দিতাম। তোমরা হাসছ? হেসো না । বিশ্বাস করো, তখন কেবলমাত্র আমি কৈশোর থেকে যৌবনে পা ফেলেছি। তোমরা যারা বঙ্কিম বাবুর ইন্দিরা উপন্যাসটি পড়েছো তাদের কাছে নিজেকে আধুনিক ইন্দিরা বলে পরিচয় দিতে ইচ্ছে হচ্ছে।

এখন? সবকিছুই করছি। খাচ্ছি, ঘুমোচ্ছি, হাসছি-খেলছি আর অনেককিছু! তবে করতে হচ্ছে বলে করছি, তার চেয়ে বেশি না। যেন নিজের সাথে নিজেই অভিনয় করে চলছি, কতক্ষণ পারবো জানি না তবে আয়নাটির সামনে দাঁড়ালে আর পুরানো আমাকে খুঁজে পাই না, অনেক আলাদা। এইখানটাতে আর অভিনয় করে কুলোতে পারি না, নিজের একাকীত্ব নিজের কাছে ধরা পরে যায়! অভিনয়টা কোথা থেকে শুরু হয়েছিল ঠিক খেয়াল নেই তবে সীতা হরণের ইতিহাসটির মতোই, যখন পিতা-মাতার কাছ থেকে স্বাধীন পাখিটাকে নিয়ে খাঁচায় পুড়লো, তখন থেকেই একটু একটু অভিনয় করতে শিখে গেছি! নিজের মায়ের বয়সী একটা পুরুষ প্রাণীর সাথে ঘর করার ব্যাপারটা প্রথম প্রথম আমলে না তুললেও আস্তে আস্তে যেন বিষিয়ে উঠেছি, আর দশটা মেয়ের মত স্বপ্নের রাজপুত্রের জন্য ভাবিনি এমনও কিন্তু নয়, আবার কল্পনার রাজপুত্রের জন্য মনের একান্ত গহীনে যে জায়গাটা সকলের থেকে পৃথক করে যত্ন নিয়ে, ষাঁড় দিয়ে উর্বর করে রাজকুমারের জন্য বরাদ্দ করে রেখেছিলাম তা যেন চোখের নিমিষেই কোথায় উবে গেল, আর আমি পরে রইলাম রাক্ষসপুরীতে বন্দি! যেখানে বীভৎস চেহারার মোটা মতন এক দ্বার-রক্ষক সর্বদা চোখ রাঙিয়ে যাচ্ছে। তোমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ যে, আমাদের আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না বলেই পরিবার থেকে ভালো পাত্র পেয়ে হাত ছাড়া করতে চায় নি। পাত্র হিসেবে নাকি লাখে একটা, নামাজী-কালামী, নিজের বড়-সড় ব্যবসা আছে, টাকা-পয়সার অভাবই নেই এছাড়া যে এপার্টমেন্টে এখন থাকে তাতে নাকি বাথটাবও আছে, (বিশাল হাই-ফাই ব্যাপার স্যাপার!) বয়েসটা একটু বেশি, এই আর কি। বিয়ের সময় আমার বান্ধবীরা তার সঙ্গে অনেক মজা করেছিল। সে যে একবারে কচি খোকা তাও নয়, 'শয়তানের হাফেজ' শব্দটাও বান্ধবীদের মন্তব্য থেকে পেয়েছিলাম। কেউ কেউ বলল, 'তোর ইয়েটা যা দুষ্টু না!' এভাবে কেউ যেন পেছন থেকে টিপ্পনীও কাটল, 'তুইও আছিস, বেছে বেছে একেবারে পাঁকা আমাটাই নিলি, খেতে যা-আ মজা পাবি না!'(এভাবে অনেক কথা চলল, তবে মেয়েলী কথা বেশি শুনে কাজ নেই। বাকিটা পাঠকরাই ধারনা করে নিন, কেননা এর চেয়ে আর এক পা আগালেই মেয়েদের সাথে আমার চুলোচুলি লেগে যাবে। থাক বাবা!)

এক-এক করে দিনগুলো কাটতে লাগল আর সেই সাথে কচ্ছপের শক্ত খোলস উপচে থ্যাকথ্যাকে বিচ্ছিরি দেহটি বের হতে শুরু করলো। বিয়ের পরের কয়েকটা দিন ভালই গেল। ভাল গেল বলতে এক রকম ঘোরের মধ্যেই সবকিছু চলে গেল। তবে দিন যত যাচ্ছে একটা ব্যাপারে কেমন যেন খটকা লাগল। অর্থাৎ স্বামী নামক যে ব্যক্তিটির সাথে বসবাস শুরু করেছি তার আচরণ আচমকা কেন যেন বদলে যায়, প্রথম-প্রথম আমলে না আনলে পরিবর্তনটা এতটাই প্রখর হওয়া শুরু করেছিল যে বাধ্য হয়েই কারণটা অনুসন্ধান করা শুরু করলাম। শেষে যখন ব্যাপারটা আঁচ করতে পারলাম তখন ঘেন্নায় আমার হাত-পা অবশ হয়ে আসছিল, যার সাথে বয়সের বিস্তর পার্থক্য সত্ত্বে সারাজীবন কাটাবো বলে 'কবুল' বলেছি, সে কি-না আমাকে সন্দেহ করে? পা থেকে মনে হল মাটি যেন সরে যাচ্ছে, সন্দেহের একটা মাত্রা থাকে তবে নিজের ভাইকে নিয়ে প্রশ্ন তুললে কি-ই-বা করার থাকে! লোকটাকে অসুস্থ বললেও মনে হয় ভুল হবে না, তার দৃষ্টি এতটাই নিচু মানের যে বলতে গেলেও নিজের কাছে লজ্জা লাগে! কারো সাথে একটু হেসে কথা বললেই দোষ, আবার মুখ গুমড়ো থাকলেও যেন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে। 'আমি কি করব?'

বাবার বাড়ি যখন আমাকে আনতে বা দিতে যেত তখন আমার বান্ধবীদের কাঁথে এতটা মজা করত যে নিজের কাছেই লোকটিকে অপরিচিত মনে হতো। অদ্ভুত! বাইরের লোকের পক্ষে কখনোই ওর থ্যাকথ্যাক বিশ্রী রূপটা বাইরের খোলস থেকে দেখা সম্ভব হত না। নিজের বাবার বাড়িতে গেলে সকলেরই অনেক লোকের সাথে কথা বলতে হয়, হয়তো সৌজন্যবোধে মুখে একটু হাসিও ফোটাতে হয় কিন্তু প্রোক্ষণেই যদি হায়েনার চোখ দুটি দেখতাম, তো সমস্ত হাসিই যেন মিলিয়ে যেত। অনেকবার ইচ্ছে ছিল জিজ্ঞাস করি,'পরের মেয়ের উপর অধিকার ফলাতে পারো, নিজের মা-বোনকে সামলাতে পারো না!' কেন এ কথা বলছি? যে ঘরে আমারই উপর অধিকারের স্টীমরোলার চলত ঐ একই ঘরে তার মা-বোন যে আগন্তুক সকল পুরুষের সাথে ঘোমটা ছাড়াই কথা বলে! আমি এক সময় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, 'বিয়ে মানুষের জীবনে কয়টা হয়? থাক না, যা হবার হয়েই গেছে, এ নিয়েই মানিয়ে চলি।' কিন্তু যখন ডেকে নিয়ে নাচার জন্যে স্টেজে উঠানো হয় তখন সম্ভবত ঘোমটা না রাখাটা ঠিক বেমানান নয়!

কেউ কেউ হয়তো প্রশ্নই তুলে বসবেন, 'এমন একটা লোকের সাথে ছিলেন কি করে?' ফুটফুটে ফারিয়ার মুখের দিকে চেয়ে। এর চেয়ে বড় কোন উত্তর আমার কাছে নেই। ফারিয়ার আধো-আধো বুলি শুনে সবকিছু মেনে নিয়েছিলাম কিন্তু তারপরও সম্ভব হল না। ফারিয়া এখন কিছুটা বড় হয়েছে তাছাড়া মায়ের সন্তান, এক সময় না একসময় ঠিক মায়ের কাছেই চলে আসবে। আমিও যেন আর পারছিলাম না, লোকটাই আমাকে আস্তে আস্তে মুখরা করে দিচ্ছিল। এক-একবার মনে হয়েছিল অণ্ডকোষ চেপে ধরে ওকে জন্মের মত একটা শিক্ষা দেয়ার, কিন্তু পারিনি! তাও ফারিয়ার জন্য। শেষবার অত্যাচার চরমে পেঁৗছুলে নিজের মাথাকে আর ঠিক রাখতে পারিনি শেষে কিছু না বলেই লুকিয়ে একেবারে বাপের বাড়ি চলে এলাম, তবে বাবার শরীর ছিল অসুস্থ, আমারও ইচ্ছা ছিল না এসব ঘরের ব্যাপার আলোচনা করার। মোটকথা আমি এসেছিলাম কিছুটা চেঞ্জের জন্য তবে সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই কোর্ট থেকে উকিল নোটিশ এল। এরপর আর রাখ-ঢাক করা গেল না। আমিও উকিল নোটিশ দেখে ডিসিশনটাকে ফাইনাল করেই নিয়েছিলাম কারণ লোকটা নীচ জানতাম তবে এতটা নীচ তা কক্ষনো ধারনাও করিনি, সে নোটিশে আমার চরিত্র নিয়ে যেসব কথা বলেছে আর গাল-গপ্প কত্তো মিশিয়েছে তা জেনে আর সেই প্রাণীটার সাথে একসাথে বসবাস চলে না। মা-কে মোটামুটি সবই খুলে বলেছিলাম তারপরও সিদ্ধান্তটা আমাকেই নিতে বলা হয়েছিলো এছাড়া বাবাও মা'র কাছ থেকে যা কিছু মোটামুটি শুনেছে তাতেও সে ঐ একই মন্তব্য জানিয়েছিল, তবে মায়ের মাধ্যমেই, "তুই যা ভাল বুঝিস!" আমি সত্যিই আর পারছিলাম না। অবশেষে অনেক দেঁৗড়ঝাপ করে আজকেই তালাকের তারিখটা ঠিক হয়েছে।

আয়নার সামনে নিজেই নিজের কথা ভাবতে ভাবতে কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলাম তা খেয়াল নেই হঠাৎ দরজায় বাবা'র লাঠির ঠুক-ঠুক শব্দে নিজের ঘোল ভাঙল। 'কিরে, তৈয়ারী হল?' আমি হ্যাঁ সূচক ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে জানিয়ে দিলাম। বাবা ঘর থেকে বের-ই হয়ে যাচ্ছিল হঠাৎ কি ভেবে যেন থেমে গেল, আমি বললাম, 'কিছু বলবে?' 'বলছিলাম কি, আর একবার ভেবে দেখলে হতো না?'
এই প্রথম সম্ভবত জীবনের একটি কঠিন সিদ্ধান্ত বাবার চোখে চোখ রেখে জানালাম,
"নাহ!"
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সিদ্দিক অনেক অনেক ভাল একটা লেখা। মনে হরো প্রতিষ্ঠিত কোন লেখকের লেখা পড়লাম।
শাহেদুজ্জামান লিংকন আমার কাছে বেশ ভালো মানের মনে হলো
শাহেদুজ্জামান লিংকন বিষয়ভিত্তিক না হলেও ভালো লেখার চেষ্টা করেছেন।
বিন আরফান. আমিও একরাম ভাইয়ের সাথে একমত.
মোঃ ইকরামুজ্জামান (বাতেন) মাশাল্লাহ্ । সাইফুল ভাই তোমার কথা বলেছিল, তাই প্রথমেই পড়লাম। তোমার লেখা অনেক চমৎকার। তুমি প্রমান করেছ মাথায় টুপি আর বড় দাড়ি থাকলেই আমরা সাধারণ মানুষের চিন্তা চেতনা থেকে বিচ্ছিন্ন না। তোমার জন্য অনেক দোয়া রইল। পারলে আমার সাথে যোগাযোগ করো। ০১৭১৯৩৯৯১৯৯
ঝরা এত কম বয়সে এত পাকা লেখা ?
ফাতেমা প্রমি আমি অনেক বেশি অবাক হয়েছি-অনেক...অসাধারণ লেখা(বিষয়বস্তু এ প্রতিযোগিতার সাথে মেলেনি যদিও)..ভালো লিখেছেন আসলেই-অনেক মেয়েই কত অসহায় জীবনে যে বাধ্য হয় এখানে সেই খন্ডচিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন,ভালো লাগলো...
পরিনীতা খুব ভালো লিখেছেন.আরো সামনে লিখবেন.
সৌরভ শুভ (কৌশিক ) তোমার লেখা পড়ে, মনটা গেল ভরে /
খোরশেদুল আলম পড়ে ভাল লাগলো, বর্তমান বিষয়ের লেখা জমাদিয়েছেন নিশ্চয়।

১০ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪