১ “অই দেখ কানা বুড়ির পোলা আইতাছে।হেহে হেহ”ছেলেগুলি আবার চেচিয়ে উঠল।ইরফানের মধ্যে যেন আগুন ধরে গেল।আবার শুরু হয়েছে।ছেলেগুলি আবার চেঁচাচ্ছে।ইরফান রাগে দুক্ষে পালিয়ে স্কুলের পিছনে জংলা মতন জায়গায় পালিয়ে এল।ক্লাস সেভেন বি এর জনালাটা দিয়ে তাকে দেখা যায়। একজন দেখছেও।মেয়েটার চুল লালচে ধরনের।ইরফান তার ক্লাসের দিকে তাকাতেই মেয়েটিকে দেখতে পেল।নিজের ক্লাসে অচেনা একটি মেয়ে।থাকুক ইরফানের যায় আসে না।সে চলে আসেস্কুল ছেড়ে।কিন্তু সে মেয়েটিকে ভুলতে পারছেনা।রাস্তায়ও তাকে আরো খোঁটা শুনতে হল। “কানা বুড়ির পোলা,কানা বুড়ির পোলা।”ইরফানের বেশি কষ্ট হচ্ছে না। হচ্ছে লজ্জা।তার জননীর প্রতি জমছে ভয়ঙ্কর বিদ্বেষ। রাতে খাবার সময় তার মা জাহানারা বানু যখন ইরফানের পাতে ঢ্যাঁড়শ নামের ইরফানের সবচেয়ে খারাপ লাগা জিনিসটি তুলে দিচ্ছিল তখন ইরফান আর সহ্য করতে পারল না।অনেক কষ্ট করে রাগ চেপে বলল,’খাব না’। “আব্বা,এমন করিস না।এইডা খায়া ল।”ইরফানের সহ্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেল। “ওই কানা বুড়ি,একবারে কথা কানে যায় না?কানা বুড়ির বাচ্চা তুই মরবি কবে?”ইরফান বল্ল।জাহানারা কিছু না বলে তার সেই একটি অন্ধ চোখ চেপে চলে গেল। ২ (১৬ বছর পর) “স্যার আর কিছু লাগবে?”সালাম পিয়ন বলল। “না”ইরফান সাহেবের জবাব।ঢাকার সবচেয়ে বড় সিমেন্টের কোম্পানির মালিক তিনি।বাসায় তার দুই পুত্রসাথে তার স্ত্রী সালেহা।তাদের গ্রামেই থাকত মেয়েটি।লালচে চুল। অফিসের কাজ সেরে দেড়টা সময় শুধু নিজের প্রাইভেট টাটা ন্যানো গাড়ীতে ড্রাইভ করে বাসায় গেলেন।দিনকাল এমনই চলছে। মাসের ১৭ তারিখ বিকেল বেলা ইরফানের চার বছরের যমজ ছেলে গুলি বারিধারার তার বাসার বাইরের ব্যালকনিতে খেলছিলো।ইরফান ভেতর থেকে শুনতে পেল তারা দুজনেই হাসছে।হাসুক।হাসলেই ভাল,ইরফান ভাবছে।কিছুক্ষণ পর বাসার কাজের লোক তাকে বলল কে যেন এসছে। ইরফান ঠিক হয়ে বাইরে এসে দেখে এক বৃদ্ধা।এক চোখ অন্ধ।তাকে দেখেই ইরফানের ছেলেরা হাসছিল।এখনো হাসছে। “ভাল আছো?”ইরফান বুড়িকে চিনতে পারে।তার জন্মদাত্রী। কিন্তু ইরফান বলে ওঠে, “কে আপনি?আমার ছেলেদের ভয় দেখাচ্ছেন কেন?” বুড়ি বলে “মাফ কইরেন।আমি মনে হয় ভুল বাসায় আইছি।গেলাম।” বুড়ির ভাল চোখ থেকে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরে।চলে যায়। ইরফানের ছেলেগুলি তখনো হাসছে। ৩ “স্যার একজন আসছে।”সালাম পিয়ন বল্ল।“আসতে দাও।”ইরফানের জবাব। একজন ছেলে এসে বস্ল।“আমাদের এলাকার একজন বৃদ্ধা মারা গেছেন।তার রুমের দেওয়ালে আপনার অফিসের ঠিকানা লেখা।আর লেখা “ইরফান রে ডাক দিস”। “আপনি আসেন।”ইরফানের জবাব। ৪ প্রিয় পুত্র, আশা করি ভাল আছো।যখন তুমি এটা পরবে তখন আমি অনেক দূরে। তমার পুত্রদের ভয় দখানর জন্য তুমি আমাকে মাফ করে দাও।আমি তাদের ভয় দেখাতে চাইনি।আমি আমার নাতিদের মুখ দেখতে চেয়েছিলাম। আমার ভাল চক্ষু আমি দান করে গেলাম।কেউ যেন এর মাধ্যমে নতুন পৃথিবী দেখতে পারে। তোমার উপর আমার একটুও রাগ নেই।আছে ভালবাসা।আজ আমি তমাকে সত্যিটা বলে যাচ্ছি। তোমার সাড়ে চার বছর বয়সে তোমার বাবা আমাদের নিয়ে এয়ারপোর্ট যাচ্ছিল।তখন এক বেপরোয়া ট্রাক আমদের গাড়িতে ধাক্কা দেয়।তখন তোমার বাবা ইন্তেকাল করেন।আমি অজ্ঞান হয়ে যাই।হাসপাতালে জ্ঞান ফিরার পর যান্তে পারি তুমি আর বাঁচবে না।ছুটে যাই তোমার আই সি ইউর কেবিনে।আট ঘন্টা দরজা ধরে ছিলাম।তখন তমার অপারেশন হচ্ছিল।পরে জানতে পারি তুমি বাঁচতে পারো।তখন থেকেই নফল নামায পরা শুরু করে দেই।কয়েকদিন পর তুমি সিস্থ হও। তখন জানতে পারি অ্যাক্সিডেন্টে তোমার এক চোখ থেতলে গেছে।মা হয়ে আমার পক্ষে তা মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না।তাই আরো পাঁচ ঘণ্টা অপারেশন করে আমার ডান চোখ তোমাকে দিলাম।তারপর তুমি পেলে নতুন এক চোখ।“নতুন” এক আলো। আশা করছি এখন তমাকে আর খোঁটা শুনতে হবে না। ইতি, তোমার হতভাগা “মা” ৫ চিঠিটা পড়ল ইরফান।তার মায়ের ঘরে সে। তার লাইটারটা বের করে চিঠিটা পুড়াল।কাগজের ছাই দিয়ে ঘরটা ভরে গেল। ৬ এই মাত্র সে তার স্ত্রী অ পুত্রদের নামে তার সব কিছু উইল করল।কোর্ট থেকে বের হল। ফুটপাতের সামনে ওভার ব্রিজ।কিন্তু ইরফা ন বড় রাস্তা দিয়ে রাস্তাপার হবে।রাস্তার থিক মধ্য খানে দাঁড়িয়ে আছে সে।এক্টি বিশাল ট্রাক আসছে।দৈত্যের মত বিশাল ট্রাকটি ছুটে আসছে ইরফানের দিকে।ক্রমাগত হর্ণ বাজাচ্ছে।আসুক।আসতে দেই ট্রাকটাকে।তাহলেই খুলবে চোখের সামনে এক “নূতন” জগত। মিলন হবে তার মার সাথে। ৭ পরদিন খবরের কাগজের প্রথম পাতার হেডলাইন-“বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসাপতি নিহত।”
[একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে।]
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রোদের ছায়া
'' একটি সত্যি ঘটনা অবলম্বনে'' লেখা থাকলেও মানতে পারছি না ... তারচেয়েও বড় কথা ঠিক এই ঘটনা নিয়ে এর আগেও একটা গল্প পড়েছি তবে শেষ টুকু অন্য রকম ছিল হয়ত ......অনেক শুভকামনা থাকলো /
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।