খোলা জানালার ফাঁক দিয়ে বৃষ্টির ঝাপটা এসে রাতুলের উদোম শরীরে পড়ে । ঘুম ভেঙ্গে যায় । বিরক্তির সাথে চোখ কচলাতে কচলাতে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকায় । ঘড়ির কাটা আজকাল বড্ড বেসামাল । প্রায় দুপুর । অবশ্য আজ তেমন তাড়াও নেই । ছুটির দিন । দিনের কর্মসূচীতে বিকেলে লাইব্রেরীতে রেফারেন্স বই ঘাটাঘাটি, সন্ধ্যায় শিল্পকলায় আড্ডা আর পাড়ার মোড়ে এসে হালকা স্ন্যাক্স আর গাভীর দুধের চা ফুকোনো । আবার ঘরে ফিরে সেই সনাতনী নিয়মে লিখতে বসা । কিন্তু রাতুল ইদানিং লিখতে পারে না । দুই ঠোটে ঝড় তোলে কলমের উপর । সাদা কাগজের উপর কেবলই আকিঁবুকি । এলোমেলো ভাবনা গুলো রাতুলের কলমের ডগায় এসে আর নির্মান করেনা কোনও শব্দমালার অবিনাশী প্রাসাদ । শব্দের বিনির্মানে সে পড়ে থাকে নিথর, নিস্তব্দ । লেখা হয়না কিছুই । রাতুল অনুভব করে তার ডান চোখের পাতাটা কেঁপে উঠে প্রায়ই । কেঁপে উঠে দুই বাহুর মাংশপিন্ড । সে ভয়ে কুকড়ে যায় । টের পায় একটা অশনিসংকেত । এই বুঝি বড় ধরনের কোন রোগ এসে তাকে গিলে ফেলে । বাসা থেকে বের হবার সময় রাতুল রোজ রোজ গেটে এসে ধাক্কা খায় । সেখানেই হাটু গেড়ে বসে পড়ে । হাটতে গেলেও হোচট খায় । রাতুল ঠায় দাড়িয়ে থাকে । পা চলেনা । পিচঢালা পথেও বিশাল গর্ত দেখে । সে এটাও জানে যে এ সবই এক ধরনের ফোবিয়া । কিন্তু অবিশ্বাস করতেও পারেনা কিছুতেই । বুকের মধ্যে ধুকপুক করে । ক্রমাগত বাড়তে থাকে সেই ধুকপুকুনি । অফিসে গিয়েও কখনো কখনো একান্তে বসে গোপনে কাঁদে । কেউ দেখে ফেললে চোখে পোকা পড়ার নাম করে চোখের জল আড়াল করে । একটা প্রচ্ছন্ন অভিমান লেপ্টে থাকে তার দেহ মনে । পকেটের মোবাইল ফোনটিতে একটানা রিং বেজে উঠে । ছোট বোন রিতুর ফোন--'ভাইয়া, মা তোর জন্য খুব কষ্ট পাচ্ছে রে ! মাকে এমন কষ্ট দিলে তোর কোন দিন ভালো হবেনা ।' কথাগুলো বিষের মতো রাতুলের বুকে বাজে । ঘরে ফিরে রাতুল ডায়েরীর পাতা উল্টাতে উল্টাতে ২৯ জানুয়ারী-২০১১ তারিখটিতে গোল দাগ দেয় । তার পর লিখতে থাকে-- একটা সামান্য অপরাধকে কেন্দ্র করেই মা সেদিন বলেছিলেন -"বেরিয়ে যা, মোল্লা বাড়ীর ত্রিসীমানাতেও পা রাখবিনা কখনও ।" লাগেজ গোছানোর সময় দেইনি নিজেকে । ঝড়ের বেগে বেড়িয়ে এসেছি ৬২ দিন আগের কোন এক ভর দুপুরে । পেছন ফিরে তাকাইনি । তাকালে হয়ত দেখতে পেতাম, মা তাঁর আচঁলে চোখের পানি মুছে বলছেন -" যাস্নে বাবা, আমি তোর পছন্দের খাবার সরষে ইলিশ রেধেছি খাবি আয় ।" মাকে ফোন করিনা ঠিক সেদিন থেকেই । ইচ্ছে করলেই সেল ফোনের বোতাম চেপে সাড়ে ৩'শ কিলোমিটারের দুরত্ব ভেঙ্গে মূহুর্তেই মাকে কাছে পেতে পারি । কিন্তু ফোন করিনা । মা ফোন করলে রিসিভ করি । কথা বলিনা । কেবল কান পেতে শুনি তাঁর অমৃত বাণী--" তুই বাড়ী ফিরে আয় বাবা, আমি তোকে ক্ষমা করেছি । মন থেকে চাইনি তুই এ বাড়ী ছেড়ে চলে যাস।" ইথারে ভেসে আসা মায়ের কথা গুলো মন দিয়ে শুনি । তারপর ফোন কেটে দেই । নিজেকে ভিষন অপরাধী মনে হয় । ইচ্ছে করে নিজের গালে নিজেই কষে একটা চড় মারি । অনুশোচনায় ভূগি । হতাশা আর ক্লান্তির ঘামে ভিজে যাই । ইচ্ছে করে মূহুর্তেই মায়ের কাছে ছুটে গিয়ে তাঁর পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমা ভিক্ষা চাই -- মা আমায় ক্ষমা করো । কিন্তু পারিনা । "বেরিয়ে যা, মোল্লা বাড়ীর ত্রিসীমানাতেও পা রাখবিনা কখনও ।" এই আটটি শব্দের একটি বাক্য আমার বিবেককে হত্যা করে । একটা প্রচ্ছন্ন অভিমান এসে আমার পথ আগলে ধরে । আমার অন্যায়ের চিতার আগুনে ঘি ঢেলে দয় । আমি পড়ে থাকি ইট পাথরে গড়া এই যান্ত্রিক নগরীতে । নিয়ন আলোর ঝলসানিতে এখানে নিজেকে বড় অচেনা মনে হয় । মাল্টি কালার ছাইপাশ গিলেও তেষ্টা মেটেনা । আমার ভূলের ভান্ডারে জমা হয় আরও একটি ভূল ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ইশরাত জাহান মুন্নী
আমি পড়ে থাকি ইট পাথরে গড়া এই যান্ত্রিক নগরীতে । নিয়ন আলোর ঝলসানিতে এখানে নিজেকে বড় অচেনা মনে হয় । মাল্টি কালার ছাইপাশ গিলেও তেষ্টা মেটেনা । আমার ভূলের ভান্ডারে জমা হয় আরও একটি ভূল । - এটা কবিতাও হতে পারত. অনেক ভালো হযেছে. তাতে লাভ কী?...... এটাতেত আজ দেখলাম `পুরস্কারের কোনো ধারাবাহিকতা নাই. আপনার লেখার শব্দ বিন্যাস অনেক ভালো, তাই পুরস্কারের আশা ছাড়া পারলে লিখুন ........!!!!!!!!!!!!!!
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।