বুঁইচা গ্রামের বোঁচাদা

গ্রাম-বাংলা (নভেম্বর ২০১১)

ধীমান বসাক
  • ২৩
  • 0
  • ১২০
বুঁইচা গ্রাম চেনতো ? ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নদীয়া জেলার শান্তিপুর থানার অন্তর্গত এই গ্রাম । আগে অনেক বঁইচি ফলের গাছ ছিল বলে এই নাম । এখন আর বঁইচি গাছ দেখা যায়না । তবে নামটি রয়ে গেছে । কলকাতা থেকে শান্তিপুর লোকাল ট্রেনে চেপে শান্তিপুর-এর আগের স্টেশন ফুলিয়া-তে নেমে বুঁইচা গ্রামে যেতে হয় । আবার কলকাতা থেকে ৩৪ নং জাতীয় সড়ক ধরে( যেটি কলকাতা থেকে অসম গেছে ) বাসে চেপেও ৮৮ কিলোমিটারদূরে ফুলিয়া তথা বুঁইচা গ্রামে যাওয়া যায় ।রেল স্টেশনটির নামও অতীতে বুঁইচা-ই ছিল কিন্তু পাশের ফুলিয়া গ্রামে জন্মেছিলেন কবি কৃত্তিবাস । ‘আদি কবি বাঙলার , ভাষা রামায়ন-কার’ । ব্যস সবাই মিলে স্টেশনের নাম ফুলিয়া করে দিল । ফুলে ফুলে ভরা ছিল কৃত্তিবাসের গ্রামটি । তাই নাম হয়েছিল ফুলিয়া ।

তবে তখন আমাদের বোঁচাদার জন্ম হয়নি । হলে এমন কাজ কখনো হতে পারতনা ।নাকটি বোঁচা বলেই এই নাম । বোঁচাদা সর্ববিদ্যায় পারদর্শী । ওর মত কবি বিশ্বে বিরল । একটি উদাহরন,

আমার নাম বোঁচা
দিইনা কাউকে খোঁচা
নইকো আমি ওঁচা
খাই আমি মোচা ।

ওর গল্পের শিরোনাম , ‘বোঁচার ছিপে ইলিশ,’ ‘ গোরু ছাড়া গোরুর গাড়ী ’ ইত্যাদি ।

এ হেন বোঁচাদা একবার রাণাঘাট শহরে মামার বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিল । সেখানে একজন জিজ্ঞাসা করেছে দাদা আপনার বাসা কোথায় ? বোঁচাদা গ্রামের লোক । বাড়িতে থাকে । জানে পাখিরা বাসায় থাকে । অমনি তার উর্বর মাথায় খেলে গেল লোকটা তাকে পাখি বলে মজা করছে , আর তার চেহারাটা যেহেতু বড়সড় তাই তাকে বড় পাখি অর্থাৎ শকুন ভেবেছে । আর শকুন খায় মড়া । তার মানে হল বোঁচা মড়া খায় ! কি এত বড় আস্পর্ধা ! মাথা গরম করে লোকটিকে বোঁচাদা কয়েক ঘা লাগিয়ে বলল , তুই মড়া খাস , তোর চোদ্দ গুষ্টি মড়া খায় । এই নিয়ে জল অনেকদূর গড়িয়েছিল । ফল হয়েছিল এই বোঁচাদা আর কোনদিন মামার বাড়ি যায়নি ।
বোঁচাদার প্রিয় বন্ধু ছিলাম আমি আর কাশেম । একবার জ্যৈষ্ঠ মাসে আমরা তিনজন বুঁইচার পাশের গ্রাম কদমপুর (এখানেইকাশেমের বাড়ি ) পেরিয়ে বাথনা গ্রামে গেলাম । বাথনা গ্রামের আশি শতাংশই আম বাগান । হিমসাগর , ল্যাংড়া , গোলাপখাস প্রভৃতিপৃথিবীর সেরা আম এখানেই হয় । যেতে যেতে বোঁচাদা বলল , জানিস ধিমু (আমার নামের অপভ্রংশ করে ধিমু বলে ডাকতো ), অত সুন্দর আমটির নাম ল্যাংড়া কেন ? আমি আমার অজ্ঞতা প্রকাশ করলাম । বোঁচাদা বলল , ‘অনেকদিন আগে এক ল্যাংড়া ফকির ঝাঁকরা এক বড় আমগাছের নীচে আস্তানা গেড়েছিল । ওই গাছের আম ছিল খুব সুমিষ্ট । অচিরেই আমের খ্যাতি দেশ বিদেশে ছড়িয়ে পড়ল । রাজা বাদশারা অস্ত্রসস্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল গাছের দখল নিতে । ল্যাংড়া ফকির সবাইকে ডেকে শান্ত করে প্রত্যেককে একটি করে আম গাছের চারা দিল । এইভাবে ল্যাংড়া ফকিরের নাম অনুসারে ল্যাংড়া আম জগৎ বিখ্যাত হয়ে গেল’।


আমার আবার ল্যাংড়ার চেয়ে হিমসাগর বেশি পছন্দ । হিমসাগরের জন্ম কথা জানার জন্য জিজ্ঞাসা করতে যেতেই এক কাণ্ড ঘটলো ।বোঁচাদা হুরমুড়িয়ে এক গর্তে পড়ে গেল । আসলে বাথনা গ্রামের উপড় দিয়ে জাতীয় সড়কের বাইপাস করা হচ্ছে । শান্তিপুর শহরকে বাইপাস করে বাথনা গ্রামের বুক চিরে এই রাস্তা হচ্ছে । শ’য়ে শ‘য়ে হিমসাগর ল্যাংড়া আমগাছ কাটা পড়ছে । রাস্তার মাটির জন্য বড় বড় গর্ত হচ্ছে , তারই একটা গর্তে বোঁচাদা পড়েছে । দুজনে মিলে ধরাধরি করে বোঁচাদাকে তুললাম ।হাতে পায়ে বেশ লেগেছে । বোঁচাদা গম্ভীর হয়ে গেল । আর একটা কথাও বললোনা । উন্নয়নের এই হ’ল কুফল । গরীব মানুষের উচ্ছেদ । রাস্তার জন্য সরকার জমি বাড়ী হুকুম দখল করছে , তারপর রাস্তার পাশের জমি দালালরা জোর করে কমদামে কিনে প্লট করে বহুগুন বেশি দামে বিক্রি করছে । বোঁচাদা-দের এক একরের একটি আমবাগান আছে বাথনা গ্রামে । বোঁচাদাই সেটি দেখাশোনা করে । প্রমোটারদের নজর পড়েছে সেটির উপড়ে । সেই বাগান দেখতেই আমাদের বাথনা গ্রামে যাওয়া । সেদিন বাগান না দেখেই আমরা ফিরে এলাম ।


এর সাতদিন পরে ওদের আমবাগানের ভিতরেই বোঁচাদা খুন হয়ে যায় । সেই বাগানের গাছগুলো কেটে প্লট করে সুন্দর সুন্দর ফ্ল্যাট বাড়ি তৈরি হচ্ছে । বোঁচাদা খুন হওয়ার পরেই ওর বাবা বাগানটি প্রোমোটারদের কাছে বিক্রি করে দেন । বোঁচাদাকে কেও মনে রাখেনি । আমিও বোঁচাদার গল্প লিখলাম বটে , কিন্তু এটা অর্ধসত্য কাহিনী । সত্যি লেখার সাহস আমার নেই । বোঁচাদার খুনিদের আমি চিনি , কিন্তু ভয়ে পুলিশের কাছে যেতে পারিনি । বোঁচাদা, পরজন্ম থাকলে আমায় ক্ষমা করে দিও ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিজানুর রহমান রানা বোঁচাদাকে কেও মনে রাখেনি । আমিও বোঁচাদার গল্প লিখলাম বটে , কিন্তু এটা অর্ধসত্য কাহিনী । সত্যি লেখার সাহস আমার নেই । বোঁচাদার খুনিদের আমি চিনি , কিন্তু ভয়ে পুলিশের কাছে যেতে পারিনি । বোঁচাদা, পরজন্ম থাকলে আমায় ক্ষমা করে দিও ।---------------বেশ সুন্দর কাহিনী। দারুন। যেনো সত্য ঘটনাই তুলে ধরলেন।
মোঃ আক্তারুজ্জামান আপনার লেখার সাবলীলতা প্রশংসার দাবী রাখে| চমত্কার লিখেছেন.......শুভেচ্ছা রইলো|
শাহ্‌নাজ আক্তার ভালো লাগলো ,, তবে বোচাদার জন্য একটু খারাপ লাগছে ....
রোদের ছায়া অনেক তথ্যে ভরপুর( কতটুকু সত্যি বুঝতে পারছি না) গল্পটি ভালো লাগলো/ বোঁচাদার জন্য খারাপ লাগছে.
প্রজাপতি মন :( শুরুতে পড়ে একটুও বুঝতে পারিনি শেষের দিকটা এত হৃদয়বিদারক হবে । বোঁচাদার খুনিদের পুলিশের কাছে বেনামে চিঠি লিখেও জানাতে পারতেন। যাই হোক নিজের প্রাণের মায়া সকলেরই আছে। তাই বোঁচাদার জন্য দুঃখ করা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই :(
বিষণ্ন সুমন একটা মর্মস্পর্শী গল্প পড়লাম । ঘটনাটি সত্য জেনে খুব কষ্ট লাগলো । গল্প হলে বলতাম, এরকম না লিখলেও পরতে। অল দা বেস্ট ফর উ অলসো বোঁচাদা ।
sakil বেশ সাবলীল ভাষায় লেখা ভালো লেগেছে
অম্লান অভি জীবন আর নদীর বহমানতা নতুনের কাছে পরাজয়......বুঁইচা গ্রামের মত বোঁচাদারাও এভাবেই মৃত্যু হয়।
মামুন ম. আজিজ আসরেই কি সত্য ঘটনা?

০৬ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৫৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪