প্রিয়াঙ্কার গর্বের কাঠবিড়ালি

গর্ব (অক্টোবর ২০১১)

ধীমান বসাক
  • ২২
  • 0
  • ৪৮
কাঠবিড়ালিটিকে সকাল থেকে পাওয়া যাচ্ছেনা । সকালে দুধ খেয়ে সেই যে হিমসাগর আমগাছটায় উঠলো, তারপর থেকে ওকে আর কেউ দেখেনি । প্রিয়াঙ্কার খুব আদরের কাঠবিড়ালিটি । প্রিয়াঙ্কার বাবা বেসিক স্কুলের শিক্ষক । বাথনা গ্রামের বাথনা বেসিক স্কুলের এক ছাত্র প্রিয়াঙ্কার বাবাকে কাঠবিড়ালির বাচ্চাটিকে দিয়েছিল । খালি চকের বাক্সে ভরে ওর বাবা কাঠবিড়ালির বাচ্চাটিকে বাড়ীতে নিয়ে আসে । ছোট্ট ইঁদুর ছানার মত দেখতে । সবাই ভেবেছিল বাঁচবেনা । কিন্তু প্রিয়াঙ্কার মা রাজেশ্বরী ড্রপারে করে ফোঁটা ফোঁটা দুধ খাইয়ে বাচ্চাটিকে বড় করে তোলে । সারাদিন কাঠবিড়ালির বাচ্চাটি খেলে বেড়ায় । প্রিয়াঙ্কার হাত বেয়ে মাথায় ওঠে । প্রিয়াঙ্কার মায়ের খোঁপার ভিতরে লুকিয়ে পড়ে, বাবার পকেটে ঢুকে পড়ে । স্কুলে যাওয়ার সময়টুকু বাদে প্রিয়াঙ্কার সময় কাঠবিড়ালির সাথেই কাটে ।কিছুদিন হ’ল প্রিয়াঙ্কার বাবা বাড়ীর কাছের বুঁইচা কে বি় বেসিক স্কুলে বদলি হয়ে এসেছে । প্রিয়াঙ্কা স্থানীয় ফুলিয়া বালিকা বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেনীতে পড়ে । ওর বাবা ওকে ওর বিদ্যালয়ে পৌঁছে দিয়ে নিজের বিদ্যালয়ে যায় । কাঠবিড়ালির বাচ্চাটি তখান প্রিয়াঙ্কার মায়ের কাছেই থাকে ।এখন বাচ্চাটি বড় হয়েছে । সকালে দুধ খেয়ে হিমসাগর আমগাছে ওঠে । ওখান থেকে ফজলি আমগাছ হয়ে নারকেল গাছে চড়ে । সেখানে কুট কুট করে কি যেন খায় । প্রিয়াঙ্কার মা কাঠবিড়ালিটির নাম দিয়েছে কুটুস । সারাদিন কুট কুট করে বলেই এই নাম। অন্য কাঠবিড়ালীর সাথে যাতে মিশে না যায় তাই প্রিয়াঙ্কার বাবা কাঠবিড়ালিটিকে লাল রঙ করে দিয়েছে। অবশ্য রঙিন হতে ও খুব নারাজ ছিল । রঙ করার সময় বাবার হাতে কুট করে কামড়ে দিয়েছিল । তবে রঙ করার ফলে ওকে অন্য কাঠবিড়ালির থেকে সহজেই আলাদা করে চেনা যায় । অবশ্য কুটুস কুটুস করে ডাকলেই, যেখানেই থাক ও লাফিয়ে এসে হাজির হয় । পাড়ার বাচ্চারাও ওকে দেখলেই কুটুস কুটুস করে চেঁচায় । কুটুস কান খাঁড়া করে শোনে, কিন্তু ওদের কাছে যায়না । আসলে কুট্টুস খুব বুদ্ধিমান । প্রিয়াঙ্কা অবশ্য ঠিক জানে কুট্টুস বুদ্ধিমান হবেই । কারণ প্রিয়াঙ্কার বাবার নাম ধীমান । ধীমান মানে বুদ্ধিমান । সুতরাং বাবা যখন কুটুস কে এনেছে তখন ও বুদ্ধিমান না হয়ে যায় না । বাবাকে প্রিয়াঙ্কা খুব ভালবাসে । ২৮শে জুলাই প্রিয়াঙ্কার জন্মদিন । কিন্তু ঐদিন নকশালদের বন্ধ থাকে ।তাই লোকেরা ওকে ভাল উপহার দিতে পারেনা । তাতে এখন অবশ্য প্রিয়াঙ্কার খুব একটা দুঃখ নেই । কারণ জন্মদিনের দিন কুটুসের কাণ্ড দেখে সবাই হেঁসেই কুটিপাটি হয় । এই জন্মদিনের কেক-এর উপড়ে উঠছে , আবার দৌড়ে প্রিয়াঙ্কার মাথায় উঠছে । বাচ্চারা বেজায় খুশি । প্রিয়াঙ্কার বাবা ভাল ছবি তুলতে পারে । জন্মদিনের দিন অনেক ছবি তুলেছে । কুটুসের ছবিগুলো সবচেয়ে ভাল উঠেছে । কুটুস দু’পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারে । ঐ ছবিটা সবচেয়ে ভাল উঠেছে । সেই কুটুসকে কিনা পাওয়া যাচ্ছে না ! প্রিয়াঙ্কা আর স্কুলে গেলো না । বাবার সাথে কুটুসকে খুঁজতে বের হল । ওদের বুঁইচা বসাক পাড়ায় সবাই কুটুসকে চেনে । কেউ কুটুসকে সেদিন দেখেনি । সব গাছের কাছে গিয়ে কুটুস কুটুস করে চেঁচালো। অনেক কাঠবিড়ালি লেজ তুলে এ ডাল থেকে সে ডালে ছুটে গেল , কিন্তু কুটুসকে দেখা গেল না । ওরা ঘোষ পাড়ায় গেল । ঘোষ পাড়ার লোকেরা প্রিয়াঙ্কার বাবাকে খুব ভাল করে চেনে । কারণ বুঁইচা ঘোষ পাড়াতেই প্রিয়াঙ্কার বাবার স্কুল । বাবার স্কুলকে সবাই তেঁতুল তলা স্কুল বলে । কারণ একটা বিরাট তেঁতুল গাছের তলায় ঐ স্কুল প্রথমে চালু হয়েছিল । সেটা অবশ্য ১৯৪৮ সালে । তখন থেকেই লোকের মুখে মুখে ওটা তেঁতুল তলা স্কুল । স্কুলটি বড় । বর্তমানে দোতলা হয়েছে । প্রিয়াঙ্কা বাবার সাথে স্কুলে গেল । তখন স্কুলের দিদিমনিরা এসে গেছেন । ছাত্রছাত্রীরাও এসেছে । চম্পা দিদিমনি জিজ্ঞাসা করল কি হয়েছে ? প্রিয়াঙ্কার বাবা চম্পা দিদিমনিকে সব খুলে বলল । চম্পা দিদিমনি খুব ভাল । পুরো নাম চম্পা মোদক । খুব বুদ্ধিমতি । রানাঘাটের কাছে নন্দীঘাট থেকে আসে । দিদিমনি সব ছাত্রছাত্রীদের জিজ্ঞেস করলো কেউ লাল কাঠবিড়ালী দেখেছে কিনা । একজন বলল রায় পাড়ার বিশ্ব নামে একটি ছেলে সকালে একটি লাল কাঠবিড়ালি ধরেছে । সাথে সাথে যাওয়া হ’ল বিশ্বদের বাড়ী । বিশ্ব ছেলেটি খুব দুষ্ট । ওদের বাড়ী গিয়ে দেখা গেল বিশ্ব দড়ি দিয়ে কাঠবিড়ালিটিকে বেঁধে রেখেছে । দড়ির বাঁধন খুলে কাঠবিড়ালিটিকে ছাড়ানো হ’ল । কুটুস লাফিয়ে উঠে প্রিয়াঙ্কার মাথায় চড়ে বসল । বিশ্বকে ধমক দিল চম্পা দিদিমনি , বলল আর যেন কখনও এমন কাজ না করে । কাঠবিড়ালিটিকে নিয়ে বাড়ী ফিরল প্রিয়াঙ্কা । চম্পা দিদিমনির প্রতি ওর শ্রদ্ধা ভক্তি বেড়ে গেল ।কাঠবিড়ালিটিকে নিয়ে ওর গর্বও অনেক বেড়ে গেল । কাঠবিড়ালিটির শোয়া-র জন্য জুতোর বাক্সে কাপড় দিয়ে সুন্দর বিছানা করা হয়েছিল । সেই বাক্সটিকে এখন নিজের বালিশের কাছে নিয়ে ঘুমায় প্রিয়াঙ্কা । এভাবেই বড় হয়ে উঠছে ওরা । ভালোবাসা শুধু মানুষে মানুষেই হয় না , পশুর সাথেও মানুষের ভালোবাসা হতে পারে , প্রিয়াঙ্কার গর্বের কাঠবিড়ালিই তার জ্বলন্ত উদাহরণ ।।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
নিলাঞ্জনা নীল অন্য স্বাদের গল্পটি খুব ভালো লাগলো ধীমান দা শুভকামনা
আশা পড়তে গিয়ে বারবার লাইনচ্যুত। চোখের পাওয়ারও মনে হয় দিন দিন কমে আসছে। তবে আপনার গল্পটি অত্যন্ত ভালো লাগার মতো।
সূর্য ধীমান, তুমি পশ্চিম বাংলার লেখক, ১৯৯৫সালে আমি CPI এর কোলকাতা এবং দিল্লীর অফিসে দুমাস ছিলাম। অনেক ঘুরেছিও। একটা মায়া তাই থাকা স্বাভাবিক। নকশাল তোমাদের কাছে যতটা পরিচিত বাংলাদেশে ততটা নিশ্চয়ই নয়। তাই গল্পের এই অংশটুকু বুঝতে অনেকেরই সমস্যা হবে। গল্পটা ভাল লেগেছে। প্রিয়াঙ্কা কি তোমার মেয়ের নাম? হোক বা না হোক প্রিয়াঙ্কাকে আমার আদর পৌছে দিবে। অনেক শুভকামনা রইল তোমার জন্য।
মনির মুকুল পোষা প্রাণীর প্রতি আলাদা একটা টান থাকে। শেষের দিকে এসে মনে প্রাণে কামনা করছিলাম কাঠবিড়ালীটিকে যেন খুঁজে পাওয়া যায়। নইলে প্রিয়াঙ্কা খুব কষ্ট পাবে। আমার পূর্ণ হয়েছে। বেশ ভালো লাগলো গল্পটি পড়ে। শুভকামনা রইল।
সালেহ মাহমুদ সুন্দর গল্পের জন্য ধন্যবাদ। ভাষা অত্যন্ত গতিশীল। তবে গল্পটি প্যারায় বিভক্ত করলে আরো ভালো হতো পাঠের সুবিধার জন্য। ধন্যবাদ লেখককে।
প্রজ্ঞা মৌসুমী যাক ধীমান নামের অর্থটা জানা হলো। কাহিনীর ভিন্নতা খুব ভালো লাগল। আপনার লেখনীও বেশ। আমার এনিমেল -ফোবিয়ার কারণে স্পর্শ বন্ধুত্ব এখনো হয়ে উঠলোনা। ঈর্ষা, ভালোলাগা দুইই কাজ করে এমন ভালবাসায়। আর এখানে একটা বাচ্চা মেয়ের ভালোবাসা দেখে আরো মুগ্ধ হলাম। বলছিলেনন সত্যি কাহিনী, তবে প্রিয়াঙ্কা কি আপনার মেয়ে? মামনির জন্য আশীর্বাদ আর ভালোবাসা। হিমসাগরের জন্যও ভালবাসা আর আপনার জন্য শুভ কামনা
চৌধুরী ফাহাদ খুব সহজিয়া শিক্ষনিয় গল্প। ভাল লাগলো।
sakil sundor ekoti golpo, pranikuler proti valobasa. sundor kahinir jonno onek dhonnobad
ধীমান বসাক আমি W-7 এ অভ্র বাংলা ব্যবহার করি । MS - Word এ গল্পটি তিন পৃষ্ঠা দেখালো । প্যারা ছিল । কিন্তু upload করতেই নিরবিচ্ছিন্ন লেখা হয়ে গেল ! গল্প হলেও কাহিনী কিন্তু সত্যি ।

০৬ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৫৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪