একটি শীতের রাত ও কিছু বিক্ষিপ্ত ভাবনা।

শীত (জানুয়ারী ২০১২)

খোরশেদুল আলম
  • ৬৯
  • 0
শীতের রাত। লেপগায়ে দিয়ে শুয়ে শুয়ে হুমায়ূন আহমেদের ‘আমার আছে জল’ বইটি পড়ছিলাম। এক কাত হয়ে আর কতক্ষণ বই পড়া যায়, এদিকে চোখেও সমস্যা করে। শরীর ব্যথা করছে। একটি পৃষ্ঠা উল্টালে তিন চার মিনিটে পড়া শেষ হয়ে যায় তারপর আবার পৃষ্ঠা উল্টাতে হয় । এই পৃষ্ঠা উল্টানো একটা বড় জ্বালা। লেপের ভিতর থেকে হাত বের করতে মন চায় না। হাতটা গরম হয়ে সারতে পারে না, দুটি পৃষ্ঠাই পড়া শেষ হয়ে যায়। হাত বেরকরে পৃষ্ঠা উল্টাতে গেলেই ঠান্ডায় বরফ হয়ে যায়। বাম হাত তো প্যাকেট করেই রেখেছি, একবারও বের করিনি। কত ক্ষণ এ ভাবে পড়া যায়? উপুর হয়ে পড়া শুরু করলাম। রাত তিনটা, ঘুমের কোন সমস্যা নাই। সমস্যা শীত, তার পর চোখ ।

গল্পকবিতার প্রথম পিকনিকে গিয়ে জন্ম দিন উপলক্ষে মোটা বই পেয়ে ছিলাম। আফগানিস্তানের লেখক- খালেদ হোসেইনি। সাথে অনুষ্ঠানের আরেকটি চটি বই- হুমায়ূন আহমেদের ‘আমার আছে জল’। বইপড়ার অনিহার লিষ্টে আমাদেরদেশ মনে হয় প্রথম কাতারেই থাকবে। বিভিন্ন ঝামেলায় বই পড়ার উপর মনোনিবেশ করতে পারছিলাম না। বন্ধুদের ভালোবাসা ও শুভেচ্ছায় প্রাপ্ত বই না পড়তে পেরে, নিজেকে সংকোচিত লাগছিল। মনে হচ্ছিল বন্ধুরা আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে তিরষ্কার করছে। তাই একরকম জিদ করেই গত শুক্রবারে পাওয়া বই থেকে, আজ শুক্রবারে চটি বইটি পড়া শুরু করলাম। ঐ বইয়ের সাথে তুলনা করলে এটাকে চটি বলেই মনে হয়।

এই বছর মাত্র শীত শুরু হল। শুরুতেই হাড় কাঁপানো তীব্র ঠান্ডা, দিন ভর কুয়াশায় সূর্যের দেখা নেই। গতকাল বেশ শীত পড়ে ছিল, আজ প্রচন্ড। উপুর হয়ে বালিশে থুতনি ঠেকিয়ে পড়তে পড়তে থুতনি ব্যথা হয়ে গেছে অল্পক্ষণেই। ও দিকে শীতের ভয়ে নড়া চড়া না করাতে পা দুটিও অবশ অবশ লাগছে। যারা সিগারেট খায় না তাদেরকে শান্তশিষ্ট ভদ্র মানুষের মতো হনে হয়। পড়া ছাড়া তাদের আর কোন কাজ নেই। নন ব্রেকে পড়ে যায়। আরো মনে হয় তারা সুস্থভাবে বেশী দিন বাঁচবে। আমি সিগারেট খাই বলে যে বীরপুরুষ বীরপুরুষ লাগছে তা নয়। রাতবিরাতে একা একা চলতে যে ভয় ভয় লাগে দিনের বেলাতেও সিগারেট না থাকলে তেমন ভয় ভয় আর এতিম এতিম লাগে। তার পর এখন যা শীত। অভ্যাস হয়েগেছে, ঐটা ছাড়া পড়তে ভালো লাগে না। অবশ পাদুটি কোন ভাবে নাড়াতেই এক ঝাক শীত হুড়মুড় করে ঢুকে গেল লেপের ভিতরে।

আগে গান শুনতে শুনতে পড়ার অভ্যাস ছিল। বয়সটা বাড়ার সাথে সাথে ব্রেইনের অনেক দরজা আপনাতেই বন্ধ হয়ে গেছে। গান শোনা আর পড়ার খিচুরিটা ব্রেইন এক সাথে নিতে পারে না। তাই চুপচাপ পড়তে হয়। চটি বইটি অর্ধেক পড়তেই এই গল্পটি ও অর্ধেক লেখা হয়ে গেছে। বাইরে বেশ কুয়াশা। শীতের শিশির জমে গাছের পাতা চুইয়ে টিনের চালে পানি পড়ছে টুপটাপ। কেমন শেয়াল দৌড়ানো বৃষ্টি বৃষ্টি লাগে। গতকাল একজন বলেছিল বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে কোথায় যেন তাপমাত্রা তিন ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছিল। মনে মনে বলছি মাত্র তিন ডিগ্রি! এই তিন কমলেই তো বাংলাদেশে বরফ পড়বে। অবশ্য সেই বরফ আগে দেখার সৌভাগ্য আমার হবে না। উত্তর পূর্বাঞ্চলের কারো না কারো ভাগ্যে তা জুটবে। বাংলাদেশের সব মানুষ সেই বরফ দেখতে যখন উত্তরে যাবে, তখন বাংলাদেশ উত্তর দিকে একটু কাত হয়ে যেতে পারে। শীতের মধ্যে ঠান্ডা পানি খেতে দারুণ মজা লাগে। শরীরে কাপুনি উঠে যায়। তবু তৃপ্তি লাগে। একটু পরে পরে পানি খাই। ঠান্ডায় মুত্র থলি চেপে ছোট হয়ে আসে, তাই বেশী তরল ধারণ করতে পারে না। আমাকে এখন বাহিরে যেতেই হবে। এতক্ষণ শীত লেপের মধ্যে ঢুকেছে এখন আমি নিজেই শীতের মধ্যে ঢুকছি। উহঃ কি ঠান্ডা. . . . হাল্‌কা কনকনে বাতাসে সামনের দিকে ঝুকে ধনুকের মতো একটু বাঁকা হয়ে গেলাম। বরফের কথা মনে পড়তেই উত্তর দিকে তাকালাম . . . . ধুর কি ভাবছি। ঘন কুয়াশায় বাহিরের লাইটটি ছোট হয়ে ডিম লাইটে পরিণত হয়েছে।

আবার পড়া শুরু করলাম। আমার বয়স হলেও এইটুকু শীত হজম করার ক্ষমতা শরীরে আছে। কিন্তু শিশু বৃদ্ধ অসুস্থ গরীব ও ছিন্নমূল অসহায় মানুষের কি দুর্বিষহ জীবন। যে সব দেশে বরফ পড়ে, সে সব দেশে বরফের মধ্যে মনুষ নানা প্রকার খেলাধুলা করে। যে সব দেশে বরফ পড়ে না, সে সব দেশেও খেলার অভাব নেই। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অন্তর বাদশা খেলারাম খেলে যায় মনের আনন্দে কত প্রকার খেলা। তেমনি একটি খেলার গল্প বলি।

একরাজা ঘোষণা করল-
ঃ - এই শীতের মধ্যে যে ব্যক্তি, সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত এই দিঘিতে গলা পানিতে নেমে থাকতে পারবে, তাকে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা দেওয়া হবে।
মরার ভয়ে কেউ সাহস পেল না। এক গরীব দিন মুজুর অনেক কষ্টে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটায়। সে ভাবে যদি সকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকি, তাহলে এক হাজার স্বর্ণ মুদ্রা পাব। স্ত্রী সন্তান নিয়ে খেয়ে বাঁচতে পারব। আর যদি মরে যাই তাহলে পৃথিবীর কষ্ট থেকে রেহাই পাব। জীবন বাজী রেখে বলল-
ঃ - হুজুর- আমি পারব।
একহাজার স্বর্ণমুদ্রার আশায় কথা মতো সে গলা পানিতে নেমে রইল। পাহারাদাররা পাহারা দিল। সকালে রাজার কাছে খবর গেল। রাজার হুকুমে তাকে রাজ দরবারে হাজির করা হল।
রাজা তাকে জিজ্ঞেস করল-
ঃ - বল তুমি কিভাবে সারা রাত এই শীতল বরফসম পানির মধ্যে গলা পানিতে নেমে থাকলে?
গরীব লোকটি অস্ফুট স্বরে বলল
ঃ - হুজুর আমি আপনার গুদাম ঘরে রাখা এত এত গরম কাপড়ের স্তুপের ধ্যান করে সারারাত কাটিয়েছি।
রাজা তৎক্ষণাৎ রেগে গিয়ে বলল-
ঃ- কিঃ তুমি আমার রাজ ভান্ডারের দিকে নজর দিয়েছ। এত সাহস ? তুমি জনগণের শত্রু, দেশের শত্রু । এক হাজার স্বর্ণ মুদ্রাতো পাবেই না, বরং রাজদ্রোহিতার অপরাধে তোমাকে শূলে চড়ানো হবে।

বাংলাদেশের উত্তরে দুইচার ফুট দেবে গেলে। গরীব ছিন্নমূল অসহায় মানুষ গুলো অনাহারে, অর্ধাহারে, অসুখে, রোগে ভুগে, প্রচন্ড শীতে মরে গেলে কার কি আসে যায়। রাজ ভান্ডারের আশায় থাকাটাও যে দোষ। আর দেশের নাগরিক হিসাবে নিজের অধিকার চাওয়াটা কখনো কখনো হয়ে যায় রাজদ্রোহ ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
খোরশেদুল আলম @এস, এম, ফজলুল হাসান - ভালো উদ্যোগ। ধন্যবাদ আপনাকে।
ভালো লাগেনি ২৮ জানুয়ারী, ২০১২
খোরশেদুল আলম @tani hoqe - গল্প পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপা।
ভালো লাগেনি ২৮ জানুয়ারী, ২০১২
এস, এম, ফজলুল হাসান তৌহিদ উল্লাহ শাকিল: । আগামী ১৭ ই ফ্রেব্রুয়ারী গল্প কবিতার বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে সম্পৃক্ত হওয়ার লক্ষ্যে একটি ইভেন্টের আয়োজন করেছি । যেহুতু নেট ছড়া সম্ভব নয় তাই নেটের মাধ্যেমে করছি ।গল্প কবিতায় প্রকাশিত আপনি আপনার সেরা লেখাটি এখুনি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে [ আরও... আরও দেখুনতৌহিদ উল্লাহ শাকিল: । আগামী ১৭ ই ফ্রেব্রুয়ারী গল্প কবিতার বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে সম্পৃক্ত হওয়ার লক্ষ্যে একটি ইভেন্টের আয়োজন করেছি । যেহুতু নেট ছড়া সম্ভব নয় তাই নেটের মাধ্যেমে করছি ।গল্প কবিতায় প্রকাশিত আপনি আপনার সেরা লেখাটি এখুনি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে [ আরও দেখুন। আগামী ১৭ ই ফ্রেব্রুয়ারী গল্প কবিতার বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে সম্পৃক্ত হওয়ার লক্ষ্যে একটি ইভেন্টের আয়োজন করেছি । যেহুতু নেট ছড়া সম্ভব নয় তাই নেটের মাধ্যেমে করছি ।গল্প কবিতায় প্রকাশিত আপনি আপনার সেরা লেখাটি এখুনি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে [ http://www.golpokobita.com/messages/compose/to/7161 ] । সময় অনেক কম . সকল বন্ধুকে বলছি আর দেরী করবেন না | শেষ তারিখ : ২-২-২০১২ |
ভালো লাগেনি ২৮ জানুয়ারী, ২০১২
তানি হক বাংলাদেশের উত্তরে দুইচার ফুট দেবে গেলে। গরীব ছিন্নমূল অসহায় মানুষ গুলো অনাহারে, অর্ধাহারে, অসুখে, রোগে ভুগে, প্রচন্ড শীতে মরে গেলে কার কি আসে যায়। রাজ ভান্ডারের আশায় থাকাটাও যে দোষ। আর দেশের নাগরিক হিসাবে নিজের অধিকার চাওয়াটা কখনো কখনো হয়ে যায় রাজদ্রোহ । ............ ,,,,,,,,ধন্যবাদ ভাইয়া ....
ভালো লাগেনি ২৭ জানুয়ারী, ২০১২
খোরশেদুল আলম @খন্দকার আযাহা সুলতান - ও দাদা আরেকটি কথা ভুলে গেছি। গল্পটি Alokito Bangla ব্লগে কিভাবে গেল কে দিল কিছুই বুঝতে পারছি না। কে এই গল্পটি হাইজ্যাক করল বুঝলাম না।
ভালো লাগেনি ২৬ জানুয়ারী, ২০১২
খোরশেদুল আলম @খন্দকার আযাহা সুলতান - দাদা অনেকদিন ব্যস্ত থাকার পর সূর্যের ছবিটা এই মাত্র দেখলাম। আমি বাংলাদেশে বরফ দেখতে চাই। হা হা দাদা ঠিক ধরেছেন লাইটের দিকে তাকিয়েছিল। কিন্তু দাদা, গল্পের প্রয়োজনে অর্থাৎ বাংলাদেশের রাজনীতির চরিত্র দেখানোর জন্য এভাবে দিয়েছি। অনেক ধন্যবাদ দাদা আপনাকে। ভালো থাকুন সব সময়।
ভালো লাগেনি ২৬ জানুয়ারী, ২০১২
খোরশেদুল আলম @প্রণয়পীড়িত - ধন্যবাদ সময় করে গল্পে আশার জন্য। আপনার ভালোলাগা আমার লেখার উৎসাহ।
ভালো লাগেনি ২৬ জানুয়ারী, ২০১২
Azaha Sultan খোরশেদ ভাই, প্রথমে বলি, সূর্যের দেখা ত আপনি পাবেন না কখনো- কারণ সূর্য গল্পকবিতাতে ব্যস্ত। তবে বরাফের দেখা নিশ্চয় পাবেন, কারণ এভাবে শৈত্যপ্রবাহ চলতে থাকলে মাইনেস টু হতে সময় লাগবে না। আর মৃত্যুর পর মানুষের থাকে মাটি, কিন্তু হুমায়ূন দাদার আছে জল- বড়ই বিচিত্র.......হা হা হা......তবে কানে ফিসফিসিয়ে আরেকটা কথা বলি? দণ্ডিত লোকটি বোধহয় চেয়েছিল লাইটের দিকে...রাজা মনে করছে ঐ লাইট থেকেই সে তাপ গ্রহণ করেছে....এ সত্য প্রকাশ করার অপরাধে নিঃস্বের দণ্ড হয়েছিল.......বেঈমানের রাজত্বে বাস করার চেয়ে ঈমানদারের ক্রিতদাস বনা অনেক শ্রেয়........আপনার গল্পের তুলনা হয় না দাদা......অসাধারণ......
ভালো লাগেনি ২৬ জানুয়ারী, ২০১২
আসন্ন আশফাক শেষের মেসেজ টি চমত্কার লাগলো, আর এমনিতে পুরো গল্পটির উপস্থাপন ও ভালো লেগেছে ...........
ভালো লাগেনি ২৬ জানুয়ারী, ২০১২
খোরশেদুল আলম @রওশন জাহান - আপা, আপনাকে গল্পে পেয়ে ভালো লাগছে। ধন্যবাদ আপনাকে।
ভালো লাগেনি ২৫ জানুয়ারী, ২০১২

২২ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪