বন্ধুত্বগীত

বন্ধু (জুলাই ২০১১)

আশা
  • ৪৩
  • 0
  • ৬৩
‘বল্লামতো, মন চাচ্ছে না আমি যাব না।’
এমনই অদ্ভুত বাক্য বকে সে চুপ হয়ে গেল। বহুবার বলার পরও যদি এটা ছাড়া সম্মতিসূচক অন্য বক্তব্য না মিলে, তবে কিইবা দরকার এত বাড়াবাড়ির? ঐযে প্রবাদ আছে- ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়, হয়তো সেই কথাও একদিন আমার কাছে মিথ্যা হয়ে যাবে। কারণ; তাকে নিয়ে যেতে এত ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সে বলে বেড়ায় যাবে না। আর এ ইচ্ছাটুকু আমার না হয়ে যদি অন্য কারো হতো, তবে সে কী করত কে জানে?
যা হোক, সেসহ অন্তপুরের কয়েকজন বাদে বাকী সবাই যাবার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
আর আমি? যাব?
না থাক। সে যদি না-ই যায়, তবে যে আমারও যাওয়া মিছা। মন চাইলেও যাব না।
অবশ্য আমি যে বন্ধু হিসেবে ধীরে ধীরে তার মায়ার বাঁধনে আবদ্ধ হয়ে গেছি, এ কথা সেও জানত না। যদি কোনো কালে জেনেও যায়, তাহলে কী ভেবে বসবে আমার জানা নেই। তাই বলে রাখা কর্তব্য বোধ করছি- সত্যিকারের বন্ধুত্ব ছাড়া তাকে নিয়ে আমার অন্য কোনো মনস্কামনা নেই। এটাও সত্য যে- রূপকে নয়, তার গুণ আর অসহায়ত্বকেই বন্ধু বলে হৃদয়পটে স্থান দিয়েছি। আর কোন কালে যে কেমন করে সবার অলক্ষে তার মায়াজালে আপনাকে আপনিই জড়িয়ে ফেলেছি, তা বলতে পারাটাও আমার সাধ্যে নেই। তাই আজ বলতে দ্বিধা নেই- ভাবী জীবনে বন্ধুত্বের মূল্য দিতে গিয়ে তার সঙ্গী হয়ে স্বেচ্ছায় সহমরণে যেতেও আমার আপত্তি থাকবে না। কারণ; কিছুদিন পূর্বে গত হওয়া বন্ধু দিবসে হাতে গোলাপের এক টুকরো পাপড়ি তুলে দিয়ে সে আমাকে বলেছিল- এ বিদ্যানিকেতনে তুমিই আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু।
ওমা, এ আবার কেমন কথা? তার সাথে কথা হয়েছিল মাত্র হাতে গোনা কয়েকদিন। তাই কথাটা আমার বিশ্বাস হয়নি। তাছাড়া আমি এক তরুণ, সে তরুণী। বিপরীত লিঙ্গের সাথে বন্ধুত্ব হবার বিষয়টি আমার কাছে কেমন যেন ঘোলাটে মনে হলো। আর অন্তপুরের বিকৃতমনধারী সহপাঠীদের বাজে মন্তব্যের ভয়তো আছেই। কিন্তু পরবর্তীতে তার কথাটা নিয়ে যখন ভাবনার অন্তরালে হরেক রকমের ঘটনা ঘুরপাক খেতে লাগল, তখন বুঝলাম গোপনে আমিই যে তাকে বন্ধু হবার জন্যে হাতছানি দিয়ে ডেকেছিলাম। তা না হলে সেদিন উন্মাদ-মাতাল সহপাঠীদের ইভটিজিং থেকে তাকে কেনইবা রক্ষা করেছিলাম?
যা হোক, বুঝতে পারলাম তার বন্ধু হলে অন্তত একদিক শুভ হবে। তার অসহায়ত্ব কেটে যাবে। পাশাপাশি শত শত জোনাকীর মতো আরো নিরীহ তরুণী আমার গলে বন্ধুত্বের মালা পড়াতে এগিয়ে আসবে। এ বুঝতে পারা থেকেই একদিন কাল্পনিক আনুষ্ঠানিকতায় তার সাথে বন্ধুত্বের শিকলে আটকা পড়লাম। অন্যান্য তরুণীদেরও সেই শিকলে আটকে নিলাম। যারা জন্তু-জানোয়ারের ভয়ে শিক্ষাঙ্গনে পা রাখা থেকে মাঝে মাঝে বিরত থাকে। তারপর একদিন উপরওয়ালাদের সহায়তায় কলেজ প্রাঙ্গনে সংগ্রামী জননেতার মতো হুঙ্কার ছেড়ে ঘোষণা দিলাম- আজ থেকে কোনো অবলা সহপাঠীকে কেউ বিরক্ত করলে তার পরিণতি হবে বিদ্যাহরণ থেকে বহিস্কার।
এখানেই শুরু হয়ে গেল আমার প্রতি নির্বোধ সহপাঠীদের কটুক্তি আর অবান্তর মন্তব্যের ঝড়-তুফান। তরুণীমহল যখন বন্ধু হিসেবে আমাকে মাথায় তুলে নাচতে শুরু করল, তখন তরুণসমাজ আমাকে হিজরা বলে উপহাস করল। বড্ড হাসি পেল আমার। কানে তুলা পুরে আর হিজরার মতো কঠিন অপবাদ হজম করে কাটিয়ে দিতে লাগলাম দিনের পর দিন।
শিক্ষাঙ্গনে একটি তরুণও যদি আমাকে ভালো চোখে দেখত, তাহলে অন্তত বড় নিঃশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বলতে পারতাম সমলিঙ্গের কেউ একজন আমার বন্ধু হবেই হবে। অথচ ঘটল উল্টোটা। বন্ধু হওয়াতো দুরের কথা, কলেজে আমার উপস্থিতিই তারা সহ্য করতে পারল না। বিপরীত লিঙ্গের সহপাঠীদেরকে বিভিন্ন সময় জন্তু-জানোয়ারের বাজে উক্তির হাত থেকে বাঁচাতে আমার এগিয়ে যাওয়াটাই এর প্রধান কারণ। আমিও থেমে থাকলাম না। তরুণকূলের বন্ধুত্বের প্রতি ধিক্কার ছুড়ে তরুণীকূলের বন্ধুত্বকে ছালাম দিলাম। তারপর একে একে কত তরুণীই না আমার বন্ধু বনে গেল। সকল বন্ধুর মাঝে আমার নজর শুধু একজনের দিকেই ছুটে যায়। যে কলেজ জীবনে আমার প্রথম বন্ধু।
কিন্তু ভাগ্য আমাকে হতাশায় ফেলে দিল। যে বন্ধুর জন্যে এতকিছু হয়ে গেল, সে আমার দিকে এক পলক তাকানোরই সময় পেল না। মনের দুনিয়ায় যাকে তরুণীকূলের প্রথম এবং শ্রেষ্ঠ্য বন্ধু হিসেবে জানলাম, সে আমার সেই দুনিয়া থেকে অনেক দুরে সরে গেল। দুঃসময়ে তার পাশে গিয়ে অসাধু সহপাঠীদের কটুক্তি পেয়েছি বলেই সে এমনটি করেছে। তাই আমি হাল ছাড়লাম না। হৃদয়কুটিরে তার জন্যে রাখা বন্ধুত্বের আসন অলংকৃত করার জন্যে তাকে নিয়ে দুরে কোথায়ও পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করতে লাগলাম। অথচ যেতে সে রাজী হলো না। হাজার অনুরোধের পরও সে সম্মতি দিল না।
ও... হ্যাঁ। এক্ষণে কথাটি বলে না দিলে চিরকালই গোপন থেকে যেত। বন্ধুমহলে শুনেছি আমি ছাড়াও এমন একজন আছে, যারও কিনা যাবার সৌভাগ্য নির্ভর করছে তারই উপর। নামও জানি।
সে বাসন্তী।
সংবাদটি পেয়ে বাসন্তীর কাছে গেলে সে বলল- ‘বাবা-মা তাকে খুবই স্নেহ করেন, ভদ্র বলে জানেন। সে যদি না যায় তবে আমারও যেতে বারণ।’
এ কথা শুনে আমার ভাবনার বোঝা কিছুটা কমে গেল। কারণ; বুঝতে আমার বাকী নেই যে, তাকে নিয়ে যেতে এখন হতে বাসন্তীরও কম খেয়াল থাকবে না। তার পরও নিজের চেষ্টা অব্যাহত রাখি, তার সম্মতি আদায়ের ফন্দি আটি।
এমন জটিল বিষয় নিয়ে নাক গলানোর অভ্যাস পূর্বে কখনোই আমার ছিল না। আজ একজনকে নিয়ে দু’জনই বিপাকে পড়লাম। কাজেই চিন্তা করে দেখলাম, বাসন্তীর হাতে হাত মিলানো বাদে হয়তো সম্ভব হবে না। রাখলাম বাসন্তীর হাতে হাত। তার সাথে বন্ধুত্ব আরো মজবুত করলাম।
কিন্তু আমি এ কী করছি? হারিয়েই ফেলেছি কী দিয়ে বলা আরম্ভ করেছিলাম। আর এখন শেষইবা করব কী দিয়ে? কে জানে বন্ধুত্ব নিয়ে কথার বীজ বুনতে বুনতে কোন দিকে যাচ্ছি। যা হোক, লাইন ঠিক রেখে সংক্ষেপেই বুনে যাই। তা না হলে যে পাঠকমহল বিরক্ত বোধ করবে।
আমি দিপু। কিছুকাল পূর্বে মাত্র শিক্ষা জীবনের তিন নম্বর ফ্যাটের প্রথম সিঁড়িতে পা দিয়েছি। ইতোমধ্যে বৎসরের দ্বিতীয় ভাগের মাঝামাঝিও এসে পড়েছি। অন্তপুরের গুরুমহল এতগুলো দিন পরেই বুঝি আমাদের দিকে চোখ তুলে তাকালেন। বহুকাল প্রতিক্ষার পর আয়োজন করলেন শিক্ষাসফরের। আর সেই সফরে যাবার লক্ষেই আমার বন্ধুটিকে নিয়ে কথার যত টানা-হেচড়া।
বলে রাখি- যাকে নিয়ে এ অবিরাম কথার মালা গেঁথে যাচ্ছি, তার সত্য নামটা আমি দিব না। জানি এ নিয়ে বন্ধুমহলে গুঞ্জন ছড়াবে। সাহিত্যের জালে জড়িয়ে যুগ যুগ ধরে শত শত মনেও রটে যাবে। তবু পাঠকের মনোরঞ্জনলক্ষে তার একটা নাম দিতে চাই।
ফাল্গুনী।
ফাল্গুনী নামটা দেয়া কতটুকু যুক্তিযুক্ত হলো, তা আমার জানা নেই। কারণ; আমিতো দেখি বৎসর অন্তর একবারই শুধু বাংলার বুকে ফাগুন নেমে আসে, প্রকৃতিকে আপন সাজে সজ্জিত করে দেয়। আর আমার বন্ধু ফাল্গুনীতো সারা বছর জুড়েই ফাগুনের মতো সজ্জিত থাকে। কলিযুগের বাহারী জিনিসও তাকে স্পর্শ করতে পারে না। তবু কী মনোহরিণী? কী দেননি বিধি তার রূপে? মনে হয় যেন বিধি তাঁর আপন হাতেই ফাল্গুনীকে সৃষ্টি করেছেন।
এত কিছুর পরও কী যে একটা অভাব ফাল্গুনীর রূপের মাঝে সর্বদা বাধার মত সজাগ হয়ে উঠত? ও..., সেটাতো রঙ। বিধাতা যদি তার রঙখানি আরেকটু খুলে দিতেন, না জানি তাকে কেমন দেখাতো?
নাহ্। আমি আসলে একটা আস্ত বোকা। তখন হয়তো তাকে এতোটা অপরূপা দেখাতো না।
এই যাহ্! কোথা হতে কোথায় এসেছি? কী বলতে গিয়ে কী বলছি? ধীরে ধীরে যেন উপন্যাস রচে যেতে শুরু করেছি। বলতে ভুলেই গিয়েছি যেখানে যাবার জন্যে ফাল্গুনীকে নিয়ে টানা-হেচ্ড়া শুরু করেছি। সেই স্থানের নাম সবারই জানা আছে। আমারও তাই বটে। তবে নামটি নিয়ে অন্তপুরের কেউ রিচার্চ না করলেও, আমি খানিকটা করেছি। আর বাল্মীকির রামায়ণ ছাড়া অন্য কোথায়ও এ নামের সন্ধান পাইনি। ভেবে দেখলাম হয়তো রামায়নের নায়িকার নামের সাথেই মিলিয়ে নামটি দেয়া হয়েছে। তাও সঠিক কিনা জানি না। এটা শুধুই আমার অনুমানের কথা। কারণ; স্থানটির নামকরণের ঘটনাপ্রবাহ কী ছিল, তা আমি জ্ঞাত নই।
থাক ওসব। আবোল তাবোল বলে পাঠক মহলের সময় নষ্ট না করে এবার সত্য কথাটাই বলে দিই।
সীতাকুন্ডু।
অতীতে কেমন করে এ গীরী অঞ্চল সীতাকুন্ডু নাম পেয়েছিল তার সঠিক তথ্য ইতিহাস ঘাটলেও বর্তমানে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ আছে। তবে এর নামকরণের ঘটনা হয়তো অতীতের অনেক গভীরেই লুকিয়ে আছে দীর্ঘকাল ধরে। আর আমি শুধু এ স্থানটির নাম এতদিন ধরে শুনেই আসছিলাম। দেখার সময় বুঝি এ মাত্র এল। তাও কিনা নসিব হতে খসে পড়বে, যদি বন্ধু ফাল্গুনী না যায়।
আচ্ছা, কারণটা কী ফাল্গুনী না যাবার? এমন কেউ আছে কী, যে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে?
অনেক ঘাটাঘাটির পর বিশেষ সূত্রে জানতে পারলাম পরিবারই ফাল্গুনী না যাবার কারণ। সে বাস করে ডাকাতিয়া নদীর খানিক পুবে সিলন্দিয়া নামক এক সবুজ-শ্যামল রাজ্যে। সেই রাজ্যের এক গৃহকর্তা হাওলাদার তার পিতা। তিনিই নাকি আমার ফাল্গুনীকে শিক্ষাসফরে যেতে দিবেন না। বুঝতে আর বাকী রইল না আমার। ভেবে দেখলাম- অন্তপুরের যারা যাবে, তাদের সকলেরই কম-বেশী ফ্যামিলির পারমিশন আছে। যা ফাল্গুনীর নেই।
নাহ্। বিবেক আমাকে কোনো মতে দমিয়ে রাখতে পারল না। অন্যরা অধম হয়ে যদি সুখমহলে যেতে পারে, তবে উত্তম হয়েও ফাল্গুনী কেন পারবে না?
আসলে ফাল্গুনীকে উত্তম বলার মাঝে কোনো ভুল আমার নেই। আমি একজন শিক্ষার্থী হয়েও নিজ কর্তব্য যথাযথ পালন করি না, যা সে করে। বাসন্তীর কাছে শুনেছি, দারুণ প্রতিকূলতার মধ্যে থেকেও ফাল্গুনী তার মেধাকে অনেক দুর এগিয়ে নিয়েছে। যা অনুকূলে থেকেও আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। সুতরাং মেধার মূল্য দিতে হলে তাকে রেখে আমার শিক্ষাসফরে যাওয়া চলবে না। আর যাবইবা কেমন করে? আমি যে পূর্বেই নীরবে পন করে বসে আছি- যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে হয় করব, তাকে নিয়েই শিক্ষাসফরে যাব।
আমার পণ যে কতটুকু সফল হবে, তা ছিল অজানা। ফাল্গুনীর পরিবারের কর্তা বড়ই কঠিন। আত্মসম্মানী। নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছুই হতে দেন না। এমনকি সহজে কারো কাছে কোনো বিষয়ে মাথা নোয়াবারও নন। এমনই ভঙ্গিতে কথাগুলো সেদিন বাসন্তী আমাকে শুনিয়েছিল। আমি তা কর্ণপাত না করে নিজ পণকে বহাল রাখার চেষ্টা করলাম।
শেষ মুহূর্তে দেখা গেল আমার পণই ফাল্গুনীর পরিবারকে রাজি হতে বাধ্য করেছে। তাও আমার একার প্রচেষ্টায় নয়। বাসন্তীও এ নিয়ে ভীষণ মৌখিক যুদ্ধে লিপ্ত হলো। ফাল্গুনীর পরিবারকে বুঝিয়ে সে রাজি করাল। অবশ্য এ ক্ষেত্রে তারও কিছুটা ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। শত কষ্টের বিনিময়ে আমার সাথে গাঁয়ের মেঠোপথ ধরে অনেক দুর পায়ে হেটে চলে যেতে হয়েছে ফাল্গুনীর বাড়িতে। তাতে বুঝলাম- শুধু আমি নই, সেও ফাল্গুনীর একজন সত্যিকারের বন্ধু।
এরপর থেকে ধীরে ধীরে তিন মনের বন্ধুত্ব কঠিন হয়ে গেল। তরুণ-তরুণী এক টেবিলে বসে ক্লাস করা অন্য সবার জন্য অসম্ভব কল্পনা হলেও, আমাদের বেলায় হলো সাধারণ কিছু। অবশ্য গুরুমহলও এতে বাধ সাধলেন না। যদিও আমরা তিন বন্ধু ছাড়া অন্য সবার ক্ষেত্রে গুরুমহলের কড়া শাসন লক্ষ করেছি। এখানেও আমাদের বন্ধুত্বের প্রতি অশুভ মহলের হিংসার উদগিরণ শুরু হলো। তবু সকল কিছু উপেক্ষা করে আমাদের বন্ধুত্ব চলতে লাগল দিনের পর দিন। আমিও আমার তরুণীকূলের দু’বন্ধুর সাথে সহোদর ভাই-বোনসদৃশ স্বাচ্ছন্দে মিশে গেলাম। তারাও স্বাচ্ছন্দে তাদের স্মৃতির পাতায় চিরদিনের জন্যে শ্রেষ্ঠ্য বন্ধু হিসেবে আমার নামখানি লিখে নিল।
এমন বন্ধুত্ব সভ্যতার ইতিহাসে দুটো-একটা ছিল বা আছে বলেও আমার মনে হলো না। এতে আমি কোনো রেকর্ডও গড়তে চাই না। আর প্রত্নতাত্ত্বিকগণও এ বন্ধুত্ব নিয়ে কোনোরূপ ঘাটাঘাটি করেন, তারও প্রয়োজন বোধ করি না। শুধু চাই ফাল্গুনী-দিপু-বাসন্তীর এ বন্ধুত্বগীত রচে অনন্তকাল আপনার নামখানি ভূবনমাঝে রেখে যেতে। আর ক্ষণজীবী হিসেবে যতদিন ভূবনপুরে বিচরণ করতে পারি, ততদিন ফাল্গুনী- বাসন্তী দু’বন্ধুর নাম আমার সীমাহীন হৃদয়পটে বন্দী রাখতে।
কিন্তু এ কী হলো? উপরওয়ালা বুঝি তিন বন্ধুর ভাগ্যকে এক সাগরেই নিক্ষেপ করলেন। বাসন্তী যে আমাকে বলেছিল ফাল্গুনী যাবার জন্যে তার পরিবার মত দিয়েছে, তাতেই আমি ক্ষান্ত ছিলাম। প্রহর গুনছিলাম স্বপ্ন আর প্রতিক্ষার গীরী অঞ্চলে পা রাখার। স্বপ্ন দেখছিলাম তিন বন্ধু হাত এক করে ঝর্ণার পানি দিয়ে পিপাসা মিটাবার। আর সেই স্বপ্নের সীতাকুন্ডু যাবার পূর্বক্ষণে ফাল্গুনী একদিন হঠাৎ বলে উঠল, ‘আমাকে মা করো দিপু। বাসন্তী তুমিও আমাকে মা করো। আমি যে তোমাদের বন্ধুত্বের মূল্য দিতে পারলাম না।’
এ কথা বলে সে আঁখিজলে বুক ভাসিয়ে দিল।
‘পরিবার বই কী? সেখানেই তার যাওয়া না যাওয়ার হিসাব মিলিয়ে রাখা ছিল।’ বাসন্তী চুপিসারে এ কথা বলে নীরব হয়ে গেলো। আমি আর কী বলব? এতদিন পর বুঝলাম ফাল্গুনীকে নিয়ে শিক্ষাসফরে যাওয়া ছিলো দু’জনেরই আকাশ কুসুম স্বপ্ন। দোষটা আমার না হলেও আমাদেরই ধরে নিলাম। কারণ; আমাদের সমাজের সেই নির্লজ্জ কাপুরুষদের ভয়ে যে ফাল্গুনীর পরিবার তাকে শিক্ষাসফরে যেতে দিবে না, তা বুঝতে আমার বাকী রইল না। তাই বাসন্তীর সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম। বাসন্তী আমাকে বলল, ‘থাক ও না গেলে আমিও যাব না। তুমি একাই যাও দিপু।’
আমার মুখ থেকে আর কথা বের হলো না। পুরুষ হিসেবে জন্ম নিয়েছি বলে নিজের প্রতি খুব ঘৃণা এসে মনে জড়ো হলো। কারণ; মানবরূপী পুরুষ মার্কা কিছু জন্তুর কৃতকর্মের ভয়ে যে আমার বন্ধু ফাল্গুনী-বাসন্তী শিক্ষাসফরে যেতে রাজি হলো না। ভাবলাম, এমনটি কেন হলো? তবে কি সভ্যতা আজও আসেনি? যদি এসে থাকে, তাহলে আজও কেন বিপরীত লিঙ্গের প্রতি অবলাদের এত ভয়?
পরদিন সূর্যোদয়ের সাথে সাথেই যাত্রা শুরু হবে। সবাই ঝাপ দিবে আনন্দের সাগরে। ফাল্গুনী-বাসন্তী ছাড়া সবাই জানে আমি শিক্ষাসফরে যাব। তাই শেষ বারের মতো দু’জনেই আমাকে বলল, ‘তুমি যেও দিপু, আমাদের জন্য থেমে থেকো না।’
তা আর কীভাবে সম্ভব? গেলে যে একাকী যন্ত্রণার আগুনে আমাকে জ্বলে-পুড়ে মরতে হবে। দু’বন্ধুর অভাব আমার হৃদয়টাকে টুকরো টুকরো করে কাটবে। তাই বললাম, ‘তোমরা কি চাও, সেখানে গিয়ে আমি কোনো ব্যথা পাই?’
‘নাহ্। তবু তোমাকে যেতেই হবে। আমাদের জন্যে তোমার আশার মৃত্যু হতে পারে না দিপু। তুমি অবশ্যই যাবে।’
নীরবতাই সম্মতির লক্ষণ- এমন ভাব দেখিয়ে তাদের সামনে আমি দাঁড়িয়ে রইলাম। কিছুক্ষণ পর চলতে লাগলাম আপন ঠিকানার দিকে। দু’বন্ধু তাকিয়ে রইল আমার চলে যাওয়া পথের দিকে। খানিকটা পথ এগিয়ে যাবার পর পেছনে ফিরে দু’জনকে একবার দেখে নিলাম। তারপর একাকী বলে উঠলাম, ‘তা আর কী করে হয় বন্ধু? তোমরাতো কখনোই জানতে না যে আমার পণই সবচেয়ে বড়, বন্ধুত্বের মূল্যই যে সবচেয়ে বেশি। তা না হলে সেদিন বন্ধুদিবস উপলক্ষে তোমরা যখন আমার গলে বন্ধুত্বের মালা পড়িয়েছিলে, তখন আমিইবা কী ভেবে তা গ্রহণ করেছিলাম?’
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আশা ............
ভালো লাগেনি ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
রোদেলা শিশির (লাইজু মনি ) তার একটা নাম দিতে চাই , ফাল্গুনী . রবি ঠাকুরের হৈমন্তির কথা মনে পরে গেল . অসামান্য . অসম্ভব ভালো লেগেছে .
আশা দিপক সাহা ধন্যবাদ, ধন্যবাদ, ধন্যবাদ = ধন্য থেকে বাদ (যদিও এড)। সময় দিয়েছেন বলে আমি কৃতজ্ঞ। ভাল থাকুন সব সময়।
দীপক সাহা গল্প বলার স্টাইলটা ভাল লেগেছে। একদিন আপনি মুকুট ছিনিয়ে নিবেন।
আশা শাওন খান: গল্পটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
শাওন খান অনেক ভালো লেগেছে, সুন্দর গল্প, আন্তরিক ধন্যবাদ।
আশা রফিকুজ্জামান রণি: আপনার ভালো লাগার কথাটুকু জেনে সত্যি আমি খুব আনন্দিত। কারণ; আপনার ভালোলাগা আমাকে উৎসাহিত করেছে।
রফিকুজ্জামান রণি অনেক ভালো লেগেছে-আন্তরিক ধন্যবাদ।
আশা অদিতি: প্রেম-বন্ধুত্ব এ দুটোর মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ককেই আমি বড় করে দেখি। আমার অনেক গল্প আছে যেখানে বন্ধুত্বের মাঝে প্রেমের বীজ বপন করা হয়েছিল। তবে ছেলে-মেয়ে দুয়ের বন্ধুত্বে যে প্রেমের দিকে ঝুকে গিয়েছিল, তার বিপরীত লিঙ্গ দিয়ে তাকে সেই দিক থেকে সরিয়ে ফেলেছি, কারণ; বন্ধু শুধু বন্ধুই। সেখানে অন্য কিছু বেমানান। তো যাই হোক, গল্পটি পড়ার জন্যে আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
অদিতি এমন বন্ধুত্ব (ছেলে-মেয়েতে) আসলে পাওয়া খুব দুস্কর। সেখানে একসময় প্রেম এসে কড়া নাড়ে। আপনার গল্প ভাল লাগলো এমনটা হয়নি বলে।

০৫ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪