বৃষ্টি স্নানে অনন্যা

অসহায়ত্ব (আগষ্ট ২০১৪)

ওয়াছিম
  • ১৮
অনন্যা সবে মাত্র ভালমতো কথা বলতে শিখেছে। তার নানী ঠিক করেছে সামনের বছরেই তাকে স্কুলে ভর্তি করে দিবে।ঠিক সেই সময় তার নানা বাড়িতে ঝামেলা এসে হাজির হলো। ঝামেলা আর কেউ নয়, অনন্যার বাবা। সে তার মেয়েকে নিয়ে যাবে। অনন্যার নানা নানী দুজনেই চায় অনন্যা তার বাবার সাথে থাক। শুধু শুধু একটা ঝামেলা পালার তো কোনো মানেই হয় না। অনন্যার বাবার কাছে জানতে চাওয়া সে তার মেয়েকে কোথায় রাখবে। সে তার মেয়েকে রাখবে তার বোনের বাসায় অর্থাৎ অনন্যার ফুফুর বাসায়। নানীর পক্ষে এটা মেনে নেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা । শত হলেও তিন বছর অনন্যা তার কাছে আছে। বিদায় বেলায় এক ধরনের মায়া তো কাজ করেই।
অনন্যা যে কথাটা সব চেয়ে বেশি ব্যাবহার করে তা হচ্ছে করুণা। জীবনে যদি ভালোবাসা পেয়ে থাকে তা হলে তা সে বিদায় বেলা তার নানীর কাছ থেকে পেয়ে ছিলো। হয়ত বা তার নানাও তাকে একবার জড়িয়ে ধরে কেঁদে ছিলো । অত শত তার মনে নেই । তবু অনন্যা সবার কাছে ভালোবাসা চেয়েছে। তার বাবার কাছে , মার কাছে, সকল আত্মীয় স্বজনের কাছে। সে সবার কাজ থেকে ভালোবাসার বিপরীতে শুধু করুণা পেয়েছে। অবশ্য এটা অনন্যার ধারনা। এবং সে তার নিজের জীবনটাকে স্বাভাবিক মনে করে না। এই অস্বাভাবিকতার মধ্যে বড় হতে হাতে আজ অনন্যার বয়স ১৬। এখন সে তার মায়ের কাছে থাকে। সে খুব সুখে আছে এটা মনে করার কোনো কারণ নেই । সুখ শব্দটা এখনো অনন্যার জীবনে আসে নাই । তবে আসবে বলে তার ধারণা । আর মাত্র তিন বছর। এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে, দুইবছর পর এইসএসসি , তার পর বিশ্ববিদ্যালয় । সে সাবালক হবে। নিজের চিন্তা সে নিজেই করতে পারবে। সে করুণার হাত থেকে বাঁচতে চায় । পালিয়ে থাকতে চায় সকলের কাছ থেকে। শুধু রাফেজ তার পাশে থাকলেই হবে। রাফেজ একটা চাকরি পাবে । রাফেজ অনন্যার বিয়ে হবে। খুব গোছানো চিন্তা ভাবনা কিন্তু বাস্তবতা সকল চিন্তাভাবনার সাথে যায় না। বাস্তবতা অনেক কঠিন । অনন্যা হয়তো করুণা দেখেছে। কষ্ট দেখছে অবহেলা দেখেছে। এখনও কঠিন পৃথিবীর বাস্তবতা সে দেখে নাই।

অনন্যা সকালে উঠতে কেন দেরি করলো। এত তাড়াতাড়ি কেন ঘুমাতে গেল। স্কুল থেকে ফিরতে কেন দেরি হলো। শত অভিযোগ তাকে প্রতিনিয়ত শুনতে হয় তার মার কাছে। তার বাবা এদিক থেকে ঠান্ডা। সে তার মেয়েকে কিছুই বলে না। না বলার একটা কারণ হতে পাওে অনন্যা তার আসল মেয়ে নয়, সৎ মেয়ে। যদিও কখনও সে সৎ বাবার মত আচরণ কওে না। সে তার মেয়ের সকল কাজ করে দেয়। প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার পথে অনন্যার জন্য কিছু না কিছু নিয়ে আসে। সে যে তার সৎ মেয়ে এটা কখনও বুঝতে দেয় না। অনন্যা তার নিজের বাবার থেকে এই বাবাকেই বেশি ভালোবাসে। সে তার নিজের বাবা বা মা কাউকেই ভালোবাসে না। তার ধারনা তার বাবা মা তার কথা মোটেও ভাবে নাই। যদি ভাবতো তবে তারা আলাদা হতে পারতো না। আবার বিয়ে করতে পারতো না। তারা তো বিয়ে করে সুখে আছে। অনন্যার কথা কে ভেবেছে। না মা, না বাবা। যদিও অনন্যার বর্তমান ধারণা তার বাবা তার জন্য যা করে তা এক ধরনের করুণা। এই নিয়ে মাঝেমাঝে রাফেজের সাথে তার ঝগড়া হয়। রাফেজ তাকে বুঝাতে চেষ্টা করে এটা করুনা নয় ভালোবাসা। রাফেজ অনন্যা কেবলে তোমার মা তোমার সাথে যা করে তা তোমার ভালোর জন্য করে। তোমার মা যে ভুল করছে তা যেন তুমি না কর তার জন্য তোমাকে এত কড়া নজরে রাখে। আরো কিছু রাফেজ বলতে চায়। কিন্তু তার আগেই অনন্যার চোখ ভিজে উঠে। অনন্যা রাফেজের কাছ থেকে কোন উপদেশ শুনতে চায় না। চায় শুধু ভালোবাসা। অনন্যা এখন ভালোবাসার কাঙ্গাল।

অনন্যার এসএসসির রেজাল্ট দিবে আরো মাস খানিক পরে। বর্তমানে সে বাসায় এক প্রকার বন্ধী জীবন পার করছে। তার ঘুরতে যাওয়ার কোন যায়গা নেই। তার কোন গ্রামের বাড়ি নেই। নানা বাড়ি নেই। এই সমাজের কিছু কঠিন নিয়মের বেড়া জালে তার জীবন আজ আটকে আছে। সে যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে তখন এক ঈদে তাকে তার বর্তমান বাবা তাদের গ্রামের বাড়ি নিয়ে গিয়ে ছিলো। সেই বার ঈদ দাদা বাড়ি হবে দেখে তার খুশি কে দেখে। অনেক দিন গ্রাম দেখা হয় না। সর্ব শেষ কবে গ্রামে গিয়েছে তার মনে নাই। গ্রামের মানুষ মাটির মানুষ। তাদেও মত ভালো মানুষ হয় না এটা অনন্যার ধারনা। সে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশবে। মাঠে দাপিয়ে বেড়াবে। কত মজা হবে। ভাবতেই অনন্যার চোখে পানি চলে আসে। প্রথম প্রথম সে গ্রামের সব কিছু দেখে অভিভূত হয়ে গিয়ে ছিলো। গ্রামের প্রতিটি মানুষ তাকে দেখতে এসে ছিলো। সবাই তার সাথে কথা বলার জন্য খুব আগ্রহী ছিলো। অনন্যার সব ভালো লেগে ছিলো। গ্রামের মানুষের ভালোবাসায় বারবার অনন্যার চোখে পানি চলে আসছিল। তবে তার ভালোলাগা একদিনের বেশি স্থায়ী হয় নাই। সে বুঝতে পারে তাকে সবার দেখতে চাওয়ার মুল কারণ সে এই গ্রামের মেয়ে না। সে হচ্ছে এই গ্রামের সৎ কন্যা। তার মাকে সে বলতে শুনলো অনন্যাকে আনা ঠিক হয় নাই। বাকি যে কদিন ছিলো অনন্যা মন খারাপ করে ঘুরতে লাগলো। যে দোষ সে কওে নাই সেই দোষে দোষী হয়ে আজ শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে । যখন তার বাবা মার ছাড়া ছাড়ি হয়ে যায় তখনও অনন্যা পৃথিবীর আলো দেখে নাই। সে তখন পৃথিবীতে আসার জন্য ছটফট করতেছে। যদি সে জানতো পৃথিবী তার জন্য কষ্টের ঢালা সাঝিয়ে বসে আছে তা হলে হয়ত পৃথিবীতে আসতে চাই তো না। পৃথিবীতে এসে পৃথিবীর দিকে এত অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতো না। এর পর থেকে সে আর গ্রামে যায় নাই অথবা তার মা আর তাকে গ্রামে নিয়ে যায় নাই। তার মায়ের সাথে নানা বাড়ির কোন যোগাযোগ নেই বললেই চলে। আর তার নিজের গ্রামের বাড়ি যাওয়া তার জন্য সম্পূর্ণ নিষেধ। এই বদ্ধ জীবনে সে অভস্থ। যখন সে তার ফুফুর কাছ থেকে মায়ের কাছে যাচ্ছিলো তখন তার ফুফু বলেছিলো- দেখিস এখন আর তোর মনে কোন কষ্ট থাকবে না। মায়ের ভালোবাসা যে কি জিনিস এখন বুঝবি। তোর কষ্টের দিন শেষ। মায়ের ভালোবাসা কি জিনিস সে এখন বুঝতে পেরেছে। সে যতই তার অতীত ভুলে যেতে যায় ততই তার মা বিভিন্ন কথায় তাকে মনে করিয়ে দেয় সে একজনের দয়ায় এই বাসায় আছে। অন্নান্য মেয়েরা যখন ক্লাস পার্টিতে আনন্দ করে তখন তার তাদের সাথে ফালাফালি করা ঠিক না। সে তার মায়ের কাছ এসে একটা নতুন জীবন পেল। সে জীবনের নাম বন্ধী জীবন।

এ কষ্টের জীবনে হঠাৎ করেই রাফেজের আগমন। অনন্যার স্কুল আর রাফেজের বিশ্ববিদ্যালয় পাশাপাশি অবস্থিত হওয়ায় আজ তারা দুজন পাশাপাশি আসতে পেরেছে। প্রথমে কয়েকদিন দেখা। একটু একটু করে কাছে আসা অতঃপর ভালোবাসা। অনন্যার ধারনা রাফেজের মত এত ভালবাসতে কেউ পারবে না তাকে। সেও রাফেজকে ভালোবাসে অসম্ভব। সেই রাফেজের সাথে গত এক মাস কোন যোগাযোগ করতে পাওে নাই সে। সে কি অসহ্য কষ্ট। অনন্যা ঘণ্টার পর ঘণ্টা জানলা দিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে। যদিও স্পষ্টভাবে কিছুই দেখা যায় না। তবু সে জানে সে খানে রাফেজ এসে দাড়িয়ে থাকে। তাকিয়ে থাকে তার জানলার দিকে। দুজন দুজনকে দেখতে পায় না তবু মনে হয় কত কাছে তারা।

আজ দুপুরের পর থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। অনন্যার মাতার ছোট বোনকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে গেছে। এই সুযোগে অনন্যা তার মায়ের মোবাইলটা হাতে নেয়। রাফেজের নম্বরে ডায়েল করে। নম্বর বন্ধ। আবার ডায়েল করে। আবার। না, রাফেদের নম্বরে কল যায় না। নিজেকে বড় অসহায় লাগতে থাকে অনন্যার। বাইরের বৃষ্টি তার অভ্যন্তরে শুরু হয়। তাকে স্নাণ করিয়ে দেয় কষ্টের , দুঃখের, অভিমানের জলধারায়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সাদিয়া সুলতানা সত্যি শুধু মাত্র সমঝোতার অভাব সন্তানের জীবনে কি ভয়াবহতা যে নিয়ে আসতে পারে। লেখকের মমতার লেখনী বাস্তবতাকে তুলে ধরেছে নিপুণতায়। ভাল লাগল।
এশরার লতিফ ভেঙ্গে যাওয়া পরিবারের সন্তানের দুঃখ, অভিমান, মানসিক জটিলতা এবং অসহায়ত্ব মমতার সাথে চিত্রিত হয়েছে. ভালো লাগলো গল্পটি.
আখতারুজ্জামান সোহাগ ব্রোকেন ফ্যামিলি র একটা শিশুর বেড়ে ওঠা, তার মনের অভ্যন্তরে ঘটে চলা দ্বন্দ্ব দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। শুভকামনা।
শামীম খান 'সে হচ্ছে এই গ্রামের সৎ কন্যা।' এই বেদনাবোধ সমাজকে স্পর্শও করেনা। কেন এমন হয়? কেন দুইজন মানুষের দ্বন্দ্বে একটা অবুঝ শিশুর কোমল পৃথিবীটা কাঁটায় ভোরে ওঠে ! হয়ত এটাই জীবন , তবু কথা থেকে যায় । লেখাটি ভাল লেগেছে । শুভেচ্ছা ।
ধন্যবাদ ভাই্ সুন্দর একটা মন্তব্য করার জন্যা

০৫ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪