আচ্ছা তোমার সেই বৃষ্টি দিনের কথা মনে আছে যেদিন আমরা ভীষন ভিজেছিলাম? আমার লাল টুকটুকে সুতী শাড়ীটা থেকে রঙ ধুয়ে যাচ্ছিল আর তা দেখে তোমার কি হাসি! মনে আছে চোখের কাজল লেপ্টে আমাকে ঠিক ডাইনীর মত দেখাচ্ছিল যে কিনা এক পুকুর রক্তের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। আবছা আবছা মনে পড়ে এমন কিছুই বলেছিলে তুমি আর সেটা শুনে আমার সে কি কান্না! মনে আছে? আজও দেখো না সেই রকম আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নেমেছে আর আমি জানালায় বসে তোমায় ভাবছি। বৃষ্টি ভেজা বিষন্ন বিকেল। কেউ নেই কোথাও। স্মৃতি ছাড়া কোন নোটবুক নেই আমার সে তো তুমি জানো। প্রিয় মুখগুলি খুব যত্ন নিয়ে এঁকেছি সারা জীবন ধরে। মাঝে মাঝে যখন খুব একা লাগে এই এমন মেঘলা দিনে। প্রিয় মুখগুলি দেখি গভীর মমতায় গভীর বিষাদে। সেই এক ঝুম বৃষ্টির বিকেলে সারা গায়ে লাল রঙ্গে মাখামাখি ভৌতিক আমার হাত ধরে কাক ভেজা হয়েছিলে তুমি আর মুগ্ধ গলায় বলেছিলে ' আজকের এই বৃষ্টি বিকেলটা ভুলে যাবে না তো মৌ?' আমি কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলাম ' কখনও না ক্কখনও না।' আমি ভুলে যাইনি। আসলে কিছুই ভুলে যেতে পারিনি। সেই বিকেলের প্রতিটা মুহুর্ত মনে করতে পারি। সেদিন আমাদের ভালবাসাবাসির দশম দিন ছিল আর দেখা হবার প্রথম দিন। কত শখ করে সারাদিন পা ব্যথা করে অনেক মার্কেট ঘুরে লাল টুকটুকে শাড়ীটা কিনলাম। শুধু শাড়ী কিনলেই তো হবে না তার সাথে ম্যাচিং করে দুল চুড়ি ও তো কেনা চাই। মনে পড়ে আমার টিউশনীর সব টাকা শেষ হয়ে গেছিল শুধু শাড়ীটা কিনতেই। আনুসাঙ্গিক জিনিস গুলি কিনেছিলাম ধার করে। এই রকম নাজেহাল হতে হবে কে জানত। আশুলিয়া থেকে ঢাকা ফেরার সারাটা পথ তুমি আমার হাতটা শক্ত করে ধরেছিলে। চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বলেছিলে ' এই ডাইনীটাকেই আমার চাই। চাইই চাই।' ভেজা শাড়ীতে পা বেধে যাচ্ছিল বারবার। এমন লজ্জা করছিল তখন। তুমি না জানি কি ভাবছ আমাকে। গাধা একটা মেয়ে এই রকম ভরা বর্ষায় শাড়ী পরে নাকি! তাও নতুন কেনা কড়কড়ে মাড় দেয়া শাড়ী। তোমার সাথে কথা বলব কি সারাটা ক্ষণ তো শাড়ী সামলাতেই হিমশিম খেতে হলো। তুমি গেয়েছিলে ' মন হারাবার আজি বেলা পথ ভুলিবার খেলা/ মন চায় মন চায় এই হৃদয়ও জড়াতে কারও চির ঋণে...' তুমি জানো না সেই মধুর বিকেলে তুমি কি ঋণেই আটকে ফেলেছিলে আমার হৃদয়টাকে। এই জীবনে পারলামই না আর কারো জন্য ভাবনার একটু ফুরসত। কি এক ঘোরের মাঝে কেটে গেল ৩টা বছর। অসম্ভব আনন্দের অপার ভাল লাগার উদ্দাম প্রেমের মাঝে যেন ডুবে ছিলাম আকন্ঠ। 'মৌ দেরী হয়ে যাচ্ছে তো। তোর গুছানো শেষ হলো?' মা এসে জোর ধমক লাগালেন। 'করছিস কি তুই এতক্ষণ ধরে? হ্যাঁহ! এমনিতেই লেট হয়ে গেছে তার উপর তুই কিছুই গুছাসনি এখনও। কত দূর যেতে হবে সে চিন্তা আছে তোর!' 'এই তো মা শেষ হয়ে এলো প্রায়।' তাড়াহুড়া করে কোন রকমে সব গুছিয়ে ছুট লাগালাম। আজ কোন কিছুতেই দেরী না হোক। আর দেরী না হোক। মনে মনে এই প্রার্থনা করতে করতে যাত্রা শুরু করলাম। খুব অল্প সময়ের জন্য তুমি এসেছো। খুব তাড়াতাড়ি ফিরে যেতে হবে। এইসবই বলেছিলে বারবার মনে আছে আমার। তাই আমার সব আয়োজন যেন একদম ঠিকঠাক থাকে।
টুকটুকে লাল শাড়ী পড়েছি অনেক অনেক দিন পর। সেই বিকেলের পর আমি আর কখনও লাল শাড়ী পড়িনি শুধু আজকের দিনটাতে পড়ব বলে। বাইরে ভীষন ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে। খোলা জানালা দিয়ে মাঝে মাঝে বৃষ্টির ছাঁট ভিজিয়ে যাচ্ছে আমায়। তোমার জন্য কি ভীষন অপেক্ষা করছি আমি আজ এই ভীষন মেঘলা দিনে! অপেক্ষার প্রহর যেন ফুরোতেই চাচ্ছে না। কি করছ তুমি? আজ তোমার এত কি কাজ?! কয়েক যুগ পরে যেন শুনলাম ' দেখি তো আমার ডাইনীটা আজ কেমন সাজে সেজেছে?' অবগুন্ঠন সরিয়ে মুগ্ধ বিস্মিত গলায় বললে ' আমার বউটা দেখি আরও সুন্দর হয়েছে!' তুমি কি জানো কত লক্ষ বছর ধরে অপেক্ষা করে আছি আমি শুধু তোমার এই মুগ্ধতা দেখার জন্য। দুচোখ ভরে গেল জলে। গভীর মমতায় জল মুছিয়ে দিতে দিতে আমার কানে কানে ফিসফিস করে বললে ' ডাইনীটা আজ পরী হলো কেমন করে বউ?!'
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
sraboni ahmed
@সেলিনা ইসলাম অনেক ধন্যবাদ গল্পটি পড়ার জন্য। বেদনাদায়ক পরিসমাপ্তিই হয় না ভালবাসায় অনেক আনন্দের পরিনতিও ঘটে। কান্না যেমন আছে অনেক আনন্দও আছে। এটুকু বলারই চেষ্টা করেছি মাত্র। ধন্যবাদ।
খন্দকার নাহিদ হোসেন
তো গল্পের ডাইনী গল্পে ঝড়-বৃষ্টি মাখুক! আর গল্পকার কে বলতেই হচ্ছে বড় আবেগ লেখাটিতে ছিল। পছন্দের তালিকায় গল্পটি নিলাম। আর কিছু বলতে হবে?
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।