নির্বাসন দণ্ড

বিশ্বকাপ ক্রিকেট / নববর্ষ (এপ্রিল ২০১১)

আহমাদ ইউসুফ
  • ১৫
  • 0
  • ৮১
২০০৩ সাল। সবে এসএসসি পরীক্ষা দিলাম। ভাবলাম ইচ্ছামত বেড়ানো যাবে। পড়াশুনার চাপ থাকবে না। সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফেরার অমোঘ নিয়মের কিছুটা এদিক সেদিক করা যাবে। কিন্তু ভাগ্য আমার সহায় হলনা। হঠাৎ একদিন বড় ভাইয়ের গুরুগম্ভীর বার্তা ভেসে এল ইথারে। " মা আহমেদকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিন। কলেজে ভর্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত আমার এখানে থাকবে"। এ অমোঘ বার্তা শোনার জন্য আমিই দায়ী। কেননা ছোট বেলা থেকেই আমি ছিলাম ভদ্র এবং সাদাসিধা টাইপের নিরীহ গোবেচারা। কিন্তু তলে তলে অনেক দুষ্টুমি ফাজলামি করতাম। এতদিন সবকিছু ঠিকঠাক মতো চললেও এবার বুঝি শেষ রক্ষা হল না। পার্শ্ববর্তী গ্রামের এক হিন্দু স্কুল শিক্ষকের মেয়ের সঙ্গে প্রেমের ঘটনা সবার মুখে মুখে। বলা বাহুল্য তিনি ছিলেন আমার এক বছরের সিনিয়র আপু। এ ঘটনা প্রকাশ হওয়া মাত্রই আমার পরিবার আমাকে নির্বাসনে পাঠানোর জন্য উঠে পড়ে লাগল। এরই ফলশ্রুতিতে আমার দেলুটি, পাইকগাছা অভিমুখে যাত্রা। খুলনা জেলার পাইকগাছা থানাধীন দেলুটি পূর্বপাড়া গ্রামটি একখন্ড দ্বীপ যার চারপাশে নদী। যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হল ইঞ্জিন চালিত নৌকা। আমার বড় ভাই ওই এলাকার একমাত্র মাদ্রাসাটির একজন নবাগত শিক্ষক। আমার ভাগ্য সুপ্রসন্নই বলা চলে এই কারনে যে আমার সহযাত্রী হিসেবে বাল্যবন্ধু আরিফকে পেয়ে গেলাম। সেও অনেকটা রোমাঞ্চ বা অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় আমার সঙ্গী হল। নির্দিষ্ট দিনে আমরা যাত্রা করলাম। প্রথমে খুলনার গল্লামারী বাস স্ট্যান্ড থেকে কৈয়া বাজার। সেখান থেকে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ট্রলার ভ্রমণের পর অবশেষে দেলুটি পৌছলাম। আমরা দুজন ইয়াং চ্যাপ অল্প কয়েকদিনের মধ্যে ওই এলাকার স্টার হয়ে উঠলাম। ছেলে, বুড়ো আর বৌঝিরা আমাদের দিকে কৌতুহল নিয়ে তাকায়। মনে হয় যেন আজব কোন প্রানী দেখছে তারা। আমাদের কাজ হল মাদ্রাসায় বাংলা, ইংরেজি ও গণিতের ক্লাস নেয়া, বিনিময়ে থাকা-খাওয়া ফ্রি। সেইসাথে সূরা কেরাত ও প্রয়োজনীয় মাসলা মাশায়েল শিখে নেয়া। যাই হোক এভাবেই চলছে দিন। মন্দ লাগছে না। কেমন রোমাঞ্চ বোধ হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা আমি তো নির্বাসনে। তার আবার ভাল লাগা মন্দ লাগা কি? তখনকার মানসিক অবস্থার সাথে এমন একটা পরিবেশ খুবই মানানসই। কেননা সবচেয়ে প্রিয় মানুষটি ততো দিনে হয়ে গেছে পর। ভালবাসা হারিয়ে আমি হয়ে গেছি নিঃস্ব। তবুও আপ্রাণ চেষ্টা করতাম বর্তমান পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে চলতে। কিছুদিন যেতেই আরিফের রোমাঞ্চ কমতে শুরু করল। এক পর্যায়ে তা একেবারে শূন্যের কোঠায় নেমে গেল। আমাকে একা রেখে ও চলে এল। আমি আরো একা হয়ে গেলাম। একাকী অবসরে নদীর তীরে বালুচরে বসে থাকতাম। হাতে কলম ডায়রি নিয়ে দুকলম লিখতাম। কখনো বা উদাস দৃষ্টি মেলে ঠায় দাড়িয়ে থাকতাম। এভাবেই চলছিল দিন। হঠাৎ ছন্দ পতন ঘটল একদিন। ওই এলাকার জোয়ারদার সাহেবের নাতনী পড়ত আমাদের মাদ্রাসায়। শুনতাম মেয়েটি নাকি অনেক সুন্দরী। তার নাম হীরা। বোরকা পড়ে মাদ্রাসায় আসত। যদিও তাদের ক্লাস আমি নিতাম না। তারপরও যাওয়া আসার সময় দু একবার চোখাচোখি হতো তার সাথে। অপূর্ব সে চাহনি। টানা হরিণী চোখ আমাকে চুম্বকের মতো টানতো। আর নির্বাক চোখে কি যেন বলতে চাইত সে। চমৎকার দেহ সৌষ্ঠব আর গভীর কালো নীল চোখ আমার অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। এককথায় সে ছিল অনন্য, অসাধারণ। যেন গোবরে পদ্মফুল। ওই এলাকার আয়ের প্রধান মাধ্যম হল বাগদা চিংড়ির চাষ। ঘরগুলো সব মাটির তৈরি। মানুষগুলো সব অশিক্ষিত এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন, কিন্তু পরিশ্রমী। এহেন পরিবেশে হীরার মতো একটা মেয়ে রীতিমত বেমানান। বিকালে নদীর পাড়ে হাঁটতাম একাকী। আঁড় চোখে তাকাতাম হীরাদের বাড়ির দিকে। কোনদিন দেখতাম সখী পরিবেষ্টিত হাস্য কোলাহলে মগ্ন হীরা। কখনো বা বাড়ির ছাদে এলোচুলে একাকী বিষণ্ণ এক মানস প্রতিমা। আমি ভেবে পেতাম না কি এমন দুঃখ মেয়েটার। এত অল্প বয়স। বড়ো জোড় ১৩ বা ১৪। এত উচ্ছল প্রাণবন্ত মেয়েটা কি করে এত আনমনা হয়, এত উদাস হয়।

প্রতিদিনকার মতো সেদিনও ক্লাস থ্রির ইংরেজি পড়াচ্ছিলাম। আমার ছাত্র আদনান বলল স্যার বাথরুমে যাব। কেন? ক্লাসের মধ্যে কোন বাথরুম যাওয়া যাবে না। কথাটা বলে পিছনে ফিরে তাকাতেই আমি চমকে উঠলাম। আরে এতো হীরা। সাক্ষাৎ ভেনাসের প্রতিমূর্তি। হীরাই আদনান কে ইশারায় ডাকছিল। ঘটনাটা বোঝার সাথে সাথে বললাম আচ্ছা যাও। ক্লাস শেষে আদনান আমার হাতে একটা মুখবন্ধ খাম ধরিয়ে দিল। কোন সম্বোধন ছাড়াই লিখল হীরা, "আপনাকে আমার অনেক পছন্দ। আমি আপনাকে ভালবাসি। আপনি কি আমাকে ভালবাসবেন"। আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম। বলে কি মেয়েটা! পাগল টাগল হয়নি তো! আরো লিখল আমার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করবে সে।
সদ্য ছ্যাকা প্রাপ্ত এক তরুন আমি, অন্তরে অনুভবে দগদগে ক্ষত। আত্নীয় পরিজন ছেড়ে নির্বাসন যাত্রা। সব মিলিয়ে বিপর্যস্ত, তীরহারা এক পথিক আমি। কোন পিছুটান নেই আমার। সময়ের স্রোতে গা ভাসানোই আমার লক্ষ্য। সেই নিঃস্ব তীরহারা নাবিকের দ্বারে আজ দাড়িয়ে আছে ভেনাস কিংবা ক্লিওপেট্রা। এযে স্বপ্নেরও অতীত। সারা রাত ঘুম হল না। আকাশ পাতাল অনেক ভাবলাম। সবকিছু আবার নতুন করে শুরু করলেই হয়। হীরার মতো সুন্দরী মেয়ে যাকে ভালবাসতে চায় তার আবার দুঃখ কিসের? তার মতো ভাগ্যবান আর কে হতে পারে। আমি সেই ভাগ্যবান হতে চাইলাম। কিন্তু না শেষ পর্যন্ত পারলাম না, আমি পারলাম না সুনয়নাকে ভুলতে। যার ফলে হীরার চিঠির জবাব দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব হলনা। এদিকে আমি জানতেও পারলাম এর ফলে আমি কি হারালাম। আর একটা নিষ্পাপ মেয়েকে কোথায় ঠেলে দিলাম। যখন জানলাম তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে। যাই হোক তখনকার পরিস্থিতিতে হীরার আহ্বানে সাড়া দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। তারপরও সময়ে-অসময়ে রাস্তায়, খেয়াঘাটে মুখোমুখী হতাম আমরা। কোন কথা হতনা নির্বাক শুধু দৃষ্টি বিনিময় ছাড়া। হীরার চোখে দেখতাম অবজ্ঞা, ঘৃনা, আর হতাশা। আমার অক্ষমতা আমাকে কুরে কুরে খেতে লাগল। কিন্তু আমি নিরুপায়। দেখতে দেখতে তিন মাস কেটে গেল। ইতোমধ্যে এস এস সি পরীক্ষার রেজাল্ট বের হল। আমার নির্বাসন দন্ড শেষ হল। বাড়ি ফিরে এলাম। পরে ওই এলাকায় আর যাওয়া হয়নি। শুনলাম হীরার নাকি বিয়ে হয়েছে এক হুজুরের সাথে যে কিনা আমার ভাইয়ার বন্ধু। তার সাথে আর দেখা হয়নি। জানিনা সে কেমন আছে?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মাহাতাব রশীদ (অতুল) ভোট দেও শেষ দিন।সবাইকে উতসাহিত করছি।১ম থেকে ৫ম এর ভিতরে না থাকতে পারলে দুকখ করার মানে নেই।কারণ একদিন সবারি জিত হবে।
সৌরভ শুভ (কৌশিক ) Ahmed ইউসুফ,তুমি কেন আছ চুপ /লিখেছ ভালো ,চালিয়ে যেও /
এস, এম, ফজলুল হাসান অনেক ভালো লেখেছেন , ধন্যবাদ আপনাকে
বিষণ্ন সুমন তোমার লিখায় প্রচন্ড আবেগ আছে. তাই পড়তে খারাপ লাগেনি. কিন্তু বিষয়ভিত্তিক নয় বলে ভোট দেবার কোনো সুযোগ নেই. আশা করি এর পরেরবার মা নিয়ে লিখবে. শুভকামনা থাকলো.
মা'র চোখে অশ্রু যখন ভালই তো লাগলো কিন এই পর্বের না
মাহাতাব রশীদ (অতুল) ভাল লেগেছে ।হীরা কি ক্লিওপেট্রার মত সুন্দর।৫ এ ৪।
শাহেদুজ্জামান লিংকন হুজুরের প্রেম। ওয়াছিম ভাইয়ের সাথে একমত। আমার লেখা পড়বেন। ভাল লাগলে ভোট দিবেন।
সূর্য লেখার ধরনটা মন্দনা। চলুকনা লেখালেখি====০====

২২ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪