হেমন্ত-কুয়াশা এবং ফেসবুক-স্ট্যাটাস

গ্রাম-বাংলা (নভেম্বর ২০১১)

কাজী Rafi
  • ৪১
  • 0
  • ৮৪
নিজেকে কারণ ছাড়াই 'গুরুত্বপূর্ণ ' করে তোলা অথবা
নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবার এই যুগে, আমাকে 'গুরুত্ব' দিয়ে
প্রিয় মৌটুসী, হাসপাতালে তুমি দীর্ঘপ্রহর অপেক্ষা করেছিলে।
‘হাসপাতাল-কেবিনের সাদা বিছানার কাছে...প্রায় নিথর তোমার
শরীরটার কাছে এই হয়ত আমি এসে গিয়েছি...’ -ভেবে
তোমার ক্লান্ত দুচোখে জেগে উঠা প্রেরণার ঝিলিক খেলা করেই
...নিষ্প্রভ হয়ে আসে।

হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে দুর্বল লম্বা-সাদা নখগুলো দিয়ে
আমার দুহাত আঁকড়ে বলেছিলে, ‘একদম মন খারাপ করবে না।
শরীরের যত্ন নিও। ফ্রিজে খাবার রেখেছি -সময় করে খেয়ে নিও।’
তারপর তোমার চোখের মণিতে অদ্ভূত আলোর নাচন তুলে ক্লান্ত
স্বরে বললে ‘দেখো আমি তাড়াতাড়িই ভালো হয়ে উঠব! ফিরে এসে ...তোমাকে ভালোবাসব হেমন্তের কুয়াশার মতো।’
ব্রেন-ক্যান্সারে আক্রান্ত তোমার চিন্তায় বিহবল আমি অবাক হয়েছিলাম ‘হেমন্তের কুয়াশা!?’
‘হ্যাঁ, দিগন্তরেখায় প্রকৃতিকে সে কেমন করে আঁকড়ে থাকে!’
তোমাকে ফিরে পাবার জন্য হু-হু মনটাকে ভালোই সামলে নিলাম
টিভি-সাক্ষাৎকার,ফেসবুকে দেওযা আমার স্ট্যাটাস, কবিতা...
আমিময় আমার কর্মমুখরতার অসংখ্য মন্তব্যের অভিলাষে ‘গুরুত্বপূর্ণ’হয়ে উঠা এই আমি কখন যেন তোমাকে ভুলে গেলাম! ‘গুরুত্বপূর্ণ’ আমাকে ‘গুরুত্ব’ দিতে গিয়ে বদলে ফেললাম মোবাইল-সীম আর ভুলে গেলাম কোনো একদিন তুমি আমাকে বলেছিলে
‘তোমাকে ছাড়া এই জীবন আমি চাই না!’
হেমন্তের প্রান্তরেখায় জেগে উঠা কুয়াশার স্বপ্ন হয়ে এনাস্থেশিয়ার
মাদকতা ছড়িয়ে পড়ল তোমার স্নায়ুতন্ত্রে।তোমার ঠোঁটে তখনো
হাসি জেগে ছিল -কারণ তুমি জানতে আমি এখনই চলে আসব
কাছে এসে তোমার হাত ধরলে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ তোমার এই
‘প্রকৃতি’কে তুমি মুড়িয়ে নেবে ‘কুয়াশা’র উষ্ণতায়...

তোমার জ্ঞান আর ফেরে নি। অজ্ঞান তোমার স্নায়ুতন্ত্র ঘোর-ঘোর
আলো-আধাঁরীতে বিস্তৃত হতে হতে প্রাণপন চেষ্টায় আমার নাম
ধরে চিৎকার করে ডাকতে চেয়েছিল ...শতকন্ঠে!
তখন তোমার প্রিয় সেই সুন্দর হলুদ পাখিটা আমার
জানালায় নীরিহ চোখ মেলে কেন যেন বার বার ‘ঠক’ ‘ঠক’
শব্দ করছিল।ভক্তদের সাথে চ্যাট করতে ঝামেলা হচ্ছিল বলে
পাখিটাকে আমি তাড়িয়ে দিয়েছি...

‘হাসপাতাল থেকে গাড়ি এসেছে!’ দাঁড়োয়ানের কথায়
বাইরের আলোর দিকে আমি চোখ মেলে তাকালাম...

তোমাকে ঘিরে শত-নিস্তব্ধতার উৎসব।হাসপাতালের
শ্বেত-শুভ্র বিছানায় নিঃশব্দতার অনন্ত বিদ্রুপ!
তোমার গালের টোলটা মিলিয়ে গিয়ে হয়ে গেছে
আমার জীবন ইসিজির সরলরেখা...
নখের শেষপ্রান্তে মেহেদীর আলতো রেখা আমার দিকে
কেমন অহংকারী চোখ তুলে তাকিয়ে আছে।তোমার
মেঘ-বিস্তৃত মাথার চুলগুলো আমার নাসারন্ধ্রে গন্ধে-আকুল জীবনের গান আর গাইবে না।
আমার চুলে বিনুনী কাটতে কাটতে তোমার লম্বা
নখগুলো আর কোনোদিন আমাকে স্বপ্নের ঘোরের ভেতর
ডুবিয়ে দৃশ্যকল্প দেখাবে না...

তোমার কন্ঠের কাছাকাছি জেগে থাকা লাল তীলটা
কোনোদিন সেই গানটার সুরে আর আরক্তিম হবে না
‘তোমায় ছাড়া এ জীবন আমি চাই না...।’
ঘন রাত নেমে আসে। ভোর হলে এই হেমন্তের
দিগন্তরেখার-প্রান্তে তাকিয়ে আকুল দুচোখে আমার ‘কুয়াশা’, এখন আমি তোমাকেই খুঁজি।

আমার এখন অফুরন্ত সময়... তবু ফেসবুকে স্ট্যাটাস
দেওযার মতো ভাষা হারিয়ে, হাজার স্ট্যাটাসের ভিড়ে
তোমার শান্তনু তাকিয়েই থাকে...

মনে মনে তার পরজন্মে কুয়াশা-ভেজা প্রকৃতি হয়ে জন্মাবার সাধ!
আমায় ছাড়া তুমি জীবন চাও নি...-স্রষ্টাও তাই-ই শুনলেন!
তোমায় ছাড়া 'গুরুত্বপূর্ণ ' হয়ে উঠার ছক-জীবনের
এ কেমন অদ্ভূত শাস্তি!
প্রিয় মৌটুসী, তোমায় ছাড়া আমার জীবন এত 'গুরুত্বহীন' জানলে
নিজেকে 'গুরুত্বপূর্ণ' শব্দের মিথ্যা প্রহসনে কোনোদিন জড়াতাম না!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
কাজী Rafi সামা, ধন্যবাদ, 'রংধনুর সাকো'.......... উপন্যাসটি প্রকাশ করবে , বিদ্যাপ্রকাশ .......
Shama স্যার, আপনার লেখা আবার এসে পড়লাম... আপনার দীর্ঘ উপন্যাস পড়ার মজা আলাদা .... আগামী বইমেলায় আমরা আপনার কোনো উপন্যাস পাব কি? আপনার উপন্যাস পড়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি...
কাজী Rafi রনীল, অনেক অনেক ধন্যবাদ , শুভকামনা
রনীল অতুলনীয় আপনার লেখনী। পুরো দৃশ্যটা এতো নিপুন ভাবে তুলে ধরলেন যে মুগ্ধ হয়ে গেলাম।
কাজী Rafi ফজলুল হাসান , নিলোন্জনা নীল ... অনেক ধন্যবাদ, শুভকামনা
নিলাঞ্জনা নীল অনেকক্ষণ পর অভিভূত হবার মত একটি কবিতা পড়লাম অসাধারণ..........
এস, এম, ফজলুল হাসান কবিতায় গ্রাম-বাংলা নেই। তবুও ভালো লাগলো কবিতাটি | ধন্যবাদ |
কাজী Rafi ফাতেমা প্রমি , সামা... ধন্যবাদ আমি অনুপ্রাণিত ...
Shama ওহ গড! কাজী রাফির লেখা এখানে? আমি আপনার ' ধুসর স্বপ্নের সাসান্দ্রা' উপন্যাস অনেকবার পড়েছি, যতবার পড়েছি , ততবার কেদেছি.... এই লেখা ' ধুসর স্বপ্নের সাসান্দ্রা' উপন্যাসের কাছে কিছুই নয়....
ফাতেমা প্রমি এত ভালো করে কেউ কিভাবে লিখে??? এত সুন্দর আবেগের প্রকাশ করা সহজ কাজ না!!!!

০৪ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী