নীল দিগন্ত

দিগন্ত (মার্চ ২০১৫)

আরিফ বিল্লাহ
  • ৬৬
এক
বাসায় ফিরতে একটু দেরি হলো। ৭ নম্বর গাড়ির ধকল আর হাঁটা কিছুটা পথ। মাথা ঝিমঝিম করছে । সকালে না খেয়ে বের হয়েছিলাম। এখন টের পাচ্ছি ক্ষুধা কাকে বলে। একেবারে ক্ষুধিত হায়েনা। বাবার ফোন এলো। একটু সময় লাগলো বাবাকে বুঝিয়ে বলতে যে আজকের পরীক্ষাটা আমি না দিয়েই হল থেকে বের হয়ে গিয়েছি। পরীক্ষা থাকলে বুয়া আসবে না এটা যেন নিয়তির লেখা। আজও রান্না হয়নি। আমার খাবারের শেল্ফটা ফাঁকা।
আমি কি একটু ভয় পাচ্ছি?

হতে পারে, কেমন একটা হাত পা ঠান্ডা হবার অনুভূতি। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো, এখন? ডোনা অপেক্ষায় ছিলো এতক্ষন, ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেছে ওর। ওকে না পারব বুঝিয়ে বলতে, না পারব মিথ্যা বলতে। পরীক্ষা দিইনি জানলে আমার থেকে ওই বেশি কষ্ট পাবে। আমি হত বিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। ফোনটা বেজেই চলেছে।


দুই
নাহ এই ফোন রিসিভ করার সাহস আমার নেই। ফোনটা বেজে বেজে থেমে গেল । জামা কাপড় পরিবর্তন করার শক্তিও নেই, বিছানায় এলিয়ে দিলাম শরীর। চোখটা লেগে এসেছিলো। আবার ফোন বাজলো । না এবার ডোনা নয়, ফোন করেছে নিলয়।
নিলয়ঃ- দোস্ত এখনি একটু আসতে পারবি আমার হলে?
-কেন কী হয়েছে?
-খুব খারাপ লাগছে মনটা। তোকে আগে বলিনি, আজ মৌমিতার বিয়ে। আমি হতবম্ব হয়ে গেছি। মানে? শুধু এই কথাটুকুই বের হলো মুখ দিয়ে।
ওপাশ থেকে উত্তর আসতে একটু দেরি হলো। তার পর অল্প অল্প করে জানা গেল আসল ঘটনা। ছেলে জার্মান প্রবাসী। বুয়েট থেকে পড়েছে যান্ত্রিক প্রকৌশলে। বেশ বড় একটা চাকরি করে সেখানে।
কিন্তু এত দিনের প্রেম এত সহজে ভেঙ্গে গেল! মৌমিতার বাড়ির অনেকেই ওদের সম্পর্কের কথা জানতো,বন্ধু মহলের কথা বাদই দিলাম। সবাই কিভাবে পারলো এই সিধান্ত নিতে !
টলতে টলতে বের হলাম বাসা থেকে। গা গুলানো ভাবটা দূর হয়নি। একটা রিক্সায় উঠে বসলাম, মুখে বললাম সূর্যসেন হল। মাথার ভিতরে একটা প্রশ্ন বার বার ঘুরে ফিরছে। আচ্ছা যদি ডোনার এমন বিয়ে হয়ে যায় ! কোন এক প্রবাসী ধনীর দুলাল যদি এসে তুলে নিয়ে যায় দূর কোন দেশে ! মনকে বুঝালাম এ অসম্ভব। কখনও হবে না এমন কিছু। মাথার ভিতর ঘুরে উঠল। পুরনো মাইগ্রেনের ব্যাথাটা ছুরির ফলার মত আচরণ করছে। রিক্সাওয়ালার ডাকে সম্বিত ফিরে পেলাম। মামা আইসা পড়ছি, নামবেন না?

তিন
নিলয়ের সাথে রাত ১০ টা অবদি কাটালাম। ওকে বুঝিয়ে বলার মত কোন ভাষা আমার সাধারণ জ্ঞানের বাইরে। পরদিন বিকেলে ডোনার সাথে আমার দেখা হলো। এত সাধারণভাবে কথাগুলো বলবে আমার জানা ছিলো না। আমার পরীক্ষা কেমন হয়েছে সে ব্যাপারে তার কোন আগ্রহ বা কৌতূহল নেই।
পরিষ্কার গলায় বলল তোমাকে কিছু কথা বলার জন্য ডেকেছি। আমি ওর মুখের দিকে তাকালাম। ওর দৃষ্টিতে কোন গভীরতা নেই।
ডোনাঃ- আমাদের এই সম্পর্ককে তুমি যাই বলো আমি কিন্তু প্রেম বলতে পারি না।
- মানে?
- আসলে তোমার সাথে আমার ঠিক মত যায় না। এটা তুমিও বুঝ আমিও বুঝি। মিছেমিছি কেন এত হাঙ্গামা বলো?
আমি নির্বাক হয়ে গেলাম। আমি বোধহয় ভুল শুনছি! ডোনা উঠে পড়ল। একবার পিছন ফিরে তাকালও না। অনেকক্ষণ বসে থেকে উঠে পড়লাম।

শেষ
গরম কফির কাপে শেষ চুমুক দিলাম। ল্যাপটপটা খোলা আছে। অনলাইন পত্রিকা গুলোতে পেট্রোল বোমার খবর দিয়ে ভর্তি। আগুন আর রক্তে ভরে আছে স্ক্রিনটা। হঠাৎ মোবাইলটা ভাইব্রেট করল। বিশেষ কোন ব্যক্তির জন্য আলাদা করে রাখা এই ফোনটাতে কোন কল আসে না প্রায় ৭/৮ মাস। সেই চির পরিচিত নম্বর দেখে হেচকি উঠে গেছে আমার। ফোনের দিকে বাড়ানো হাতটা কাঁপছে। কোনরকমে ধরলাম ফোনটা।
- “কেমন আছো?” সেই চির পরিচিত কণ্ঠ।
আমার মুখ দিয়ে কোন কথা সরছিলো না। আড় চোখে একবার কম্পিউটার স্ক্রিনে তারিখটা দেখলাম। আজ ১২ ই ফেব্রুয়ারি। কাল বসন্ত বরণ, তার পরদিন ভালোবাসা দিবস। একটা অদ্ভুত আবেগ, কিছুটা অভিমান আমার কণ্ঠকে রোধ করে দিয়েছে।
-কাল দেখা করতে পারবে?
আমি বললাম হুম ।
কথা শেষ হলে ব্যাল্কনিতে এসে দাড়ালাম। আকাশ আজ পরিষ্কার নীল। এমন নীল এক দিগন্তের আশায় কেটে গেছে হাজার হাজার মিনিট।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Fahmida Bari Bipu ছোট কিন্তু অনুভূতির বেশ সাবলীল প্রকাশ। শুভেচ্ছা ও ভোট রইল।
সোহেল আহমেদ পরান বেশ সাবলীল লেখা। ভালো লাগলো। শুভেচ্ছা আর সমর্থন রলো...
ভাই ধন্যবাদ আপনাকে
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল,পাতায় আমন্ত্রন রইল।
শুনে খুশি হলাম। আমন্ত্রণ গ্রহন করলাম
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ ডোনাঃ- আমাদের এই সম্পর্ককে তুমি যাই বলো আমি কিন্তু প্রেম বলতে পারি না। - মানে? - আসলে তোমার সাথে আমার ঠিক মত যায় না। এটা তুমিও বুঝ আমিও বুঝি। মিছেমিছি কেন এত হাঙ্গামা বলো? আমি নির্বাক হয়ে গেলাম। আমি বোধহয় ভুল শুনছি! ডোনা উঠে পড়ল। একবার পিছন ফিরে তাকালও না। অনেকক্ষণ বসে থেকে উঠে পড়লাম। ---------------এর পরের মাত্রা আরও বিস্ময়কর ! শুধু অপেক্ষার পালা ! ভাল লাগল ।
রুহুল আমীন রাজু চমত্কার গল্প .....ভালো লাগলো খুব .(আমার পাতায় 'কালো চাদ' গল্পটি পড়ার আমন্ত্রণ রইলো )
অনেক ধন্যবাদ ভাই...।
আতিক চৌধুরী আধুনিক সময়ের গল্প । বেশ ভালোই লেগেছে :)
আপনাদের ভালো লাগলেই আমি ধন্য...।
মনজুরুল ইসলাম prothom o prokito valobasha thakle hajar bochor poreo valobashar manushke mone pore.Samne agie jan.shuvo kamona.
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে...

০৪ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪