জুমানা তুমি আমার

ঈর্ষা (জানুয়ারী ২০১৩)

আরিফ বিল্লাহ
  • ১৫
  • ৭৭
প্রচন্ড রাগ নিয়ে নিজের খাতার দিকে তাকিয়ে আছে নীল। আগামী কাল কস্ট একাউন্টিং পরীক্ষা। এই পরীক্ষাটা তার জীবনের একমাত্র পরীক্ষা যেটা কি না তাকে দ্বিতীয় বারের মত দিতে হচ্ছে মানোন্নয়নের জন্য। বই খাতা হাতে নিতেই গত সেমিস্টার ফাইনালের কথা মনে হল তার। মাঝের সারির একটা বেঞ্চে বসেছিল ও, ওর পিছনে শংকর। পিছন থেকে কেউ একজন কথা বলে উঠল। ডিউটিতে ছিলেন নাফিসা ম্যাডাম । ম্যাডাম ওর সামনে আসলেন বললেন তোমাকে বারবার কথা বলতে দেখছি। এবার খতাটা আমাকে দাও। হতবম্ব হয়ে গেছে নীল। তার কোন কথায়ই শুনলেন না তিনি। খাতা নিয়ে চলে গেলেন ম্যাম। আধাঘন্টা পর ফেরত দিয়ে গেলেন। ততক্ষণে সমস্ত অংক গুলিয়ে ফেলেছে সে। আর কোন কিছুই মিলাতে পারেনি সেদিন।
এমনিতে পরীক্ষার আগের রাতে পড়েই পরীক্ষা দেয় সে। আজ তার বিরক্তির শেষ নেই। কিছুক্ষণ পর পর উঠে পড়ছে টেবিল ছেড়ে।
হঠাৎ কী যেন মনে হতেই মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে ব্লুটুথ ডিভাইস সার্চ দিয়ে বসল সে। $Jum@n@$ নামের এক ডিভাইস দেখাচ্ছে মোবাইলে। এ আবার কেমন নাম? দুষ্টুমি ভর করল মাথায়। একটা ফুলের ছবি পাঠানোর চেষ্টা করল সে ওই ডিভাইসে। বার বার রিজেক্ট করে দিচ্ছে। ওই ডিভাইসের নাম হঠাৎ করে পরিবর্তন হয়ে গেল। নাম হল Any Problem?
কী করবে নীল এখন? সে তার ডিভাইসের নাম Nil পরিবর্তন করে লিখল No Problem, Its deep night.।
ডিভাইসঃ- What do you do?
নীলঃ- Student. You?
ডিভাইসঃ- Student, Where?
নীলঃ- Jnu, You?
ডিভাইসঃ- Home Economics College,
নীলঃ- What subject?
ডিভাইসঃ- Food and Nutrition,1st year. you?
নীলঃ- BBA Finance 8th Semester.
ডিভাইসঃ- Ok Good Night.
নীলঃ- Good Night.
পড়াশুনা সিকেয় উঠল নীলের। বুঝতে পারছে না কী হতে কী হয়ে গেল কিছুক্ষণ।
কে এই মোবাইলধারী? কেউ কি তার সাথে দুষ্টুমি করছে?
Home Economics College মানে তো মেয়েদের কলেজ। যেই হোক সে আসে পাশেই থাকে। তা না হলে Bluetooth এ পাওয়া যেত না। এই সব চিন্তা করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ল সে।
পরের দিন পরীক্ষার হলে মন বসছে না নীলের। মনে হচ্ছে কখন শেষ হবে তার এই হাজতবাস। পরীক্ষা শেষ না হতেই বাড়ির উদ্দেশ্যে দৌড়। পিছন থেকে ডাকছে শংকর, শুনে যা নীল। কে শোনে কার কথা।
দুপুরের খাবার খায়নি এখনও। ভুলেই গেছে তাড়াহুড়ার কারণে সকালেও খেতে ভুলে গিয়েছিল। ঢাকাতে একটা মেসে থাকে সে। তাই খবার দাবার নিয়ে বাড়ির মত বকাবকি করার কেউ নেই এখানে। রুমে ফিরে Bluetooth সার্চ দিল। নাহ পাওয়া যাচ্ছে না ডিভাইসটা।
সারা দিন চেষ্টার পর রাতে দেখা পাওয়া গেল আবার। আনন্দে একবার ধক করে উঠল বুকের ভিতরে।
নীল লিখলঃ- Hi
ডিভাইসঃ- Hi
নীলঃ- Your Name?
ডিভাইসঃ- Jumana. and Your name is nice
নীল ভাবল তার নাম কিভাবে জানল? তারপর ভাবল ওহ তার Bluetooth এর নামতো তার নামেই দেওয়া ছিল।
ডিভাইস এর নাম পরিবর্তন করে করে একে অপরের কথার উত্তর দিতে বেশ অশুবিধা হতে লাগল।
কাল নীল বাড়ি যাবে, কারণ বাড়িতে আগেই বলেছে পরীক্ষার পরদিন বাড়িতে আসছে। এই কথাগুলো এই ক্ষণপরিচিতাকে জানানো উচিৎ।
নীল একটা বুদ্ধি বের করল। ফটোশপে একটা ছবি তৈরি করে তার উপরে লিখল আমি আগামী কাল বাড়ি যাচ্ছি। আপনার সাথে আমার কয়েকদিন কথা হবে না। নিচে আমার ফোন নাম্বার দিচ্ছি চাইলে আপনি আমার সাথে কথা বলতে পারেন। তারপর সেটা ফোন থেকে Bluetooth করে পাঠাল।
উত্তর আসল একটা ছবির উপরে মোবাইলে এডিট করা লেখা দিয়ে। আমি তো আমার নাম্বার আপনাকে দিতে পারছি না। এমনিতেই আমার নাম্বারে বিভিন্ন আজে বাজে কল আসে। আপনাকে কিভাবে বিশ্বাস করি!
নীল দেখল মেয়েটার (যদিও সন্দেহ আছে মেয়ে কি না ) বুদ্ধি আছে। মোবাইলে যে ছবির উপরে লেখা যায় বিষয়টি তার মাথায়ই আসেনি। তার পর সেও একই ভাবে লিখল Beliefs come from heart, it cannot be proved. Ok take care, bye.
জুমানাঃ- প্লিজ আপনি মাইন্ড করবেন না। আমার কিছুই করার নেই। Have a good journey.
নীলঃ- Ok bye.
নীল বাড়িতে গেল ঠিকই কিন্তু কোন কিছুতেই তার মন বসল না। মাত্র দুদিন থেকেই আবার ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হল। মাথার মধ্যে শুধু একটায়ই চিন্তা কে এই জুমানা? কোথায় থাকে সে?
তবে তার একটা ধারণা খুব সম্ভবত তাদের পাশের বিল্ডিঙেই থাকে কারণ ওখানে বেশ কিছু মেয়েদের হোস্টেল আছে। ঢাকাতে ফিরে প্রথমেই যোগাযোগের চেষ্টা করল। সারাদিন পর আবার রাতের বেলাতে সন্ধান মিলল জুমানার। সারা রাত একে অপরের লেখালেখিতে কেটে গেল। একে অপরের সাথে বিনিময় হতে লাগল পছন্দ অপছন্দের কথা। জুমানা জানাল নীলের পাশের বিল্ডিঙেই থাকে সে। নীল দুতলাতে জুমানা ৩ তলাতে।
নীল একসময় লিখল আপনার একটা ছবি পাঠান। আপনাকে একটু দেখতে চাই। জুমানা রাজি হচ্ছে না।
তবে শেষ মুহূর্তে একটা শর্তে রাজি হল।
শর্তটা হল এই কথা দিতে হবে দেখার পর ছবিটা Delete করে ফেলতে হবে।
নীল রাজি হল সে দেখার পর Delete করে ফেলবে। ছবিটা আসল।। দেখার পর অন্তরের মধ্যে একটা ধাক্কা খেল সে। অপূর্ব চেহারা মেয়েটার। তার পর তার নিজের ও একটা ছবি পাঠাতে হল।
পরবর্তী বেশ কয়েকদিন নীলের ছুটি আছে। সবসময় মোবাইলের Bluetooth খোলা রাখে সে। পরদিন দুপুরে জুমানা লিখল আমি আপনাকে দেখেছি। আপনার চোখগুলো বেশ বড়বড়। আপনি জানালার কাছে বসে আছেন না? ।আমি কি সঠিক বলছি? সাথে সাথে পাশের বাড়ির উপরের দিকে তাকিয়ে দেখল সেখানে দাড়িয়ে আছে জুমানা।
একবার তাকিয়েই মাথা নিচু করে ফেলেছে সে। ভীষণ লজ্জা পেয়েছে । কারণ শুধু একটা লুঙ্গি পরে জানালার কাছে বসেছিল এতক্ষণ।
মেয়েটা কি ভাবছে? সাথে সাথে উঠে একটা টি সার্ট পরে নীল। বেলকনি ছেড়ে উত্তরমুখী জানালাটার পাসে বসেছে জুমানা। জানালাতে তাকালে শুধু চোখ থেকে উপরের অংশটুকু দেখা যায়। তবে মিটিমিটি হাসছে যে তা বোঝা যাচ্ছে। সারা বিকাল মোবাইলে একে অন্যের কথা বিনিময়। এ এক স্বর্গীয় ভাল লাগা।
দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বেড়েই চলেছে। প্রশ্নত্তরে কেটে যাচ্ছে এক একটা রাত। দুজনেই সারা রাত জেগে থাকে। জুমানাকে নীল জিনুমিনু বলে ডাকে। নীলকে জুমানা বলে পক্ষী। সপ্তাহ খানিক পর সিদ্ধান্ত হল তারা সামনাসামনি দেখা করবে ।
নীল একটা পাঞ্জাবী পরে বসে আছে। অপেক্ষা করছে গ্রীন সিগনাল পাবার। মানে ততক্ষণে জুমানাও প্রস্তুত হচ্ছে বের হবার।
এমন সময় নীল লিখল কি ব্যাপার এত দেরি হচ্ছে। আমার মত একটা ছোট্ট মানুষের সাথে দেখা করতেও কি জিনিমিনুর ভয় হচ্ছে নাকি?
জুমানা লিখল আচ্ছা আপনার হাইট কত?
নীলঃ ৫ ফিট ২ ইঞ্চি
জুমানাঃ কি যে বলেন আমারই ৫ ফিট ৪ ইঞ্চি। আর আপনাকে তো দূর থেকে দেখে বেশ লম্বায়ই মনে হয়।
যেন বাজ পড়ল মাথায়। সারা পৃথিবী নড়ে উঠল নীলের ।
নীলঃ- আমি মিথ্যা বলি না। যেটা সত্যি সেটাই বলেছি। আপনার সাথে আমার দেখা করাটা ঠিক হবে না।
কিছুতেই নিজেকে বোঝাতে পারছে না। একী করেছে সে। এত এত কথার আদান প্রদান অথচ একে অপরের উচ্চতা নিয়ে তো কখনো কোন কথা জিজ্ঞেস করেনি তারা। এই কয়দিনে সে যে ভালবেসে ফেলেছে জুমানাকে। সত্যিই এ ভালবাসার কি কোন মুল্য নেই? বুকের ভিতরে হু হু করে উঠছে তার।
সে আবার লিখল জুমানাকেঃ আপনি আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। আসলে আমাদের দেখা করাটা ঠিক হবে না।
জুমানাঃ- আমার কিন্তু কোন প্রবলেম নেই, আর আমরা তো ভাল বন্ধু হয়েও থাকতে পারি নাকি?
নীলঃ- দেখেন যাকে মনের ভিতর থেকে ভাল লাগে তাকে বন্ধু ভাবি কি করে? আপনি আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।
জুমানাঃ- আপনার যা ভাল লাগে তাই করেন।
নীল বের হয়ে গেল বাসা থেকে। নিচে নামতেই মুখোমুখি দেখা হয়ে গেল দুজনের। জুমানাও নেমে এসেছে নিচে। নীল মাথা নিচু করে হাটতে থাকে। পিছন পিছন আসছে জুমানা। কেউ কোন কথা বলছে না। এক সময় অনুসরণ করা বন্ধ করল জুমানা।

বেশ রাত করে বাড়ি ফিরল নীল। বাড়ি ফিরতেই জুমানা তাকে লিখল আমার পক্ষে আপনার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করা সম্ভব নয়। আপনি আমার সাথে আগের মতই মিশবেন, আমাকে কথা দেন। আমাকে আগের মতই জিনুমিনু বলে আদর করে ডাকবেন।
এ কথার প্রতি উত্তরে কি বলবে নীল?
জুমানা আবার লিখল আপনি আমার সাথে কথা বলবেন, মোবাইলে?
নীল লিখল, না। আবার পরক্ষণেই লিখল আচ্ছা বলব। জুমানা তার মোবাইল নাম্বারটা ব্লুটুথ করে লিখে পাঠাল, ফোন করেন আমার মোবাইলে ব্যালেন্স নেই।
নীল লিখল কিন্তু আমারসাথে যে কথা বলে সেই তো প্রেমে পড়ে যায়। তাহলে?
জুমানা লিখল তাহলে কি আমাকে ফিরিয়ে দেবেন?

বেশ কিছুক্ষণ পর নীল ওই নাম্বারে ফোন করল।
নীলঃ- হ্যালো, কেমন আছেন?
জুমানাঃ- বুঝতে পারছেন না কেমন আছি? কেমন রেখেছেন?
তার পর কথা হল দুজনের প্রায় সারা রাত। সৃষ্টি হল নতুন অধ্যায়ের।
নীলের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হল আবার। এক একটা পরীক্ষা দিয়ে সে বাড়ি ফেরে। সারাদিন অপেক্ষা করে কাটায় জুমানা। নীল যতক্ষণ পর্যন্ত রাত জেগে পড়ে ততক্ষণ পর্যন্ত জেগে থাকে জুমানা। মাঝে মাঝে জানালায় এসে দেখা করে যায় দুজনে। ভালবাসা বুঝি এরই নাম। এর জন্যই বুঝি লায়লি-মজনু , শিরি-ফরহাদ জীবন দিতে কুণ্ঠা বোধ করেনি।
বিবিএ শেষ হয়ে আসছে নীলের। সামনে রোজার ছুটি। জুমানা বাড়িতে চলে যাবে নীল বাড়ি যাবার আগেই। দুজনেরই খুব মন খারাপ। জুমানা বলল মাত্র অল্প কিছুদিন তার পর তো আবার দেখা হচ্ছে। মন খারাপ করে না পক্ষী। আর আমি বাড়িতে যাবার পর নিয়মিত কথা বলব তো। তবুও কষ্ট হতে থাকে নীলের। কিভাবে থাকবে সে একলা এই ঢাকা শহরে। যেখানে থাকবে না জুমানা।
জুমানা বাড়ি চলে গেল। প্রায় প্রতিদিন কথা হয় তাদের দুজনের। একদিন সন্ধায় জুমানা ফোন করে বলল আমাকে ভুলে যাও নীল । আমি বুঝতে পারছি আমার পরিবার থেকে আমাদের এ সম্পর্ক কখনো মেনে নেবে না। নীলের পৃথিবী জুড়ে ভুমিকম্প শুরু হল। এ কি বলছে জুমানা।
সে বলল তোমাকে ভুলে যেতে আমি কখনই পারব না। এ অসম্ভব। আমার পৃথিবী জুড়ে তুমি।
জুমানা বলল দেখ আমাদের সম্পর্ক কখনই আমার পরিবার মেনে নেবে না। তুমি আমাকে মুক্তি দাও। তা না হলে আমরা যদি এভাবে যোগাযোগ রাখতে থাকি তবে ভবিষ্যতে আরও বেশি কষ্ট পেটে হবে। আমি এত কষ্ট সহ্য করতে পারব না।
এভাবে সকালেই এমন সন্ধ্যা নেমে আসবে তা কল্পনাও করেনি নীল। সে জুমানাকে বলে দেখ আমি যদি একটা ভাল চাকরি করতে পারি তাহলে তোমার পরিবার একসময় নিশ্চয় মেন নেবে।
জুমানা বলে আমার পরিবার সম্পর্কে তুমি জান না আমাকে প্রয়োজনে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দেবে তার পরও মেয়ের সাথে বেমানান একটা জামাই তারা মেনে নেবে না। তুমি কেন এমন অবুঝের মত করছ? মেয়ের চেয়ে লম্বায় খাটো জামাইকে কেউ মেনে নেবে না। আর আমি আমার পরিবারকে কষ্ট দিতে পারব না। তুমি আমাকে মুক্তি দাও।
তোমার দুটি পায়ে পড়ি তুমি আমাকে ভুলে যাও। তুমি আমার সাথে আর কখনো যোগাযোগ করবে না।
তুমি যদি আমার সাথে যোগাযোগের কোনরকম চেষ্টা কর তাহলে ওই বাসা আমি ছেড়ে দিতে বাধ্য হব।
বুকের পাঁজর ভেঙ্গে যাচ্ছে নীলের। একী হচ্ছে তার জীবনে। এমন অদৃষ্ট তার লেখা ছিল কে বা জানত! ছোট বেলা থেকে আজ অবধি কোন মেয়ের সাথে এমন করে মেশেনি সে,। খোদা তাকে এ কেমন পরীক্ষায় ফেললেন। জুমানাই বা তার সাথে এ কেমন ব্যাবহার করছে! দুচোখে অশ্রুর বদলে যেন রক্ত ঝরছে। হৃদয়খানা যেন কষ্টে কষ্টে আস্ফালন করে উঠছে।
বকরুদ্ধ হয়ে গেল সে। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেয় না এখন আর । ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতর হয়ে থাকে , খেতে বসলে বমি আসে। সারাদিন শুয়ে থাকে। ঘুম আসে না সমস্ত রাতে। ঘুমের ওষুধেও আর কাজ হচ্ছে না। কি করবে এখন? আত্নহত্যা মহাপাপ। তা না হলে আজ এখনই সেটা করে ফেলত।
একদিন পরই তাকে বাড়ি যেতে হবে, বন্ধু মামুনের সাথে বাড়িতে যাবার কথা ঠিক হয়েছিল আগে থেকেই। গাড়িতে ওঠার পর থেকেই সারা শরীর যেন কেমন করে উঠল। তার সমস্ত চেতনা জুড়ে শুধু জুমানা। ওই তো তার জুমানা তাকে ডাকছে। স্বপ্ন আর জাগরণের মধ্যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল নীল।
যখন জ্ঞান ফিরল তাকিয়ে দেখে একটা হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে। ওর মুখের উপর ঝুঁকে আছে আব্বু আর আম্মু। দূরে দাড়িয়ে আছে মামুন।

বিকেলের দিকে যখন ও একলা ছিল মামুন জিজ্ঞেস করল জুমানা কে রে? তুই জ্ঞান হারাবার আগে অমন জুমানা জুমানা বলে উঠলি? নীল কিছুই বলতে পারল না। কিছুক্ষণ ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে আবার অজ্ঞান হয়ে গেল।
মামুন অনেক চেষ্টা করে মোবাইলের এসএমএস গুলো পড়ে একটা নাম্বারকে জুমানার নাম্বার হিসাবে নিশ্তিত করল।
অনেকবার ফোন করার পরও যখন ফোন রিসিভ করল না, তখন মামুন তার নিজের পরিচয় দিল। বলল দয়া করে আমার ফোনটা একটু রিসিভ করেন। আমি নীলের বন্ধু।
সব কথা শুনে জুমানা বলল দেখুন আমি আর কিই বা করতে পারি আপনার বন্ধুর জন্য? আমার কিছুই করার নেই। মামুন তাকে বুঝায়। দেখেন ছেলেটা আপনাকে অনেক ভালবাসে। আমি আপনাদের এসএমএস পড়ে বুঝতে পারছি আপনাদের মধ্যে একটা বিশাল সমস্যা দাড়িয়ে আছে। কিন্তু সে তো অসুস্থ। আপনি তার পাশে একটু দাঁড়ান। ডাক্তার বলেছে তার পাশে আপনি না থাকলে ওর ব্রেইন ড্যামেইজের সম্ভাবনা ৯৫%।
মামুন আরও বলে দেখেন আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি আমি ওকে বুঝাব যাতে ও আপনাকে ভুলে যায়। জুমানা রাজি হল একটা শর্তে যে, সে কখনই নীলকে প্রেমিক হিসাবে দেখতে পারবে না । এবং মামুন সব দায়িত্ব নেবে যাতে নীল তাকে ভুলে যায়।

কিছুদিন পর সামান্যা সুস্থ হলে নীল একরকম জোর করেই ঢাকাতে ফিরে আসল। কিছুই ভাল লাগে না তার। এমনই এক দিনে জুমানা তাকে ফোন করল।
কেমন আছ? তুমি নাকি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলে? এখন কি খবর? শরীরের প্রতি যত্নবান হও।নীল ভাবল তার ভালবাসা তাহলে তাকে ছেড়ে যায়নি। নীল আস্তে আস্তে সেরে উঠতে লাগল। আবার ভালবাসার ছোওয়ায় তার মনপ্রাণ হয়ে উঠল সজীব।
সেদিন ছিল ২১ শে ডিসেম্বর। মায়া ক্যালেন্ডার অনুসারে নাকি পৃথিবী ধ্বংস হবার কথা।পৃথিবী তখনও ধ্বংস হয়নি। জুমানাকে ফোন করল নীল। জুমানা আগামী দিন বাড়িতে যাবে শীতের ছুটিতে তাই তাকে একটা কিছু গিফট দেবে এমনই চিন্তা নীলের। একটা শোপিছ সে দেখে রেখেছে। সেটা কিনে তাকে দেবে।
জুমানা ফোন রিসিভ করে বলল আমি একটু মামার বাড়িতে এসেছি, বাসায় ফেরার পর তোমাকে ফোন দিচ্ছি।
শোপিছের দোকানটাও বন্ধ। তাই সেটি আর কেনা হলনা। নিউ মার্কেট ঘুরেও পেল না অমন একটা কিছু। মন খারাপ হয়ে আছে নীলের। হাটছে ইডেন কলেজের সামনে পুটপাত ধরে। কিন্তু একী? ওখানে বসে আছে কে? ছেলেটার কাঁধে মেয়েটার মাথা। ছেলেটা অপরিচিত। কিন্তু মেয়েটা!
না না এ সত্যি নয়। কখনো সত্যি হতে পারে না। মনে মনে প্রার্থনা করে নীল যা দেখেছে তা যেন মিথ্যা হয়। এবার আবার তাকায় সেদিকে মুখটার একপাশ দেখা যাচ্ছে। গায়ের পোশাক গুলি পরিচিত। ভুল নয় মুখটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে ও সত্যিই জুমানা!
পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। বুকের ভেতরটা চিন চিন করে উঠল নীলের। শেষ মুহূর্তে বুঝি খুব ঈর্ষা বোধ হল ওই ছেলেটার ওপর, যার কাঁধে মাথা রেখে মিটিমিটি হাসছে তার জুমানা। তার পর?
পৃথিবীর সব কিছুই মেকি মনে হল তার কাছে। পৃথিবী নয় ধ্বংস হল একটা মাত্র জীবন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে দাড়িয়ে আছে মামুন। ওর সাথে আর কয়েকটা বন্ধু। একজন গেছে একটা এম্বুলেন্স ডাকার জন্য। নীলের পরিবারের সবাই তার জন্য অপেক্ষা করছে। সে ফিরলেই জানাজা হবে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
তাপসকিরণ রায় প্রেমের গল্পটি ভালো লাগলো--তবে শেষটা বড় করুণ!লেখককেধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ২৬ জানুয়ারী, ২০১৩
আপনাকে আন্তরিক স্বাগতম...
ভালো লাগেনি ২৭ জানুয়ারী, ২০১৩
পন্ডিত মাহী কথোপকথন নির্ভর বেশ একটি গল্প। ভালো লাগলো।
ভালো লাগেনি ২৬ জানুয়ারী, ২০১৩
মিলন বনিক সুন্দর গল্প...কিন্তু মানতে পারলাম না ২ ইঞ্চি উচ্চতার জন্য একটা জীবনের পরিসমাপ্তি....খুব ভালো লাগলো...শুভ কামনা....
ভালো লাগেনি ২০ জানুয়ারী, ২০১৩
প্রিয়ম মর্মান্তিক কাহিনী ভালো লাগলো |
ভালো লাগেনি ১৯ জানুয়ারী, ২০১৩
Rajib Ferdous মানব জীবনে ঈর্ষার এই অধ্যায়টি অতি চিরন্তন। খুব কম মানুষ পাওয়া যাবে যারা এই বিষয়ে ঈর্ষাবোধ করা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে। তাই বিষয়টি পুরনো। আর এরকম অনেক পুরনো থিম গল্পে বার বার ফিরে আসতে পারে। কিন্তু সেটা লেখনির গুনে কখনো কখনো সু-পাঠ্য হতে পারে বা পাঠক-হৃদয় বিদীর্ণ করতে পারে। তবে আপনার লেখায় সেটা লক্ষ্য করা গেলনা তেমন একটা। শুরুটা ভাল ছিল। বেশ গোছানো। কিন্তু মাঝে এসে হালকা আর গতানুগতিক হয়ে গেল। আর শেষটা হল একেবারেই সিনেমাটিক। পুরো গল্পটা গুরুত্বপায় কিন্তু শেষ কয়েকটি প্যারায় এসে। তাই সেদিকে যত্নবান হতেই হয় ভাল একটি গল্প লেখার জন্য। আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো।
ভালো লাগেনি ১৫ জানুয়ারী, ২০১৩
আহমেদ সাবের উচ্চতায় সামান্য ২ ইঞ্চি ব্যবধানের জন্য অমর প্রেমের সমাপ্তি - এটা বাংলাদেশেই সম্ভব! প্রেমিক-প্রেমিকাদের প্রতি বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ - প্রেম করার আগে দৈহিক উচ্চতা মেপে নেবেন। না হলে কপালে দুঃখ আছে। সাবলীল লেখা। ভাল লেগেছে গল্পটা।
ভালো লাগেনি ১৪ জানুয়ারী, ২০১৩
এশরার লতিফ ভালো লাগলো এ যুগের দেবদাসের গল্পটি, অনেক শুভকামনা.
ভালো লাগেনি ১০ জানুয়ারী, ২০১৩
পনাসিয়া মামুন সত্যি অনেক ভালো লাগল। তোমার জন্য শুভ কামনা...
ভালো লাগেনি ৮ জানুয়ারী, ২০১৩
ধন্যবাদ
ভালো লাগেনি ১১ জানুয়ারী, ২০১৩
এফ, আই , জুয়েল # ছোট ছোট সংলাপ আর প্রেম ভাবনার সাবলীল বর্ননায় অনেক সুন্দর একটি গল্প ।।
মো. ইকবাল হোসেন নারীর জন্য পুরুষের জীবন.....................হায়রে প্রেম.........ভাল লাগল।

০৪ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪