ব্যতিক্রমী শীত

শীত (জানুয়ারী ২০১২)

আবু ইউসুফ ফয়সাল
  • ২২
  • 0
আমি ফয়সাল। শীত আমার প্রিয় ঋতুগুলোর মধ্যে একটি। বরাবরের মতো সেবারও শীত নামক ঋতুটির দেখা মিলল। স্কুলের ছুটি হয়ে গেছে। শীতে নানীর বাড়ি যাবনা তাই কখনও হয় ? প্রতি শীতেই তো যাওয়া হয়। তাহলে এবার যেতে আপত্তি কোথায়? কেনই বা মা এবার যেতে রাজি হচ্ছেন না ? মা কে অনেক বুঝিয়েও কাজ হচ্ছে না। কেন তিনি এবার যেতে চাচ্ছেন না, বুঝতে পারছিনা। বোঝার চেষ্টাও করছিনা। অবশ্য আব্বার যেতে কোনো আপত্তি নেই। মা কে অনেক বোঝানো হল। শেষ পর্যন্ত নানীর বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত-ই ঠিক রইল। পরদিন খুব ভোরে না হলেও দুপুরের আগেই আমরা রওনা হলাম। নানীর বাড়ি খুব বেশী দূরে নয়। ঘণ্টা দুয়েকের রাস্তা। কিন্তু নানান কারনে দেরি হয়ে গেল। সন্ধ্যের ঠিক আগে আমরা সেখানে পৌঁছলাম। যাত্রা পথে আমাদের একটু কষ্ট হয়েছে ঠিক, কিন্তু নানীর মুখপানে তাকিয়ে যেন সব ভুলে গেলাম আমরা। আমি তখন খুব ছোট না হলেও খুব বেশী বড় নই। ক্লাস টু তে পড়ি। মনে হল আমাকে দেখে নানী খুব খুশি হয়েছেন। তখন মায়া-মমতা জিনিসটা খুব ভালো করে বুঝতাম না। তাই হয়তো সেদিনের সেই নানীর আদরটা খুব একটা মর্মস্পর্শী ভাবে উপলব্ধি করতে পারিনি। সন্ধ্যা শেষ হয়ে গেল। রাত নেমে আসতে লাগল। হাত-মুখ ধুয়ে আমি আমার মামাতো বোন তানিয়ার সাথে কিছু একটা খেলছিলাম। ঠিক কি খেলছিলাম তা এখন মনে করতে পারিনা। এমন সময় আমার নানী সেই ঘরে আসলেন। মুখে তাঁর এক অকৃত্তিম হাসি। সেই হাসি যেন সকল বেদনাকে নির্মূলে গ্রাস করে নেয়। এই প্রথম আমি নানীকে জিজ্ঞেস করলাম, “নানী , কেমন আছো ?” নানী হেসে হেসে জবাব দিলেন- “ভালো আছি গো।” ছোট বেলায় আমি অনেক কম কথা বলতাম। এখন হয়তো তা আর নেই। অনেক বাচাল হয়ে গেছি। এর আগে যতবার নানী-বাড়ি গিয়েছি, খুব কম-ই কথা হয়েছে নানীর সাথে।

রাত অনেক হয়ে গেছে। গ্রামে খুব তাড়াতাড়ি গভীর রাত হয়ে যায়। রাতে খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমিয়ে পরলাম। আমি শুয়েছি আমার ছোট মামার ঘরে। খুব ভোরে কার যেন আর্তনাদ-এ ঘুম ভেঙ্গে গেল। প্রথমে গলার স্বর চিনতে কষ্ট হলেও পরক্ষনেই বুঝতে পারলাম যে এটা নানীর আর্তনাদ। সকালে ফজর নামাজ পড়ার জন্য ওজু করতে গিয়েছিলেন তিনি। যাওয়ার পথেই হঠাৎ পরে গেছেন। আমি যখন উঠে নানীর কাছে গেলাম তখন দেখি নানী বারান্দায় একটি মাদুরের ওপর শুয়ে আছেন। ডাক্তার ডাকা হল। ডাক্তার আসল একটু দেরিতে। অ্যাম্বুলেন্সে করে নানীকে নিয়ে যাওয়া হল বগুড়ার সামসুন্নাহার ক্লিনিকে। সেখানে নয় দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর আমার নানী সবাইকে ফাঁকি দিয়ে অসীমের পথে পারি জমালেন। এত অল্প বয়সেই মৃত্যুকে চোখের সামনে থেকে দেখেছি। তবে মৃত্যুর সময় নানীর যে কোন কষ্ট হয়নি এতুকু বুঝতে পেরেছিলাম। মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আমার আব্বা নানীর পাশে বসে দোআ পাঠ করছিলেন।
তখন প্রায় মধ্য রাত। ধীরে ধীরে রাত আরও বাড়তে লাগল। রাত যতই গভীর হচ্ছে এক ধরনের শূন্যতা বোধ যেন মনে বাসা বুনে যাচ্ছে। আমার মা একদম নির্বাক হয়ে যান। কোন কথা বলতে পারেন না। যেন তিনি অধিক শোকে পাথর হয়ে গেছেন। সবার মুখপানে একবারটি তাকিয়ে নিজের অজান্তেই ক্লিনিকের জানালা দিয়ে বাইরে তাকাই। চারিদিক অন্ধকার। শুধুই অন্ধকার। হঠাৎ একটা রাত জাগা পাখি পাখা ঝাঁপটিয়ে উড়ে চলে গেল চোখের সীমানার বাইরে, ঠিক যেমনটি ভাবে কিছুক্ষণ আগে উড়ে গেল আমার নানীর প্রাণ-পাখি।

এরপর আমার জীবনে অনেক শীত এসেছে। আমি এখন আমি অনেক বড় হয়ে গেছি। দশম শ্রেণীতে উঠেছি। জীবনে হয়তো আরও শীত আসবে। কিন্তু সেবারের সেই শীতটি ছিল আমার কাছে ব্যতিক্রমী। একদম ব্যতিক্রম ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মামুন ম. আজিজ রিয়েল স্টোরি মনে হচ্ছে। প্রতিটি মৃত্যুই কষ্টের
মিজানুর রহমান রানা বনে হয়তো আরও শীত আসবে। কিন্তু সেবারের সেই শীতটি ছিল আমার কাছে ব্যতিক্রমী। একদম ব্যতিক্রম ।------------অনেক সুন্দর ------------
ভালো লাগেনি ২৪ জানুয়ারী, ২০১২
বশির আহমেদ ফয়সাল লেখার ষ্টাইল অনেক সুন্দর । চালিয়ে যাও । এগিয়ে যাও এই কামনা ।
ভালো লাগেনি ২৩ জানুয়ারী, ২০১২
মারুফ মুস্তাফা আযাদ অনেক সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি তোমার ভেতর। ধরে রাখ, ছেড়ে দিও না।
ভালো লাগেনি ২৩ জানুয়ারী, ২০১২
আসন্ন আশফাক ভালো, এগিয়ে যাও, একদিন বড় সাহিত্যিক পাব আশা করি
ভালো লাগেনি ১৬ জানুয়ারী, ২০১২
আবু ইউসুফ ফয়সাল ধন্যবাদ F.I. JEWEL
ভালো লাগেনি ১৫ জানুয়ারী, ২০১২
এফ, আই , জুয়েল # প্রিয় জনের মৃত্যুতে ব্যথাতুর হৃদয়ের করুন বর্ননার একটি গল্প ।।
ভালো লাগেনি ১৪ জানুয়ারী, ২০১২
আবু ইউসুফ ফয়সাল ধন্যবাদ পাঁচ হাজার
পাঁচ হাজার সব বিদায়ই কষ্টের। তীব্রতা বাড়ে কেবল মায়া, মমতা ভালবাসায়। গল্প সুন্দর হয়েছে, বেশ সুন্দর।

০৩ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী