প্রাচীর

কষ্ট (জুন ২০১১)

Lutful Bari Panna
  • ৪৪
  • 0
  • ৬৬
নৌ-যাত্রায় লঞ্চের চেয়ে স্টিমারই বেশী পছন্দ অভির। এদের প্রথম শ্রেণীর কেবিনগুলো অনেক বেশী সফিস্টিকেটেড, যথেষ্ট বড়। মাঝখানে অনেকটা স্পেস, কেবিনগুলো সেই স্পেসের চারদিকে ঘেরা। সিকিউরিটি ভাল, লঞ্চের মত ঠিক গণ নয়। এই মুহূর্তে ডিম লাইট জ্বালিয়ে একাকী নিজের মুখোমুখি। এটা ওর প্রিয় অবসর বিনোদন। কেবিনের দরজা ঠেলে মিষ্টি কোমল একটা কণ্ঠস্বর শোনা গেল, ‘এক্সকিউজ মি, আসতে পারি?’ একটু তটস্থ হয়ে জিজ্ঞেস করল অভি, ‘কেন বলেন তো, কে আপনি?’
"সেটা না হয় এসেই বলি।’
‘আপনি তো বেশ নাছোড়বান্দা, আচ্ছা আসুন।’ ছায়া ছায়া আলোয় মেয়েটাকে কেমন রহস্যময়ী মনে হচ্ছে। হাল্কা পারফিউমের মিষ্টি একটা সুবাস ছড়িয়ে পড়ল। গড়নটা ভাল, ফটোজেনিক। একটা চেয়ার টেনে বসল সে। খানিকটা ভড়কে গেল অভি। ওকে আরো একটু ভড়কে দিয়ে মেয়েটা বলল, ‘লাইটটা জ্বালবেন না?’
‘জ্বালতে চাচ্ছিনা। আপনি বরং যা বলতে চাচ্ছেন, বলে ফেলেন।’ একটা অগত্যা ধরনের ভঙ্গী করে বলল, ‘প্রথমেই বলব, আপনি কেন আলো জ্বালতে চাচ্ছেন না, সেটা আমি জানি। সুতরাং জ্বালাতে পারেন।’ সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাল অভি, ‘ব্লাফ দিচ্ছেন?’ মাথা নাড়ল সে, ‘না। আমার হাতে এটা অটোগ্রাফের খাতা। অটোগ্রাফ চাচ্ছি।’ অবাক হলো অভি, ‘কিভাবে চিনলেন বলেন তো? ছদ্মবেশে ত্রুটি থাকলে তো ভয়ের কথা। আরো কতজন টের পেয়েছে কে জানে?’ তাচ্ছিল্যের সঙ্গে ঠোঁট বাঁকাল সে, ‘এটা কোন ছদ্মবেশ হল। পুরু একটা গোঁফ লাগিয়েছেন, আর চুলের স্টাইল চেঞ্জ, ব্যাস।’ আবারো অবাক অভি, ‘মেয়েরা এত খুঁটিয়ে দেখে জানতাম নাতো। আপনার দৃষ্টির প্রশংসা করতেই হয়।’ এবার একটু দুষ্টু হাসি হাসল, ‘কৃতিত্বটা আমার নয়, আমার কাজিনের। অটোগ্রাফটাও ওর জন্য। প্লিজ লাইটটা জ্বালান।’
‘জ্বালাবো। তার আগে প্লিজ দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে আসেন। আমি চাই না আপনার মতো আরো কেউ অটোগ্রাফের খাতা নিয়ে ভিড় করুক। কি নাম আপনার কাজিনের?’ উঠে গিয়ে দরজা বন্ধ করে আবার এসে চেয়ারে বসল মেয়েটা। টুক করে লাইট জ্বেলে দিল অভি। দেখেই ফিক করে করে হেসে ফেলল। আধো আলোয় বোঝা যায়নি, এ যে অপ্সরী। ওই হাসি দেখে ক’জন খুন হয়ে গেছে কে জানে?
‘ওর নাম মুনিয়া। ভিখারুন্নিসার ছাত্রী। আপনার দারুণ ভক্ত। ওদের স্কুলের এক প্রোগামে আপনাকে সামনাসামনি দেখেছিল।’
‘মুনিয়া, বাহ। পাখীর নামে নাম। কোথায় মুনিয়া?’
‘একটু ঘুম কাতুরে। খেয়েই শুয়ে পড়েছে। তাছাড়া লাজুকও বটে। হয়ত আসতে চাইতো না।’
‘তাই নাকি, মুনিয়ার কাজিনের নামটা জানতে পারি?’
‘নিশ্চয়ই। আমি ঋষিতা। অনার্স থার্ড ইয়ার ইংলিশ। ঢাকা ভার্সিটি। ইন ফ্যাক্ট আপনি অভি হাসান হওয়ায় মুনিয়ার সংগে বাজীতে হেরে গেলাম।’
ক্ষমা প্রার্থনার হাসি হাসল অভি। ‘সো সরি, আই শুড নট অ্যাডমিট।’
দ্রুত মাথা নাড়ল ঋষিতা। ‘ওহ্‌ নো, আমি আসলে হেরেই জিতে গেছি।’
‘কিভাবে?’
‘এমন জনপ্রিয় একজন লেখককে একা পেয়ে গেলাম। হাউ থ্রিলিং। আচ্ছা আপনি পপুলারিটি এনজয় করেন না?’
‘অবশ্যই, কেন করবো না? এ কি হেলাফেলার জিনিস, ক’জন পায়?’
‘তাহলে লুকিয়ে থাকতে চাচ্ছেন কেন?’
‘কেন যে চাচ্ছি, না বুঝলে সেটা ঠিক বোঝানো যাবে না। আপনি যদি জনপ্রিয়তার ফাঁদে পড়তেন, বুঝতেন।’
‘আমার আর বুঝে কাজ নেই, আমি এমনিতেই সুখী। জনপ্রিয়তার দরকার নেই।’
‘ওয়াও! আপনাকে আমার হিংসে হচ্ছে। আপনার মত যদি সুখী হতে পারতাম।’
‘আপনি বুঝি অসুখী?’ কাঁধ ঝাঁকাল অভি, ‘যখন নিজের সঙ্গে একা কাটাই। অন্য সময় তো সুখ-দুঃখ নিয়ে ভাবারই সময় হয় না।’
‘একা কাটান কেন?’
এবার হাসল ও, ‘ঐ যে গান আছে না, আমি কষ্ট পেতে ভালবাসি.....’
‘তার মানে আপনি দুঃখবিলাসী?’
‘ঠিক বোঝানো যাবে না। আসলে সুখের সন্ধানে নিজেকে সময় দেই, বুমেরাং হয়ে যায়। রবীন্দ্রসঙ্গীতের মত, এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম, প্রেম মেলেনা। শুধু সুখ তো চলে যায়।’
‘বাহ। আপনি তো দেখছি প্রতি এগজাম্পলেই একটা করে গান টানছেন।’
‘এটাও একটা কষ্ট বুঝলেন। মনের একান্ত নিজস্ব অনুভূতিগুলো কেউ না কেউ বলে গেছেন। বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথ, মনের কোন অন্ধি-সন্ধিই স্পর্শ করতে বাকি রাখেননি।’
জলতরঙ্গের মিষ্টি অনুরণন তুলে হেসে উঠল ঋষিতা হাসতে হাসতেই বলল, ‘মনে হয় এ নিয়ে আপনি সাংঘাতিক ক্ষুব্ধ।’ অভিও হাসল, ‘কেমন একটা ঈর্ষা হয়। শুধু রবীন্দ্রনাথ নয় সব কিছুর প্রতি, সবার প্রতি। যেমন এই মুহূর্তে আপনার প্রতিও।’
আবারো তুমুল জলতরঙ্গের মিষ্টি ধ্বনিতে ভেসে গেল পরিবেশ। কি বলছেন? আমি! আমি তো খুব সাধারণ একটা মেয়ে, খু-উ-ব সাধারণ।’
‘মোটেই না, আপনি মার্জিত, রুচীশীল, ম্যাচিউরড, মানুষকে বোঝার চেষ্টা করেন। প্রাণবন্ত, আকর্ষণীয়, মিশুক, আত্মবিশ্বাসী.....’
‘থামুন, থামুন। ওরে বাবা, এত বিশেষণ। কিন্তু স্যার, সবই অপাত্রে দিলেন। এসব বরং আপনার বেলায় প্রযোজ্য। আমাকে আপনার ঈর্ষা করা হাস্যকর।’
‘একেবারে অস্বীকার করছি না। তবে এসব গুণ আপনাদের মত কাজে লাগাতে পারছি কই?’
‘কেন বলেন তো?’
‘টু বি অর নট টু বি, দ্যাট ইজ দ্যা কোশ্চেন। অনেক কিছুই ইচ্ছা করে যা করতে পারিনা।’
‘খ্যাতির বিড়ম্বনা এই তো। তা এমন কি ইচ্ছা করে যা করতে পারেন না?’
‘অনেক অনেক কিছু-

আমারও ইচ্ছে করে
ফুলে বসি- মধুকর হই
তুমুল বেড়াই ঘুরে-
পার্ক, লেক, পাহাড়ের চূড়ো
নীলাম্বু নীলিমা ছুঁয়ে, একান্ত নিবিড়
কারো হাতে রাখি তৃষাতুর হাত
উষ্ণ হৃদয় দিয়ে উষ্ণতাকে অনুভব করি

শাপভ্রষ্ট মগ্ন দেবতা এক-

আমারও ইচ্ছে করে ছুঁড়ে ফেলি
অহেতুক- মানবিক পোশাক-আশাক
ছুঁয়ে দেখি নিটোল সুন্দর
ছুঁয়ে ফেলি নিবিড় কমল
আমারও ইচ্ছে করে
ভেঙে ফেলি কাঁচের প্রাচীর
নগ্ন হৃদয় নিয়ে মিশে যাই নগ্ন হৃদয়ে’

‘চমৎকার! কার কবিতা বলেন তো?’
‘উমম্‌, ধরে নিন বেওয়ারিশ।’
‘আপনার নিজের নয়ত? তাহলে বলব গল্প ছেড়ে এবার কবিতা লেখা শুরু করেন।’
‘এ তো ঠিক কবিতা নয়। এ হচ্ছি আমি, আমার অন্তরাত্মার নিমগ্ন চিৎকার।’
‘অন্তরের পাথর ভেঙে যখন অনুভূতির ঝর্ণা বেরিয়ে আসে, তাইতো কবিতা। একি আমি আপনাকে শেখাবো?’
‘আপনিও কিন্তু কবিতার মত করে বললেন, আর বাড়িয়ে দিলেন কষ্ট।’
‘কষ্ট! কিসের কষ্ট বলেন তো?’
‘অনেক কষ্ট, ইচ্ছা পূরণ না হওয়ার কষ্ট।’
‘আরো একবার সেই হৃদয়ে ঝড় তোলা হাসিটি হাসল ঋষিতা, আপনার তো অনেক ইচ্ছা শুনি তো নতুন ইচ্ছাটা কি?’
‘বলছি বলছি, তার আগে প্লিজ হাসিটা একটু সামলান।’ একটু অবাক হল মেয়েটা, ‘কেন কেন? হাসি’র অপরাধ কোথায়?’ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল অভি, ‘আছে, অপরাধ আছে। ভেঙে যায়।’ নিজের বুকের উপর হাত রেখে আবার বলল, ‘এই খানটা ভেঙে যায়।’ এবার হাসতে হাসতে একেবারে ভেঙে পড়ল, ‘আপনি তো ডেঞ্জারাস মানুষ। ক’জনকে পাগল করেছেন বলেন তো?’ চিন্তিত হবার ভান করল অভি, ‘সে তো গুণে বলতে পারব না। আপনি তো জানেনই আমার ব্যাপার, কত ভক্ত অনুরাগী। কিন্তু আপনি ক’জনকে..? গুণতে পারবেন তো?’ হাসলেও খানিকটা সিরিয়াস মনে হল মেয়েটাকে, ‘এসব নিয়ে ঠিক মাথা ঘামাই না, বোঝেনই তো। বললেন না, আপনার ইচ্ছাটা কি?’ অভিও একটু সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল, ‘আসলে আপনার মত এত চমৎকার চ্যাটিং পার্টনার অনেক দিন পাই নি। ভাগ্যিস আপনি জোর করে ঢুকে পড়েছিলেন। খুব ইচ্ছে হয় এরকম চমৎকার অনুভূতিপ্রবণ একটা মেয়েকে নিয়ে ইচ্ছেমত ঘুরে বেড়াতে, মন খুলে গল্প করতে, পরস্পরকে অনুভব করতে...’
‘এ তো কোন সমস্যা নয়। ঠিক এরকম দেখে একজনকে জীবনসংগী করে নেন।’ হাসল অভি, ‘তবে আর রোমান্টিসিজম থাকলো কোথায়? বিয়ে মানেই তো ডায়ালেক্টিক। সংসারের প্যানপ্যানানি, সামাজিকতার যন্ত্রণা। রোমান্স কখন হাওয়ায় উড়ে যায়।’
‘হোয়াট এ ভিউ! ভেবে দেখিনি তো। আচ্ছা একটা কাজ করলে কেমন হয়?’ প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাল অভি, ‘কি কাজ?’ ঋষিতা বেশ খানিকটা দ্বিধান্বিত স্বরে বলল, ‘ইয়ে মানে আজ না হয় আরো কিছুক্ষণ... মানে... একটু বেশী সময়...’
‘গল্প করে কাটাই, তাই তো?’
‘এগ্‌জ্যাক্টলি, কেমন হয় বলেন তো?’
‘মন্দ নয়, তবে আপনার কেবিনে বোধ হয় সাড়া পড়ে যাবে। সঙ্গে কে কে আছে?’
‘আরে সেটাই তো সুবিধা। শুধু আমি আর মুনিয়া।’
‘মুনিয়া একা একা ভয় পাবে না?’
‘ঘুমুলে ওর হুঁশ থাকে না। কেবিন বন্ধ করে এসেছি।’
‘আপনারা যাচ্ছেন কোথায়?’
‘বরিশাল শহরেই। মুনিয়াদের বাড়ি। আমি ওকে পৌঁছে দিতে এসেছি, আপনি?’
‘বই মেলা চলছে জানেনই তো, কয়েকজন বন্ধুর আমন্ত্রণে আসা। দিন তিনেক আছি। কোথায় থাকবো এখনো জানিনা।’

এর পর। ক্রমেই গভীর হয় রাত। তীব্র আকর্ষণে মুখোমুখি বসে থাকে দু’জন। গল্প করে, হেসে কুটি কুটি হয়। কাঁপা কাঁপা ভীরু হাত ছুঁয়ে দেয় পরস্পরকে। এলোমেলো কথার ঝাঁপি, কবিতার পত্র-পুষ্প। অনুভূতির মায়াবী পরশে পরশে পরস্পরকে উন্মোচন। স্মৃতির অলিগলি হাতড়ে ছোট ছোট দীর্ঘশ্বাস। সম্বোধনের আলগা সুতো খুলে যায় মনের অজান্তেই। দ্রুত বয়ে যায় নিষ্ঠুর সময়। যেন নিমেষে কেটে যায় প্রহরের পর প্রহর। মনে হয় বলা হয়নি কিছুই। আরো একটু সময় পেলে বড় ভালো হত। উপায় নেই, প্রশ্রয়ের আঁচল বিছানো অন্ধকারের পর্দা তুলে নিচ্ছে পরিশ্রান্ত রাত। মাঝখানে আলোর প্রাচীর তুলে ভূমিষ্ঠ হচ্ছে আরো একটি দিন।
‘তুমি এখন যাও ঋষিতা স্ক্যান্ডাল হয়ে যাবে।’
‘স্ক্যান্ডালকে খুব ভয় তোমার?’
‘খুব খারাপ জিনিস। কাউকে বিশ্বাস করাতে পারবে কিভাবে কাটিয়েছি একটা রাত? অতৃপ্তি বুকে নিয়েই তো অহর্নিশ পথ চলা। রাতের পর রাত সময় পেলেও এ কি মিটবে?’
‘কবে দেখা হবে?’
‘যদি টান থাকে যে কোন সময়। ছেড়ে দাও না প্রকৃতির হাতে।

যদি কোন নষ্ট ক্ষণে, স্মৃতিময় কষ্টের দহন
ধিকি ধিকি পোড়ে মন, ফিরে যেও হৃদয়ের ঘরে
নিভৃতে দিও ডাক, শুনে নেব নিশ্চিত
আদিগন্ত লুকোনো ইথারে
দেখা হবে যে কোন সময়
যে কোন বিবাগী রাত, অচেনা দুপুর
একাকী নিজের মাঝে- নিমগ্ন যেকোন প্রহরে’

ধীরে ধীরে ফিরে আসে ঋষিতা, চুপচাপ শুয়ে থাকে মুনিয়ার পাশে। ঘুম আসে না, সব রাত ঘুমোবার জন্য নয়ও। সুবুদ্ধির সব কথা হৃদয়কে বোঝানো যায় না। একটা অদ্ভুত রাতের স্মৃতি থেকে থেকে ছলকে ওঠে মনে। ভেতরে তুমুল আততায়ী নিঃশব্দ ক্ষরণ। ঘাটে পৌঁছে গেছে ওরা। তীব্র সোরগোলে ঘুম ভেঙে যায় মুনিয়ার। দরজা খুলে বাইরে তাকায় দু’জনই। সোরগোলটা অভির কেবিনের সামনে, মুনিয়া অবাক হয়ে তাকায়। এক অতি উৎসাহী সহযাত্রী ঋষিতাকে বলল, ‘শুনেছেন ম্যাডাম আমাদের সঙ্গে অভি হাসান এসেছেন। কি আশ্চর্য টেরই পাইনি।’ মুনিয়া উজ্জ্বল চোখে তাকায়, ‘বলিনি তোমাকে?’ মুখ ফিরিয়ে কেবিনে ঢুকে যায় ঋষিতা, লোকটার বকবকানি শোনার ইচ্ছে নেই। একটা অচেনা কষ্টে জ্বালা ধরে যায় বুকে, চোখ ভরে জল আসে। একটি রাতের মূল্যে যে মগ্ন ঋষিকে সে চিনেছে, সে গোলাপ হৃদয়ের চারপাশে অসংখ্য কাঁটার বেষ্টনী। বুকের মধ্যে খচমচ করে রক্ত ঝরে।

বই মেলার একটা স্টলে আড্ডা দিচ্ছিল অভি। আজ দ্বিতীয় দিন, কালই চলে যাবে। নানা শ্রেণীর ভক্তরা আসছে। অটোগ্রাফ দিতে দিতে হাফিয়ে উঠেছে। চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে ধীরে ধীরে। মিষ্টি একটা কিশোরী মুখ হঠাৎ করে ভিতরে ঢুকে গেল। কোন কথা না বলে অভির পা ছুঁয়ে ধুলো নিল। ব্যগ্র দু’হাতে তুলে ধরল মেয়েটাকে, ‘কি নাম তোমার?’ ভীরু ভীরু চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘মুনিয়া।’
মুনিয়া! শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে শিহরন বয়ে গেল অভির। ব্যাকুল দু’টো চোখ দ্রুত স্টলের বাইরে খুঁজল কাউকে। মানুষের ফাঁকে ওই, ঐ তো সেই প্রিয় মুখ। পরস্পর মিলিত হল দু'জোড়া তৃষিত নয়ন। যেন বিদ্যুৎ তরঙ্গ বয়ে গেল এপাড়ে ওপাড়ে। বুকের মধ্যে সযত্নে লুকিয়ে রাখা যন্ত্রণাগুলো আশ্চর্য যাদুমন্ত্রে প্রশমিত হতে থাকলো, দু’জোড়া ব্যাকুল চোখে জলের রেখা এঁকে এঁকে। অদ্ভুত আনন্দ আর শিহরনে তুলোর মত হাল্কা হয়ে গেছে মনটা। হাতের খাতাটা উঁচু করল মুনিয়া, এটা আমার দিদির, অটোগ্রাফ দেবেন না? সেই চোখ দু’টোর দিকে আরো একবার হৃদয় ভরে তাকাল অভি। অটোগ্রাফের খাতা নিয়ে খুলল, নতুন কেনা। প্রথম পাতায় গোটা গোটা করে লিখল,

আমারও ইচ্ছে করে ভেঙে ফেলি কাঁচের প্রাচীর
নগ্ন হৃদয় নিয়ে মিশে যাই নগ্ন হৃদয়ে
- এক স্বপ্নীল রাতের মিষ্টি সহচরী, ঋষিতা রায়-কে
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Lutful Bari Panna আমিনা অসংখ্য ধন্যবাদ। গল্প নিখুত হয়েছে এতটা আত্মবিশ্বাস আমার নাই। তবু আপনার আবেগটুকুকে সম্মান জানাচ্ছি...
Lutful Bari Panna সূর্য এইটা তো ঠিক বলেছো বন্ধু। মেনে নিতেই হচ্ছে। তারপরও কথা থেকে যায় বন্ধু- সব সেলিবে্রিটিরাই কি পারে?
সূর্য কিন্তু পান্না, তোমার গল্পের "অভি হাসান" কিন্তু শমী বা শাহরুকের মতোই সেলিব্রেটি। সেটা নিয়েই কথা, হা হা হা । তুমি আমি বা আমাদের কথা না কিন্তু।
AMINA পান্না ভাই!একটা নিখুত গল্প উপহার দেবার জন্য অ-----সং----খ্য ধন্যবাদ।
Lutful Bari Panna জানি তারপরও কেউ কেউ পারে, আমাদের মধ্যেরই কেউ কেউ। তারা ব্যতিক্রম। ব্যতিক্রম তো ব্যতিক্রমই... উদাহরণ নয়...
Lutful Bari Panna আার একটা কথা আমাদের দেশে মধ্যবিত্ত অংশটা এখনো দুই ধর্মের মিলনকে সহজভাবে নেয়না বন্ধু। আমার এক বন্ধু পারেনি। যদিও সে এবং তার প্রেমিকা দুজনেই আধুনিক এবং পরস্পরের জন্য উদগ্রীব ছিল। আমরা তো শাহরুখ বা শমী কায়সার নই। এই সমাজের সমস্ত পাক গায়ে মেখেই আমাদের বাস করতে হয়। বিবেচনা করতে হয় অনেক কিছু। প্রাচীর ভাঙার সাহস সবার হয় না বন্ধু। সমাজের এই বাস্তবতা আমি কেন দেখাতে পারব না বল?
Lutful Bari Panna সূর্য তোমার কথাটা মাথায় নিলাম। প্রথম কথাটা হল পাল্টাপাল্টি কিছু হতেই পারে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনোই মনে করি না, আমি যা ভাবছি সেটাই ঠিক। আমার নিজস্ব অনেক ধারণা ব্লগে পাল্টাপাল্টি করতে গিয়ে ভেঙে গেছে। তোমার সংগেও এভাবেই পরিচয় ভুলে যাওনি নিশ্চয়ই। আমরা তো কলম হাতে যুদ্ধ করি বন্ধু, লাঠি নয়। এ বড় মধুর যুদ্ধ। যদি পরস্পরকে সম্মান করে করা যায়। তুমি ভাল লেখক। যদি তোমার কোন পাল্টা ধারণা আমার দৃষ্টিভংগী পাল্টাতে পারে তাতে অসুবিধা তো নেই। এটুকু অনুরোধ আমার তর্কগুলোকে বন্ধুভাবে নেবে। লেখকদের ফোরামের সুবিধাই তো এখানে। ভাল থেকো।
Lutful Bari Panna শাহনাজ আপু পড়ার জন্য ধন্যবাদ...
সূর্য পান্না, তোমার গল্পটায় অনেক আগেই মন্তব্য এবং ভোট কার্যটা সম্পাদন করেছিলাম। আমার মন্তব্যের প্রতিউত্তরটাও আমি দেখেছিলাম। একটা পাল্টাপাল্টি হবে চিন্তায় সেটার কোন উত্তর দেইনি। আজ সময় প্রায় শেষ তাই বলি, ঋষিতা কোন মুসলিম নাম না। পক্ষান্তরে অভি হাসান নামেই বুঝা যায় মুসলিম। পুরো গল্পে অভি হাসানের ঋষিতাকে ভাললাগা প্রতিষ্ঠিত, হয়তো ঋষিতারও। তবে গল্পে এ দিকটা নিয়ে গল্পকারের ভাবা ঠিক না। ভারতের শাহরুক খানের স্ত্রীর নাম গৌড়ি। বাস্তবতা যাই হোক গল্পে পাঠক একটা সুন্দর সমাপ্তি আশা করে। সে হিসাবে গল্পকার কিন্তু দুজনকে ধর্মের বেড়ায় আবদ্ধ রেখে কষ্ট দেখাতে পারেননা। রবীন্দ্র যুগে রবীন্দ্রনাথও এই বাধাটা তার গল্পে রাখেন নি। আমি তোমার গল্পটা (শুধু তোমারটা না সবারটাই) মনযোগ দিয়েই পড়েছিলাম। ----- :-)
শাহ্‌নাজ আক্তার গল্পটা ভালো হযেছে কিন্ত কিসের যেন একটা অভাব মনে হয় কষ্টের ............সবচে বড় কথা জনপ্রিয় হবার যে আনন্দ ও বিরম্বনা তা এখানে ফুটে উঠেছে .খুব ভালো I

০৩ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৫৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪