বৃষ্টি-মেঘ-রহস্য

বর্ষা (আগষ্ট ২০১১)

তির্থক আহসান রুবেল
  • ৭০
  • 0
  • ৭১
গল্পটির কোন আগাগোড়া নেই বলে শ্রোতারা খুব বিরক্ত হয়। তাছাড়া গল্প বলাতে আমার তেমন সুনাম নেই। লোকে বলে আমি নাকি খুব চমৎকার রোমান্টিক কিংবা কমেডি গল্পকেও বিরক্তিকর প্যাচালে রূপান্তর করে ফেলি। হয় না অনেক সময়, একজন একটা কৌতুক বলল। বলে নিজেই হাসতে হাসতে এক প্রকার গড়াগড়ি খাচ্ছে। আর মানুষগুলি তখন হতাশ হয়ে খুঁজছে এখানে হাসির কি ছিল! যার জন্য ভোদাইটা হাসছে! তবু কেন জানি, যেখানেই যাই লোকজন আমার গল্প শুনতে চায়। আর যথারীতি মিনিট কয়েকের মাঝেই বিরক্ত হতে শুরু করে। তার কিছু সময় পর নানা ছুতায় একজন একজন করে উঠে পড়ে। তবুও কেন জানি একজন না একজন খুব আগ্রহী শ্রোতা পেয়ে যাই। যারা পুরো গল্পটা খুব মনোযোগের সাথে শুনে। অবশ্য একটা গোপন কথা বলি, আমি কিন্তু একটা গল্পই জানি। আর এই গল্পটাই গত দশ বছর ধরে আমি বলে আসছি বিভিন্ন জায়গায়। যা বলছিলাম, প্রত্যেকবার আমি যেমন একজন মনোযোগী শ্রোতা পাই। তেমনি প্রত্যেকটা মনোযোগী শ্রোতা আমাকে শেষ পর্যন্ত একই প্রশ্ন করে। আমিও একই উত্তর দিই। বলি, জানি না!
জানেন না মানে?
আসলে সেই রাতের পর পরবর্তী ৬ মাস আমি কোথায় ছিলাম জানি না। আজ ৬ মাস পূর্ণ হওয়ায় আমি.... আসলে আমার তেমন কিছু মনে থাকে না। তবে এটুকু মাথায় আছে, আমি ৬ মাস পর পর একবার বারে আসি। গল্প করি, ড্রিংস করি। আর ঐ যে বাজনার তালে তালে নাচছে, তাদের কাউকে যদি মনে ধরে যায় তাহলে ডেকে একটা ড্রিংস অফার করি। তারপর যা চায় তারচেয়ে বেশী দিয়ে সারারাত বাতির নীচে ন্যুড দাঁড় করিয়ে রাখি।
কেন! সেক্স, টেক্স!
আমি বেশ্যার সাথে সেক্স করি না।
(মদের গেলাসে চুমুক দিতে দিতে) আরে ভাই! বৌয়ের সাথে তো সবাই করে।
আমি বৌয়ের সাথেও করি না।
তাহলে! সেক্স ছাড়া চলেন কিভাবে?
আমার বাম হাত আছে না! শোনেন মজিদ সাহেব, বিয়ে যদি হয় বিছানায় মেয়ে নিয়ে শুয়ে থাকার বৈধতা, তাহলে আমি বলব বাজারে ঐ মাল কিনতে পাওয়া যায়। আর যদি বিয়ে বলতে এমন একটা টান... যা আমায় ঘরে আকৃষ্ট করবে। এমন একটা সম্পর্ক যেখানে হাসি, কান্না, মান-অভিমান, শাসন, ভালবাসা, তুই, তুমি অথবা কোন সম্বোধন ছাড়া এই যে শোনেন! এমন একটা ডাক, যা শুনে মনে হবে পুরো পৃথিবী তোলপাড় হয়ে বুকের কি যেনো ধরে টান দিচ্ছে। তাহলে বলব, তেমন কেউ এ জীবনে আসতে চায়নি। তাই এত লম্বা কথার অতি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য হচ্ছে, একজন মানুষ আসেনি, তাই এখনো বিয়ে করিনি।
একজন মানুষের অপেক্ষায় আজো বিয়ে করেননি! অথচ বেশ্যা নিয়ে.....!
মজিদ সাহেব, আমার যে পরিমাণ টাকা আছে তাতে আমার যদি স্বাভাবিক মৃত্যু হয়.... তবে ও টাকা আমি শেষ করে যেতে পারবো না। সবই হচ্ছে টাকার গরম। নেন, আর দু প্যাগ মারেন আমার পক্ষ থেকে।
এটাও কি টাকার গরম! হা..হা..হা..!

তারপর আমার পক্ষ থেকে শেষ দু প্যাগ পেটে ঢেলে আমার সর্বশেষ শ্রোতা বিদায় নিয়ে চলে যায়। অদ্ভুৎ ব্যাপার হচ্ছে, যেদিন গল্পটি বলি তারপর আর কোনদিন আমি আমার সর্বশেষ সেই শ্রোতাটির দেখা পাইনা।
আজ আমার গল্পটি প্রথম থেকেই খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছে মজিদ সাহেব। বড় সরকারী অফিসার। সচিব পর্যায়ের। মন্ত্রীদের সাথে ভাল খাতির বলে শুনেছি। আজ কি মনে করে আমার টেবিলে এসে বসলো। মদের গেলাসে চুমুক দিতে দিতে আমার কথা শুনছে। আমি তখন লোকজনের মনো যোগ আকর্ষণে ব্যস্ত। আমি বলে যাচ্ছি....

আসলে হয়েছে কি, আমি মানুষের সাথে সাইকোলজিক্যাল গেম খেলি। খুব বড় কিছু না। অতিসাধারণ। আমি মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করি। তারপর খুঁজি কে আমার কথা গভীরভাবে শুনছে। তারপর তাকে টার্গেট করে আমার পথ ধরি। ঠিক এসময় মজিদ সাহেব মদের গেলাস হাতে চেয়ারে একেবারে আমার সামনে বসে বলল, “লোকে বলে আপনি নাকি খুব ভাল খোলামেলা গল্প জানেন! শুনতে এলাম”।
পাত্তা না দিয়ে আমি আমার মতো বলে যাচ্ছি। হঠাৎ আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,“কি সব কঠিন কঠিন কথা বলছেন! সারাদিনের পরিশ্রমের পর এইসব গল্প ভাললাগে? একটা নারীঘটিত গল্প বলেন।” হেসে বললাম, একটু অপেক্ষা করেন। আসরটা জমুক। অবশ্য ইতিমধ্যে আমার টেবিলের বাকি লোকেরা বিরক্ত হয়ে একে একে উঠতে শুরু করেছে। তাই কোন ভনিতা না করে মজিদ সাহেবকে সরাসরি বলে বসলাম, আচ্ছা মজিদ সাহেব, ধরেন উজ্জ্বল শ্যামলা না, কালো শ্যামলা একটা মেয়ে মেরুন শাড়ি, কড়া লাল ব্লাউজ, মেরুন লিপষ্টিক। চোখের দিকে তাকালে বুকে কষ্ট হয় খুব। একটা হাতের কনুইর উপরে জন্মদাগ। দেখলেই ঠোঁট ছোঁয়াতে ইচ্ছে হয়। মোদ্দা কথা, দেখলেই ভালবাসতে ইচ্ছে হয়। .... এমন একটা মেয়ের গল্প শুনবেন?
তা গল্পে সেক্স-টেক্স আছে তো?
ও আপনি জায়গা মতো বসিয়ে নেবেন।
ঠিক আছে। বলেন শুনি।
আমি শুরু করলাম। আমার এক পুরানো বন্ধু মাসুদ আর আমি একদিন এখানে বসে ড্রিংস করছিলাম। ড্রিংস শেষে মাসুদ চলে গেল। অবশ্য শেষ দুটো ড্রিংস আমি ওকে অফার করেছিলাম। আর যাবার আগে মাসুদকে কালো শ্যামলা এক মেয়ের গল্প বলেছিলাম। তো গল্প চলাকালে হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি নামলো।
আপনি তো দেখছি যাদু জানেন। ঐ দেখেন বাইরে বৃষ্টি পড়া শুরু হলো।
আমি হেসে আবার শুরু করলাম। তো হয়েছে কি, ঐ গল্পটা একবারে সত্য হয়ে ধরা দিল ঐ বৃষ্টির রাতেই মাসুদের জীবনে। মাসুদ তো বেরিয়ে গেল আগেই বলেছি। তার কিছু পর আমিও বেরিয়ে গেলাম। সেদিন মাসুদ নিজেই গাড়ী ড্রাইভ করছে। বৃষ্টি পড়ছে। রাস্তা ভেজা, কোথাও কোথাও পানি জমে আছে। তাই খুব আস্তে আস্তে গাড়ী চালাচ্ছিল। রাস্তা একেবারে অন্ধকার। তেমন গাড়ী নেই, রিক্সাও নেই। দশ মিনিটে একটা মানুষও চোখে পড়ল না। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।
এটুকু বলে মজিদ সাহেবের দিকে তাকালাম।পেয়ালায় চুমুক দিচ্ছে। মুখে স্পষ্ট বিরক্তি। আবার শুরু করলাম। তো এই চমকানো বিদ্যুতে হঠাৎ চোখে পড়ল রাস্তার পাশে যাত্রী ছাউনীর নিচে একটা মেয়ে একা দাঁড়িয়ে ওর গাড়ীর দিকে হাত নাড়ছে।
মজিদ সাহেবের মুখের বিরক্তি ভাবটা কেটে মূহুর্ত্বের মধ্যে চকচকে ভাবটা চলে এলো। আমিও সময় নষ্ট না করে শুরু করি।
মাসুদ সরাসরি মেয়েটার পাশে গাড়ী ব্রেক করে জানালা দিয়ে তাকায়। জিজ্ঞেস করে, কি ব্যাপার! মেয়েটা বলে, বৃষ্টির মধ্যে আটকা পড়েছি। কোন গাড়ী বা রিক্সা পাচ্ছি না। একটা লিফট দেবেন? মাসুদ খুব ভালভাবে মেয়েটার দিকে তাকালো। ঠিক তখনই একটা গাড়ী ক্রস করে গেল। আর সেই অল্প সময়ে মেয়েটার শরীরে যে আলোটা পড়র, তাতে মাসুদের পুরোনো অভ্যাসটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। বিশেষত হাতের বাহুতে যে জন্মদাগ, সেটাতে আটকে গেল চোখ। এই অল্প সময়ে মাসুদ দেখে নিল, মেরুন শাড়ী, কড়া লাল ব্লাউজ, মেরুন লিপস্টিক, মায়াময় চোখ আর হাতের দাগ। মাসুদ সামনের দরজা খুলে দিল। মেয়েটি এসে বসলো। মাসুদ দেখল মেয়েটির সারা শরীর ভেজা। শরীরে কিছুটা পুলক জাগলো। গাড়ী স্টার্ট দিয়ে আগের চেয়ে আরো কম গতিতে চালাচ্ছে। মাঝে মাঝে না দেখার ভান করে মেয়েটিকে দেখছে। হঠাৎ চোখাচোখি হতেই মেয়েটি হেসে দিল। একটু লজ্জা পেয়ে মাসুদ জিজ্ঞাসা করলো, কোথায় নামবেন? মেয়েটি বলল, কোন একটা স্টপেজে নামিয়ে দিলেই চলবে।
এই বৃষ্টির রাতে একা স্টপেজে দাঁড়িয়ে থাকবেন! সমস্যা হতে পারে। তাছাড়া কখন গাড়ী পান বা আদৌ পাবেন কি না কে জানে! তারচেয়ে কোথায় যাবেন বলেন, আমি পৌঁছে দিচ্ছি।
মেয়েটা কি যেন ভাবল। তারপর হঠাৎ মাসুদের হাতের উপর একটা হাত রেখে বলল, আমি বাড়ী থেকে পালিয়ে এসেছি। আমার যাবার জায়গা নেই।
মাসুদ এমন একটা কিছু যেন চাইছিল। সাথে সাথে বলল, তাহলে এই রাতে কোথায় যাবেন! এক কাজ করুন, আমার সাথে চলুন। তারপর সকালে না হয় ঠিক করবেন কোথায় যাবেন।
কিন্তু আপনার বৌ!
ও আপনাকে ভাবতে হবে না। আমি এখনো বিয়ে করিনি। একা একটা ফ্ল্যাটে থাকি।
মেয়েটা কেমন যেনো একটা হাসি দিয়ে বলল, চলেন তাহলে।

আমি আড় চোখে মজিদ সাহেবের দিকে তাকালাম। বোঝা যাচ্ছে শরীরটা গরম হচ্ছে। আমি কথা থামিয়ে তাকিয়ে আছি দেখে কিছুটা বিরক্তি নিয়ে তাকালো। বললাম, দাঁড়ান আরেকটা ড্রিংস এর অফার দিই। নতুন ড্রিংসটায় চুমুক দেবার সাথে সাথে মজিদ সাহেব বললেন, তা মেয়েটা ওর ফ্ল্যাটে গেল?
হ্যা, গেল।
বেশ সেক্সের গন্ধ পাচ্ছি। তারপর কি হলো? শুরু করেন।
তারপর ঘরে ঢুকেই, মাসুদ একটা তোয়ালে এনে দিল। মেয়েটি যখন তোয়ালে নিয়ে চুল মুছছে, তখন ভেতর থেকে ছেলেদের একটা পাজামা আর পাঞ্জাবী এনে বলল, ঐ যে বাথরুম। চেঞ্জ করে আসেন। মেয়েটা হাসি দিয়ে চলে গেল।
মিনিট দশেক পর ফিরে এসে দেখে মাসুদ এক প্লেট চিপস্ আর এক বোতল হুইস্কি নিয়ে বসে আছে। মেয়েটি কোন কথা না বলে তার পাশে বসে একটা গ্লাসে একটু ঢেলে নিল। মাসুদও হাসিমুখে নিজের পেয়ালা ভরল। মাসুদের ভেতর ঝড় উঠেছে অনেকক্ষণ। কিন্তু বাইরে চুপচাপ ভঙ্গি। বেশ কিছুক্ষণ নীরবতা পালনের পর মেয়েটি হঠাৎ হাত বাড়িয়ে বলল, আমি মেঘ। মাসুদ হাতটা ধরে বলল, আমি মাসুদ। কারো হাত ছাড়ার লক্ষণ নেই। মাসুদের শরীর কাঁপছে। মাসুদ খুব দ্রুত ভাবতে চেষ্টা করছে কিভাবে শুরু হলে ফাউল হবার সম্ভাবনা থাকবে না। মাসুদের শরীর বেয়ে ঘাম ঝরছে। অথচ ঘরের এসি ঠান্ডা বাতাস দিয়ে যাচ্ছে। মেয়েটি বোধহয় খেয়াল করলো। হাত ছেড়ে বলল, এই বৃষ্টির দিনেও এভাবে ঘামছেন! নিন খুলে ফেলুন। পরে আবার ঠান্ডা জমে যাবে বুকে। মাসুদ একটু একটু ভয় পেতে শুরু করলো। তার পরনে হাফপ্যান্ট আর টি-শার্ট। তবু কেন জানি টি-শার্টটি খুলে ড্রিংসে মনোযোগ দিল। মাসুদ একবার আড় চোখে তাকালো মেঘের দিকে। মেঘও ওর দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে হাসিমুখে বলল, কি ব্যাপার! আপনার জন্মদাগ নেই?
আছে তো।
কোথায়? দেখছিনা যে!
মাসুদ কাঁপাকাঁপা গলায় বলল, জন্মদাগ তার জায়গা মতো আছে। দেখানো যাবে না।
তবু অবুঝের মতো মেঘ বলল, দেখা যাবে না! এটা কোন কথা হলো নাকি! দেখি কোথায়? বলেই মাসুদের গা ঘেষে বসল। মাসুদ স্পষ্ট টের পাচ্ছে মেঘের নারী চিহ্নের উষ্ণতা। মাসুদ একটু অস্বস্তি নিয়েই চোখের ইশারায় তার হাফপ্যান্টটি দেখিয়ে বোঝাতে চাইল, এর নীচে আমার জন্মদাগ। মেঘ ইঞ্চিখানেক সরে বসল। তারপর হঠাৎ করেই তার পাঞ্জাবীর একটা হাতা উপরে টান দিয়ে বলল, দেখেন আমার জন্মদাগ! কেমন বিশ্রী। মনে হয় কেউ যেনো বেত দিয়ে একটা বাড়ি দিয়েছে। আমার খুব মেজাজ খারাপ হয়, এটা দেখে।
মাসুদের কানে কিছুই যাচ্ছে না। সুনামী উঠে গেছ্ েমাসুদ ঝাপিয়ে পড়েছে মেঘের জন্মদাগের উপর। মনে হচ্ছে সাপে কামড়ানো জায়গা থেকে মাসুদ বিষ তুলছে ওঝার মতো ঠোট দিয়ে। মেঘের হাত থেকে পেয়ালাটা পড়ে টেবিলের নীচে চলে গেল। সুনামীর ধ্বংস লীলা শুরু হয়ে গেছে। গাছ কাঁপছে, ঘর কাঁপছে, পুরো পৃথিবী কাঁপছে। হঠাৎ মাসুদের মনে হলো তার ঠোটে কে যেনো বিষ ঢেলে দিল। তার শরীর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে নিঃশ্বাসের সবটুকু প্রাণশক্তি।

ঠিক এসময় মজিদ সাহেব লাফ দিয়ে উঠলেন। আরে আসল কথাটা বলেন। শিল্প দিয়ে বলবেন না। কি হলো তারপর? মানে....
আসলে তারপর কি হলো আমি জানি না। ১ দিন পর খবরের কাগজে একটা নিউজ হলো। সেখানে লেখা ছিল, ঢাকার এক তরুণ ব্যবসায়ীর রহস্যজনক মৃত্যু। পুলিশ একটা পায়জামা ও পাঞ্জাবী দিয়ে হাত-পা বাধাঁ অবস্থায় ওর লাশ উদ্ধার করে। পোষ্টমর্টেমে কোন কিছু পাওয়া যায় নি।

মজিদ সাহেব আমার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলেন। তারপর টুকটাক কথার পর উনার জন্য দুটো ড্রিংস এর অর্ডার দিই। ড্রিংস দুটো শেষ করে যাবার সময় আমায় বলে, আমি ড্রিংস করলেও মাতাল হই না কখনো। আপনি গেলেন এক জায়গায়, মাসুদ গেল আরেক জায়গায়। অথচ আপনি মাসুদের পুরো ঘটনা হুবহু বলে দিলেন। এটা কি সম্ভব কখনো!
আসলে আরেকজনের জীবনের এই গল্পটা সেই বৃষ্টির সন্ধায় মাসুদকে বলেছিলাম। আমার ধারণা, একই ঘটনা মাসুদের জীবনেও ঘটেছে। কারণ সেই ব্যক্তির মৃত্যুর রহস্য আজো কেউ জানে না।
রাখেন আপনার চাপাবাজি। যাই হোক, ড্রিংস আর গল্পের জন্য থ্যাংকস। আমি এখন উঠবো, বলে মজিদ সাহেব হাটা ধরলেন। ডাক দিয়ে বললাম, মজিদ সাহেব আজ কিন্তু বৃষ্টির রাত। দেখবেন, মেরুন শাড়ি, গাড় লাল ব্লাউজ আর মেরুন লিপস্টিকের কালো শ্যামলা কোন মেয়েকে লিফট দিতে যাবেন না।

মজিদ সাহেব বাইরে এসেই বুঝলেন, ভাল তেজ আছে বৃষ্টির। বারের ভেতরে একবার তাকিয়ে হাত নেড়ে গাড়ীর ড্রাইভিং সিটে বসে বেরিয়ে গেল। মিনিট দশেক পর আবিষ্কার করল কোন মানুষজন নেই রাস্তায়। যানবাহনও তেমন নেই। রাস্তার কোথাও কোথাও পানি জমেছে। ফলে একটু আস্তে আস্তে গাড়ী চালাতে হচ্ছে। হঠাৎ দেখেন একটা মেয়ে যাত্রী ছাউনীর নীচে দাঁড়িয়ে তার দিকে হাত নাড়ছে। মজিদের একটু নেশা ধরেছে ইতিমধ্যে। গাড়ীটি ব্রেক করে তাকাতেই চোখে পড়ল এক হাতে জন্মদাগ। ইচ্ছে হলো ঠোঁট ছোঁয়। মেয়েটিকে নিয়ে রওয়ানা দিল। উল্টা দিকের একটা গাড়ী ক্রস করার সময় একবার তাকালো মেয়েটার দিকে। মেরুন শাড়ি, গাড় লাল ব্লাউজ, মেরুন লিপস্টিক, গায়ের রং কালো শ্যামলা, আর চোখ.......
১ দিন পর পত্রিকাতে একটি খবর বেরুলঃ সচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তার রহস্যজনক মৃত্যু।

তা এই গল্পটি কে পড়লেন এতক্ষন? এখন বৃষ্টির রাত না তো? মনে আছে তো, মেরুন শাড়ি, গাড় লাল ব্লাউজ, মেরুন লিপস্টিক, কালো শ্যামলা গায়ের রং আর হাতে জন্মদাগ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
তির্থক আহসান রুবেল রুহুল আমিন, গল্পের নামটা পরিচিত নাকি লেখক?
রুহুল আমিন পরিচিত নামটা দেখে ভালো লাগলো।
আহমেদ সাবের মন্তব্য করেছেন – (১) “সবচেয়ে খারাপ লাগে যখন দেখি পাঠক নাই.... আরে বাবা না পড়ে বুঝবা কেমনে ভাল না খারাপ!!”। গল্প-কবিতায় ‘এ সমস্যাটা এখনো রয়ে গেছে। প্রতি মাসেই দেখি, বেশ কিছু ভাল লেখার কোন পাঠক নেই। কেন নেই, এ নিয়ে গবেষণা করা যেতে পারে। কিন্তু, অভিমান করে দূরে সরে থকতে হবে কেন? (২) “যদি আবার লিখতে পারি তবে অবশ্যই পাবেন.... এখন আসলে লিখছি না আর....”। লেখা কি বন্ধ রাখা যায়? আমি ৩৩ বছর লেখা বন্ধ রেখেছিলাম। কিন্তু আসলে কি বন্ধ ছিল? কাগজে হয়তো লেখা হয়নি। কিন্তু মগজের মধ্যে তো প্রতিদিনই লেখা হয়েছে। আপনি ভাল লিখেন বলেই, আপনাকে আমরা হারাতে চাইনা।
ভালো লাগেনি ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১১
তির্থক আহসান রুবেল amar ami, আনন্দটা নিয়েছেন নিজ যোগ্যতায়.....
amar ami সত্যি ভালো লিখা , পড়লাম আনন্দ নিয়েই ....
তির্থক আহসান রুবেল মিজানুর রহমান রানা গেমটা আমাকেই খেলতে দিন.... আপনি আবার এ পথে কেন..... আমার ভাত মারবেন নাকি!!!
মিজানুর রহমান রানা আমি মানুষের সাথে সাইকোলজিক্যাল গেম খেলি। খুব বড় কিছু না। অতিসাধারণ। আমি মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করি। তারপর খুঁজি কে আমার কথা গভীরভাবে শুনছে। তারপর তাকে টার্গেট করে আমার পথ ধরি। ---তা এই গল্পটি কে পড়লেন এতক্ষন? এখন বৃষ্টির রাত না তো? মনে আছে তো, মেরুন শাড়ি, গাড় লাল ব্লাউজ, মেরুন লিপস্টিক, কালো শ্যামলা গায়ের রং আর হাতে জন্মদাগ
তির্থক আহসান রুবেল নাজমুল হাসান নিরো, আপনার কথাগুলো খুব ভাল লাগলো। আসলে আমার জানার জায়গাটা খুব সংকীর্ণ। কারণ আমি খুব ছোট একটি জায়গার মানুষ। ফলে জানার সীমাবদ্ধতা যেমন আছে... ঠিক তেমনি জানাবার সীমাবদ্ধতাও আছে...
নাজমুল হাসান নিরো হিচ হাইকিং নিয়ে লেখা অনেকগুলো ভাল লাগা গল্পের মধ্যে এটা যোগ হল আমার। যাহোক, "লাভ মি অর হেট মি"র মত বিছানায় ঝড় তোলা উপন্যাস যখন গোটা পৃথিবীব্যাপী জনপ্রিয়তা পায় তখন এরকম সামান্য ন্যুডিটির গল্পও অনেকে গ্রহন করেত পারে না, হয়তোবা আমাদের সংস্কৃতির সীমাবদ্ধতা। তবে সেটাও ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে। হয়তোবা অচিরেই এমন গল্পের গ্রহনযোগ্যতা তৈরী হবে। আর একটা কথা, ক্ল্যাসিকের সারিতে পরাবাস্তব গল্প কিন্তু একটা নতুন যোগ।

২১ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪