ভালবাসার ইশতেহার

বন্ধু (জুলাই ২০১১)

তির্থক আহসান রুবেল
  • ৬০
  • 0
  • ৪৩
ঠিক দশটায় এ পথ দিয়েই মৌমিতার যাবার কথা। গত ১ মাস ধরেই এটা হচ্ছে। কিন্তু আজ কেন দেরি হচ্ছে ? হঠাৎ বন্ধুদের গুঞ্জন , ঐতো আসছে। সাদা পরীর বেশে আসছে। আজ একটা কিছু করতে হবে। আজ প্রায় ১ মাস ধরে প্রতিদিনই কথা বলতে চাচ্ছি। কিন্তু কি এক অজানা ভয়ে কথা বলা তো দূরের কথা সামনেই দাঁড়াতেই পারছিনা। আজ কথা বলব, এ ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। কিন্তু যতই কাছে আসছে ততই ভয় বাড়ছে। কোথায় পালাই ? কি করি ? একি ওতো পার হয়ে যাচ্ছে। দোকানের ভেতর থেকে বন্ধুরা চাপা গলায় চেঁচাচ্ছে , চলে গেল তো। একটু সাহস কর বাবা। জলদি কর। হঠাৎ সুপারম্যান ভর করল মনে। দেঁৗড়ে সামনে চলে গেলাম।
- শুনেন, আপনার সাথে কথা আছে।
- আমার পথ আটকে দাঁড়িয়েছেন কেন ? আপনার সাহস তো কম না।
- দেখেন , অনেক দিন ধরে চেষ্টা করছি।
- আপনি আমার সামনে থেকে যান। নতুবা আমি কিন্তু ভাইয়াকে জানাবো সব।
- না না ঠিক আছে। আরেক দিন। চলে এলাম।
বন্ধুরা সব জেঁকে ধরল। বলেছিস ? কি বলল। বললাম, কাল কথা বলতে বলল। মনে মনে বললাম , আল্লাহ জানের ছদকা হিসেবে মসজিদে ১০ টাকা দেব। পরদিন আবারও একই ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। তবে আজ কিছুটা সাহস পাচ্ছি মনে। আজ একটা বিশেষ কিছু ঘটবে বলে মনে হচ্ছে। কারণ মৌমিতা আজ রাস্তায় উঠার সাথে সাথে কাকে যেন খুঁজছে এদিক ওদিক। মনে সাহস নিয়ে রাস্তায় দাঁড়ালাম। সামনে এসে হাসি মুখে বলল কেমন আছেন ?
- ভাল। আপনি ভাল ?
- হু। আপনার বন্ধুরা কোথায় আজ ?
- এইতো দোকানে বসে আছে।
- হু , বলেন কি বলবেন।
- না মানে আরেকদিন। জোরে অন্যদিকে হাটা দিলাম।
- আরে দাঁড়ান। আমাকে কলেজ পর্যন্ত দিয়ে আসবেন না ?
কি মনে করে সাথে হাটা দিলাম। হাল্কা কথা হচ্ছে। কিন্তু আসল কথাটাই বলতে পারছিনা। কলেজের সামনে চলে এসেছি প্রায়। চলে যাবার সময় বলল , আপনি আর আমার সামনে আসার চেষ্টা করবেননা। যেদিন সাহস নিয়ে সত্যিকারের পুরুষের মত আসতে পারবেন সেদিন আসবেন। চুপ করে একটুখানি ভাবলাম। বোঝার চেষ্টা করলাম কথাটির মর্মার্থ। তারপর পিছন ফিরতেই মুখের উপর ৫ টনি ঘুসি। কিছুক্ষনের মধ্যে বুঝলাম মাইর একটাও মাটিতে পড়েনি। তবু সজোরে দৌঁড় দিয়ে বন্ধুদের কাছে এসে দেখি সবাই ইতিমধ্যে সাইজ হয়ে গেছে। কাঁদব কি, সবাই সবাইকে দেখে হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি দিলাম। বিকেলে জরুরী মিটিং বসল। সভাপতির আসনে জাহিদ। সবাই চুপ। শুধু জাহিদ বলবে। জাহিদ শুরু করল - " বন্ধুরা প্রেমের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যে বিপদের সম্ভাবনা থাকে তা হলো নায়িকার পাড়াতো ভাই কিংবা গুন্ডা মার্কা ভাই নায়ক এবং তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মারতে আসে এবং বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সফল হয়। আজ আমরা সেই ঘটনা শেষ করেছি। কাজেই প্রেমের ক্ষেত্রে আর কোন বাঁধা রইলনা। আমরা নতুন উদ্যোমে কাল থেকে আবারও শুরু করব এবং বরাবরের মত রাকেশ তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে।" সবার হঁ্যা প্রস্তাবে সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো। কেউ মার খাবার ব্যাপারে কোন কথা তুললনা। আমার বন্ধুরা সবাই এমন। একজন আরেকজনের জন্য সব পারে। তবে আমি এসময় একটা প্রস্তাব দিলাম যে , আমরা আগামী কয়েকদিন কেউই ওপথে যাবোনা। ঠিক এক সপ্তাহ পর আমরা আবারো যাবো এবং শেষবারের মত যাবো। আর এ কটা দিন শুধুমাত্র আজাদ খেয়াল রাখবে কি ঘটে। কারণ আজাদের বাসা রাস্তার কাছাকাছি। সবাই মেনে নিল। এই একটা সমস্যা এদের নিয়ে। কেউ কোন প্রশ্ন করেনা। যে যা বলে তাই ঠিক। ভুল হলে সবাই মিলে ভোগ করব , ঠিক হলেও তাই।

তিনদিন পর হঠাৎ জরুরী মিটিং। আজাদ জানালো মৌমিতা দেখা করতে চেয়েছে আমার সাথে। কাল ঠিক দশটায় মজনু ভাইর ফাস্ট ফুডের দোকানে। সিদ্ধান্ত হলো কাল দশটায় আমি যাচ্ছি। অন্যরা অন্য টেবিলে থাকবে। যা হবার কালই হবে। সকালে ক্লিন সেভ করে একটু ভাল শার্ট প্যান্ট পড়ে বের হলাম। রাস্তা থেকে জুতা কালি করিয়ে নিলাম। যথারীতি ১০টায় গিয়ে দেখি সবাই হাজির। আমাকে দেখে সবাই মুখটিপে হাসছে। বন্ধুদের পার হয়ে যাবার সময় একজন বলল লালটু মিয়া। এক কর্ণারে বসলাম। তবে ওদের কাছাকাছি। কিছুক্ষণের মধ্যে মৌমিতা আসল। হাতে কতগুলো ফুল। বললাম ,বসেন। জিজ্ঞেস করল এতদিন কোথায় ছিলাম।
- এইতো। একটু কাজ ছিল।
- আসলে আমি সরি। ভাইয়া এভাবে চলে আসবে বুঝিনি। আসলে আমাকে ফলো করতে দুটো ছেলেকে রেখেছে।
- না না ঠিক আছে।
- না ঠিক নেই। কিছুক্ষণের মধ্যে হয়ত ভাইয়া খবর পেয়ে চলে আসবে। তুুমি কি বলতে চেয়েছিলে , বল তাড়াতাড়ি।
- না মানে।
- মানে টানে ছাড়ো তো। সাহস কর একটু। প্লিজ।
সব প্রিপারেশন নষ্ট হয়ে গেল। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। বন্ধুদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হলো। আমি ঘামতে শুরু করলাম। তখন মৌমিতা বলে বসল ঃ
- ফুলগুলো তোমার জন্য। তোমাকে বলতে হবেনা। আমিই বলছি। তুমি শুধু হঁ্যা বলে যাবে।
- ঠিক আছে।
- আমি তোমাকে ভালবাসি রাকেশ। তুমি কি আমাকে ভালবাসো ?
- না। আমি এসেছি আমাদের বন্ধু জাহিদের পক্ষ থেকে তোমাকে প্রস্তাব দিতে। ও খুব ভাল ছেলে। তোমাকে খুব ভালবাসে। জাহিদকে দেখিয়ে বললাম ঐযে জাহিদ। বন্ধুরা সবাই এতক্ষণ চুপ করে ছিল। এখন সবাই উঠে এসে কালোমুখে আমাদের ঘিরে রাখল। সবাই কথা বলছে। শুধু মৌমিতা কাঁদছে। আমি সরি বলে উঠে চলে এলাম। আমি বাইরে আসতেই বন্ধুরা সবাই বাইরে চলে এল সাথে সাথে শুধুমাত্র জাহিদ ছাড়া। উপরে মেঘলা আকাশ। আমার মনেও তাই। বন্ধুরা সবাই পিঠ চাপড়ে দিচ্ছে গোমড়ামুখে। সবাই বুঝে গেছে।

পড়ালেখা শেষ বহুদিন হল। এখন আমি সারাদিন চাকরি করি। আর রাতে পুরনো দিনের এইসব কথা বলে হাসাহাসি করি। আর এসব শুনে যে আমার পিঠে ভালবাসার কিল বসিয়ে দেয় সে মৌমিতা। আমার বউ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
তির্থক আহসান রুবেল Akthesain (আকাশ)ভাই, এই প্রথম কোন গল্পে এমন মিল দিতে পারলাম..............
Akther Hossain (আকাশ) ভালো বাসার শেষ পরিনিতি বিয়ে আপনে সফল হয়েছেন গল্পে বাস্তব জীবনে ! সুভো কামনা রইলো !
তির্থক আহসান রুবেল আহমাদ মুকুল, অল্প কথায় ভাল লাগলো.....ধন্যবাদ
আহমাদ মুকুল হালকা ভাষা...চটুল কাহিনী....বেশ গল্প.....সব মিলিয়ে দারুন !
তির্থক আহসান রুবেল দীপক দা, সত্যিই বলছি,..... এই গল্প নিয়ে আর একটা কমেন্টও যদি না আসে..... তাতে কোন দুঃখ নেই..... সেরাটা পেয়ে গেছি....
দীপক সাহা SImply Excellent..... !! ছোট পরিসরে এত সুন্দর একটা ভাব ফুটিয়ে তোলা সত্যিই অসম্ভব। যারা পারে তারা রুবেলদের মতো কেউ। শুভকামনা।
তির্থক আহসান রুবেল Khondaker Nahid Hossain ভাই,সাধারণ কিছুর মাঝে অন্য কিছু পাওয়াটা ব্যক্তির নিজস্ব যোগ্যতা.....আপনি আপনার যোগ্যতা দিয়ে তা খুঁজে পেয়েছেন.....
খন্দকার নাহিদ হোসেন ভাই রুবেল, জীবনের খুব সাধারন একটা বিষয়কে বড্ড সুন্দর করে বললেন।আর এরকম হয়তো সব বন্ধু বৃত্তেই হয়। অন্তত আমার একটা পুরনো ঘটনা মনে পড়ে গেলো!
তির্থক আহসান রুবেল সেলিনাকেও ধন্যবাদ......
সেলিনা ইসলাম ভালো লিখেছেন ধন্যবাদ

২১ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪