মা নিয়ে কিছু বলার আগে একটা ব্যপার নিয়ে একটু গল্প করে নিই...। গল্পগুলো কিন্তু খুব ইন্টারেস্টিং। একবার গল্পে মজে গেলে আর বেরোতে পারবেন না......। তাই প্রথমেই বলে নিই, মা কে যদি জানার ইচ্ছা না থাকে তাহলে এখনি বিদায় নিন। পুরো লেখাটি পড়ার দরকার নেই।
তো যারা এখনো আছেন, প্রশ্নটা তাদেরই করি....। কখনো কি ভেবেছেন, কেন বলা হয় নদীমাতৃক দেশ, মাতৃভাষা, মাতৃভূমি! কিংবা নিদেন পক্ষে মা, মাটি, দেশ.... কেন সমার্থক? একটু ভাবেন তো....! এবার দেখেন তো আমার সাথে মিলে কিনা! মা.... এতো বড় একটা ব্যপার যে, এর ব্যাপকতা এত বিশাল যে..... মানুষের সর্বচ্চো সীমাকে মায়ের সাথে তুলনা করা হয়...। এর চেয়ে ছোট কিছুর সাথে তুলনা হতে পারে না।
এবার আসুন কয়েকজন মায়ের সাথে পরিচিত হই। প্রথমে যে মায়ের কথা বলব, তাঁর একটাই পরিচয় তিনি মা..। তিনি একটা কাজ করেছেন। তা হচ্ছে ১৪ বছর তিনি ভাত খাননি। কারণ তাঁর ছেলে আজাদ শেষ দেখায় মায়ের কাছে ভাত খেতে চেয়েছিল। কিন্তু মা, ভাত নিয়ে গিয়ে দেখেন.... আজাদ নিখোঁজ। আজাদ নিখোঁজ হবার পরবর্তী ১৪ বছর মা অপেক্ষায় ছিলেন। আজাদ আর আসেনি। মা-ও তাই ভাত খাননি। তিনি মারা যান, আজাদ হারিয়ে যাবার ১৪ বছর পর। আজাদকে তারা সিমেন্টের ফ্লোরে শুতে দিয়েছিল। তাই মা জীবনের শেষ ১৪ বছর মাটিতে একটা পাতলা কাপড় বিছিয়ে বালিশ ছাড়া ঘুমিয়েছেন। আজাদকে তারা একটা বালিশও দেয়নি। আজাদ যখন ধরা পরে, তার কিছুদিন পর মা দেখা করতে যান। গিয়ে দেখেন তাঁর আদরের একমাত্র সন্তানটি নির্যাতনে মুমূর্ষু হয়ে পড়ে আছেন। মা কোনমতে কান্নাকে আটকিয়ে বললেন, বাবা.... ওরা যতই অত্যাচার করুক না কেন, তুই কিন্তু তোর বন্ধুদের কথা বলিস না....। একটু কষ্ট করে মুখ বুজে সহ্য করে নিস। আজাদ বলে, মা তুমি বলেছো.... আর কি চাই মা। জীবন গেলেও করো নাম উল্লেখ করবো না। মা ফিরে আসার সময় আজাদ বলে, মা অনেকদিন ভাত খাইনা। তুমি পরের বার আসার সময় আমার জন্য ভাত নিয়ে এসো। মা পরদিন ছেলের প্রিয় সব আইটেম রান্না করে নিয়ে গেলেন..। কিন্তু গিয়ে দেখেন ছেলে নেই। কোথায় গেছে কেউ জানে না। এবং আজ পর্যন্ত আমরা কেউ জানি না, কোথায় কিভাবে তাঁদের হত্যা করা হয়েছিল। আর এই আজাদ হচ্ছে, আমাদের মহান মুক্তিসংগ্রামের ২ নং সেক্টরের বীর মুক্তিযোদ্ধা। যিনি শহীদ রুমি, আলতাফ মাহমুদ সহ আরো অনেকের সাথে একসাথে ধরা পড়েন। যে টিমটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একটি অলঙ্কার ছিল। যারা এই ঢাকা শহরে যুদ্ধ করেছিল। এবং একসাথে সবাই নাম লিখিয়েছিল, শহীদের তালিকায়....। নাহ... তাদের দেহটি আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
আচ্ছা, একটু আগে বললাম না শহীদ রুমির কথা! তাঁর মায়ের গল্পটি শুনবেন নাকি! শহীদ রুমির মা হচ্ছেন শহীদ জননী জাহানারা ঈমাম। রুমি যখন বলল, মা আমি যুদ্ধে যেতে চাই....! মা ভাবলেন, এই ছেলেকে তো আমি আটকে রাখতে পারবো না। ছেলেটি তো...... মা বললেন, তাহলে একটা কথা দিতে হবে, বিজয়ী না হয়ে তুই কিন্তু ফিরে আসতে পারবি না...। রুমি বলে, মা তুমি শুধু দোয়া করো... আমরা যেন জয়ী হতে পারি। মা বললেন, যা তোকে দেশের জন্য কোরবানি করে দিলাম।.... এক মায়ের বুক খালি করে আরো বড় এক মায়ের সম্মান রক্ষা কর! .... হ্যাঁ... যা ভাবছেন ঠিক তাই হয়েছে.... আজাদ আর রুমি একসাথেই কোরবানি হয়েছে। বড় এক মায়ের সম্মান রক্ষায় তারা জীবনকে বিসর্জন করেছে পুষ্পাঞ্জলির মতো...। রুমিকেও খুঁজে পায়নি মা...। মায়ের শেষ কথাটিই সত্য হলো। দেশের জন্য নাকি মায়ের জন্য কোরবানি হলো শহীদ রুমি।
এবার আরেক মায়ের কথা বলি। এটাও মুক্তিযুদ্ধের। ১০/১২ বছরের এক কিশোর ছেলে মাকে বলল, সে যুদ্ধে যাবে....। মা একটু ক্ষণ ভেবে বলেন, যুদ্ধে যাবি ভাল কথা.... কিন্তু আমারে কথা দিয়া যাইতে হইব, দেশ স্বাধীন কইরা তারপর তর মুখ আমারে দেখাইবি। তার আগে আমি তোরে দেখতে চাই না। ছেলেটি হাসি মুখে যুদ্ধে চলে যায়। মুক্তিযুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডার কিশোর ছেলেটিকে দেখে একটু অবাক হন। তিনি তাকে প্রশ্ন করেন কেন সে যুদ্ধে এসেছে? এখানে তো যে কোন সময় মৃত্যু হতে পারে..। তিনি ছেলেটিকে বাড়ী ফিরে যেতে বলেন। ছেলেটি মায়ের কাছে দেয়া কথাটি জানায়। একদিন এক মেজর অপারেশনে মুক্তিযোদ্ধারা যখন প্রায় সবাই মৃত্যুর কাছাকাছি, ঠিক তখন ছেলেটি নিজের জীবনের বিনিময়ে রক্ষা করে মুক্তিযোদ্ধাদের। অপারেশনে মুক্তিযোদ্ধারা জয়ী হন। ছেলেটির মরদেহ যখন সেই কমান্ডার পেঁৗছে দেন তাঁর মায়ের কাছে... তখন মা সেই সন্তানের মুখটি দেখতে অস্বীকৃতি জানান এই বলে যে, তাঁর ছেলেটি তাঁকে কথা দিয়েছে, দেশ স্বাধীন করেই তবেই মুখ দেখাবে। দেশ তো এখনো স্বাধীন হয় নি..... তবে কেন ছেলে ফেরত এসেছে? মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে এই গল্পটি শুনে পরবর্তীতে শহীদুল হক খান নির্মাণ করেন মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র "কলমি লতা"।
প্রিয় পাঠক আমি কিন্তু আপনার সাথে প্রতারণা করছি না। আসলে আমি তেমন কাব্যিক ভাষায় গল্প লিখতে পারি না। পারি খুব সাধারণ ভাবে গল্প শোনতে। তাই আমি আপনাকে গল্প শোনাচ্ছি। অবশ্য গল্প বলাতেও আমি তেমন ওস্তাদ নই। আর তাই তো আমার গল্পগুলো কাব্যকথা না হয়ে হতাশ বাণীতে বিসর্জিত হয়..............। আশা রাখছি, আপনি আপনার মায়ের মুখটি স্মরণ করে সেই হতাশাকে জয় করে লেখাটি পড়ে সময় নষ্ট হবার হতাশাটিকে দীর্ঘশ্বাসের মাধ্যমে বের করে দেবেন বুকের ভেতর থেকে।
২১ জানুয়ারী - ২০১১
গল্প/কবিতা:
২৩ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪