সারাক্ষন নিজের বিবেকের সাথে যুদ্ধ করে সাজিদ, সে কেন সব সত্য মিরভাকে বলতে পারছে না, অপ্রিয় হলেও তা বলা উচিত, প্রতিদিনই পণ করে আজকে যা হয় হোক তাকে আজ বলতে হবেই হবে কিন্তু শেষ তক আর পারে না , মিরভার সাথে তার সম্পর্ক প্রায় দেড় বছর হতে চলল, ভালবাসার সংজ্ঞা একেকজনের কাছে একেকরকম, কারো কাছে এটা বিয়ের পুর্বশর্ত আবার কারো কাছে এটা লক্ষ্যহীন ও অপরিনামদর্শী । সাজিদের স্ত্রী আর এক বাচ্চা, বিয়ের চার বছর হতে চলেছে ,স্ত্রীর সাথে তার সম্পর্ক টা মজবুত নয় , মানসিক যে ভিত্তি থাকা উচিত যে বন্ধন থাকা উচিত সেটা তৈরী হয়নি, তাদের সম্পর্ক টা শুধুই সামাজিক ও আনুষ্ঠানিক,যেকারনে তাদের মাঝে বিস্তর ব্যবধান ,এই ব্যবধান সাজিদ কে নাড়া দেয় না, সাজিদের অনেক অনেক মেয়ে বন্ধু কিন্তু মিরভার সাথে প্রেমের বন্ধনে সে জড়াতে চায় নি, পরিচয়ের পর থেকেই মিরভাকে খুব খুব ভাল লাগত, মিরভাও তাকে প্রেমে পড়তে বা সম্পর্কের বন্ধনে বন্দী হতে কোন আহবান করে নাই, কিন্তু সম্পর্কের শুরুতেই সাজিদ তাকে বলেছে সে অবিবাহিত , এভাবেই চলতে চলতে একদিন বলেছে সে বিবাহিত কিন্তু সেপারেটেড। বাস্তবে তা নয়, সে ঘর সংসার দিব্যি করছে শুধু মানসিক ভিত্তি নেই তার ঘরে, মিরভা সাজিদ কে বিয়ের কথা বলে, সাজিদ প্রতিনিয়তই তাকে একের পর এক মিথ্যে বলতে থাকে, ডিভোর্স দিচ্ছি দিব, শ্বশুর মামলা করবে আবার চাকুরীর মেয়াদ আর একটু বাড়ুক বিভিন্ন অজুহাত দেখায় আর নিজের সাথে নিজে সারাক্ষন যুদ্ধ করে ,কি হবে কি পরিনতি তাদের এই রিলেসনের ? এদিকে মিরভা তার ভিতরে এমন ভাবে গেথে গেছে যে সেখান থেকে বের হতে হলে সব কিছু শেষ হয়ে যেতে পারে, মিরভা তার রক্তপ্রবাহে শিরায় শিরায় প্রবাহিত হয়ে গেছে, সাজিদ একটি মহাসাগরের মাঝে পড়ে যায় , কি করা উচিত তা বুঝতে পারে না, প্রতিটি ক্ষনে মুহুর্তে সেল ফোনে মিরভার সাথে যোগাযোগ হচ্ছে , দুজনার সব মুহুর্তগুলো দুজনের কাছে চলে যাচ্ছে। সাজিদ কি মিরভার সাথে প্রতারনা করছে নাকি তার বউ বাচ্চাকে ঠকাচ্ছে ? সাজিদের সব কিছু স্তব্দ হয়ে যায়, কিভাবে সে সামাল দিবে, অথচ সাজিদ এমন প্রকৃতির কখনই ছিল না, বাবার মত আদর্শবান ও নীতি নৈতিকতা তাকে সারা জীবন বয়ে চলতে হয়েছে,এভাবে প্রতিনিয়ত মিথ্যাকে সারথি করে আর কতটুকু চলা যাবে, ভালোবাসা এমনি এক ছোবল যার নীল দংশনের পরিনতি জানার পরেও কিছুই করার থাকে না ,থাকে শুধু অনুনয় আর অনুভব, এই অনুভুতি তাকে অন্ধ করে দেয়, সমাজ সংসার ঘর সবকিছু কে মিথ্যে করে দেয়, সাজিদের অনুভুতিগুলো এখন মিরভার প্রতিটি মুহুর্ত, এক পলক এক মুহুর্ত কেউ কাউকে ছাড়া থাকতে পারছে না, সাজিদ ভাবে তার ১ বছর বয়সী মেয়েটার কথা, তুলতুল যাকে পেলে সাজিদের মনে হয় তার ভিতর থেকে শরীরের কোন একটি অংগ কেটে রাখা হয়েছে, সাজিদ কি তাকেও ভুলতে বসেছে ? ভালবাসা কি সাজিদ কে অন্ধ করে দিচ্ছে , সাজিদ নিজের কাছে কোন উত্তর খুজে পায় না, সাজিদ ভাবে মিরভার সাথে তার এই বন্ধন কি মোহ ? কিছু দিন দুজনেই যোগাযোগ বন্ধ রাখে সপ্তাখানেক পরেই হাপিয়ে যায় দুজনে আবার সম্পর্ক ঠিক হয়ে যায়, সাজিদ তার স্ত্রীর কথা ভাবে , সাজিদের স্ত্রী নীরা সেতো সাজিদ কে অনেক ভালবাসে ,তবে কেন তার প্রতি অবিচার, ভালবাসার অজস্রতায় সাজিদ ব্যকুল হয়ে পড়েছে, আমাদের সমাজ কি এই অসম সম্পর্ক মেনে নেবে ? না নেবে না যেমন টি মেনে নেবে না মিরভা নিজে এবং মিরভার পরিবার, তাদের সম্পর্ক আবার জোরদার হয় আবার দুদিন পরে বিচ্ছিন্ন হতে চায় কিন্তু হ্রিদয়ের গভীরতর যে বাসনা যে আকুলতা আর হাহুতাশ তা থেকে বের হয়ে যাওয়া টা অনেক জটিল ও দুস্কর , মিরভা এসএমএস পাঠায় – its impossible to live without breath & also impossible to live without you, এভাবেই দিন যেতে থাকে, নিয়তির নির্মমতায় হঠাৎ একদিন আসে সেই ক্ষন, সাজিদের স্ত্রী নীরা সাজিদের মোবাইলে একটি এসএমএস পায় যেখানে লিখা – আমি বাঁচতে চাই না এক মুহুর্ত তুমি ছাড়া, সব কিছুই ভীষন ভীষন অসহ্য মনে হয় ‘’ নীরা সাজিদ কে কোন কিছু জিজ্ঞেস না করে সরাসরি মেসেজের নাম্বারে কল দেয় , দিয়ে বলে যে আমি সাজিদের স্ত্রী বলছি,মিরভার মাথায় আকাশ ভেংগে পড়ে, মিরভা সব কিছুর সরল স্বীকারোক্তি দেয়, সাজিদ তাকে যা যা বলেছে তার সব,এবং এটাও বলে যে সে এখন থেকে সাজিদের সাথে আর যোগাযোগ রাখবে না, সাজিদের ঘরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে শুরু করল, নীরা তুলতুল কে নিয়ে বাবার বাসায় চলে যায়, মিরভা সাজিদকে পৃথিবীর সবচে জঘন্যতম মানুষ হিসেবে ভাবতে থাকে, আর নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করতে থাকে ,কেন তার সাথে এই প্রতারনা করা হল ? সাজিদের সব কিছু ভেংগে চুরমার হয়ে যায়, নিজের প্রতি খুব ঘৃনা জন্মাতে থাকে, ভালবাসা তাকে বিতাড়িত করেছে, স্বপনেরা রয়ে গেছে স্বপ্নে, দুঃস্বপ্নের কাল রাত আর কালো মেঘে মেঘে ছেয়ে গেছে সবটাই, নিঃসংজ্ঞ আর একাকীত্বে উবে গেছে নীলিমা, বেদনার ভয়ার্ত চোখ আর শুন্যতায় বিধ্বস্ত হয়েছে মিরভা , মিরভার ভালোবাসায় জ্বলে পুড়ে নিঃশেষিত প্রান টুকু আর বাচতে চায় না, ভালবেসে সাজিদ সব হারিয়ে ফেলেছে ,বেঁচে থাকার আগ্রহ টুকুও ।