আক্ষেপ

ভৌতিক (ডিসেম্বর ২০১৮)

Azaha Sultan
  • ৪১
বুঝল না--

মনের দরদ কেউই বুঝল না

এ সংসারে কেউ কারে বুঝে না
বুঝতে চায় না--

ছোটকালে মায়ের সাথে কত গিয়েছি নানার বাড়ি

এখানে-ওখানে--

‘তুমি ছোটমানুষ বড়দের কাছে বসতে নেই

বড়দের কথা শোনতে নেই’

এ কথাটাই শোনেছি বেশি



আজও বুঝি নি কথাটার প্রকৃত অর্থ কী!



কত শালিসবিচার--

গ্রামের কত ঝগড়াঝাটি

কত দেখেছি--শোনেছি

বুঝার অনেক চেষ্টা করেছি

শুধু সান্ত্বনা বুঝেছি--

‘তুমি অইসব বুঝবে না বাপু’



তখন বয়স আর কি--আট কিবা নয়।



আজ আটান্ন বছরের বয়সী আমি

এখনো বুঝতে পারি না এবং পারছি নে

মানুষ কেন তুচ্ছ বিষয়ে লড়াই করে

একটু কিছুতে লাঠালাঠি ও রক্তক্ষয়ী দাঙ্গাফ্যাসাদে নেমে আসে

জায়গাটা অবিকল খিল আজও পড়ে আছে

আলটা এখনো বাঁকা রয়ে গেছে

যার জন্যে সেই আটচল্লিশ বছর আগে

মারা গিয়েছিল আফিদের বাবা গবিধন

আর সামন্তাদের দাদা সুমনশেঠ



আজও অমন অনর্থের লড়াই দেখি!



‘হৃদ্যিতা’ অর্থাৎ ছোটখালার বিয়ে

সবাই যার যার কাজে, খোশমেজাজে ও গল্পগুজবে মশগুল

এককোণে চুপটি করে বসা ছোট্ট বাবুটিরে কেউ দেখে না

পুছে না ‘বাবু, কিছু খেয়েছ কি? খাবে নাকি?’

বড়রা বড়দের খাতিরদারিতে ব্যস্ত--

‘দাদা এসেছেন? আসুন আসুন--এখানে বসুন

বিনয়, দাদার জন্যে...’



দাদা খুব নামি মানুষ।



ভিতরঘরে আরও জলুস--

‘মেঝবু, আর কিছু খাবে? চা আরেক কাপ দি?’

‘নারে (সাহানা) সানু বরং আমায় আরেক খিলি পান দে

মহেষখালির পানগুলোনা...তুলনা হয় না’



মেঝ আপার স্বামী অনেক বড় পয়সাওয়ালা।



ওদিকে খাওয়াদাওয়া প্রায় শেষের দিকে

কেউ কেউ চলেও যাচ্ছে

বিদায়ের মুহূর্ত--

‘একটা সিগারেট নিন্‌ বেয়াই সাহেব

মাথাধরাটা একটু হালকা হয়ে আসবে

কী দেখছেন?

বিলেতি ব্র্যান্ড--সেন্ট একেবারে আলাদা’



ওসব তখন বুঝি নি--



বড়দের কাতিরদারি

সেই আদিকালথেকেই চলে আসছে

আজও চলছে

চলবেই



তবে--



চোখের সামনে কতটা বছর চলে গেল

বয়স বাড়ল মনে হয়

ছোটমানুষ বড় হলাম নাকি

বউ এল ঘরে

তারপর এক-দুই-তিন-চার ছেলেমেয়ে

ঘর ভরে গেল হইহুল্লোড়ে

ছেলেমেয়ে বড় হচ্ছে



হল--



কেউ বিএ পাশ ত কেউ এমএ

পরামর্শ এখন তারাই তারাই করে--

যা ভুল করেছি নাকি এ জীবনে

মাশুল দিতে গেলে দশ জনম যথেষ্ট নয়

আমার মতো ভুল বোকাও করবে না নিশ্চয়--

‘তুমি বুঝবে না বাবা’



কথায় কথায় আমি কিচ্ছু বুঝি না!



মেয়ের বিয়ে হল সম্ভ্রান্ত ঘরে--বিরাট পরিবারে

বছর দুয়েক কেটেছে

আসা-যাওয়ায় জেনেছি খুব সুখে আছে

মনটা ভরে গেল শান্তিতে...

একদিন বড্ড ইচ্ছে হল মেয়েটিকে দেখতে

দেখলাম, শ্বশুরশাশুড়ি যেমন তারচেয়ে জামাই আর ভাইয়েরা

হরদম টুকিটাকি চলছে ত চলছেই!

বললাম, এ কেমন কুলীনতা?

এখানেই ত বড় যুদ্ধের বার্তা...

মেয়ে বলল ‘তোমার বুঝার দরকার নেই বাবা’

দুঃখটা রয়ে গেল এখানে--

আমি ত চাই নি কারো কাছে কিছু

এতখানি ধনসম্পদ

চেয়েছি একটু আদর-মহব্বত

পাই নি বলে...



তবে--



আমার জীবনটা কেটেছে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে

যাকেই আপন মনে করেছি তাকেই রূপ পাল্টাতে দেখেছি

যাকেই মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেছি সে-ই মেরেছে পিঠে ছুরি

ভাইবন্ধু কেউই আপন নয়

এ পৃথিবীটা নিজের নিজের চিন্তক

নিজের নিজের মঙ্গলের সাধক

মানুষ কেবলই নিজের ভাল বুঝে

নিজের ভালর ভিত্তিতে চলে

স্বার্থ যেখানে বড় নয় সেখানে কেউ পা রাখে না



আমার বুঝতে দেরি হল বটে।



সব বেদনা ভুলে

বাকি জীবনটা কাটাতে চেয়েছিলাম...

হঠাৎ ‘সান্ত্বনা’ চলে গেল পৃথিবী ছেড়ে

আমি বিমর্ষ--রয়ে গেলাম নিরানন্দের কৃষ্ণকুটিরে

নির্জনতা আমাকে গ্রাস করেছিল বলে...

তারপর ছেলের বউ এল ধুমধামে

মনে করলাম, আবার ভরে উঠবে সেই ভরপুর কোলাহলে

আস্তে আস্তে সংসারের সৌন্দর্য ফুটে উঠছে বিষণ্নতার রঙে



আমার স্থান হল ভবঘুরে!



ঘুরতে ঘুরতে কোথায় এলেম কে জানে

আর পারছি নে সামনে যেতে

ক্লান্ত-অবসন্নতায় দেহের প্রতিটি অঙ্গ মনে হচ্ছে অচল

এ বটতলের আশ্রয় অনুভব করছি কিছুটা শান্তি ও একটু সোয়াস্তি

সামনে যত দেখছি ধু-ধু মাঠ

পিছনদিকে বহতা নদী

মাথার উপরে নিঝুমদুপুর

চারি দিকে খাঁখাঁ শূন্যতা

শুধু শোনছি পাখিদের চেঁচামেচি-কলরব

দেখছি উপদ্রব



মনে পড়ছে--



চোখের সামনে ভেসে উঠছে আবছায়াটা

বালকবেলার স্মৃতি--

খেলাধুলা

দুরন্তপনা

মান-অভিমান--

‘অই গাধাটারে পুছ কী, সে কী বুঝে বেঙের ছাতা কী’

অর্ধছুটিতে কিবা শেষছুটির পরে

স্কুলের পশ্চিমের বটতলে সেকি জমত আড্ডাআড্ডি

বাল্যবন্ধুরা কে কোথায় আছে

কে কী করছে

কে কেমন আছে

কে কখন চলে যাচ্ছে পৃথিবীথেকে

কে কিভাবে দুঃখেকষ্টে জীবন কাটাচ্ছে

কে আলিশান জীবনযাপনথেকে চলে যেতে হল নির্বাসনে...

কেউ কারো খবর রাখি না

কেউ কারো কথা ভাবি না

বুঝি না--এমন কেন বিধানের বিধান



সমাধান--



সুখী হোক সকলে

এমন পথের পথিক না-হোক কেউ কবে

সবার জন্যে প্রাণ কাঁদছে

সবার কথা মনে পড়ছে

দুচোখ বেয়ে ঝরছে শুধু ঝরছে

সারা জীবনের আটক থাকা অশ্রু

চোখের পাতা কেন জানি বন্ধ হয়ে আসছে

কে যেন আমায় হাতছানি দিয়ে ডাকছে


চারি দিকে অন্ধকার আর অন্ধকার...
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রণতূর্য ২ ভালো লেগেছে ।শুভকামনা রইল।আমার পাতায় আমন্ত্রন। :)
মোঃ মোখলেছুর রহমান ভাল লাগল কবিতা,একটু ভিন্নতার স্বাদ রয়েছে।
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী কবিতার ভাব একটু অন্যরকম ভালো লেগেছে। শুভেচ্ছা নিবেন শ্রদ্ধেয়। শুভ কামনা নিরন্ত।।
মাইনুল ইসলাম আলিফ সুন্দর কবিতা।শুভ কামনা রইল।আসবেন আমার কবিতার পাতায়।
নাজমুল হুসাইন কবিতাটি পড়ে কেউ কথা রাখে নি কবিতাটার কথা মনে পড়ে গেল।ভালো লিখেছেন।তবে লেখার ধরনে নতুন্ত্ব আনুন।আপনিই বা কম কিসে?আমার পাতায় আসবেন দাওয়াত রইলো।
আবু আরিছ সুনীলদার কেউ কথা রাখেনি, এই ভঙ্গিতে কবিতাটা লিখেছেন, তবে আমরা ভুলে যাই প্রায়ই অবিরাম আক্ষেপ শুধু নয়, নিজের ভিতরে আনন্দ সৃষ্টিও প্রয়োজন আছে...

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

আত্মজীবনীমূলক

০২ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৭৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪