অনেক কথা ১
ঐশ্বরিক--
স্রষ্টা এক এবং সৃষ্টি অনেক। স্রষ্টাকে চিনতে হলে সৃষ্টিকে চেনা জরুরি আর সৃষ্টিকে চিনতে হলে স্রষ্টার অস্তিত্বে অগাধ বিশ্বাস এবং ভালবাসা চাই। যেকাজে স্রষ্টার উপর অগাধ বিশ্বাস এবং ভালবাসা নেই সেকাজে কোন সফলতা নেই। আমৃত্যু মরীচিকার পিছে দৌড়ে অবিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হলে স্রষ্টার নৈকট্য লাভ করা যায় না আর স্রষ্টাকে পেতে হলে সৃষ্টির সেবা অত্যন্ত জরুরি।
* আল্লাহ্কে যারা বিশ্বাস করে না?
ধর্মের দুশমন তারা নাস্তিক হয়।
যারা বিশ্বাস করে ভুলে থাকে?
খোদার কসম তারাও আস্তিক নয়॥
* আল্লাহ্, আমায় করো না কারও করুণার নির্ভর
তার আগে নিবে দিয়ো আমার জীবনের প্রহর॥
তবু যদি প্রাণের বায়ু চালাও হর্দম
দুঃখদুর্ভিক্ষে যেন স্থির রাখো কদম।
গ্লানির সুখথেকে কষ্টের নির্মল অশ্রু অনেক প্রখর--
আল্লাহ্, আমায় করো না কারও করুণার নির্ভর॥
নত করো প্রভু বারবার করো তোমার কদমে মাথাটি
কারও দয়ায় ডুবিয়ে করো না ক্রীতদাসের জিন্দেগি॥
এ দয়া নির্দয় থেকে বড় নির্দয় ওরে
অতি বোঝা হয়ে দাঁড়ায় প্রাণের পরে।
গঞ্জনার সঞ্জীবনী অমৃতচেয়ে ভাল বিষযন্ত্রণার লহর--
আল্লাহ্, আমায় করো না কারও করুণার নির্ভর॥
* প্রভু আমায় কতটুকু আয়ু করেছেন দান জানি না, জানি না তবে আর কত দিন আছি মেহমান। তবে যত দিন আছি আর যত দিন বাঁচি এক পলের জন্যে যেন না ভুলি কর্তব্যের কথা।
* ‘আনাল হক’ ঘোষণা করে মনসুর প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত হলবিশেষ; কে জানে, হয়তো তাঁরই রূপ ধরে বিধাতা স্বয়ং ‘আনাল হক’ বলতে এল ভুবনদেশ।
* আল্লাহ্কে যে ভালবাসে না, ভক্তি করে না তার চেয়ে বড় অধম পৃথিবীতে আর কেউ হতে পারে না। সুতরাং আমি অধম হতে পারি তবে বড় না।
* জানি বিধি এক, বিধান এক, কোরআন-হাদিস নবিরসুল এক তবে অই এককের বণ্টন করছে কারা! আল্লাহ্, বাহাত্তর ফেরকাবন্দির ফন্দি থেকে বাঁচাও দীন, বাঁচাও দুনিয়া এবং রক্ষা করো বান্দা।
* আমায় দিয়ো না প্রভু, পৃথিবীতে এমন কিছু; যার জন্যে পরলোকে আমার রয় না কিছু অবশিষ্ট।
* বেহেস্তদোজখ বুঝি না আমি--চিনি না হাশরের ময়দান
খোদা, তোমার দিদার চাই সতত--চাইছি তোমার সন্নিধান।
* দুনিয়াতে সবচেয়ে শান্তির জায়গা হচ্ছে--মসজিদ আর দুনিয়াতে সবচেয়ে খারাপ স্থান হচ্ছে--বাজার।
* ‘সত্য’ বিধাতার নিদর্শন ‘সততা’ মহামানবের লক্ষণ।
* কত সহজে রচনা করলে প্রভু দুর্লভ কোরানখানি!
আমি মূর্খ, কিবা বুঝি আমি কোরানের সত্যবাণী।
* আল্লাহ্ মহান, আল্লাহ্ মহীয়ান,
আল্লাহ্ সর্বশক্তিমান।
আল্লাহ্ বিধান, আল্লাহ্ বিধিয়ান,
আল্লাহ্ সৃষ্টির জিকিরগান॥
* আল্লাহ্! এ তোমার, ঐ তোমার, সমগ্র জাহান তোমার; তবে এটুকু ঐশ্বর্যপথ দেখাও, যেপথে পাওয়া যায় তোমার দিদার। আমায় দাও--নিখিল বিশ্ব আমি চাই না, তবে হাসিমুখে যেতে চাই--এ আমার ক্ষুদ্র কামনা।
* ধনের চেয়ে মনের মালিক বড়। আভিজাত্য ও গাড়িবাড়ি আর অঢেল সম্পদের মালিক হয়ে লাভ কী, যখন এগুলো আমার সঙ্গে যাওয়ার নয় এবং কোন উপকারে আসল না; তারচেয়ে বরং সামান্যতেই তুষ্ট থাকা ভাল। ধনৈশ্বর্যের অসুখী জীবনের চেয়ে শান্তির স্বাচ্ছন্দ্য-জীবনযাপন অতি উত্তম। পৃথিবীতে ধনী বলতে কে আছে : সকলেই ত নিঃস্ব--নশ্বর জীবনের কেন করি গর্ব? ধনেজনে ভাল পরিধানে মানুষ হলে তাকে কখনো প্রকৃত ধনবান বলা যায় না, অইযে নির্জন পথের ধারে পাগলাটি খাওয়া নেই নাওয়া নেই ছেঁড়া কাপড়ে কার ধ্যানে বসে মিটিমিটি হাসছে আর একটা-পর-একটা সিগারেট ফুঁকছে তাঁকে একমাত্র ঐশ্বর্যবান বলা যায়; সুতরাং পৃথিবীর কাছে সে নগণ্য ও পাগল এবং পরিহাসের পাত্র হতে পারে, হয়ত বিধাতার কাছে তিনিই সবচেয়ে গণ্য। কাজেই ধনবান হয়ে লাভ নেই বরং হৃদয়বান হওয়া জরুরি তবেই যথেষ্ট মানুষ।
সৃষ্টিকে জানা মানে স্রষ্টাকে জানা। সৃষ্টিকে যেখানে আমি উত্তমরূপে জানতে পারিনি সেখানে কীভাবে বলি, স্রষ্টাকে জানতে পেরেছি! তা হলে? এবাদত করলেই আল্লাহ্র সান্নিধ্য লাভ করা যায় বা খাঁটি বান্দা হওয়া যায়, তা আমার বিশ্বাস হয় না। সারা জীবনের বন্দেগি পরকালের জিন্দেগি, তাতেও আমি আস্থাভাজন হতে পারলাম না। প্রত্যেক সৃষ্টির মাঝে স্রষ্টার রূপ। সৃষ্টির রহস্য ভালভাবে জানতে না পারলে স্রষ্টাকে জানা সহজ নয়। অনুমানে পথচলা যায় তবে গন্তব্য মিলা বড় কঠিন। সারা দিন সারা রাত অন্যকে ঠকানোর মালা জপছি আর পরিষ্কার কাপড় পরে আমি ভাল মানুষ! মানুষের সমালোচনায় আর অনিষ্টের সাধনায় কপাল কালো করছি এবাদতিচিহ্নের দম্ভে হেসে কুটিকুটি--ভাবছি আমার নাম পরহেজগারদের আগের কাতারে! আমি পেটপুরে খাচ্ছি আর তেতলায় ঘুমাচ্ছি আরামে, আমার পাশের ঘরে কেউ দিন কাটছে উপবাসে-অনিদ্রায় ভুলেও দেখছি না একবার; দৌড়ছি এবাদতখানায় আর মক্কামদিনায়, আমি একমাত্র খাঁটি বান্দা আল্লাহ্র! বলা যায় ‘বিশ্বাসে বস্তু মিলে তর্কে বহুদূর’ হাঁ বিশ্বাসের উপর দুনিয়া কায়েম এবং তর্কে কোন সমাধান নেই। তবে ঐকান্তিক বাসনা ছাড়া যেমন সাধনা পূর্ণ হয় না তেমন সৃষ্টির সেবা ছাড়া স্রষ্টার নৈকট্য লাভ করা যায় না।
সুন্দর, লালিত্য, নমনীয় ও মহত্ত্ব এরকম বিশেষ কিছু গুণে একজন মানুষ গুণী ও শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে এবং এসব উপার্জনের মধ্যেই একজন মানুষের দোষত্রুটি ঢাকা পড়ে আর যে দোষত্রুটি ঢাকতে পারল না সে মানুষের কাছে নয়, বিধাতার কাছেও মানুষ হিসাবে গণ্য হতে পারল না। ভুলত্রুটি মানুষের আছেই বরং থাকবেই তবে দুভাগ্য তাঁদের, যাঁরা ভুল বুঝতে পারে না এবং মাশুল দিতে জানে না। ভুলের প্রায়শ্চিত্তভোগে ও সুন্দরের বাসনা লয়ে মানুষের পৃথিবীতে আগমন। সুতরাং সুন্দরের সাধনা যাঁর কাম্য নয় তিনি মানুষ হিসাবে গণ্য নয়। সুন্দর বলতে শুধু রমণীয়-কমনীয় বাহ্যিক বিষয়াদি না, সুন্দর বলতে এখানে আত্মিক ও চতুর্দিক বিষয়াদির উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আল্লাহ্ এ বলে মনুষ্য সৃষ্টি করেননি যে, তারা সব সময় সুন্দরকে ত্যাগ করে অসুন্দরে জীবনযাপন করুক এবং হিংসানিন্দায় অপরের অনিষ্টতায় লিপ্ত থাকুক। এ বলে সৃষ্টি করেন যে, সকল জড়তা ও অসুন্দরকে ভেঙেচুরে সুন্দর করণে হোক একজন মানুষের নৈতিক স্বভাব। অতএব কয়দিনের জিন্দেগি, যেভাবে আসা সেভাবেই ত যাওয়া; দুই হাত সব সময়ই ত খালি। কাজেই অশান্তি-অনিষ্টতা ভুলে সুন্দর ও শান্তির প্রার্থনায় ব্রতী হতে পারলেই সার্থক জিন্দেগি।
* আমি মানি না কোন ভেদাভেদ, এটি আবেদ--
ঈশ্বর প্রভু আল্লাহ্ খোদা গড্ ভগবান।
আমি জানি না কোন নীতিশাস্ত্র, কোন পুরাণবেদ--
জাতি বিজাতি বৌদ্ধ খ্রিষ্টান হিন্দু মুসলমান।
আমি মানি শুধু এটুকু
বুঝি শুধু ক্রন্দনদুখু
জানি তিনিই একক, তিনিই পৃথক--
সর্বনামের এক স্থান।
* আমি চাই না চাই না প্রভু লোলুপের স্থান
আমার মর্মে মর্মে বাজুক বুভুক্ষুদের গান--
বলি না যেন--কর সহায়তা অভিনব
মানি না যেন--দুর্ভিক্ষ দেশের মানব
চাওয়ার আদতে আদতে হই না যেন বেজান--
আমি চাই না চাই না প্রভু লোলুপের স্থান॥
* ক্ষুদ্র বালুকণা হতে মহাবিশ্বের সমস্ত কিছু সাকার একমাত্র সৃষ্টিকর্তা নিরাকার। তাই আমি স্রষ্টার কাছে মাথা নত করব কোন সৃষ্টির কাছে নয়। স্রষ্টা এক কিন্তু সমস্ত কিছু দুয়ের মধ্যস্থল থেকে সৃষ্টি তাই কামনা করি না, দুয়ের সংঘাতে ধ্বংস হোক কোন জিন্দেগি। আমি যতই বিজ্ঞান আর দর্শনশাস্ত্র ঘাঁটাঘাঁটি করি ততই পাকাপোক্ত আমার ঈমান এক ইলাহিতে বিশ্বাসি।
চলবে...
০২ মার্চ - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৭৯ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪