গর্বের মাঝে ছায়া

গর্ব (অক্টোবর ২০১১)

গীতু
  • ৩০
  • 0
  • ২৯
মেঘলা আকাশ ঠাণ্ডা বাতাস বইছে । আবহাওয়াটা বেশ ভাল। রাব্বানি সাহেব বের হয়ে ভাবলেন -যাই একটু ঘুরে আসি। আবহাওয়া আনুকুলে তাই হাঁটা শুরু করলেন ।কিছুদূর গিয়ে বড় শপিং সেন্টার আছে। আজ কি মনে করে তাতে ঢুকলেন। আধুনিক শপিং এর মজা নেবার চেয়ে তা দেখার চেষ্টা করছেন। বয়স ৬৮ চলছে । এই বয়সে কত কি নতুন করে শিখছেন । কি আরাম -আয়েস করে এক জায়গায় সব কেনা যায়! সেই কাদা প্যাঁচ প্যাঁচ রাস্তা , ঝোলা হাতে তরকারিওয়ালাদের সাথে বাক-বিতর্ক , কোনও কিছুই নাই!
একজায়গায় দাঁড়িয়ে এই সব কথা ভাবতে ভাবতে তার পিঠে একটা হাতের স্পর্শ পেলেন। মুখের দিকে তাকিয়ে দেখেন এক ভদ্রলোক তার মতই বয়সী ।
-রাব্বানি না ? বলে লোকটি হেসে ফেললেন । হাসির সময় তার ঠোঁটের কাছে কাটা দেখে এবার চমকে উচ্ছাসে - সাগর তুই !!
-এতদিন পর তোর সাথে এভাবে দেখা ! তুই তো আমায় চিনতেই পারিসনি । কি করিস এখানে দাঁড়িয়ে ?
-নারে কিছু না । এই ঘুরাঘুরি ।তুই ?
- দেখছিস না ট্রলি ভর্তি করেছি এবার বিল করতে যাব । তুইও চল । ওরা বিল করুক আমরা ততক্ষণ গল্প করব । সেই যে তুই ঢাকায় ট্রান্সফার নিয়া চলে আসলি আর যোগাযোগ কমেই গেল । তোর দুই ছেলে ছিল যে?ওরা এখন কি করে?
- হ্যাঁ । মারুফ বুয়েট থেকে পাস করে বউ-বাচ্চা নিয়ে এখন অসট্রেলিয়া থাকে । আর মবিন ঢাকা মেডিক্যাল থেকে পাস করে চোখের ডাক্তার ।ঢাকাতেই থাকে বউ-মেয়ে নিয়ে ।
-বাহ ! ভালই তো । তোদের কত চিন্তা ছিল দুই ছেলে নিয়ে । ওদের জন্য তুই প্রমোশন ছেড়ে ঢাকাটেই থেকে গেলি । ওদের ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ালি । যাক ভালই হয়েছে ,কষ্টের ফল পেয়েছিস । - আমারি তো কথা শুনে যাচ্ছিস , তোর কথা বল !
-আমার চলছে ভালই ।আমিতো রাজশাহী তেই ছিলাম । ছেলে-মেয়ে দুজনাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছে। ছেলে এম বি এ করে একটা কর্পোরেট কম্পানিতে ম্যানেজিং পোস্টে চাকরী করে । মেয়ের বিয়ে হয়ে জামাইসহ আমিরিকা থাকে । ওখানেই দুজনে চাকরি করে।
-তুই কোথায় থাকিস?
- আমি সীমান্তর সাথে থাকি ।ওর বউ ঢাকার এক কলেজের লেকচারার । ছোটো এক নাতি নিয়ে আমাদের বেশ চলে যায় । আরে আজ আমাদের বিশেষ দিন ।তাই কিছু বাজার এ কেনা কাটা করলাম।বাসায় ভাল রান্না হচ্ছে । কি যে বলব ছেলে-বউমার এই সব কাণ্ড - কেক কাটা কাটি । কম বয়সে করতে পারিনি এখন ওরা করে । কি যে হাসি পায় ,আবার ভালও লাগে। ওহ , ভাবির কথা তো জানাই হলনা । ক্যামন আছে ?
- আশা করি ভালই আছে আমায় ছাড়া । চার বছর হল সে দুনিয়াতেই নাই। -কি ভাবি নাই ! তিনি যেন জান্নাতবাসি হন । এই ছেলেদের জন্য তিনি ত কম কষ্ট করেননি । কিন্তু নিজে সুখ ভোগ করতে পারলেন না ।
বিল তৈরি হয়ে গেছে । বিল মিটিয়ে ওরা বাইরে আসল । কারে সব তুলে সাগর বলল- শোন অনেক দিন পর দেখা হল , তাও আমাদের বিশেষ দিনে । তোকে আজ আমার বাড়ি যেতেই হবে। শেফা তোকে দেখলে খুব খুশি হবে ।রাব্বানি না বলতে পারলনা । সাগরের গাড়িতে উঠে পরল
- গাড়িটা ভালই ।তোর কেনা?
-আরে না । ছেলে কিনেছে ,লোন নিয়ে । ও গাড়িটা নিয়ে অফিসে যায় । কিন্তু যদি আমি বা শেফা বাইরে যাব জানে তা হলে রেখে যাবে না হলে ফেরত পাঠাবে ।সবসময় বলে এতদিন কষ্ট করেছ ,এখন একটু আরাম কর । বউমা ও ভাল । শেফার সাথে সম্পর্ক ভাল। দুজনে মিলে সংসার চালায় । ও চাকরি করে তাই বেশি চাপ দেই না। কি লাগবে কি করতে হবে নিজেই চেষ্টা করে করার।এবার তোর কথা বল। নিশ্চয় মবিনের সাথে থাকিস?মারুফের ওখানে যাস না ?
-নারে মারুফ নিয়া যেতে চায় । কিন্তু বিদেশে যেতে মন চায় না। মবিন আর ওর বউ আমার খুব খেয়াল রাখে ।
-আসলেই ভাবি চলে যাওয়াতে তুই একা হয়ে গেছিস । তাও ভাল যে ওদের সাথে থেকে তোর সময় নাতি নিয়ে চলে যায় । কথা বলতে বলতেই গাড়ি একটা বড় গেটের সামনে এসে হর্ন দিল । ভেতরে ডুকে লিফটে ৪ তলায় উঠে কলিগবেল বাজতেই একটা মেয়ে দরজা খুলল । সাগর জোরে করে ডেকে বলল
- শেফা এদিকে আস । দেখত চিনতে পার কিনা ! শেফা রান্না ঘর থেকে বের হয়ে সরু চোখে তাকাল মুখের দিকে । তারপর একটা হাসি দিয়ে বলল-রাব্বানি ভাই না !কত দিন পড়.........!
বাজারগুল ড্রাইভার নিয়ে আসল । শেফা বলল- এমনি এত কিছু রান্না হচ্ছে তুমি আবার......।।
--ওগুলো তো ছেলেরা করেছে ।আমি এক্তু কিছু আনলাম ওদের পছন্দের কিছু কর । সাথে সালাদ ,আর আইসক্রিম এনেছি দিও । ছোট নাতিটা আইস ক্রিম শুনে ছুটে আসল । ওকে আদর করতে করতে
- বৌমা বাড়ি আসবে?
- হ্যাঁ । আজ দুপুরেই চলে আসবে । দেখেনতো ভাই পাগলামি এদের ।এই বয়সে আমাদের নিয়ে মাতামাতি ।
- কেন ভালই ত । যা কোনদিন করা হয়নি তা কোনদিন হবে না এমন ত নয় । আমার কিন্তু খুব ভাল লাগছে এসব দেখে ।
দুপুরে অনেক রান্না হল । বউ সোহানা বাড়ি আসল ।একটা কেক হাতে।খাবার পরিবেশন করল । বেশ ভাল লাগল ।
- কিরে তুই যে এখানে তোর বাড়িতে জানালি না ? বাড়িতে ত চিন্তা করবে ! রাব্বানি একটু চমকে উঠল । তারপর বলল - ওহ তাই ত ! আসলেই গল্পের চোটে সব ভুলেই গেছি । মোবাইলটা হাতে নিয়ে একটা টিপ দিয়ে কানে নিয়ে বলল- হা বাবা আমি আজ .........।। আমার খাওয়া হয়ে গেছে । বউমা কে খেয়ে নিতে বল । আমি ঠিক মত পৌঁছে যাব ।
-বাব্বা এখন বউমা খাইনি ! শোন আমার গাড়ি তা না হয় তোকে পৌঁছে দেবে । সীমান্ত আজ বিকালেই চলে আসবে ।
- না না তার দরকার নাই । আমি তো ঢাকাতেই থাকি । আমি ঠিক চলে যাব । শুধু শুধু চিন্তা করে।
ঘড়ির কাঁটা থেমে থাকে না ।৪ টার পড় পড় সীমান্ত চলে আসল । তারপর সব্বাই মিলে বড় একটা আড্ডা । সেই পুরনো দিনের ছাত্র জীবনের - অফিসের - কলেজের সবার মাঝে যা কিছু মজার ভাণ্ডার সব ...। এর পর কেক কাটা- চা - ছবি তুলা হল । সব নিজেদের মধ্যে এক অন্যরকম পরিবেশ । সব কিছু শেস হলে সন্ধ্যায় হাসিমুখে রাব্বানি সাহেব সব্বার কাছে বিদায় নিলেন । সি এন জি তে উঠার পর সাগর বলল - এই তোর মোবাইল নম্বর ত নেয়া হল না !
- অসুবিধা নাই ।তোর নম্বর আছে । আমি কল করব । দুই তলা এক ভবন এর সামনে মাঝারি গেট । উপরে লেখা “শান্তিনীড় বৃদ্ধাশ্রম “ । লোকটি ভেতরে ঢুকে একটা ঘরের দরজা খুলল । ধীর পায়ে এসে বিছানায় বসল । লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে টেবিলে রাখা মহিলার ছবিটা হাতে নিয়ে নিজের সামনে ধরল । ছবির ফ্রেমে লোকটির প্রতিবিম্ব পড়ল । ছল ছল চোখে রাব্বানি সাহেব ! --ফিরোজা তা হলে কি আমরা হেরে গেলাম ! আমরা সন্তানদের শিক্ষিত করলাম কিন্তু সুশিক্ষিত করতে পারলাম না ! তাই তো তুমি কষ্ট পেয়ে নিরবে চলে গেলে ।আজ ওদেরকে নিজ সন্তান নিয়ে গর্ব করতে দেখলাম তেমনি সন্তানও পিতা-মাতা নিয়ে । আমাদের নিয়ে কি গর্ব করার কিছুই নাই ! কিন্তু তাই বলে আমি কি করে তাদের কাছে সন্তানকে ছোট করি ! তাই তাদের কাছে আমি ঠিকানা বিহীন থাকলাম ।
আমারএইপ্রতিষ্ঠিত সন্তানদের জন্য যে গর্ব তার মাঝের ছায়াটা না হয় আমিই জানলাম ......।।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
গীতু ভাল লাগা অ আমি কষ্ট টা অনুভব করাতে পারলাম বলে ধন্যবাদ ।
মোঃ আক্তারুজ্জামান অনেক ঘরের কিংবা অনেক মনের বাস্তব উপলব্ধির সুন্দর বয়ান| একদিন কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছে যাবেন- এই বিশ্বাস রাখছি|
অজয় ভালো তবে পড়তে একটু কষ্ট হয়েছে কেন হয়েছে তা অবস্যই বুজতে পেরেছেন .....শুভ কামনায় ভোট করলাম
গীতু অনেক ভালো লাগলো কথাটি পরে
পন্ডিত মাহী অনেক অনেক ভালো লাগলো গল্পটি ...
গীতু এক সাথে এত্ত জনের ভাল লাগা এবং গল্পটা পরার জন্য অনুরধ করার জন্য ধন্যবাদ । আসলেই আমি এটা বেস সময় মাথা ঠাণ্ডা করে , কোম্পজ অলসতা কাটিয়ে লিখেছিলাম , কিন্তু সেই তুলনায় পাঠক পাইনি । আর আমি আজ কাল এত্ত বাস্ত যে পড়া , লিখার সময় পাইনি । তাই মনটা খুব খারাপ। ২৫ তারিখ ছলে গেল সেটাই বুজিনি । অনেক ধন্যবাদ সব বন্ধুকে ।
আহমাদ মুকুল হুমমম....শেষ বিকেলে মনটা আর্দ্র করে এ বেলার পড়া শেষ করলাম। গীতু, আপনার লেখা আমি খুব একটা পড়িনি। মাঝ বয়সে পৌঁছে গেছি..প্রৌঢ়ত্ব খুব দুরে নয়। ভাবতেই ভয় লাগে। আপনাকে অনেক কৃতজ্ঞতা দারুন গল্পটি এখানে দেযার জন্য। আর ধন্যবাদ সূর্যকেও, চোখে আঙুল দিয়ে পাঠক কমের বিষয়টি দেখানর জন্য।
সূর্য *****এ গল্পটা আরো পাঠক পেলে ভাল লাগবে।*****
সূর্য গীতু, অনেক সুন্দর (আসলে হৃদয়বিদারক) একটা থীম নিয়ে লিখেছ, এবং যা বলতে চেয়েছ তা সুন্দর প্রকাশিতও। তাহলে দুইয়ে দুইয়ে চার হলো কিন্তু। অভিনন্দন সুন্দর গল্পের গল্পকারকে।
আশা গল্পের থিমটা সময়োপযোগী। মনে ধরার মতো। আর গর্বের বহিঃপ্রকাশটা মনের কুটিরে নীরবতার ছোঁয়া লাগায়।

২৪ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪