ঘটনা-১. সকালে ঘুম থেকে উঠাটাই হলো দরজার কড়া নড়ানোতে। উঠে কোন রকমে ওড়না গায়ে দিয়ে দরজা খুলে দেখে এক মাঝ বয়সী লোক দাঁড়িয়ে। বেশ নরম সুরে বলল-'আচ্ছা মা তুমি কি ডাক্তারি পড়?'- সেবা তার উত্তরে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো।- তাহলে একটা উপকার করবে মা। এই কিছুদূর গিয়ে তুমি একটা রুগীকে দেখবে? বুড়ি মানুষ কেউ নেই অসুস্থ- একটু চল না মা। লোকটার কথার মধ্যে এমন এক আকুতি আর আন্তরিকতা ছিল যে সে না বলতে পারল না। বাড়ির সালোয়ার কামিজটা পরেই কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস ব্যাগে করে নিয়ে সে লোকটির সাথে রওনা দিল। ওর মেসের পেছন দিকে একটু এগুলেই বেশ ঘিঞ্জি বাড়ি। পুরাতন দিনের সব দালান কোঠা। সেই সব দালানের মধ্যেই একটি জীর্ণ বাড়িতে প্রবেশ করল সে। ঘরে ঢুকে দেখে একটা খাটে বেশ রোগা সাদা কাপড় পড়া বৃদ্ধা শুয়ে আছেন। গায়ে হাত দিয়ে দেখল বেশ জ্বর। চোখ দেখে বুঝল ছানি পড়েছে তার চালশে চোখে। ঘরের আসবাব বলতে তেমন কিছুই নেই। সেবা বেশ কিছু ঔষধের নাম লিখে লোকটির হাতে দিল। বলল, উনার কে হন আপনি? লোকটি বলল- কেউ না। একা বুড়ি মানুষ, আমরা প্রতিবেশী- তাই দেখাশুনা করি। প্রেসক্রিপশন লেখার সময় তার নাম জানা হয়ে গেছে। বৃদ্ধার নাম মীনা দেবী। বসয় ৭০ বা তার একটু কমও হতে পারে। আসলে অভাব মানুষের বয়স বাড়িয়ে দেয়। সেবা- কেন ছেলে মেয়ে নেই? -হাঁ আছে ৩ টি মেয়ে। বিয়ে হয়ে গেছে সে যার সংসারে থাকে। আর ছেলেটা ঐ যে বারান্দায় বসে। -ওহ্ তা ওরা মাকে দেখে না? একা মানুষ নিয়ে গেলেই তো পারে তাদের কাছে। বৃদ্ধা জ্বরের মধ্যেই বলে উঠলেন-ছি ছি মেয়ের বাড়িতে থাকব সেই ২৮ বছর বয়সে বিধবা হয়েছি। স্বামীর ভিটাতেই থেকে কষ্ট করে মেয়েদের বড় করেছি। বিয়ে দিয়েছি। আমার দায়িত্ব শেষ। এখন একা মানুষ কেটে যায়। -কি করে মানুষ করলেন মেয়েদের? তাও হিন্দু পরিবারের মেয়েদের বিয়ে দেয়া যথেষ্ট খরচের ব্যাপার। -পড়াশুনা তেমন জানি না। এই সেলাই করেই সংসার চালিয়েছি। স্বামীর এই বাড়িটুকু ছাড়া তেমন কিছুই ছিল না। একটা ছেলে তাও অসুস্থ আমাকেই দেখতে হয়। আমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হব তো নইলে ওকে নিয়ে ঝামেলাই পড়ব। আমি ছাড়া কিছু বোঝে না। সেবা বারান্দায় বসা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বোঝে সে মানসিক প্রতিবন্ধী। সে লোকটার দিকে তাকিয়ে বলে- আচ্ছা কাকা আপনি বরং আমার সাথে একটু চলেন। আমার ওখান থেকে কিছু ঔষধ নিয়ে আসবেন এগুলো তাহলে আর কিনতে হবে না। আর দিদা আপনি একটু সুস্থ হলে আমার সাথে মেডিক্যালে যাবেন। আমি আপনার চোখের ব্যবস্থা করে দেব।
সেবা নিজের ঘরে এলো আবার সেই কাকার সাথে। চলার পথটুকুতে বেশ কথা হলো। কত কষ্ট করে একজন মা হিসেবে একাই সেই দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু দায়িত্ব তাকে নিস্তার দেয়নি তাইতো এই বৃদ্ধ বয়সে অসুস্থ শরীরে তিনি তাড়াতাড়ি সুস্থতা চাইছেন তাও সেই সন্তানের জন্য। এটাই মনে হয় 'মা' শব্দের এক চিত্র।
ঘটনা-২ মেডিক্যাল থেকে বের হবার সময় মুঠোফোনটা বেজে উঠল। হাঁ বোতাম টিপতেই ঐ দিক থেকে রশ্মির উচ্ছ্বাস ভরা কণ্ঠে বলে উঠল- সেবা রিয়াজ ওর মা-বাবাকে হাঁ করিয়েছে। সেবা-সত্যি! দারুণ সংবাদ। এই তোকে কিন্তু পিজ্জা হাট এ পিজ্জা খাওয়াতেই হবে। রশ্মি - আমি কেন খাওয়াব। এবার রিয়াজ আমাদের খাওয়াবে। সেবা_ আচ্ছা এখন থেকেই বেচারার উপর সব ভার দিয়ে দিচ্ছিস। দুজনে খুব জোরসে হাসল। সেবার মনটা আজ খুবই ভাল লাগছে। কারো ভাল শুনলেও যে কত প্রশান্তি লাগে সেটা ভেবে। কি মনে করে রশ্মির মাকে ফোন করল সেবা। -হাঁ আন্টি কেমন আছেন? -ভাল মা। তোমর সব কেমন চলছে। -চলছে ভালই। তা অনেক দিনতো আর আপনি ভালো মন্দ রান্না করে ডাকলেন না। -বাহ বাড়ির মেয়ে আজ নিমন্ত্রণ চাইছে! তোমার আবার কিসের নিমন্ত্রণ? আজ চলে আস সন্ধ্যার সময়ে এক সাথে ৩ জনে খাওয়া দাওয়া হবে- রাতে থাকবে কিন্তু। -ঠিক আছে, আন্টি। আজ আমিও ফ্রি আছি। রাতে সেবা কোকের বোতল, কিছু ফুল নিতে ওদের বাড়ির গেল। আন্টি, রশ্মি ও সেবা মিলে রান্না আড্ডা দিয়ে শুতে গেল। অনেক রাত পর্যন্ত রশ্মি-সেবা কথা বলল। রশ্মি-সত্যি বিশ্বাস হচ্ছে না সেবা রিয়াজের সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে! -কেন তুই কিসে কম? প্রকৌশলী, ভাল চাকরি করিস। দেখতে এত সুন্দরী । অবশ্য আন্টির চেয়ে নয়। রশ্মি-না রে সুন্দরী, যোগ্যতা সব থাকলেও কি সব কিছু হয়? আমার মা তো সুন্দরী ছিল। কিন্তু তার জীবনটা কেমন হলো বলত? মাত্র ১৭ বছর বয়সে বাবা-মা বিয়ে দিয়ে দিল। ছেলের চেহারা আর সম্পত্তি দেখে। কিন্তু একটু খোঁজও নিল না সে একজন ভারসাম্যহীন মানুষ। পরিবারটাই এমন। কত কষ্ট সহ্য করেছে সে। তখনতো তালাক এর প্রচলন ছিলই না। তালাকের পর এক বছর গৃহবন্দি লজ্জা আর সংশয়ে।তাও আমার নানা-নানি আর ভুল করেনি ।মাকে পড়ালেখা করিয়েছে। আজ মা একজন উকিল। আমাকে মানুষ করেছে। কত কষ্টই না তার জীবনে সহ্য করতে হয়েছে। এত্ত কম বয়সে। তাও দেখ আমার যোগ্যতা বা আমার মা আজ প্রতিষ্ঠিত উকিল হয়েও রিয়াজের পরিবার আমায় মেনে নিতে চায় না শুধু আমার জন্ম ইতিহাসের কারণে। শুধু সে কেন ছাত্রজীবনেও তো দেখেছিস আমি কত সমস্যায় পড়েছি। সেবা- থাক না রশ্মি সে সব কথা। আজ ভালো কিছু হচ্ছে সেটাইতো ভাল তাই না? কেন ঐ সব কথা ভেবে আনন্দটা মাটি করছিস। তার চেয়ে দেখ না তুই এখন যা পাচ্ছিস তা কত সুন্দর। কালো দিনগুলো কেটে গেছে রে। তাও তো তুই ভাল কিছু পাচ্ছিস। রশ্মি- তা ঠিক। একজন মা পেয়েছি, তোর মত বান্ধবী পেয়েছি এরপর রিয়াজের মত বর পাচ্ছি। সেই ভাবে দেখলে আমার মা কিছুই পায়নি। সেবা-পেয়েছে তোর মত মেয়ে। সে মা হিসেবে সফল সার্থক।
ঘটনা-৩ ছেলেটাকে রক্ত দেয়া শেষ হয়েছে। ওর মা শাড়ির কোণায় গিট দেয়া অংশ খুলে টাকা?বের করছে। তবে দেখে বোঝাই যাচ্ছে এ কয়েকমাস পর পর তার এভাবে এক থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত ছেলের রক্ত কেনা কত কষ্টকর। সেবা জিজ্ঞাসা করল-ওর বাবা কোথায়? ছেলের চিকিৎসায় খরচ দিতে চায় না ? মহিলা কাঁদ কাঁদ ও কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বলল-আমার মত মানসের আবার সোয়ামী। পেটা বান্ধা ফেলছিলাম। বুঝতেও পারিনি। পারলে কি এমন হয়। আল্লাহ দিল তো তাও এমন এক পোলা হলো না পারি ফেলতে না পারি রাখতে। এই পোলার জন্যে আরও টাকা লাগে। প্রতিমাসে টাকা জমাতে হয়। গতর নিয়া তো ব্যবসা সেই গতরেই আরও খাটতে হয়। সেবা এবার বুঝে মহিলার কাজ কি। সে অবাক হয়ে বলে-আপনি এই ছেলের প্রতি এত মায়া করছেন! -ক্যান ডাক্তার আপা আমরা কি মা না? কথাটা বলে সে টাকা ঠিক করে জমা দিতে চলে যায়। সেবা আবার অবাক হয়ে মা এর আর এক রূপ দেখে।
ঘটনা-৪ পোস্টমর্টেম শেষ করে শিশুটির লাশ যখন বের করে আত্মীয়দের হাতে দেয়া হলো সেবা ওখানেই দাঁড়িয়ে ছিল। শিশুটির চিরনিন্দ্রিত মুখের দিকে তাকিয়ে মনটা মোচড় দিয়ে উঠল। মাত্র ৫ বছরের ছেলে কিভাবে পারল একটুকু শিশুকে শ্বাসরোধ করে মারতে! তাও নিজের মা- নিজের অবৈধ সম্পর্ককে রক্ষা করতে। এর চেয়ে তো কাঁকড়া প্রাণীও ভাল। বাচ্চা কাঁকড়া মার ভেতরেই বড় হয়। এরপর যখন মা কাঁকড়া খোলস হয়ে যায় তখন তারা বড় হয়ে বের হয়ে আসে। সেবার মন বলে এটাও কি মার আর এক রূপ? হয়ত। বিচিত্র নারীর 'মা' শব্দের বিচিত্র রূপ আমাদের আশেপাশেই তাদের বিচরণ। দীর্ঘ নি:শ্বাস ফেলে সেবা ওখান থেকে চলে যায়। মনে মনে ভাবে চলার পথ আরো কত বাকি- আরও কত না এই শব্দের অর্থ খুঁজে ফিরি ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এস, এম, ফজলুল হাসান
আমার দৃষ্টিতে মা সংখ্যার সেরা গল্প-কবিতা গুলি হলো (১) প্রথম : # সাত মা # লেখক : মামুন ম.আজিজ , (২) দ্বিতীয় : # ভিখারিনী মা # কবি : Oshamajik , (৩) তৃতীয় : # আমার ভালোবাসার ফুল মায়ের হাতে দেব # কবি : মোহাম্মদ অয়েজুল হক জীবন , (৪) চতুর্থ : # মা # কবি : Khondaker Nahid Hossain , (৫) পঞ্চম : # ২০০০০০০০৯৭ সালের মা # লেখক : মাহাতাব রশীদ (অতুল) , আমার দৃষ্টিতে বিজয়ীদের বলছি , " আপনারা গল্প-কবিতা থেকে বিজয়ী হবেন কিনা তা জানি না তবে , আমার অন্তর থেকে রইলো আপনাদের জন্য বিজয়ী শুভেচ্ছা , ধন্যবাদ সকলকে " ,,
গীতু
@সাবের এক রূপের মা সব মায়ের প্রতিনিধি হতে পারে না।আর short story এমনই হয় যে কিছু বুঝে নিতে হয়।আরও ভাল করার try করব। @Sajid Thanks.@ Osprissho ur poem is nice.
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।