বুকে অস্থিরতা। এর মাঝেও ফ্যানের ঘটাঘট আওয়াজটা মাথায় ঢুকে যাচ্ছে। কাউকে বলবো কিনা ফ্যানটা বন্ধ করতে বুঝতে পারছি না। মজার কোন স্মৃতি ভাবতে পারলে হয়তো সময়টা কাটানো যেতো কিন্তু কিছুই মনে পড়ছে না। বারবার শুধু ছেলেবেলায় এক পায়ে কানে ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম তাই মনে পড়ছে। কোন মানে হয়। অবাক হয়ে ভাবছি মজার কোন ঘটনা কি ঐ জীবনের নেই কিংবা একান্ত ব্যক্তিগত কোন শ্লাঘা? স্মৃতিও বড্ড নেমকহারাম। ব্যাটা শুধু থুথু খাওয়া সময়ই মনে রাখে আত্নতৃপ্তি তার কাছে সতীন। হারামজাদা।
চারপাশের সব কিছুতেই কেমন যেন বিরক্তি লাগছে। পরিচিত একগাদা মুখ, সবাই আপনজন তবু এমন অসহ্য লাগছে অথচ এরা আমার জন্য কেমন করেই না মুখটা গম্ভীর করে আছে। ছোট ছেলেটা কি খেতে চেয়ে যেন মায়ের কাছে মার খেল, বড় মেয়েটা ভাইটাকে কোলে নিয়ে একটু দূরে সরে গেলো, ওপাশে কারা যেন চিৎকার করছে...কি কুৎসিত মুহূর্ত। সময়ও রাবারের মতো লম্বা হয় কাউকে যদি বলি সে বিশ্বাস করবে? যদিও আমায় এসব কিছুই স্পর্শ করছে না শুধু ফ্যানের ঘটাঘট আওয়াজটা ছাড়া। কে যেন বললো, ‘ভাইজান, ইমামের কাছ থেকে খবরটা আনা হয়েছে।’ আমি হাত ইশারায় তাকে থামিয়ে দিলাম। বড্ড মন চাচ্ছে কীর্তনখোলার পারে যেয়ে পা ডুবিয়ে বসে থাকতে সেই প্রথম যৌবনের মতো। বট গাছটা কি এখনো আছে? আহারে, জীবন কতো পরেই না জানায় সে দ্বিতীয়বার সুযোগ দেয় না।
একবার দৌড়ে প্রথম হয়েছিলাম বলে মা আদর করে কোলে নিতে নিতে বাপকে বলেছিল, ‘দেখছোনি আমাগো পোলা কেমুন দৌড়ায়?’ কি দুরন্তই না তখন ছিলাম। পাখির সাথে পাল্লা দিতাম দৌড়াতে দৌড়াতে কীর্তনখোলার পার ঘেঁষে। পাখি পাড়েনি আমি দৌড়ে জিতে একদিন নিজেকে আবিষ্কার করেছি এই ভীষণ ব্যস্ত শহরে। আজ রাগ লাগছে কেন সেদিন মার হাতে পুরষ্কারের গ্লাসটা দিয়েছিলাম, রাগ লাগছে কেন পাখি হেরে গেলো এই ভেবে ভেবে। শেষমেশ অর্জনগুলো- কিছু টুকরো শ্লাঘা মুহূর্ত জীবনের পাশে কতো তুচ্ছই না লাগে। অথচ মা কিন্তু দিনটাকে তার গল্পের ভাণ্ডারে রীতিমতো প্রশ্রয় দিয়ে তুলে রেখেছিলো। মমতাময়ীরা মাঝে মাঝে বড় তুচ্ছ জিনিসও বুকের ঘরে আগলে রাখে। কে জানে কি তার রহস্য।
মন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে বেশ বুজতে পারি। এক জীবনের অপ্রিয় অনেক কিছুই কেন জানি আর অপ্রিয় লাগে না। পা ছুঁয়ে সালাম করাটা এক সময় এতো বাজে লাগতো তবু চিত্রা যেদিন সালাম করতে করতে বললো বাবা মেডিকেল এ চান্স পেয়েছি তখন কেন জানি আর ব্যাপারটাকে অতো খারাপ লাগেনি। আজকাল ছেলেমেয়ের খুশির খবরে কত অবলীলায়ই না পা এগিয়ে দেই। জানালার বাইরে চেনা স্যাঁতস্যাঁতে আকাশ। কালো কালো মেঘগুলো হয়তো দিনভরই ভেবে ভেবে চলবে রাতটাকে কতোটা ঝড়-বৃষ্টিতে মুখরিত করা যায়। আচ্ছা চিত্রার মা কি আর কখনো ঝড়-বৃষ্টির রাতে বিয়ের শাড়িটা পড়বে? কি রাতই না ছিল সেদিন- ঝড়ের ধাক্কায় ইলেক্ট্রিসিটি গেলো চলে, বাসর ঘরের ছোট্ট দরজায় মাথা বাঁচিয়ে ঢুকতে যেয়ে পায়ে যা একটা হোঁচট খেলাম...দরজা লাগিয়ে দেখি আর নড়তে পারছি না। শেষমেশ গভীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করেছি ও কি বসে থাকবে নাকি লজ্জা ভেঙ্গে এসে হাত ধরবে ভালোবাসায় এই ভাবনায়। ঝড়-বৃষ্টির সেই রাতে ও উঠে এসেছিল।
ফ্যানের আওয়াজও যে এতো বিচ্ছিরি হতে পারে কে জানতো। এখন আওয়াজটা পাল্টে যেয়ে রীতিমতো গোঁ গোঁ করছে পশুর গোঙানির মতো। আমি একবুক অস্থিরতা নিয়ে চিত্রার মার দিকে তাকালাম। বেচারি আবারো কেন জানি ছোট ছেলেটাকে চড় মারলো। আমি চিত্রাকে হাই চাপতে চাপতে বললাম, ‘মাগো ফ্যানটা বন্ধ করে দে তো।’ চিত্রা ফ্যানটা বন্ধ করবার সাথে সাথেই আমার ডাক এসে গেলো। চোখের উপর তীব্র আলো। চেয়ে থাকতে পারছি না বলে চোখ পিটপিট করছি। ডাক্তার বললো, ‘ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আপনি কিছুই টের পাবেন না। আশ্বাস দেয়ার জন্যই কথাগুলো বলা তবু কেমন জানি ভয় ভয় লাগছে। ইমাম সাহেব কি বলেছিল তা শুনিনি বলে এখন বড্ড আফসোস হচ্ছে। কাটা পা দুটোকে কি কবর দিতে পারবো? পা দুটোর জানাজা হবে কিনা এই ভাবতে ভাবতে আমি অপারেশন টেবিলে গভীর ঘুমে তলিয়ে যাচ্ছি। বুকে অস্থিরতা। কি ভয়ঙ্কর সেই অস্থিরতা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
খন্দকার নাহিদ হোসেন
নীরব ভাই থেকে আদিব নাবিল পর্যন্ত সকলকে অনেক ধন্যবাদ। গল্পে আমার আরো চেষ্টা থাকবে। তবু বলতেই হয় আপনাদের ভালোবাসা আমায় মুগ্ধ করেছে। ভীষণ ভালো থাকুন সবাই।
খন্দকার নাহিদ হোসেন
প্রজ্ঞা আপু, আপনার নিয়মিত না হওয়াটা সবসময়ই জ্বালায়। তবুও সময় সুযোগ করে যখন দেখা দিয়ে যান বড্ড ভালো লাগে। জীবনের প্রথম লেখা গল্প বলেই বড় করতে চাই নি। আমি শুধু চেয়েছি যতটুকু লিখেছি ততটুকু পড়ে আরো কিছু পড়বার মতো আগ্রহ পাঠকের মাঝে জাগাতে পারি কি না। যদি পারি তো সামনে গল্পও লিখবো। আর তখন না হয় গল্প বড়ও হবে। তো আপনি বলায় সাহস পেলাম। সামনে আপনাদের ভালোলাগাটা বাড়তি করবার চেষ্টা আমার থাকবে। অনেক ভালো থাকুন এই কামনায় শেষ করছি।
প্রজ্ঞা মৌসুমী
অনেকদিন পর তোমার গল্প পড়লাম। তা কি করব? আমরা কি তোমার মত কলম কামড়ানোর কথা ভাবব? লেখায় আর বিষয় নির্বাচনে ভিন্নতা তো আছে। সুন্দর বর্ণনা। পা নিয়ে আরো কিছু ঘটনা/ শ্লাঘা মুহূর্ত পেলে ভালোলাগাটা বাড়তি হত। পা কাটার পর সত্যি কি করা হয় জানতে ইচ্ছে করছে...
আহমাদ মুকুল
অনেক দেরীতে আসলাম তোমার গল্পে। কবিতার ক্ষেত্রে কিন্তু এই উন্নাসিকতা দেখাতে পারি নি। তবে সামনে যদি আরো লেখ, নিশ্চিতভাবেই দৌড়ে পড়তে আসব। কেন বুঝলে তো? দারুন নজর কেড়েছ।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।