সাদা রঙের স্বপ্ন

ভালবাসা (ফেব্রুয়ারী ২০১১)

Epshita Chowdhury
  • ২৫
  • ৩৯
শপিং ও আরো অন্যান্য কিছু জরুরী কাজ হাতে নিয়ে নিভৃতা বাসা থেকে বের হল। বাসার গেট থেকে বের হয়ে রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে আছে হঠাৎ সামনে দিয়ে যাওয়া একটি সাদা গাড়ীর জানালা দিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসা খুব সুন্দর একটি ছেলে তার দিকে অবাক দৃষ্টি নিয়ে তাকালো এবং গাড়ীটা আস্তে স্লো করে চালাতে লাগলো এরই মধ্যে নিভৃতা রিক্সা পেয়ে যায় এবং প্রথমে একটি ফুলের দোকানে যায় , ফুল নেয়ার সময় লক্ষ করে যে, গাড়ীটা একটু দূরে দাড়িয়ে আছে , বুঝতে পারেনা নিভৃতা ছেলেটা কি তার পরিচিত না কি অন্য কোন উদ্দেশ্য আছে . . . .।
যাইহোক, এখানকার কাজ সেরে ও আবার রিক্সা নিয়ে একটি গিফট কর্ণারে যায়, ওর ছোট বোনের জন্মদিন উপলক্ষে গিফট কেনার জন্য. . . .যখন সে দোকানে ঘুরে ঘুরে গিফট কিনছে হঠাৎ দেখে সেই গাড়ীওয়ালা ছেলেটাও দোকানে ঘুরছে. . . একটু ভয় পায় নিভৃতা , তারপর কোন রকমে গিফট কিনে সে বাসার পথে রওনা দেয়। রিক্সা থেকে নেমে দেখে গাড়ীটা কিছু দূরে দাঁড়িয়ে আছে, ও যখন গেটের ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে দেখে ছেলেটাও পিছু পিছু আসছে, ও তাড়াতাড়ি করে সিড়ি দিয়ে উঠে ওদের বাসার কলিংবেল টিপে ঘরে ঢুকে পড়ে।
এরপর পরই ওদের বাসার কলিংবেল আবার কে যেন চাপে। বাসায় ওর বাপী রিটায়ার করা বিমানের এক কর্মকর্তা তিনি আছেন। ও কিছু বলার আগেই দেখে ওর বাপী দরজা খুলছে এবং দরজার ওপারে ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে। ও ভেতরে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। ওর বাপী দরজা খুলে সামনে অপরিচিত একজনকে দেখে জিজ্ঞেস করে , কে তুমি বাবা? কাকে চাও? ছেলেটা অত্যন্ত ভদ্রতা সহকারে বলে, আংকেল , আপনি আমাকে চিনবেন না, দেয়ার মত পরিচয় আমার একটা আছে, তার আগে বলি আমি আপনার সাথে একটু কথা বলতে চাই, যদি আপনি অনুমতি দেন, এবং ভেতরে আসতে বলেন , তাহলে আমি আমার পরিচয় দিয়ে কথা শুরু করতে পারি।
নিভৃতার বাপী তো খুব অবাক হয়ে যায়, চেনা নেই জানা নেই একটা অপরিচিত ছেলে বাসায় এসে কথা বলতে চায়, যদিও ছেলেটা যথেষ্ট ভদ্র। উনাকে ভাবতে দেখে ছেলেটা তার পকেট থেকে একটা কার্ড বের করে দিল। নিভৃতার বাপী দেখলেন, ছেলেটা বিরাট বিজনেস ম্যাগনেট রায়হান চৌধুরীর ছেলে এবং সে নিজেও একজন বিজনেস ম্যান। এরপর তিনি আর কিছু না বলে ছেলেটাকে ঘরে আসতে বললেন। ঘরে ঢুকে উনি ড্রইংরুমে চা দেয়ার কথা বললেন নিভৃতাকে দেখে। এদিকে তো নিভৃতা পুরা খেপা, বাপী এটা কি করলো। যাইহোক সে চলে গেল চা বানাতে ।
এদিকে ড্রইং রুমে বসে ছেলেটা বলতে শুরূ করলো- আংকেল আমি রায়হান ছৌধুরীর একমাত্র ছেলে ঈফতি রায়হান। লন্ডনে এমবিএ টা কমপিল্ট করে কিছুদিন আগে দেশে ফিরে বাবার ব্যবসায় জয়েন করি। আজ হঠাৎ করে আপনাদের বাসার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় একটা মেয়েকে দেখে আমি থমকে দাঁড়াই, জানি না সে আপনার কে , হয়তো সে আপনার মেয়ে, এরপর আমি মেয়েটার পিছু পিছু যাই, যেখানে যেখানে সে যায়, অবশেষে তার পিছু নিয়ে সরাসরি আপনার বাসায় আসি, আংকেল আপনার বা আপনার মেয়ের যদি আপত্তি না থাকে তাহলে আমি সেই মেয়েটাকে বিয়ে করতে চাই। আপনারা আমার ব্যাপারে খোজ-খবর নিতে পারেন, তারপর জানাবেন। আমি জানি না আমার কি হল, মেয়েটার নিষ্পাপ চেহারা আমার চোখ থেকে, মন থেকে কিছুতেই মুছে ফেলতে পারছিনা । বারবার মনে হচ্ছে, আমি যাকে এতদিন খুঁজেছি, সে ও-ই। এদিকে নিভৃতার বাপী তো অবাক, কি করবে সে ও জানে না। একদিকে ওরা অনেক বড়লোক, অন্যদিকে মেয়ের, মেয়ের মার মতামত না নিয়ে সে কিছুই বলতে পারে না। তাই তিনি বললেন, দেখো, বাবা, বিয়েটা তো ছেলে খেলা নয়। তুমি বললেই তো আর বিয়ে হতে পারে না। তোমার বাবা-মার মতামত দরকার, আমার মেয়ের মতের দরকার, তারপর না হয় সিদ্ধান্ত দেয়া যায়।
এরপর ঈফতি বললো আংকেল আমি কি আপনার মেয়ের নামটা জানতে পারি আর তার মোবাইল নম্বর, যদি আপনার আপত্তি না থাকে। তখন রায়হান সাহেব বললেন , বাবা আমার মেয়ের নাম নিভৃতা, আর মোবাইল নম্বরটা আমি তাকে তোমার ব্যাপারে সব বলার পরই না হয় দেব। তোমার কার্ডতো রইলো আমার কাছে। আমি ওদের সাথে আলাপ করে তোমাকে জানাবো। ততক্ষনে তুমিও তোমার বাবা-মায়ের সাথে আলাপ করে নাও। এই বলে উনি উঠে দাঁড়ালেন, ঈফতিও দাঁড়ালো চলে যাওয়ার জন্য। যাওয়ার আগে ওর চোখ বারবার নিভৃতাকে খুঁজছিল। ওদিকে নিভৃতা তো চুপ করে আড়ালে দাঁড়িয়েছিলো।
বাসায় ও আর ওর বোন এবং বাপী ছিলও। ওর মা একটু কাজে বাইরে গিয়েছিলেন। এদিকে ঈফতি যেই বের হল ওমনি আকাশটা কেমন যেন অন্ধকার করে এলো, এবং বাতাস বইতে শুরু করলো। একটু একটু বৃষ্টিও শুরু হল। আর ঈফতির মনে তখন তার খুব প্রিয় একটি গান বইতে শুরু করলো। সেই যে- নিঝুম সন্ধ্যা . . . . এদিকে ঈফতি বের হওয়া মাত্রই নিভৃতা আর ওর বোন মাইশা বেলকনিতে চলে গেছে। ওরা সবকিছু জানে না কিন্তু বুঝেছে কিছু একটা ব্যাপার ঘটেছে। ওরা দেখে রাস্তায় দাঁড়িয়ে সেই ছেলেটা ভিজছে . . . . ওরা দুজনে আলোচনা করে , কি ব্যাপার . . . . এটা আবার কোন পাগল . . . . বলে দুজনে ঘরে যায়।
এদিকে ঈফতি বাড়ীর পথে রওনা দেয়। কিছুক্ষন পর নিভৃতার মা বাসায় আসে। বাসায় আসা মাত্রই ওর বাপী বলে তোমার মেয়েসহ তাড়াতাড়ি বসার ঘরে আসো, জরুরী কিছু কথা আছে। ওর মামনী অবাক হয়ে যায়- কি ব্যাপার, বাসায় আবার কি হল, জরুরী আলোচনা! এরপর উনি নিভৃতাকে ডেকে নিয়ে বসার ঘরে গেলেন। তখন ওর বাপী সব বলা শুরু করলেন, বলে উনি নিভৃতার দিকে চাইলেন- বললেন, মা আমরা তোর মতের বাইরে কিছুই করবো না, তুই যদি বলিস তাহলে আমরা আগাবো, আর আমার কাছে ছেলেটাকে খুবই ভদ্র বলে মনে হয়েছে, তুই বললে আমরা আরও খোজ-খবর নেব, এখন তুই-ই বল তোর কি মত। নিভৃতা কি বলবে বুঝে পেলোনা। এভাবে হুট করে একটা ছেলে এসে বললো বিয়ে করবে, ও তখন বললো, বাপী তোমরা আগে খোজ-খবর নাও তারপর না হয় মতামত দেয়া যাবে। ওর বাপী বললো, মা রে ও তোর সাথে কথা বলতে চেয়েছে, আমি কি ওকে তোর নাম্বার দিব। নিভৃতা বললো , ঠিক আছে দিও।
এদিকে ঈফতি বাসায় এসেই মাকে জড়িয়ে ধরে, মা বলে, কি রে! পাগল টাগল হয়ে গেলি নাকি? ও বলে, মা তোমরা এতদিন বিয়ে বিয়ে করেছো, আজ আমি রাজী। তারপর ও ওর মাকে সব বলে, কিছুক্ষনের মধ্যেই ওর নাম্বারে নিভৃতার বাবা ফোন করে । তখন ও বলে , আংকেল আপনি একটু আমার মার সাথে কথা বলেন। ওর মা তখন বলে, আমি ঈফতির বাবার সাথে আলাপ করে আপনাকে রাতে ফোন দিব, ওর বাবা যদি রাজী হয় তাহলে কালই আমরা আপনার মেয়েকে দেখতে আসবো। এই বলে উনি ফোনটা ঈফতিকে দেন। তখন নিভৃতার বাবা ঈফতিকে বলে, নিভৃতার নাম্বার তোমাকে দিচ্ছি, দেখ তোমরা আলাপ করে, তুমি তো আমার মেয়েকে পছন্দ করেছো এখন দেখ ও কি বলে।
ঈফতি ওর ঘরে চলে যায়। কিছুক্ষন পর ফ্রেশ হয়ে ও নিভৃতাকে ফোন দেয়। ও পাশ থেকে একটি সুরেলা কন্ঠ ভেসে আসে। ও বলে, হ্যালো, নিভৃতা বলছেন? ওপাশ থেকে বলে- হ্যাঁ বলছি। তখন ও বলে, নিভৃতা আমি ঈফতি বলছি, প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, সকালে আপনার পেছনে ওভাবে ঘোরার জন্য এবং হুট করেই আপনার বাসায় যাওয়ার জন্য। নিভৃতা আমার করার কিছু ছিলোনা। আমি আপনাকে বোঝাতে পারবোনা আপনাকে দেখে আমার কি হয়ে গেল। প্রথমেই দেখে মনে হল আমি এতদিন যাকে খুজছি সে আপনি, এরপর কিছু না ভেবেই আমি আপনাকে ফলো করি , ফুলের দোকানে এবং শপিং মলে আমি আপনার পেছনে পেছনে যাই এজন্যই যে- আমি একটা সিদ্ধান্ত নিতে চাই, আর তাই ওভাবে ঘুরে আপনাকে দেখে সিদ্ধান্ত নেই বিয়ে করার। যদিও আমি আপনার সম্পর্কে জানি না , আপনিও আমার সম্পর্কে জানেন না, তারপরও আমি আপনার বাসায় যাই, সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে, নিভৃতা জীবনটা অনেক সুন্দর, এই সুন্দর জীবনটাকে আরো সুন্দর করে রাঙিয়ে তোলার জন্য আমরা কি একসাথে পথ চলতে পারি না? আমরা কি দুজন দুজনের হাতটা ধরে চলতে পারি না? এতক্ষন নিভৃতা চুপ করে সব শুনছিলো। এবার সে বললো- হ্যাঁ , পারি, কিন্তু তার আগে মনে হয় আমাদের দুজনকে দুজনের জানা উচিত। তখন ঈফতি বলে- হ্যাঁ শিওর। বলেন আপনি কি জানতে চান? ও, আমি কি আপনাকে তুমি বলতে পারি? নিভৃতা হাঁসে, বলে হ্যাঁ, অবশ্যই পারেন, তবে আমাকে ফোর্স করা যাবেনা, আমার আবার তুমি কথাটাতে এলার্জি আছে। এটা শুনে ঈফতি হো হো করে হাসেঁ। এভাবে ওরা অনেকক্ষন কথা বলে। শেষে ঈফতি বলে কাল কি আমরা দেখা করতে পারি, যদিও আমার বাবা- মা রাজী হলে কালই তারা আপনাকে দেখতে যাবে। তার আগে চলো, আমরা দেখা করি ।আরো কিছু জানার থাকলে জেনে নাও। নিভৃতা বলে- শুধু কি আমারই জানার আছে, আপনার নেই? ঈফতি বলে- না নেই, কারণ বর্তমানের নিভৃতাকে নিয়ে বাঁচতে চাই, আর তার ভবিষ্যৎ জুড়ে থাকতে চাই, যদি কিছু অতীত থেকেও থাকে, তুমি চাইলে তা বলতেও পারো, আবার না বলতেও পারো , মনে করো আমি তোমার অতীতেও ছিলাম, বর্তমানেও আছি, ভষ্যিতেও থাকবো কেমন। আচ্ছা শোনো কাল আমরা ধানমন্ডি লেকে আসবো, আমি তোমাকে বাসা থেকে নিয়ে যাব। তুমি বাসায় বলে রেখ, আর হ্যাঁ, তুমি কি আমার পছন্দের একটি কালারের ড্রেস পড়ে আসবে? নিভৃতা একটু চুপ করে থেকে বলে- বলেন কি কালারের? ঈফতি বলে- সাদা । ওকে বাই নিভৃ, কাল ঠিক ১০টায় আমি আসবো, তুমি তৈরী থেকো। নিভৃতা বলে- এই যে হ্যালো- আমার নাম নিভৃতা, আপনি আমাকে নিভৃ বললেন কেন? আদর করে বললাম, ঈফতি বলে, বলেই হাসেঁ। আমিও কিন্তু আপনাকে ঈফ বলে ডাকবো। সত্যি!- ঈফতির মুখে দুষ্টামি ভাব, ডাকবো কথাটা শুনে। নিভৃতা লজ্জায় লাল হয়ে যায়, ভাগ্যিস ঈফতি ওকে দেখতে পাচ্ছে না। ও বলে- মানে ঈফ বলবো। এই বলে ফোন রেখে দেয়।
নিভৃতা ওর মা -বাবাকে বলে ঈফতি ওর সাথে বাইরে দেখা করতে চায়। ওর বাবা- মা বলে , ঠিক আছে, আগে ঈফতির বাবা রেজাল্ট দেক, তারপর। এদিকে ঈফতির মা ওর বাবা বাসায় এলে, চা খাওয়ার পর , প্রসঙ্গ তোলে, তখন ওর বাবা বলে, ও যদি পছন্দ করে ভাল কথা, আমাদের বলেছে সেটাও ভাল, আমরা তো আমাদের ছেলেকে জানি, নিশ্চয়ই ভাল হবে। তখন উনি নিভৃতাদের বাসায় ফোন করলেন, ফোন ধরে নিভৃতার বাবা। তারপর আলাপ শেষে তারা কাল সন্ধায় নিভৃতাদের বাসায় যাওয়ার কথা বলে। এদিকে এটা শুনে ঈফতি বাবাকে জড়িয়ে ধরে- বলে বাবা, তোমরা যে আমার পছন্দকে মেনে নিয়েছো এটা ভেবে আমার খুব ভাল লাগছে। তখন ওর বাবা বলে, দেখ তোকে তো আমরা জানি, তাই আপত্তি করলাম না। এখন যা ঘুমা। কাল কথা হবে।
রুমে এসে, ঈফতি ঘুমাতে পারে না, বারবার নিভৃতার চেহারা আর ওর হাসি চোখে ভেসে উঠে, ও ভাবে কখন সকাল হবে। এভাবে ছটফট করতে করতে ঘুমিয়ে পরে। সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে। দেখে ৮টা বেজে গেছে। দৌড় দিয়ে ও ফ্রেশ হওয়ার জন্য বাথরুমে যায়। বের হয়ে আলমিরা খুলে এ শার্র্টটা বের করে তো ওটা বের করে , বুঝে পায়না কি পড়বে? এরপর ওর পছন্দের একটা শার্ট পড়ে ডাইনিংয়ে যায়, কোনরকমে খেয়ে মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ী নিয়ে বের হয়। গাড়ীতে বাজতে থাকে ওর পছন্দেও গান-।
এদিকে নিভৃতা একদম সবকিছু সাদা পড়েছে। অদ্ভুদ সুন্দর লাগছে ওকে। ওর বোন মাইশা পাশে থেকে বলে- বিগ বি আজ তো জিজু মানে ঈফতি দুলাভাই মানে ভাই তোমাকে দেখে অজ্ঞান হয়ে যাবে, নিভৃতা চোখ গরম করে বলে- জিজু , দুলাভাই এসবের মানে কি রে? কেন তুমি বোঝোনা? তুমি তো জানোই তোমার বর কে আমরা জিজু, নয়তো দুলাভাই নয়তো ভাইয়া. . . বলে ডাকবো। ডাকবি ভালো কথা, তো এখনিই বলছিস কেন? বললাম মানে প্রাকটিস করছি. . . , হা হা হা. . . । মাইর খাবি কিন্তু. . . . ওদিকে গাড়ীর হর্ন পাওয়া যায়। মাইশা বলে, নাও তোমার নায়ক এসে গেছে. . . . . দেখ, মাইশা তুই কিন্তু বেশী পেকে গেছিস, তখন মাইশা বলে, আফটার অল আমি তোমার পরছায়া. . ,যাও তাড়াতাড়ি. . . । নিভৃতা নিচে নেমে আসে মাকে বলে বের হয়। ও যখন গেটের বাইরে আসে তখন দেখে ঈফতি পড়ে যাচ্ছে. . . . ও দৌড় দিয়ে ধরতে যায়. . . .তার আগেই ঈফতি আবার উঠে পড়ে, নিভৃতা বলে এটা কি হল. . . . তখন ঈফতি বলে. . . মাই গড, তুমি কি জান তোমাকে আজ শ্বেতপরীর মত লাগছে.. . . . তাই তোমাকে দেখে মাথা ঘুরে যায়, নিভৃতা বলে, ফাজলামি হচ্ছে তাই না? বিলিভ মি নিভৃ. . . বিলিভ মি. .. . কেন বাসায় তোমাকে কেউ বলেনি. . . এটা শুনেই নিভৃতা ওদের বাসার দিকে তাকায়, দেখে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ওর বোন মাইশা হাসছে আর হাত নেড়ে উইশ করছে। নিভৃতা কিছু বলেনা।
গাড়ীতে ওঠার জন্য পা বাড়ায়, ঈপতি গাড়ীর দরজা খুলে দেয়, নিভৃতা বলে, আমি পেছনের সিটে বসি, তাহলে সবাই মনে করবে আপনি আমার গাড়ীর ড্রাইভার, তখন ঈফতি বলে, মেম, আমি আপনার গাড়ীর ড্রাইভার হতেও রাজী আছি, শুধু আপনি আমাকে এপয়েন্টমেন্ট দেন। বলেই ও ড্রাইভিং সিটে বসে এবং ওর পছন্দের গান-হ্যালো ইস ইট মি. . . ছেড়ে দেয়। নিভৃতা বলে, এটা আমার অনেক পছন্দের একটি গান। ঈফতি বলে. তাই! তো মেম, এই গানটা আজ আপনাকে উৎসর্গ করলাম-বলবেন কি আপনার মতটা কি? নিভৃতা শুধু হাঁসে। এভাবে ওরা কথা বলতে বলতে লেকের পাড়ে আসে। একটা রেস্টুরেন্টে বসে। ঈফতি বলে-মেম নিশ্চয়ই আইসক্রিম খাবেন? নিভৃতা বলে-আপনি কিভাবে জানলেন, আমি আইসক্রিম খাব? তখন ঈফতি বলে- আমি সব জানি মেম। নিভৃতা বলে- আর কি কি জানেন? আইসক্রিম এনে ঈফতি বলতে শুরু করে, নিভৃতা, আমরা হয়তোবা দুজন ভিন্ন পথের পথিক, কিন্তু এই মুহুর্তে আমাদের গন্তব্য এক। মানে আমরা এই মুহুর্তে বিয়ের গন্ত্যব্যের পদযাত্রী। তোমার যদি আমাকে ভাল লাগে, এবং তুমি যদি রাজী হও তাহলে আমরা সেই গন্তব্যে একই সাথে যেতে পারি- আমি তোমাকে কোন কষ্ট দেবনা, আমরা দুজন একটু আধটু সেক্রিফাইস করে একসাথে পথ চলবো, দেখবে সেই পথচলাটা অনেক সুন্দর হবে। যাবে তুমি আমার সাথে বলেই ঈফতি হাতটা বাড়ায় ওর দিকে. . . . নিভৃতা চুপ করে থাকে অনেকক্ষন, ঈফতি মন খারাপ করে যখন হাতটা সরিয়ে নিচ্ছিল তখন নিভৃতা হাতটা ধরে ফেলে- ঈফতি দাঁড়িয়ে চিৎকার করে উঠে- আই লাভ ইউ নিভৃতা, আই লাভ ইউ, বলেই দেখে আশেপাশের সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে আছে- - ও কান ধরে দুষ্টুমির হাঁসি হেঁসে সরি বলে. . . . এদিকে সবাই হাত তালি দিয়ে উঠে। ও তখন সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে উঠে, আজ আমার সবচেয়ে খুশীর দিন , আজ আমি আমার প্রিয় মানুষটিকে কাছে পেয়েছি- আমরা দুজনে এক সাথে পথ চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি. . . আর তাই আজকের সকালটা ওর নামে- - উপস্থিত সবার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে আমাদের সাথে খাবার নিমন্ত্রণ ।এই বলে ও একটা কেক নিয়ে আসে এবং ওরা দুজন সেটা কাটে, সবাই আবারো হাতে তালি দিয়ে উঠে। ঈফতি কেক কেটে নিভৃতাকে খাইয়ে দেয়. .. এবং ম্যানেজারকে বলে এই কেকটা ও আইসক্রিম সবার মাঝে দিতে এই বলে ও বিল পরিশোধ করে সবার উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে বের হয়ে আসে নিভৃতাকে নিয়ে।
বাসার গেটে এসে গাড়ীর দরজা খুলে দেয় নির্ভতাকে বের হওয়ার জন্য। নিভৃতা বের হলে বলে, মেম- আমার নজরানা। মানে- নিভৃতা বলে., নজরানা? ঈফতি বলে , এই যে আপনার ড্রাইভার সেজে আপনাকে বাসায় পৌছে দিলাম। নিভৃতা বলে-কি চান? ঈফতি বলে - আপকি গালেকি হার মেম, বলেই হেঁসে দেয়। নিভৃতা বলে- আপনি না খুব দুষ্টু। ঈফতি বলে- দুষ্টামির এখনই কি দেখলা।? এরপর বলে- মেরে দুলহান, আপকো আচ্ছে সে সাজাকার রাখনা, দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে. . . .। বলেই ও রওয়ানা দেয়।
এদিকে দুই বাসায় প্রস্তুতি চলতে থাকে সন্ধার । সন্ধায় নিভৃতাদের বাসায়, ঈফতিরা আসে। ওর বাবা- মার নিভৃতাকে দেখে পছন্দ হয়- ওর বাবা দুষ্টামি করে বলে- ছেলের আমার পছন্দ আছে, ঠিক আমার মত, বলেই ওর মায়ের দিকে তাকায়- ওর মাতো লজ্জায় লাল হয়ে চোখ গরম করে তাকায় ওর বাবার দিকে। এরপর বলে- বেয়ান সাহেব, তাহলে কি আমরা আপনার মেয়েকে বৌমা হিসেবে পাওয়ার প্রাথমিক ধাপটা সেরে রাখি। কি বলেন? নিভৄতার বাবা- মা বলে- দো দিল রাজী তো ক্যায়া কারেগা কাজী. . . . সবাই হেঁসে উঠে। ঈফতির মা নিভৃতাকে ওদের খানদানী হাতের চুড়ি পড়িয়ে দেয় আর বলে বৌমা, এটা আমার শাশুরী আমাকে দিয়েছিলো আজ আমি তোমাকে দিলাম- আমার এই পাগল ছেলেটাকে দেখে রেখ ।এরপর সবাই মিষ্টি মুখ করে। নিভৃতা সবাইকে সালাম করে, ঈফতি বলে উঠে- আমাকে করবানা? সবাই ওর দিকে অবাক হয়ে তাকায়! নিভৃতা লজ্জা পায় কিন্তু দুষ্টামি করে ওর দিকে এগিয়ে যায়, ঈফতি ভাবে সত্যি বুঝি সালাম করবে, ও চুপ করে বসে থাকে, এদিকে নিভৃতা সালাম করতে এসে ওর পায়ে জোরে চিমটি কাটে, ও চিৎকার দিয়ে উঠে। আর সবাই হেঁসে উঠে। দিন কয়েকের মধ্যে খুব ধুমধামে ওদের বিয়ে হয়ে যায়।
বিয়ের পরে যখন নিভৃতা ঈফতিদের বাসায় এসে ওর বাবা- মাকে সালাম করে , তখন ওর মা , ওর হাতে ঘরের চাবি তুলে দেয়, আর বলে বৌমা , আজ থেকে আমার ছুটি, এখন থেকে এই বাড়ীর সব দায়িত্ব তোমার । নিভৃতা বলে, না মা, বৌমা না, আমি আপনার মেয়ে হতে চাই, আর এই চাবি আপনার কাছেই থাকবে, পরে না হয় আমি নেব। ওর মা আবেগে ওকে জড়িয়ে ধরে। আর বলে, আমার তো একটা পাগল ছেলে ছিল , আজ হতে একটা পাগল মেয়ে পেলাম। এরপর নিভৃতাকে ওদের ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। নিভৃতা খাটে গিয়ে বসে। দেখে চারদিকে শুধু ওর ছবি, আর কি সুন্দর করে ঘরটা সাজানো হয়েছে। এরই মাঝে কখন যে ঈফতি এসেছে ও টেরই পায়নি, চমকে উঠে, যখন শুনে ঈফতি বলে, ঘর পছন্দ হয়েছে নিভৃ? ও কিছু বলে না, শুধু মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে। এরপর ঈফতি ওর হাত ধরে খাটে নিয়ে বসায়, নিভৃতা বলে উঠে- দাঁড়ান দাঁড়ান আপনাকে সালাম করি, ঈফতি ভয় পেয়ে যায়, আরে না কিসের সালাম, যে জোরে তুমি চিমটি কেটেছিলা, আমি তো ভুলিনি, আর তুমি আমাকে আপনি বলছো কেন? এখন আর এলার্জি থাকার কথা নয় সুইটহার্ট? নিভৃতা হাঁসে, আর বলে- ঠিক আছে চেষ্টা করছি, তার আগে তোমাকে সালাম করতে দাও। ঈফতি ওর মুখে তুমি ডাক শুনে ওর হাত গিয়ে ধরে বলে- না নিভৃ সালাম করতে হবেনা। তুমি শুধু আমাকে ভালোবেসো আর আমার পাশে সবসময় থেকো।
পরেরদিন সকালে ওরা ডাইনিংয়ে বসে নাস্তা খেতে । বসেই ঈফতি পাশে বসা নিভৃতার হাত ধরে রাখে এদিকে ওর মা বলে- মামনী ভাজিটা এদিকে দাও, নিভৃতা তো কিছু করতে পারে না কারন ওর হাত ঈফতি ধরে রেখেছে , ও বারবার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। এদিকে মা বলে- কি হলো দাও? ও শুধু হাঁসে আর অস্বস্তি ফিল করে, এরপর ওর মা খেয়াল করে ব্যাপারটা। উঠে এসে ঈফতির কান ধরে বলে- তুই কি এখনো দুষ্টুই থেকে যাবি। নিভৃতা লজ্জা পেয়ে ঘরে চলে আসে। সাথে সাথে ঈফতি আসে , এসে বলে- শোনো তাড়াতাড়ি প্যাক করো আমরা কাল সকালেই কক্সবাজার যাচ্ছি ওখান থেকে ঘুরে এসেই সিঙ্গাপুর যাব। হঠাৎ করেই ঈফতি বলে , নিভৃতা আমার একটা তোমার মত ফুটফুটে মেয়ে দরকার, যার নাম হবে ঈপ্সিতা। আমি যদি না থাকি তুমি কিন্তু আমার মেয়ের নাম এটাই রাখবে, নিভৃতা অবাক হয়ে যায়, কি আবোল- তাবোল বলছো, না থাকি মানে? কোথায় যাবে? ঈফতি বলে, আরে না এমনি বললাম। নিভৃতার মনে অজানা আশংকা ঘিরে ধরে. . . . তখন ঈফতি এসে চুটকি বাজিয়ে বলে- দূর বোকা মেয়ে, এমনি বললাম। তোমাকে ছেড়ে আমি কি কোথাও যেতে পারি. . . . . .।
পরের দিন ওরা বাসা থেকে বিদায় নিয়ে রওনা দেয় কক্সবাজারের উদ্দেশে. . . গাড়ীতে খুব মজা করছিলো ঈফতি, নিভৃতা বারবার বলছিলো, প্লিজ, ঈফতি দেখে চালাও. . . . আর তখনি সামনে একটি ট্রাক আসতে থাকে, ঈফতি কোন মতে ট্রাককে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না সামনে গিয়ে একটা গাছের সাথে জো রে ধাক্কা খায় এরপর নিভৃতা দেখে ওর মাথা ফেটে গেছে আর ঈফতি অনেক বেশী আহত হয়েছে, সমস্ত শরীর ওর রক্তে ভেসে যাচ্ছে, ও চিৎকার দিয়ে ওর পাশে যায় , ঈফতি বলে- অনেক কষ্টে, নিভৃতা তোমাকে নিয়ে আমার সুখের রাজ্যে আর থাকা হলো না. .. এত অল্প সময় কেন আল্লাহ্ আমার ভাগ্যে লিখেছিলো . .নিভৃতা কাঁদতে থাকে. . . .বলে - তোমার কিছু হবেনা, ততক্ষনে লোকজন এসে গেছে , ঈফতি কে সবাই বের করার চেষ্টা করতে চাইলো, তখন ও বলে- নিভৃ আমার হাতে আর সময় নেই, তুমি একা থেকোনা, দেখো আমারই মত কেউ আবার তোমার জীবনে আসবে, তাকে নিয়ে তুমি নিজের পৃথিবী গড়বে, সেই পৃথিবীতে ই আমি থাকবো। মা-বাবার দিকে খেয়াল রেখ বলতে বলতেই ও ঢলে পড়ে যাওয়ার আগে কোনরকমে বলে- আই লাভ ইউ মাই জান . . . .নিভৃতা পাথর হয়ে যায়। সবাই ধরাধরি করে ওকে বের করে, তারপর দেখে ও বাসায়। সামনে ঈফতির লাশ- সবাই ওকে জিজ্ঞেস করে, কি হয়েছিলো, কারো কথার কোন জবাব ও দেয় না। এমনকি কাঁদেও না। দাফন করতে যাওয়ার আগে সবাই ওকে ঈফতির কাছে নিয়ে যায়, একবার কাঁদানোর জন্য, কিন্তু পারে না , ওর বাবা মা, ঈফতির বাবা মা কেউ না. . . .. এরপর থেকে নিভৃতা পাথরের মত সবসময় থাকে, হাঁসেনা , কথা বলেনা , এক স্থবির জীবন নিয়ে চলে। ওর বাবা- মা ওকে নিয়ে যেতে চায়, কিন্তু পারেনা। ও এখানেই থাকে ঈফতিদের বাসায়। এভাবে মাস কেটে যায়,এক মাস, দুই মাস, তিন মাস। সবাই ওকে নিয়ে চিন্তিত হয়। একদিন ঈফতির মা ওকে নিয়ে বাজার করতে যায়। পথে ট্রাফিক সিগন্যালে আটকা পড়ে। ঠিক সে সময়ই একটা বাইকে করে মাথায় হেলমেট লাগানো এক ছেলে ওদের গাড়ীর পাশে এসে দাঁড়ায়। ছেলেটা মাথা থেকে হেলমেট খুলে , ডানে বামে তাকায়, ওর চোখ থমকে যায়, গাড়ীতে জানালার পাশে বসা নিভৃতাকে দেখে। এসময় সিগন্যালও উঠে যায়। গাড়ী চলতে শুরু করে। ছেলেটাও গাড়ীর পিছু নেয়। গাড়ী অরোরা তে এসে দাঁড়ায়। কিছুটা দুরুত্বে বাইকটাকে পার্ক করে ছেলেটা শপিং মলে ঢুকে। এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে ও হঠাৎ ধাক্কা খায় এক মধ্যবয়স্ক মহিলার সাথে , উনি পরে যেতে ধরেন, তার আগেই সেই মেয়েটা এসে উনাকে ধরে ফেলেন এবং উনাকে উঠিয়ে সাথে সাথেই ছেলেটার গালে একটা চর মারেন, ছেলেটা অবাক হয়ে যায়, মেয়েটা তখন বলে- দেখে চলতে পারেন না? এদিকে ছেলেটা গাল থেকে হাত সরিয়ে ঐ মহিলার হাত ধরে বলে- আন্টি আই এম সরি ভেরি সরি। এরপর সে বাজারের ট্রলিটা নিয়ে তাদের পৌছে দিতে চায়, গাড়ী পর্যন্ত কিন্তু মেয়েটা দেয়না। ওরা গাড়ীতে উঠে বসে , ছেলেটা আবারও ওদের পিছু নিয়ে ওদের বাড়ী পর্যন্ত এসে চলে যায়। বাসায় গিয়ে ওর কিছু ভালো লাগেনা, বারবার সেই মেয়েটার চেহারা ভেসে উঠে, ও ওর সবচেয়ে কাছের বন্ধুকে ঘটনাটা বলে। ওর বন্ধু বলে- তুই প্রেমে পড়েছিস দোস্ত, লাভ এট ফার্স্ট সাইট যা বলে দে ওকে তোর মনের কথা। তখন ও বলে নারে দোস্ত, এখনি না, আমি তো জানি না ও কে আর তাছাড়া বলেই ও ফোন রেখে দেয়। পরেরদিন সকালে ও মেয়েটার বাড়ীর নীচে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে- দেখে মেয়েটা উদাসীন ভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। এভাবে সে আরো দুদিন যায় এবং দেখে একই দৃশ্য, আর একটা জিনিস ও খেয়াল করে , মেয়েটা প্রতিদিনই সাদা ড্রেস পড়ে, ও বুঝে না কেন? ৩ দিনের দিন দেখে মেয়েটা বের হচ্ছে, ও ভয় পেয়ে যায়, ভাবে আবার হয়তো মারবে এইভেবে ও গালে হাত দেয়। ততক্ষনে মেয়েটা ওর কাছে এসে দাঁড়ায়, বলে কি চান আপনি ? কেন প্রতিদিন এখানে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন? ছেলেটা প্রথমে হতভম্ব হয়ে যায়, কারন ওর ধারনা ছিলো মেয়েটা ওকে খেয়াল করতো না। যাই হোক ও কোন রকমে বলে - আমি রুদ্র রহমান, আচ্ছা সাদা কি আপনার পছন্দের কালার ? প্রতিদিন আপনাকে সাদা ড্রেসে দেখি, কিন্তু আপনার বয়েসই একটা মেয়ে কেন প্রতিদিন সাদা ড্রেস পড়বে? তখন নিভৃতা বলে, জানতে চান কেন? কারন আমি বিধবা। রুদ্র মনে হয় টাস্কি খেয়ে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হল। মেয়েটা বলে চলছে, আমার হাজবেন্ড রোড এক্সিডেন্টে আমারই সামনে মারা গেছে আমি কিছু করতে পারিনি। আর আমাদের সমাজে বিধবারা সাদা ড্রেসই পড়ে, আর সবচেয়ে বড় কথা এটা আমার ঈফতির পছন্দের কালার তাই ও সারজীবন এটা আমাকে পড়িয়ে রেখে চলে গেছে, বলেই ওর চোখ দিয়ে দুফোটা পানি পড়ে এবং ও পড়ে যায়, ছেলেটা তাড়াতাড়ি ওকে ধরে এবং সামনে দিয়ে যাওয়া একটা টেক্সি ক্যাব এ করে ওকে ক্লিনিকে নিয়ে আসে। ডাক্তার চেকআপের পর হাসিমুখে বলে- কোন চিন্তা নেই আপনার স্ত্রী মা হতে চলেছেন, এই মুহুর্তে উনার প্রতি আপনি আরো বেশী করে খেয়াল রাখবেন। ততক্ষনে নিভৃতার চোখ খুলে যায়, ও কিছু বলে না। শুধু ওর পেটে হাত রাখে অজানা এক সুখে। তারপর নিভৃতাকে নিয়ে বাসায় যখন রুদ্র আসে তখন ঈফতির মা অবাক হয়ে যায়-বলে কোথায় গিয়েছিলে মামনী কিছু না বলে আমি তোমার বাবা কত চিন্তায় পড়েছিলাম। নিভৃতা কিছু না বলেই ওর শাশুড়ীকে জড়িয়ে ধরে। বলে- মা আমাদের ঘরে নতুন কেউ আসছে। ওর শাশুড়ীও ওকে জড়িয়ে ধরে। এই বলে নিভৃতা আবার রুমে চলে যায়। তখন ওর মা বলে- তুমি সেই ছেলেটা না, যার সাথে আমাদের শপিং মলে দেখা হয়েছিলো। ? তখন রুদ্র বলে -জি আন্টি। তুমি নিভৃতার সাথে? রুদ্র বোঝে এটা মেয়েটার নাম। তখন ও কোন কিছু না লুকিয়ে সব বলে। এবং শেষে বলে, আন্টি আপনি কি আমাকে আপনার ছেলের কথা আর উনার কথা বলবেন? তখন ঈফতির মা একটু ভেবে বলতে শুরু করে ওদের কথা। ঈফতির মৃত্যু পর্যন্ত বলে উনি উনার চোখ মোছেন , আর বলেন , এরপর থেকে নিভৃতা একদম থমকে যায়, কারো সাথে কথা বলেনা , ওর বাবার বাসাতেও যায় না। সারাক্ষন কি যেন ভাবে। আমরা খুব চাইছি ওর বিয়ে দিতে কিন্তু ও কোন কথাই শোনে না। খুব চিন্তায় আছি বাবা। তখন রুদ্র বলে, আন্টি, আমি যেদিন নিভৃতাকে গাড়ীতে ও শপিংমলে দেখি জানি না আমার কি হল, কোন কিছুই ভাল লাগেনা। তাই সেদিন থেকে আমি ওর পিছু নিয়ে ঘুরছি , ওকে আমার মনের কথা জানানোর জন্য। আজ সব কথা শোনার পর আমি যদি আপনার ছেলের বউকে বিয়ে করে নতুন জীবন দিতে চাই আপনারা কি দিবেন? ঈফতির মা বলে, দেখো বাবা, আমরাও চাই ও সুখী হোক, কতই বা ওর বয়স হয়েছে? এখনোও সারাজীবন পরে আছে, আমরাও আমাদের ছেলের জন্য কষ্ট পাই কিন্তু তাই বলে ওর জীবনটা এরকম অসম্পূর্ন থেকে যাক তা আমরা কেউই চাইনা। ঠিক আছে আমি ওর বাবার সাথে, ঈফতির বাবার সাথে আলাপ করে তোমাকে জানাবো। আর তাছাড়া তুমি তো জানই ও বিধবা, তোমার বাসায় কোন প্রবলেম হবে কি না , মানে তোমার বাবা-মা এটা মানবে কি না সেটাও একটা ব্যাপার , সবচেয়ে বড় কথা যাকে নিয়ে আমরা ভাবছি, সে এটা মানবে কি না এটাই বড় প্রবলেম। আন্টি আমি কি একবার নিভৃতার সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতে পারি? না বাবা, এখনিই না। ঠিক আছে আন্টি আজ তাহলে আমি আসি , এটা আমার কার্ড। আমাকে আপনাদের মত জানাবেন। এদিকে রুদ্র বাসায় ওর বাবা- মাকে জানানোর পর ,উনারা কেউ মানতে চাইলেন না, যে তাদের ছেলে একটা বিধবা মেয়েকে বিয়ে করবে। বাবা প্লিজ, বিয়েটা তো আমার , একজন বিধবা কি মানুষ নয়, সে কি সমাজের অস্পর্শ নারী। একটা ছেলে যদি, তার বউ মারা যাবার পর বিয়ে করতে পারে তাহলে একটা মেয়ে তার হাজবেন্ড মারা যাবার পর কেন বিয়ে করতে পারবে না। আমরা শিক্ষিত সমাজই যদি এই ধরনের মতবিরোধ নিয়ে চলি তাহলে এই সমাজের কোন উন্নতিই তো হবেনা। কি দোষ ঐ মেয়েটার ? যার জীবন শুরু না হতেই থেমে গেছে। কেন সে নতুন করে জীবন শুরু করতে পারবে না। তোমরা একবার মেয়েটাকে দেখ, তারপর না হয় কিছু বোলো। এই বলে সে রুমে চলে যায়। ওর বাবা-মা ভাবতে থাকে কি করবে?
ওদিকে ঈফতির মা ওর বাবাকে এবং নিভৃতার বাবা-মাকে বিষয়টা জানায়, উনারা রাজী হয় কিন্তু কেউই সাহস করে নিভৃতাকে বলতে পারে না। পরের দিন রুদ্র আবার আসে, ঠিক ঐ মুহুর্তে দেখে নিভৃতা গাড়ীতে উঠছে ও কিছু না বলে গাড়ীর পেছনে পেছনে যায়। নিভৃতার গাড়ী একটা ফুলের দোকানে গিয়ে দাঁড়ায়, দেখে নিভৃতা গাড়ী থেকে নেমে ফুল কিনতে যাচ্ছে, ঠিক ঐ সময় কিছু বখাটে ছেলে নিভৃতাকে দেখে শিশ দিয়ে উঠে এবং ওর পিছু পিছু যেতে থাকে কমেন্ট করতে করতে, নিভৃতা ভয় পেয়ে যায়, এ সময় রুদ্র এগিয়ে এসে বখাটেদের ধরে মারতে শুরু করে , ওরা বলে - কি হয় তোর? ওই মাইয়াটা কি তোর বউ লাগে? ও কিছু না বলে আবার মারতে শুরু করে, এভাবে সবাইকে মারার পর ওরা চলে যায়। আর রুদ্রর মাথা ও হাত দিয়ে রক্ত পরতে থাকে। ও উঠে বসতে না বসতেই নিভৃতা আসে, এসে বলে কে বলেছে আপনাকে আমার জন্য মারামারি করতে? কেন আপনি আমার পিছু আবার নিয়েছেন? রুদ্র বলে, নিভৃতা এই সমাজে আপনি একা চলতে পারবেন না, এখানে আপনার একজন সঙ্গী দরকার হবে , জীবনটা চিনে মাটির থালা নয়, একটু ফাটলেই জীবনটা ফেলে দেবার জন্য নয়, জীবনটা রুপার মত, প্রয়োজনে একে গলিয়ে নতুন করে আবার তৈরী করা যায়। নিভৃতা বলে, আমি ভাল আছি আমার জগতে , যেখানে আমি আছি আর আমার ঈফতি আছে এখন সেখানে আর একজন আসছে আমি চাইনা আমাদের মাঝে আর কেউ আসুক। নিভৃতা আপনি যে নতুন অতিথির কথা বলছেন, তাকে আপনি একা মানুষ করতে পারবেননা। শুধু মায়ের আদর নয় একটা সন্তানের বাবার ও দরকার হয়, সে সন্তানের বাবার পরিচয়ের ও দরকার হয়। আপনি কি পারবেন একা একা সে সন্তান কে মানুষ করতে, পারবেন কি তার বাবার অভাবটা পূরণ করতে? হয়তো আপনি তাকে বাবা- মা দুজনের আদরই দিবেন কিন্তু একসময় না একসময় সে তার বাবার অনুপস্থিতি অনুভব করবে তখন কি করবেন? কেন সেই অনাগত সন্তান কে বাবার আদর , স্নেহ থেকে বঞ্চিত করবেন? আপনি কি চান না আপনার সন্তান বাবা মা দুজনের স্নেহ মমতা নিয়ে মানুষ হোক, আপনি মনে করছেন ঈফতি উপর থেকে আপনাকে এভাবে দেখে খুব খুশী হচ্ছে। না নিভৃতা না, একটা মেয়ের একা পথ চলাতে অনেক সমস্যা আছে আমাদের এই সমাজে। জীবনটাকে এভাবে থামিয়ে না দিয়ে নতুন করে পথ চলা শুরু করুন , ঈফতির স্বপ্নগুলোকে পূরণ করুন, দেখবেন ,জীবনটা অনেক সুন্দর , শুধু একে সুন্দর করে সাজিয়ে নিতে হয়। আর আপনার জীবনটাকে নতুন এক রূপ দেয়ার জন্য আমি আপনার সাথে পথ চলতে চাই। যাবেন আমার সাথে সেই পথে? বলেই রুদ্র নিভৃতার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়, নিভৃতা কিছু না বলে চলে যায়। রুদ্রও মন খারাপ করে ওর বাইকে উঠে বসে। এবং বাসায় এসে ঈফতির মাকে ফোনে সব বলে, এবং বলে আন্টি আজ আপনারা নিভৃতার সাথে কথা বলতে পারেন, দেখেন ও কি বলে। আমি অপেক্ষা করবো ওর জন্য । এদিকে নিভৃতা এসে দৌড়ে ওর ঘরে চলে যায়. . . তা দেখে ঈফতির মাও আসেন ওর ঘরে- এবং তখন উনি ওর মাথায় হাত রেখে বলেন, মারে তোকে আমরা নিজের মেয়ের মত করে রেখেছিলাম, ঈফতির জন্য আমাদের কি কম কষ্ট হয়, কিন্তু যখন দেখি আমাদের মেয়েটা ওর জীবনটাকে থামিয়ে দিয়েছে আমার ছেলের জন্য তখন সে কষ্টটা আরো বেড়ে যায়। তোকে জোর করবোনা, কিন্তু মা ভেবে দেক, আমরা আর কতদিন ই বা বাঁচবো, আর তোর বাবা-মাও বা কতদিন থাকবে, কিন্তু তোকে তো বাঁচতে হবে তোর আর ঈফতির সন্তানের জন্য, আর তুই তাকে একলা কিভাবে মানুষ করবি বল? আজ তোকে গুন্ডদের হাত থেকে রুদ্র বাঁচিয়েছে, কাল এরকম কিছু হলে কে তোকে বাঁচাবে বল? তোর জন্য না হলেও তোর সন্তানের জন্য তো ওর বাবা দরকার , বাবার ছায়া যে সন্তানের জন্য কতটা জরুরী তা কি তুই জানিস না। কেন আপনারা আমাকে পর করে দিচ্ছেন মা, কেন? আমি তো ভাল আছি আমার রাজত্ব্যে যেখানে আছে আমার ঈফতি আমি আর আমার অনাগত সন্তান। নারে মা, আবেগ দিয়ে দুনিয়া চলেনা। দুনিয়াটা বড় কঠিন জায়গা রে। তুই আর অমত করিস না মা। বলেই উনি চোখের পানি মুছেন। এরপর প্রায় একপ্রকার জোর করেই ওদের বিয়েটা হয়ে যায়। বাসর রাতে রুদ্র বিছানা থেকে ওর বালিশ নিয়ে সোফায় ঘুমাতে যাওয়ার আগে বলে, নিভৃতা আমি অপেক্ষা করবো আপনার ভালবাসা পাওয়ার জন্য। এরপর কেটে যায় বেশ কিছুদিন, রুদ্র নিভৃতার খাওয়া -দাওয়া, ঔষধ খাওয়ানো সব নিজের হাতে করে। নিভৃতাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া সব, নিভৃতা না না করে তারপরও। কেমন যেন একটা মায়া নিভৃতাও আস্তে আস্তে অনুভব করে। একদিন হাতে একটা প্যাকেট নিয়ে রুদ্র ঘরে আসে , নিভৃতাকে দিয়ে বলে, এখানে তোমার জন্য একটা ড্রেস আছে, যেটা সাদা আর ওড়না টা লাল, তোমার ঈফতির সাদা রঙের স্বপ্নের মাঝে আমার লাল রঙের স্বপ্নের পথ চলা, যেদিন তুমি আমায় মেনে নিবে সেদিন এই ড্রেসটা পড়বে কেমন। হঠাৎ একদিন রুদ্র অ্যাকসিডেন্ট করে, হাসপাতাল থেকে ফোন আসে , নিভৃতা সহ সবাই হাসপাতালে যায়, গিয়ে দেখে রুদ্রের মাথায় ব্যান্ডেজ। রুমে নিভৃতাকে রেখে সবাই বাইরে যায়, তখন নিভৃতা বলে - আর যেন কখনো ওই বাইক চালাতে না দেখি, আমাদের তো গাড়ী আছে, তাই না, আজই ওই বাইকটা ফেলে দিবেন। রুদ্র মুচকি হাঁসে, আর দুষ্টামি করে বলে, মায়া হচ্ছে বুঝি? ওরা হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে আসে। এরও কিছুদিন পর নিভৃতা পা পিছলে পড়ে যায়, প্রচণ্ড ব্যথায় ও চিৎকার দিয়ে উঠে, রুদ্র দৌড়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে আর বলে-কিছু হবে না তোমার আমি আছি না, বলে ও ওর মাকে ডাকে এবং কোলে করে নিভৃতাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালের কাছে এসে গাড়ী জ্যামে আটকা পড়ে , ওদিকে নিভৃতা কষ্টে কাঁদতে থাকে, তখন রুদ্র ওকে কোলে নিয়ে হাসপাতালে আসে , ডাক্তাররা ওকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায় আর বলে আপনারা
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিজানুর রহমান রানা সত্যি গল্পটি সুন্দর কিনতু সম্পুন্ন নয় - মিজানুর রহমান রানা
umme দারুন হইছে গল্পটা ... ভালো লাগলো...
শিশির সিক্ত পল্লব গল্পটা শেষ করুন...............................
সকাল রয় গল্পের মাঝখানে প্যারা থাকলে পড়তে ভালো লাগতো
ভালো লাগেনি ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১১
Engr.Tito Tito apni oneeeeek shondor kore golpo likte paren.sotti onek shondor hoyece.future eo likben asha kori.thx
ভালো লাগেনি ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১১
বিষণ্ন সুমন Wow ! its great
ভালো লাগেনি ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১১
মাহমুদা rahman বাহ...........
ভালো লাগেনি ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

২০ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪