মেসবাড়ি

আতঙ্ক (নভেম্বর ২০২৫)

খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি
  • 0
  • 0
  • ১২
ব্রিটিশ শাসন আমলে পূর্ব পুরুষদের বিশাল জমিদারী ছিল। বাংলার বার ভূঁইয়াদের এক ভূঁইয়া সম্ভ্রান্ত কুলীন ব্রাহ্মণ রাজা রামমোহন রায় ছিলেন ব্রিটিশদের আস্থা ভাজন একজন বিশ্বস্ত জমিদার। সেই কুলীন ব্রাহ্মণ জমিদার বংশে জন্ম গ্রহন করেণ রজনী কান্ত রায়।

জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির পর পূর্ব পুরুষরা সপরিবারে কলকাতায় চলে গেলেও রজনী রায় এ দেশেই রয়ে যান। সেই থেকে পরিত্যক্ত জমিদার বাড়িটিতে বহাল তবিয়তে বসবাস করে আসছেন তিনি। পূর্ব পুরুষদের রেখে যাওয়া সম্পত্তির ছিটে ফোটা যা ছিল তাতে তার সংসার বিলক্ষণ চলে যায়।

দৈবাৎ তার পত্নী বিয়োগ ঘটেছে, যার ফলশ্রুতিতে মানষিক ভাবে অনেকটা ভেঙ্গে পড়েন তিনি। একাকিত্বের গ্লানি আর পত্নী বিচ্ছেদযুক্ত শোকাবেগ ভুলে থাকার জন্য তান্ত্রীক সাধনার প্রবণতা তাকে পেয়ে বসে। দিনের বেশির ভাগ সময় তিনি তন্ত্র মন্ত্র নিয়ে শ্মশানে গিয়ে কাটান। রাতের বেলা তন্ত্র সাধনার ক্ষেত্র হিসেবে জমিদার বাড়ীটির পরিবেশ নিরিবিলি বিধায় নির্বিঘ্নে সেথায় সাধনার কার্যক্রম চালিয়ে যান রজনী রায়। কিন্তু বাড়ীর অন্যদের নিয়ে কিছুটা বিভ্রাট দেখা দেয়।

একেতো লতা গুল্ম পরিবেষ্টিত প্রাচীন জমিদার বাড়ীটিকে দেখতে ভূতুড়ে বাড়ীর মত লাগে। তার উপর বাড়ীর চারপাশ জুড়ে বিশাল আকৃতির বট পাইকুর, মেহগনী, তেঁতুল, কড়ই, বহুবর্ষী বাদুর ঝোলা বৃক্ষরাজির ছত্রছায়ায় দিনের বেলায় অন্ধকারে আচ্ছন্ন করে রাখে। কেমন যেন গা ছমছম করা পরিবেশ। তার উপর পাখীর কলকাকলি, বাদুরের কিচির মিচির তো আছেই।

ভরা সন্ধ্যা বেলায় গাছের ফোকলে ঢ্যাব ঢ্যাব করে চেয়ে থাকা লক্ষী পেঁচার ভ্যাংচামি অথবা হুতুম প্যাঁচার ভয়ঙ্কর কন্ঠে হুতুম ধুম শুনলে যে কেউ বিচলিত হতে বাধ্য। ঝিঝি পোকার একটানা কোরাস এবং তক্ষসের টকটকানি তো লেগেই থাকে সারা রাত।

ইদানীং যেখানে সেখানে প্রেতাত্তাদের ঘুরে বেড়ানোর প্রবনতা বেড়ে যায়। তেঁনাদের অবাধ বিচরণ এবং আচরণের কারণে চাকর বাকরদের মধ্যে কেউ কেউ ভয় তরাসে হয়ে বিষয়টি রজনী রায়ের কানে তুলেছে। রজনী রায় বিষয়টির প্রতি গুরুত্বারোপ করে পাছে অন্যদের কোন প্রকার বিরম্বনা না হয় সে কারনে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার সেষ্টা করেণ।

বাড়ির অন্যদের সুবিধার বিষয় বিবেচনা করে রজনী রায় সিদ্ধান্ত নেন যে বাড়ীর কয়েকটি ঘর অতিথীশালা বা মেসবাড়ী হিসেবে ভাড়া দিলে যেমন লোক জনের সমাগম বাড়বে অপর দিকে কিছু বাড়তি আয়ের সংস্থান হবে। যেই ভাবা সেই কাজ অল্প দিনের মধ্যে মেসবাড়ীটি বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়। নাম দেওয়া হয় "রজনী নিবাস"।

তবে মেসবাড়ীর ভুতুড়ে গন্ধের সাথে নির্জনতার নিবিড় যোগ সূত্র থাকায় নিতান্ত বেগতিক না হলে এবাড়ীতে লোকজন খুব একটা আসতে চায় না। কিন্তু ভাড়ার দিক থেকে সাশ্রয়ী বিধায় শেষ পর্যন্ত মেসবাড়ীর সব কয়টি ঘর পরিপূর্ণ হয়ে যায়। বডারদের সংখ্যাও বেশ আশা ব্যাঞ্জক দেখে রজনী কান্ত খানিটা সস্থির নিঃশ্বাস ফেলেন।

এদিকে তন্ত্র সাধনার কাজ যথা নিয়মে চালিয়ে যেতে থাকেন রজনী রায়। মধ্য নিশিথে মেসবাড়ীর বডাররা যখন গভীর নিদ্রায় অচেতন থাকে সেই সময় রজনী রায় নিজ ঘরে ধুপ ধোয়ার গন্ধ আবেসে হোমযোগ্য সাজিয়ে আরতি শুরু করেন। এদিকে যোগ্য চলা কালিন সময় তেঁনারা (অতৃপ্ত প্রেতাত্তা) প্রকট হয়ে ওঠেণ। এবং যথারিতি মেসবাড়ীর আনাচে কানাচে অবাধে বিচরণ করতে থাকেন।

কখনও কখনও তেঁনারা সাধারণ বডারদের দরজা জানালায় ধাক্কা ধাক্কি অথবা ছাদের ফ্লোরে ধুপধাপ শব্দে দৌড়াদৌড়ি কিম্বা গাছের ডালে লাফালাফি ঝাপাঝাপি করে সবাইকে আতঙ্ক গ্রস্ত করে তোলে। তেঁনাদের ভয়ে রাতে শৌচাগারে যাওয়ার সাহস পর্যন্ত পায় না কেউ।

পত্নী বিয়োগের পর রজনী রায় প্রয়াত প্রণয়িনীর সান্নিদ্ধ লাভের আশায় তন্ত্র সাধনায় ব্রত হন। কেননা তার বিশ্বাস একমাত্র প্রেতাত্তা সাধনার দ্বারা তার পত্নীর সান্নিদ্ধ পাওয়া সম্ভব। অতি আশ্চর্যের বিষয় যে এর ধারাবাহিকতায় নিশীথে প্রায়ই নাকি প্রয়াত পত্নী বিমলা দেবীর প্রেতাত্তা তাঁর মুক্তি কামনা করে যমালয় থেকে মর্তে এসে রজনী রায়ের সাথে সাক্ষাৎ করেণ। ভয়ঙ্কর এই বিষয়টি মেসবাড়ীর সবার মাঝে জানাজানি হলে বডারদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক এবং ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

বডারদের ভীষণ আপত্তি থাকা সত্যেও যখন তিনি একই কর্মকান্ড বারংবার করতে থাকেন। তখন মেসবাড়ীর বডারদের মাধ্যেও দিন দিন অশন্তোষের মাত্রা সমান্তরাল ভাবে বাড়তে থাকে। রজনী রায়ের এহেন কাণ্ড জ্ঞানহীন কর্মকান্ডের জন্য বাধ্য হয়ে তারা "রজনী নিবাস" ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে।
কেননা তারা বিশ্বাস করে যে একই ছাদের নীচে প্রেতাত্মার সাথে জীবাত্মার সহাবস্থান কখনও সম্ভব নয়। কারণ বলাতো যায় না তেঁনারা (প্রেতাত্তা) প্রকট হয়ে কখন কার ঘার মটকায় কে জানে......................

পূর্ব পুরুষদের মত প্রতাপ প্রতিপত্তি জৌলুস না থাকলেও জমিদারী ভাব তার স্বভাব চরিত্রে পরিদৃশ্যমান। মেজাজে দাম্ভিকতার ছাপ, অবশ্য কার্যত তা দন্তহীন সিংহের মত নির্লিপ্ত। সংগত কারণে রজনী রায় সব সময় সাধারণ জীবন যাপন করতে পছন্দ করেণ।
পত্নী বিমলা দেবী স্বর্গ গমনের পর চার পাঁচ জন চাকর বাকর সহ রন্ধন কাজের জন্য একজন বামুন ঠাকুর ছাড়া সংসারে আর কেউ নেই। সংগত কারণে এত বড় জমিদার বাড়ীতে বসবাস করতে গিয়ে বিড়ম্বনার যেন শেষ থাকে না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

ব্রিটিশ শাসন আমলে পূর্ব পুরুষদের বিশাল জমিদারী ছিল।

১৯ আগষ্ট - ২০২৫ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "মুক্তিযুদ্ধ”
কবিতার বিষয় "মুক্তিযুদ্ধ”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৫