অদৃশ্য ভাঙচুর

হতাশা (অক্টোবর ২০২৫)

Al Amin
  • 0
  • 0
আরমান… নামের অর্থ স্বপ্ন আর আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু আজকের আরমানের চোখে সেই স্বপ্নের আলো ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে এসেছে। জীবন তাকে বারবার হারিয়েছে, প্রতিটি পরাজয় যেন তার ভেতরের অদৃশ্য ভাঙচুরকে আরও গভীর করে। কেউ বাইরে থেকে কিছু বোঝে না—তার হাসি, কথার স্বাভাবিকতা সবকিছুই ঠিকঠাক মনে হয়। তবু, ভেতরে ছোট্ট এক ফোঁটা আশা এখনও বেঁচে আছে, মৃদু, নাজুক, কিন্তু স্থির। হারার আঘাতের মাঝেও সেই আশা তাকে আবার দাঁড়ানোর জোর দেয়, যেন ভাঙা স্বপ্নের টুকরো জমিয়ে এক নতুন পথের দিকে নিয়ে যায়।

এসএসসি দেওয়ার পর, আরমানের জীবন একটা নতুন বাঁক নিল। সে এক বন্ধুর সঙ্গে মিলে একটি নতুন কনজুমার কোম্পানির ডিলারশিপ শুরু করল। কিন্তু সমস্যা শুরু হলো প্রথম দিন থেকেই—কোম্পানিটি নতুন হওয়ায় কেউ পণ্য কিনতে চাইছিল না। আরমানের আশা ধীরে ধীরে কাঁদতে লাগল, প্রতিদিনই ব্যবসার অবস্থা খারাপ হতে থাকল। এক মাসের মধ্যে বুঝতে পারল, আর এগোতে পারবে না, এবং শেষ পর্যন্ত ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হলো।

ব্যর্থতার এই কষ্ট আর হতাশা তাকে হতভম্ব করে দিল। কিন্তু জীবন থেমে থাকেনি। একদিন, বন্ধুদের মধ্যে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে কথা উঠল—কীভাবে অনলাইনে কাজ করা যায়, কী ধরনের কাজের চাহিদা বেশি, আর কোথায় শুরু করা যায়। আরমান প্রথমে দ্বিধা বোধ করলেও, নিজের ইনকামের সীমাবদ্ধতা এবং ভবিষ্যতের জন্য উদ্বেগ তাকে এগোতে বাধ্য করল।

তার হতাশা বড় ছিল—ইনকাম না পাওয়া, ব্যর্থতার চাপ, আর ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা—সব মিলিয়ে মনটা ভেঙে পড়েছিল। তবু, ভেতরে এক ফোঁটা আশা এখনও বেঁচে ছিল, যা ধীরে ধীরে তাকে নতুন কিছু শেখার দিকে ঠেলছিল। সেই আশা তাকে বলছিল, “তুমি হারিয়ো না, চেষ্টা করতে থাকো।

আরমান হতাশার মাঝেও থেমে থাকল না। সে মোবাইল হাতে নিয়েই ঘাটাঘাটি করতে শুরু করল—ইন্টারনেটে বিভিন্ন টিউটোরিয়াল দেখল, ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মের তথ্য খুঁজল, এবং দেখল কী ধরনের স্কিলের চাহিদা বেশি। প্রতিদিন একটু একটু করে তার মাথায় একটি পরিষ্কার ছবি গড়ে উঠল—গ্রাফিক্স ডিজাইন হলো সেই দক্ষতা, যা তাকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে এবং নিজের স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

ধীরে ধীরে আরমান নিজের সিদ্ধান্ত পাকা করল। সে পরিবারকে সব খুলে বলল—কী কারণে সে গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কীভাবে এটা তার ভবিষ্যত গড়তে সাহায্য করবে। প্রথমে পরিবারের মধ্যে কিছু দ্বিধা ছিল, কিন্তু আরমানের দৃঢ়তা ও পরিকল্পনা দেখে তারা রাজি হলো। এখন আরমানের কাছে শুধু নিজের শেখার পথই ছিল—একটি নতুন সম্ভাবনার দরজা, যেখানে সে হারানোর ভেতরেও এক ফোঁটা আশা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারবে।

এইচএসসি পরীক্ষার পর, আরমান আরও সক্রিয়ভাবে তার শেখার পথ খুঁজতে শুরু করল। ফেসবুকের বিভিন্ন এডস এবং আইটির খবর দেখে সে সিদ্ধান্ত নিল, শেখার জন্য তাকে ঢাকায় যেতে হবে। ঢাকায় পৌঁছে, তার এক চাচার মাধ্যমে একটি আইটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করল। নিজের আগ্রহ, পরিকল্পনা এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে সে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিল। কোর্সের ফি এবং অন্যান্য খরচ মেটানোর জন্য বাবার কাছ থেকেও কিছু অর্থ নিল।

এভাবেই আরমান ধাপে ধাপে নিজের স্বপ্নের দিকে এগোতে লাগল—গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার সিদ্ধান্ত, নতুন শহরে পদার্পণ, এবং নিজের ভবিষ্যতের জন্য সংগ্রাম, সব মিলিয়ে তার ভেতরের আশা শক্তিশালী করেছিল।

গ্রাফিক্স ডিজাইনের প্রতি আলাদা টান থাকা সত্ত্বেও, আরমান ভর্তি হতে পারলো না। হঠাৎ একদিন খবর এলো, গ্রামে তার মা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। মা’র অবস্থা ক্রমেই খারাপ হতে থাকায় গ্রামের আত্মীয়স্বজনরা তাকে দ্রুত ঢাকায় আনে।

ঢাকায় এসে আরমান লক্ষ্য করল, মায়ের অবস্থা অনেক গুরুতর। সমস্ত চিকিৎসা ও যত্নের চেষ্টা সত্ত্বেও তাকে বাঁচানো গেলো না। মা’র চলে যাওয়া আরমানের জীবনে এক গভীর শূন্যতা ফেলে দিল—ভাঙা স্বপ্নের সঙ্গে সঙ্গে হারানো প্রিয় মানুষের ব্যথা তার ভেতরে অদৃশ্য ভাঙচুরের মতো ছাপ রেখে গেল।

মায়ের চলে যাওয়ার পর আরমানকে গ্রামে ফিরে থাকতে হলো। তার ছোট দুই ভাই এখনও স্কুলে পড়ছে, এবং পরিবারের দেখাশোনা করতে আরমানের উপস্থিতি জরুরি ছিল। তার বাবা ঢাকায় পার্টনারশিপ ব্যবসা চালান, তাই গ্রামে কেউ না থাকলে দুই ভাই এবং বাড়ির দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা সম্ভব হতো না।

আরমানের জন্য এটা একটি নতুন বাস্তবতা ছিল—যেখানে নিজের স্বপ্নের সঙ্গে পরিবারের দায়িত্বও মিলিয়ে চলতে হবে। ভেতরের আশা ও আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও, তার জীবন এখন বাধ্যতামূলকভাবে গ্রামে সীমাবদ্ধ হয়ে গেল। তবে এই পরিস্থিতি তার মানসিক শক্তিকে আরো গড়ে তুলতে শুরু করল, কারণ সে জানত, দুই ভাই এবং পরিবারের জন্য তার কর্তব্যও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

গ্রামে থেকে পরিবারের দায়িত্ব সামলানোর মাঝেও আরমান নিজের স্বপ্নকে পুরোপুরি ভুলে গেল না। অনেক ভেবেচিন্তে সে সিদ্ধান্ত নিল, অনলাইনে কোর্স করবে। বেশ খোঁজাখুঁজির পর একটি অনলাইন কোর্সে ভর্তি হলো—গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার জন্য।

কোর্সটির সময়সীমা ছিল তিন মাস। ভর্তি হওয়ার দিন থেকেই আরমানের ভেতরে এক নতুন উত্তেজনা কাজ করছিল। সে ভেবেছিল, “এই তিন মাস শেষ হলেই আমি কিছু না কিছু ইনকাম করতে পারব।” প্রতিটি ক্লাসে সে মনোযোগ দিয়ে অংশগ্রহণ করত, প্রতিটি নতুন টুল, নতুন সফটওয়্যার শিখে তার মনে আলাদা এক আনন্দ জন্ম নিত।

এই ছোট্ট কোর্সে ভর্তি হওয়া যেন তার জীবনের নতুন আলো হয়ে দাঁড়াল—একদিকে পরিবারের দায়িত্ব, অন্যদিকে নিজের স্বপ্ন পূরণের প্রচেষ্টা। ভেতরে হতাশা থাকলেও আশা তাকে প্রতিদিন সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল।

তিন মাসের কোর্স শেষ করার পর আরমান বুঝতে পারল, ফ্রিল্যান্সিং ততটা সহজ নয়, যতটা সে ভেবেছিল। শুধু বেসিক জেনে কাজ পাওয়া প্রায় অসম্ভব। এর জন্য দরকার অনেক বেশি দক্ষতা, অভিজ্ঞতা আর ধৈর্য। এই উপলব্ধি তার মনে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি করলেও, হাল ছাড়েনি।

সে আবারও সেই একই স্যারের কাছে ভর্তি হলো, তবে এবার এডভান্স কোর্সে। সময়সীমা ছিল ছয় মাসের, কিন্তু শেখানো ছিল একেবারেই ভিন্ন ধাঁচের। স্যার খুবই ভালো মানুষ ছিলেন—তাড়াহুড়ো করে নয়, বরং ধীরে ধীরে প্রতিটি বিষয় পরিষ্কার করে শেখাতেন। তার ধৈর্য আর আন্তরিকতা আরমানকে ভরসা দিল যে, সঠিক হাতে সে শিখছে।

ধীরে ধীরে, প্রতিটি ক্লাসে নতুন কিছু শেখার মাধ্যমে আরমানের ভেতরে আত্মবিশ্বাস তৈরি হতে লাগল। যদিও কোর্সটির মেয়াদ ছিল ছয় মাস, বাস্তবে শেষ হতে এক বছর লেগে গেল। মাঝেমধ্যে পারিবারিক দায়িত্ব, কখনো নিজের সমস্যার কারণে সময় একটু বেশি লাগল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আরমান কোর্স শেষ করল, আর তার ভেতরে জন্ম নিল নতুন এক বিশ্বাস—এবার হয়তো সে সত্যিই নিজের স্বপ্ন পূরণের পথে হাঁটতে পারবে।

এরই মধ্যে আরমানের পারিবারিক অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে গেল যে, আর অপেক্ষা করা সম্ভব ছিল না। ছোট দুই ভাইয়ের পড়াশোনা, সংসারের খরচ—সব মিলিয়ে ইনকামের প্রয়োজনীয়তা ছিল জরুরি। ফ্রিল্যান্সিং শিখতে শিখতে সময় যাচ্ছিল, কিন্তু টাকার অভাব দিন দিন তীব্র হচ্ছিল।

গ্রামের মানুষজনও প্রায়ই তাকে কটাক্ষ করত—
“এই ফ্রিল্যান্সিং করে কত টাকা ইনকাম হয়?”
“সারাদিন কম্পিউটার নিয়ে বসে থাকো, আসলেই তো কিছু পাও না!”
এই কথাগুলো আরমানের মনে গভীর দাগ কাটত। সে জানত, তাদের বোঝার ক্ষমতা সীমিত, কিন্তু বাস্তবতাও অস্বীকার করা যায় না—পরিবারের দায়িত্ব তার কাঁধে, এখন আর শুধু স্বপ্ন নিয়ে বসে থাকলে হবে না।

অবশেষে, পরিস্থিতির চাপ আর দায়িত্বের টানে সে ঢাকা চলে গেল। গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখলেও সেই মুহূর্তে ফ্রিল্যান্সিংয়ে টিকে থাকা সম্ভব হলো না। তাই বাধ্য হয়ে সে অন্য সেক্টরে চাকরি নিল, যেন অন্তত সংসারের প্রয়োজন মেটানো যায়।

প্রায় পাঁচ মাস অন্য সেক্টরে চাকরি করার পর আরমানের জীবনে নতুন এক সুযোগ এল। সে নিজেই তার চাচাকে বলল যে, গ্রাফিক্স ডিজাইনেই সে কাজ করতে চায়। চাচার পরিচিত একজন ব্যবসায়ী নতুন একটি অফিস চালু করেছেন, যেখানে একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনারের প্রয়োজন ছিল।

চাচা আরমানের দক্ষতার কথা সেই ব্যবসায়ীকে জানালেন। পরে মালিক আরমানকে ডেকে কিছু কাজ করতে বললেন, যেন বোঝা যায় সে আসলেই কাজ জানে কি না। আরমান মনোযোগ দিয়ে তার সেরা কাজগুলো উপস্থাপন করল। মালিক তার ডিজাইন দেখে খুশি হলেন এবং বেশি দেরি না করে তাকে নিয়োগ দিলেন গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে।

এই মুহূর্তটা ছিল আরমানের জীবনের জন্য এক বিশেষ মোড়। দীর্ঘদিনের চেষ্টা, শেখা আর কষ্টের পর অবশেষে সে নিজের স্বপ্নের পথে প্রথম সত্যিকারের পদক্ষেপ নিল। তার ভেতরে নতুন করে আত্মবিশ্বাস জন্ম নিল—এবার সে সত্যিই প্রমাণ করতে পারবে, গ্রাফিক্স ডিজাইনই তার ভবিষ্যৎ।

যদিও নতুন অফিসে বেতন খুব একটা বেশি ছিল না, তবুও আরমানের ভেতরে এক ধরনের স্বস্তি ছিল—অবশেষে সে তার পছন্দের কাজ করছে। অফিসটি নতুন হওয়ায় সুযোগ-সুবিধা সীমিত, কিন্তু মালিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সময়ের সাথে সাথে তার বেতনও বাড়বে। সেই আশাতেই আরমান ধৈর্য ধরে কাজ চালিয়ে যেতে লাগল।

অফিসের কাজের পাশাপাশি সে নিজের স্কিলগুলো আরও উন্নত করার চেষ্টা করছিল। নতুন সফটওয়্যার শেখা, ডিজাইনের ট্রেন্ড সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া, আর ছোটখাটো প্রজেক্টে হাত দেওয়া—সব মিলিয়ে সে নিজেকে ধীরে ধীরে আরও দক্ষ করে তুলছিল।

একইসাথে পড়াশোনাটাও কোনো রকম চালিয়ে যাচ্ছিল। মাঝে মাঝে সময়ের অভাব, কখনো মানসিক চাপে পড়লেও সে হাল ছাড়েনি। কারণ আরমান জানত—শুধু চাকরি নয়, শিক্ষা আর দক্ষতা দুটোই তার ভবিষ্যৎ গড়তে সাহায্য করবে।
চাকরির পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিংয়ে পুরোপুরি সময় দেওয়া আরমানের পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। কারণ, সেখানে রাত জেগে দীর্ঘ সময় কাজ করতে হয়, অথচ অফিসের চাকরি সামলাতে গিয়ে সেই সুযোগ মিলছিল না। তবুও সে হাল ছাড়েনি।

সে ভাবল—যদি এখনই কাজ করতে না পারে, তাহলে অন্তত নিজের দক্ষতাগুলো আরও বাড়ানো যায়। তাই গ্রাফিক্স ডিজাইনের সাথে সাথে এখন মোশন গ্রাফিক্স শেখা শুরু করল। ভিজ্যুয়াল কনটেন্টকে আরও আকর্ষণীয় করার কৌশলগুলো তাকে মুগ্ধ করছিল। পাশাপাশি, ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কেও খোঁজখবর নিতে লাগল। কারণ সে বুঝতে পেরেছিল—শুধু ডিজাইন নয়, ডিজাইনের সাথে মার্কেটিংয়ের ধারণা থাকলে কাজের সুযোগ অনেক গুণ বেড়ে যায়।

ধীরে ধীরে, প্রতিদিনের ব্যস্ততার মধ্যেও সে শিখে যাচ্ছিল। মনে মনে ভেবেছিল—একদিন নিশ্চয়ই আবার ফ্রিল্যান্সিংয়ে ফিরে আসবে, কিন্তু তখন সে হবে আরও দক্ষ, আরও প্রস্তুত একজন মানুষ।

এভাবে একে একে ২ বছর ৭ মাস কেটে গেল। এই দীর্ঘ সময়ে আরমান গ্রাফিক্স ডিজাইন, মোশন গ্রাফিক্স আর ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সাথে লেগে রইল। ধীরে ধীরে সে বুঝতে পারল—দক্ষতা বাড়ানো মানেই নিজের ভবিষ্যতের পথ আরও মজবুত করা।

তবে পথটা একেবারেই সহজ ছিল না। তার ল্যাপটপ, যেটি ছিল একেবারেই সাধারণ মানের, নষ্ট হয়ে গেল দুইবার। প্রতিবারই তার মনে হয়েছিল, হয়তো এবার আর এগোনো সম্ভব হবে না। কিন্তু অনেক কষ্ট করে, ধারদেনা করে, সামান্য টাকার ব্যবস্থা করে ল্যাপটপ ঠিক করাতে হয়েছিল।

আর্থিক সমস্যাগুলো তাকে বারবার থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। অনেক সময় মনে হতো, স্বপ্নের জন্য এত কষ্ট করা আদৌ সম্ভব কি না। তবুও সে হাল ছাড়েনি। কারণ সে জানত—এই কষ্টটাই একদিন তাকে সাফল্যের আসল স্বাদ দেবে।

এখন আরমান নিজের ল্যাপটপ না থাকায় অফিসের কম্পিউটার দিয়েই কাজ চালায়। প্রতিদিনের ব্যস্ত সময়ের মাঝেই যতটুকু পারে নিজের স্কিল বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। ফ্রিল্যান্সিংয়ে এখনও তেমন কিছু করে উঠতে পারেনি, তবে প্রোফাইলগুলো ভারী করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

কখনো সময় পেলে প্যাসিভ মার্কেটে কিছু ডিজাইন আপলোড করে, আর সেখান থেকেই ৭-৮ ডলার আয় হয়। খুব বেশি না হলেও এটাই তার কাছে বড় অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ সে বুঝতে পেরেছে—শুরুটা ছোট হলেও, এটিই তাকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার শক্তি দিচ্ছে।
তবে বাস্তবতা হলো, প্যাসিভ মার্কেটেও কাজ করার মতো সুযোগ সবসময় হয় না। অফিসের দায়িত্ব, পড়াশোনা, আর পারিবারিক চাপে সে বারবার থেমে যায়। অনেকবার হতাশ হয়, ভেবে বসে—হয়তো আর সম্ভব হবে না। তবুও একদম হাল ছাড়ে না।

তার বিশ্বাস, একদিন সে অবশ্যই সফল হবে। কারণ সে বুঝে গেছে—ফ্রিল্যান্সিং থেকে ইনকাম ততটা সহজ নয়, যতটা মানুষ ভাবে। এর জন্য দরকার ধৈর্য, দক্ষতা, আর লেগে থাকার মানসিকতা। আরমান সেই পথেই হাঁটছে, ধীরে ধীরে, ছোট ছোট পদক্ষেপে।

মানুষজন প্রায়ই ভাবেন, ফ্রিল্যান্সিং মানে শুধু মাউস চাপ দিলেই ডলার আসে। সামাজিক মিডিয়ায় তারা দেখেন, কেউ ফাইবারে এক সপ্তাহেই হাজার ডলার আয় করছে, কেউ আবার মাত্র কয়েক মাসে সফল। কিন্তু যাদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, যারা রাতের ঘুম কেটে, সীমিত সংস্থানে, ধৈর্য ধরে শেখার পরও আর্থিক সাফল্য পায়নি—তাদের গল্প কেউ উপস্থাপন করে না।

আরমান সেই অদৃশ্য পথে হাঁটছে। তার জন্য ফ্রিল্যান্সিং সহজ ছিল না, বরং কঠিন ছিল, ধৈর্য ও অবিচলতা ছাড়া কোনো সফলতা আসে না। একদম শুরুতে ছোট ছোট কাজ, ৭-৮ ডলারের ইনকাম—এগুলোই তার জন্য প্রেরণা। তবে সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো—ইনকাম সহজে আসে না, কঠোর পরিশ্রম, দক্ষতা এবং সময় লাগে।

তবুও, আরমানের আশা কখনো মরে না। বারবার হতাশা এসেছে, কখনো তার ল্যাপটপ নষ্ট হয়েছে, কখনো সুযোগ সীমিত হয়েছে। তবুও সে শেখা থামায়নি, স্কিল বাড়িয়েছে, ধীরে ধীরে ফ্রিল্যান্সিং ও নিজের ভবিষ্যতের পথ গড়ে তুলছে।

গল্পের মূল শিক্ষা হলো—ফ্রিল্যান্সিং এক রাতের চটকদার সাফল্য নয়, এটি এক অবিরাম সংগ্রাম। যারা ধৈর্য ধরে, নিজের দক্ষতা বাড়াতে থাকে, তারা শেষ পর্যন্ত সফল হয়। আরমানের গল্প এই বাস্তবতার একটি উদাহরণ—হতাশা আসবে, ব্যর্থতা আসবে, কিন্তু আশা আর প্রচেষ্টা কখনো থেমে যাবে না। একদিন, সেই কঠিন পথের শেষে সফলতার আলো অবশ্যই দেখা যাবে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

আরমান… নামের অর্থ স্বপ্ন আর আকাঙ্ক্ষা।

২৭ জুলাই - ২০২৫ গল্প/কবিতা: ৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "আতঙ্ক”
কবিতার বিষয় "আতঙ্ক”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ অক্টোবর,২০২৫