১
রাকিবকে বাইরে থেকে দেখলে বোঝার উপায় নেই যে তার ভেতরে এত বড় যুদ্ধ চলছে। ক্লাসে যায়, পরীক্ষায় বসে, বন্ধুরা আড্ডা দিলে সে-ও উপস্থিত থাকে। কিন্তু হঠাৎ কোনো শব্দ, হঠাৎ কোনো দৃষ্টি, কিংবা ভিড়ভাট্টা—তার ভেতর এক তীব্র আতঙ্ক জাগায়।
ক্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে প্রেজেন্টেশন দিতে গেলেই তার হাত-পা কাঁপতে থাকে। বুক ধকধক করে, মুখ শুকিয়ে যায়।
সহপাঠীরা ভাবে, সে অতি লাজুক। কিন্তু আসলে এটা শুধু লজ্জা নয়—এটা অদৃশ্য এক শিকল, যার নাম আতঙ্ক।
২
এই আতঙ্কের শুরু হয়েছিল শৈশবে। একবার স্কুলে সবাই মিলে অনুষ্ঠান হচ্ছিল। রাকিব কবিতা আবৃত্তি করতে মঞ্চে উঠেছিল। প্রথম কয়েকটা লাইন বলার পর হঠাৎ হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়। সবাই হেসে ওঠে। শিক্ষকরা সাহায্য করেছিলেন, কিন্তু সেই দিনের হাসি তার কানে আজও বাজে।
তখন থেকেই সে মঞ্চের ভয় নিয়ে বড় হয়েছে। মানুষের সামনে দাঁড়ানো মানেই তার মনে হয়—সবাই হাসবে, সবাই তাকে ব্যর্থ ভাববে।
৩
বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বছরে একদিন গুরুত্বপূর্ণ প্রেজেন্টেশন ছিল। সহপাঠীরা অনেক প্রস্তুতি নিয়েছিল। রাকিবও নিয়েছিল, কিন্তু যখন তাকে উপস্থাপন করতে বলা হলো, তখন মনে হলো তার ভেতর থেকে সব শব্দ উধাও হয়ে গেছে।
স্লাইড ফাইল পড়ে গেল, তার কণ্ঠ আটকে গেল। শিক্ষক চুপচাপ তাকিয়ে রইলেন। সহপাঠীরা ফিসফিস করছিল।
সেদিন সে ভেবেছিল—“আমি কিছুই পারি না।”
সেই ব্যর্থতা তার মনে আরও গভীর আতঙ্ক তৈরি করল।
৪
প্রতিদিন রাতের পর রাত সে ঘুমাতে পারত না। পরিবার বুঝতেও পারত না কী হচ্ছে।
একদিন সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভাবছিল—“এইভাবে আর কতদিন?” মনে হচ্ছিল, সবকিছু শেষ করে দিলেই মুক্তি।
ঠিক সেই সময় পাশের ফ্ল্যাটের বৃদ্ধ মানুষটি ডেকেছিলেন ওষুধ আনতে। রাকিব অনিচ্ছা সত্ত্বেও গেল। ওষুধ দিয়ে আসতেই বৃদ্ধ মানুষটি বললেন,
“বাবা, তুমি না থাকলে আমি তো একেবারেই অসহায় হয়ে যেতাম।”
এই একটা বাক্য রাকিবের মনে বজ্রপাতের মতো আঘাত করল। সে বুঝল—তার বেঁচে থাকার মানে শুধু নিজের জন্য নয়, অন্য কারও ভরসার কারণও সে।
৫
রাকিব সিদ্ধান্ত নিল, সে এবার ভয়কে পালিয়ে নয়, মোকাবিলা করবে।
প্রথমে ছোট ছোট কাজ শুরু করল—
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চোখে তাকিয়ে নিজের নাম বলত।
প্রতিদিন কিছু সময় মেডিটেশন করত।
বন্ধুদের সাথে ধীরে ধীরে ছোট ছোট দলে কথা বলার চেষ্টা করত।
শুরুতে সহজ ছিল না। আতঙ্ক তার বুক চেপে ধরত, ঘাম ঝরত, মাথা ঘুরে যেত। কিন্তু সে থামল না।
৬
কয়েক মাস পর আবার একটি সেমিনারে তাকে বক্তব্য রাখতে হলো। এবারও ভয় এসেছিল, বুক কাঁপছিল। কিন্তু সে নিজের ভেতরে বলল—
“আতঙ্ক আমাকে থামাতে পারবে না। ভয়কে নিয়ে এগোতে হবে।”
সে কণ্ঠ কাঁপিয়েই কথা শুরু করল। শুরুতে অনেকে হাসছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে তার কথার ভেতরে একটা শক্তি এসে গেল।
শেষে সবাই হাততালি দিল।
রাকিব জানল—এটাই তার প্রথম জয়।
৭
এরপর থেকে রাকিব ভয়কে নিজের সঙ্গী বানিয়ে নিল।
সে শিখল—সাহস মানে ভয় না থাকা নয়। সাহস মানে ভয় থাকা সত্ত্বেও এগিয়ে যাওয়া।
কয়েক বছর পরে সে একটি এনজিওতে কাজ শুরু করল, যেখানে আতঙ্কগ্রস্ত মানুষদের মানসিক সহায়তা দেওয়া হয়।
সেখানে সে তরুণ-তরুণীদের সামনে দাঁড়িয়ে বলে—
“আতঙ্ক তোমাকে দুর্বল বানাতে চায়। কিন্তু যদি তুমি তাকে চোখে চোখ রেখে দেখ, তবে আতঙ্কই তোমাকে শক্ত করে তুলবে।”
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
গল্প “অদৃশ্য শিকল”-এর মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে আতঙ্ক এবং তার প্রভাব। গল্পে রাকিব নামের একটি চরিত্রের ভেতরকার সংগ্রাম, শৈশবের অভিজ্ঞতা থেকে জন্ম নেওয়া ভয়, ব্যর্থতার কারণে গড়ে ওঠা আত্মবিশ্বাসহীনতা এবং আতঙ্কের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই খুব বাস্তবভাবে ফুটে উঠেছে।
২৫ জুলাই - ২০২৫
গল্প/কবিতা:
৬ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৫