ঢাকার আকাশ ছিল ধোঁয়ার মতো মেঘলা, কিন্তু তাতে আকাশের বিশালতা কমেনি। দুপুরের ১টা ০৬ মিনিট। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম, তার যুদ্ধে যাত্রার মতো প্রথম একক প্রশিক্ষণ ফ্লাইটে, ধীরে ধীরে উড়ছিলেন। চারদিকে ছড়িয়ে ছিল অজস্র ছোট ছোট আলো, মানুষের মতো ব্যস্ত নগরী তার নিচে, আর আকাশের বিশালতা তার সামনে। ২৬ বছরের ছেলেটি, যার চোখে ছিল স্বপ্ন আর দায়িত্ব, জানত না আজকের দিন তার জীবনের শেষ উড়ান হবে।
তার মায়ের কথা মনে হচ্ছিল বারবার। মা জানত না সে আজ উড়ছে, কারণ বিপদ হতে পারে বলে সে জানানি। মা স্কুল শিক্ষিকা, ভালোবাসতেন ছেলেকে, কিন্তু আজ তার জেনে ওঠার আগেই পৃথিবী থেকে হারিয়ে গিয়েছিল সে।
---
মিলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উত্তরা। ক্লাস এইটের আরিবা হোসেন ইংরেজির নোট পড়ছিল। পাশে সায়ন, শান্ত, রুহান। শিশুরা স্বপ্ন দেখছিল জীবনের, যে স্বপ্ন কখনো পূরণ হবে বলে তারা ভাবতেও পারতো না।
তখনই আকাশ থেকে আসা ভয়াবহ শব্দ তাদের শান্তি ভাঙল। একটি যুদ্ধবিমান ঝাঁপ দিয়ে স্কুলের পাশের মাঠে পড়ে গেল। সবাই চিৎকার করে, আগুন ছড়িয়ে পড়ল ক্লাসরুমে। শিশুরা দৌড়ায়, কেউ মাটিতে পড়ে নিঃশ্বাস নিতে পারছিল না।
---
সাবিহা ম্যাম, শিক্ষিকা, ছিলেন সাহসিকতার এক মূর্তি। তিনি ছাত্রীদের নিচে নামাতে চেয়েছিলেন, নিজেকে বিসর্জন দিয়ে। আগুনের মাঝেও তিনি দৌড়েছিলেন একটি বন্ধুকে উদ্ধার করতে, যাকে কেউ ভুলে যেতে চায় না।
ফারিয়া, আরিবার বন্ধু, অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল। হাসপাতালের বিছানায় চোখ খুলে প্রথম কথা ছিল, “মা, আমি বেঁচে আছি?” মা শুধু কাঁদছিলেন, বলে উঠলেন, “তুই বেঁচে আছিস, তোর বন্ধুরা পারলো না।”
---
তৌকির বুঝতে পেরেছিলেন, বিমান নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। প্যারাসুট ছিল, কিন্তু যদি ইজেক্ট করতেন, বিমানটি জনবহুল এলাকায় পড়ত। তাই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করেছেন বিমানটিকে জনবিহীন স্থানে নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু সময় আর সুযোগ তাকে ছাড়েনি। দু’দিন পরে, মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন। তার মা কান্নায় ভেঙে পড়লেন, “আমার ছেলে কি ফিরে আসবে?”
---
ছোট্ট মাহির জন্মদিন ছিল সেই দিন। তার ব্যাগ থেকে উদ্ধার হয় পোড়া চকোলেটের প্যাকেট। স্কুলের হাজিরা খাতায় লেখা ছিল—‘আরিবা উপস্থিত, সায়ন উপস্থিত, রুহান উপস্থিত’। কিন্তু তারা আর কোনোদিন হাজিরা দিতে পারেনি।
---
এই করুণ ঘটনার পেছনে শুধু দুর্ঘটনার বেদনা ছিল না। যেখানে কেউ ছবি তুলছিলেন, ভিডিও করছিলেন, সেই মৃত্যু-মিছিলকে বিনোদনে পরিণত করছিলেন। কেউ হয়ত রাজনৈতিক পুঁজি করছিলেন, যারা মানুষের বেদনায় রাজনীতি গড়ছিলেন। যারা দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে শোকের পেছনে নিজেদের স্বার্থ লুকিয়েছিল।
---
সাবিহা ম্যামের আত্মত্যাগের গল্প আজও হৃদয় স্পর্শ করে। তাঁর স্বামী বলেছিলেন, “সে শুধু চাকরি করত না, ওর প্রাণ ছিল ছাত্রদের জন্য। শেষ মুহূর্তে সেটা প্রমাণ করেছিল।” এই গল্প জাতীয় শিক্ষানীতিতে সংযোজিত হয়েছে।
---
এক বছর পর, মিলস্টোন স্কুল আবার চালু হলো, কিন্তু আগের ভবন আর নেই। সেখানে দাঁড়িয়ে আছে স্মৃতিস্তম্ভ—“যারা পড়তে এসেছিল, তারা ইতিহাস হয়ে গেল।” ২৬টি নাম খোদাই করা।
তৌকির ইসলামের নামে এখন বিমানবাহিনীতে একটি স্কোয়াড্রন, ‘শহীদ তৌকির ফ্লাইট’। তাঁর ছবি ঝুলছে মেসের দেয়ালে। মায়ের হাতে রাষ্ট্রীয় বীরত্বপদক তুলে দেওয়া হয়, কিন্তু তাঁর কান্নার কোলাহল শোনা যায়, “আমার ছেলে কি ফিরে আসবে?”
---
এই ঘটনা কেবল একটি দুর্ঘটনা নয়। এটা ছিল এক জনপদের প্রশ্ন, শিশুদের জীবনের মূল্য। আজকের এই আকাশ যেন সুরক্ষার প্রতীক হয়, আর সুরক্ষা যেন অন্য কারো সর্বনাশের কারণ না হয়।
---
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
এটি একদিকে যুদ্ধবিমান চালকের ব্যক্তিগত সাহস ও ত্যাগের গল্প, অন্যদিকে স্কুলছাত্রদের নির্মল স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষার করুণ অবসান। পুরো গল্পে উত্তরা এলাকার একটি দূর্ঘটনা কোর ভিত্তি হিসেবে রয়েছে, যা শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, বরং শিশুদের জীবন ও নিরাপত্তার গুরুত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
৩১ মে - ২০২৫
গল্প/কবিতা:
৫ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর,২০২৫