শেষ পদত্যাগ

পদত্যাগ (জুলাই ২০২৫)

এস এফ শামীম হাসান
  • 0
  • 0
✒️নির্বাক একটি সকাল

সকালটা সাধারণ ছিল না।
৫ আগস্ট, ২০২৫।
ঢাকার বাতাসে বারুদের গন্ধ ছিল না, কিন্তু ক্ষোভে জ্বলছিল মানুষ।
টেলিভিশনের পর্দায়, মোবাইল স্ক্রিনে ভাসছিল শুধুই একটিই দাবি:
"পদত্যাগ করুক তারা, যারা সত্য চাপা দিয়েছে।"

সায়েম রহমান চুপচাপ বসেছিলেন তার সরকারি দপ্তরের অফিসকক্ষে।
চোখে চশমা, সামনে কাঁচের জানালা—তার বাইরে মুখোশ পরা শহরটা তাকিয়ে আছে।
সায়েম একজন সচিব, তিন দশকের অভিজ্ঞতা, অসংখ্য পদক, দেশপ্রেমের ব্র্যান্ড-আইকন।
কিন্তু আজ, তিনি নিজেকে দেখে মনে করলেন—“আমি কি বেঁচে আছি?”


✒️বিবেকের রক্তাক্ত দলিল

তিন দিন আগে তিনি একটি চিঠি পেয়েছিলেন—অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদন।
তাতে পরিষ্কার ছিল:
একটি সরকারি প্রকল্পের বাজেট থেকে ৯৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে।
যারা যুক্ত, তারা শুধু মন্ত্রী বা আমলা নয়—তার সহকর্মীরাও।

প্রতিবেদনের নিচে লেখা:
"সায়েম স্যারের দস্তখত ছাড়া রিপোর্ট প্রকাশ সম্ভব নয়।"

তিন দিন ধরে সে রিপোর্ট তার ডেস্কে।
তিনি জানেন, সই দিলে চাকরি যাবে না, কিন্তু বিবেক হারাবে।
না সই দিলে... তাকে যেতে হবে।

✒️ ৫ আগস্ট: আগুন ছড়ানো দিন

এই দিনটিই বাংলাদেশের ইতিহাসে আবার লিখে দিলো বিদ্রোহের এক কবিতা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে পড়েছে রাস্তায়।
পদত্যাগের দাবি জানিয়ে তারা বলছে, “আর নয় নীরবতা!”
কেউ কেউ স্লোগান দিয়েছে:
"যেখানে সত্য চাপা পড়ে, সেখানে থাকা অপরাধ!"

সায়েম জানতেন, তাদের চোখেও এখন তিনি একজন ‘নিরব অপরাধী’।
কিন্তু কেউ জানে না, তাঁর ভিতরে এক যুদ্ধ চলছে।


✒️ পরিবার: নীরব বিস্ফোরণ

স্ত্রী ফারিহা বলেছিলেন,
— “তুমি শুধু চাকরি করো না, তুমি আমাদের ভরসা।”
— “পদত্যাগ করলে আমরা কোথায় যাবো?”

ছেলে অয়ন কাঁপা গলায় বলে,
— “বাবা, তুমি ভালো কাজ করেছো না? তারা কেন তোমার নাম বলছে খারাপ তালিকায়?”

সায়েম কিছু বলেন না।
শুধু রাতে ঘুমোতে পারেন না।
একজন ইমানদার মানুষের কাছে সবচেয়ে বড় শাস্তি হলো—অসহায় হয়ে চুপ থাকা।

✒️চিঠি: রক্তে লেখা ঘোষণাপত্র

৫ আগস্ট রাত ১১টা ৪৩ মিনিটে সায়েম কলম ধরলেন।

চিঠির শুরুতেই লিখলেন:

> “আমি পদত্যাগ করছি।
কারণ এই রাষ্ট্রযন্ত্রের নীরবতা আর আমার বিবেক একসাথে থাকতে পারে না।
আমি থাকতে পারি না যেখানে সত্যকে চাপা দিতে বলা হয়।
আমি দায় নিচ্ছি—নিজের, এবং সমাজের।
আমি যাচ্ছি, যেন যারা আসবে, তারা সাহস নিয়ে আসুক।”

চিঠির শেষ লাইন ছিল:
“পদত্যাগ নয়, এটি আমার আত্মাকে ফিরে পাওয়ার শেষ চেষ্টা।”

✒️সংবাদ শিরোনাম:

"একজন সৎ আমলার বিদায়"

পরদিন সকালে দেশজুড়ে শিরোনাম ছিল:
???? “সচিব সায়েম রহমানের পদত্যাগ—আত্মদংশনের দলিল”
???? “সততার শেষ সৈনিক অবসর নিলেন”
???? “ক্ষমতার মুখে সাহসের লাল পতাকা”

শিক্ষার্থীরা থমকে গেল।
কেউ বিশ্বাস করতে পারলো না।
কেউ রাস্তায় দাঁড়িয়ে কেঁদে ফেললো।
একজন শিক্ষক বললেন:
— “তিনি আমাদের ক্ষমা করে গেলেন।”

✒️আত্মা বনাম রাষ্ট্র

পদত্যাগের পর সায়েম কোথাও যান না।
চুপচাপ নিজ বাসায় থাকেন।
কোনো টিভি দেখা নয়, কারো ফোন রিসিভ নয়।

নিজেকে প্রশ্ন করেন বারবার—
“আমি হেরে গেলাম?”
কিন্তু প্রতিবারই মনে পড়ে এক লাইন:
"যে সত্য বলে, সে কখনো হারে না।"

✒️প্রতিশোধ নয়, প্রার্থনা

দুই মাস পর একদিন, অয়ন বাবার হাতে একটা খাম দেয়।
সেখানে একটি স্কুলের ছাত্রদের লেখা ছিল,
“স্যার, আমরা সত্যকে ভয় পাই না, কারণ আপনি আছেন।”

সেই রাতে সায়েম নীরবে কাঁদলেন।
তিন দশক পর তার চোখে জল।
কিন্তু সেটা দুর্বলতার নয়—
সেটা ছিল আত্মমুক্তির অশ্রু।

এক বছর পর

সায়েম আজ সমাজসেবায় জড়িয়ে পড়েছেন।
পথশিশুদের পড়ান, গ্রামের স্কুলে যান, সত্য নিয়ে কথা বলেন।

কেউ তাঁকে সচিব স্যার বলে না।
তারা ডাকে,
“সায়েম কাকু, যিনি সত্য ছেড়ে দেননি।”


✒️উপসংহার

আমরা ভাবি, পদত্যাগ মানে হেরে যাওয়া।
সায়েম রহমান দেখিয়ে দিলেন—পদত্যাগ হতে পারে একটি বিপ্লব।

তাঁর জীবন প্রমাণ করে,
যে মানুষ চাকরি ছেড়ে দেন,
তিনিই হয়তো নিজেকে ফিরে পান।

> “নামে ছিল ক্ষমতা, পদে ছিল বল,
কিন্তু মনে ছিল রক্তে লেখা ভুলের জল।
ফেলে এলাম পদ, রেখে গেলাম আলো,
হে ভবিষ্যৎ, তোমার পথে রেখে গেলাম ভালো।”
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

গল্পটির কেন্দ্রবিন্দু “পদত্যাগ”—কিন্তু এটি কেবল চাকরি ছাড়ার গল্প নয়, বরং এক বিবেকবান মানুষের নৈতিক বিদ্রোহের প্রতিচ্ছবি। প্রধান চরিত্র সায়েম রহমান একজন সৎ সরকারি কর্মকর্তা, যিনি তিন দশকের কর্মজীবনে কোনো আপস করেননি। একদিন তার সামনে আসে একটি ভয়াবহ দুর্নীতির রিপোর্ট—যা তাকে চাপ দিয়ে চাপা দিতে বলা হয়। এই মুহূর্তে তিনি পড়ে যান এক গভীর দ্বন্দ্বে—রাষ্ট্রের আনুগত্য, নাকি বিবেকের প্রতি দায়? গল্পের মোড় ঘোরে ৫ আগস্ট, যখন দেশের ছাত্রসমাজ রাস্তায় নেমে স্লোগান তোলে: “সত্য বাঁচাও, পদত্যাগ করো।” এই জনচাপ, ব্যক্তিগত যন্ত্রণা এবং আত্মমর্যাদার ডাক মিলে সায়েমকে পদত্যাগে বাধ্য করে। কিন্তু তার পদত্যাগ কেবল প্রশাসনিক নয়, এটি এক প্রতিবাদ, আত্মশুদ্ধি এবং সাহসের প্রতীক। গল্পে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা, আমলাতন্ত্রের সংকট, মিডিয়ার ভূমিকা ও তরুণ সমাজের জাগরণ সুন্দরভাবে চিত্রিত হয়েছে। উপসংহারে—“পদত্যাগ নয়, আত্মাকে ফিরে পাওয়ার চেষ্টা”—এই বাক্যটি গল্পের সারমর্ম হয়ে দাঁড়ায়। এই গল্প দেখিয়ে দেয়, সত্যের জন্য লড়াই করতে গেলে হারানো নয়—নিজেকে ফিরে পাওয়া যায়। পাঠকের মনে গভীর আবেগ সৃষ্টি করবে এই গল্প।

৩১ মে - ২০২৫ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“ ” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ , থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী